Pages

Thursday, November 23, 2017

ফ্লাট কেনার ফর্মুলা

২০১৭ সালে এক কোটি টাকা দিয়ে ফ্লাট কিনে মাসে এক লক্ষ টাকা ভাড়া পাওয়া যায় না। অথচ এক কোটি টাকার সঞ্চয় পত্র কিনলে প্রায় ৯২ হাজার টাকা প্রতি মাসে পাওয়া যাবে। তখন একই রকম ফ্লাট ভাড়া ৩০ হাজার টাকায় করে (৯২-৩০) বাকী ৬২ হাজার টাকা ব্যাংকে রাখা যাবে। মণে করুন আপনি প্রতি মাসে ৬২ হাজার টাকা ব্যাংকে জমাতে থাকলেন। আপনি ২৫ বছর পর বছর বছর বন্ড কিনেও আপনি ৯/১০ কোটি টাকা জমাতে পারবেন। আর যদি ফ্লাট কিনেন তবে এক কোটি টাকার ২২০০ স্কয়ার ফ্লাটের বেসিক খরচ ৩০ লক্ষ টাকা। আর জায়গার মূল্যে আপনি পাচ্ছেন ৫ কাঠার আটের এক অংশ বা ৩০ লক্ষ টাকার জায়গা। সর্বমোট আপনার ফ্লাটের বেসিক ভ্যালু হবে ৬০ লক্ষ টাকা । আর আপনি কিনেছেন  ১০০ লক্ষ বা এক কোটি টাকায়। এখানে ডেভেলপারকে আপনি লাভ দিয়েছেন ৪০ লক্ষ টাকা। আপনার জায়গার অংশ ৩০ লক্ষ টাকার বৃদ্ধি ৫০ বছরে দ্বিগুণ অথবা তিন গুন হবে। মূলত  ৫০ বছর পর আপনার বিনিয়োগ কৃত জায়গার দামটিও আপনার থাকবে। বাকী ফ্লাট তৈরির খরচ ও ডেভেলপারের লাভ আপনার সেবার মূল্য হিসাবে বাদ দিতে হবে। আপনার জায়গার দামটি হয়ত ৫০ বছর বা ১০০ বছরের এক কোটি বা দু কোটি টাকা হবে। অনেকে বলে আমি এক কোটি টাকা দিয়ে ফ্লাট কিনেছি এখন দুই কোটি টাকায় এই ফ্লাট পাব না। এটা সত্যি নতুন ফ্লাটের ক্ষেত্রে। কিন্তু আপনার এক কোটি টাকার ফ্লাট বিক্রি করতে যান ৫০ লক্ষ বা অর্ধেক পাবেন ১০/১৫ বছরের মধ্যে।
ব্যবসায়িক ভাবে ফ্লাট কেনা লাভজনক না হলেও এটার একটা মারাত্মক ইমোশনাল ভ্যালু আছে। আমি নিজের বাড়ীতে থাকি। আমার স্থায়ী ঠিকানা আছে। আমাকে কেউ ইচ্ছে করলেই বলতে পারবে না বাসা ছেড়ে দিন। আমার ছেলে বিদেশ থেকে আসবে বাসা ছেড়ে দিন।
ফ্লাট না কিনে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তার থেকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা বাড়ী ভাড়া পরিশোধ করার পরও আপনি এক কোটি টাকা ইনট্যাক্ট রাখার পাশাপাশি আপনি কমপক্ষে ২২.৪+১ কোটি অর্থাৎ ২৩.৪ কোটি টাকার মালিক থাকবেন। আর এর এক কোটি টাকার ফ্লাট কিনলে হয় বা সর্বোচ্চ ৫/৬ কোটি টাকার জায়গার মালিক থাকবেন। অর্থাৎ আপনি প্রায় ১৭/১৮ কোটি টাকা কম অর্জন করবেন। তাই কোটি টাকায় ফ্লাট না কিনে ভাল ভাল বাড়ী ভাড়ায় থেকেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ২৩/২৪ কোটি টাকা রেখে যাওয়া সম্ভব। আর যদি জমানো টাকা দিয়ে ব্যবসা করে সফলতা পেলে আরও ধনী হয়ে যাওয়া সম্ভব। আমরা যদি ১০ লক্ষ টাকা সঞ্চয়পত্রে জমা করি আর তার থেকে পরোক্ষ ইনকাম ১০ লক্ষ টাকা প্রতি মাসে পাই তবে তা খুবই ভাল বিষয় নয় কি। তাই বাড়ী বা ফ্লাট হুট করে না কিনে ব্যাংকে জমিয়ে বৃদ্ধি করে তার আয় দিয়ে কেনা যেতে পারে।
তবে কেউ যদি একান্তই ফ্লাট বাড়ী কিনে নিজের ঠিকানা করতে চান তবে তার জন্য এক ধরনের ফর্মুলা আছে। প্রথমে জায়গা কিনুন। জায়গার দাম কিন্তু বাড়বেই। তার পর ধীরে ধীরে আপনার বাড়ী ভাড়া সেইভ করে ঘর করতে থাকুন। আমার বাবা টিএন্ডটি ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে সারা বাংলাদেশে চাকুরী করার পর ঢাকায় পোস্টিং আসে। তার একটা স্টেশন ওয়াগন গাড়ী ছিল। গাড়ীটি দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রি করে ঢাকায় তিন কাঠা জায়গা কিনে। তারপর সেখানে বাড়ী করে। বাড়ীটি করে আবার অদ্ভুদ ভাবে। তা হল ছাদ দেয়াল আর জানালা দরজা তৈরি করে আমরা বাড়ীতে উঠে যাই। তখন ফ্লোর পাকা হয়নি। আস্তর হয়নি। বাবা প্রতি মাসের ৬০০০ টাকার ভাড়া সেইভ করে দুই মাসে বা তিন মাসে একবার করে বাড়ীর কাজ করতে থাকে। এভাবে তিন বছর ধরে বাবার বাড়ীর কাজ চলে। আমি দেখেছি এভাবে কেউ জায়গা কিনে বাড়ী ভাড়া করতে পারলে পোষাবে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হল ২০০৭ পর থেকে ২০১৭ পর্যন্ত গত ১০ বছরে দেশের বেশীর ভাগ জায়গায় দাম মোটেই বৃদ্ধি হয়নি। তাই জায়গার মূল্য এমন একটা স্থানে আছে এখন বাড়ীর জমি কিনে ব্যাংক হতে বেশী লাভ পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ থেকে যায়। ফ্লাট ও বাড়ী ব্যবসায়ী বা ধনীদের জন্য লাভজনক প্রজেক্ট নয়। মধ্যবিত্তের নিরাপত্তার জন্য ফ্লাট বা বাড়ী কেনাটা মন্দ নয়। বাড়ী ভাড়ার বিপরীতে ফ্লাটের মালিক হতে পারলে মন্দ হয় না। আপনি প্রতি মাসে হয়ত ২৫০০০ টাকা বাড়ী ভাড়া দেন তার বিপরীতে ফ্লাটের মালিক হলেন এটা ভাল অপশন হতে পারে।
আরেকটা আইডিয়া আছে। ৮ জনে মিলে জায়গা কিনলেন। নীচে পার্কিং স্থান করে আটটা ফ্লাট করলেন। এটা লাভজনক হতে পারে। কারণ রিয়াল স্টেটের ২০-৩০% প্রফিট আপনি কয়েকজনকে নিয়ে সমবায়ের মাধ্যমে বাঁচিয়ে ২০-৩০% কমে টেকসই ফ্লাটের মালিক থাকলেন।

আপনি যদি এক কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্লাট না কিনে আপনি জোড়া ফ্লাট কিনুন। ৫০ লক্ষ ও ৫০ লক্ষ টাকা করে দুইটি কিনুন একটিতে থাকুন ও অন্যটি ভাড়া দিন। ভাড়ার টাকা যদি ১৫০০০ টাকা হয় ও প্রতিবছর সঞ্চয় পত্রের উপর জমাতে পারেন তবে ২৫ বছরে ২ কোটি টাকা আপনার জমা হবে। আবার ৫০ লক্ষ টাকায় ফ্লাট কিনে আর ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে রাখলেন এতে অন্তত বিনিয়োগের ৫০ লক্ষ টাকা ২৫ বছরে ৩/৪ কোটি টাকা হয়ে যাবে। তখন আপনার এক কোটি টাকার দুইটি ফ্লাটের মূল্যে আপনার লায়াবিলিটিস না হয়ে এসেট হিসাবে দৃশ্যমান হবে। ফ্লাট কখনো কিস্তিতে ক্রয় করা ঠিক না। এতে আপনি আরও দরিদ্র হবেন। ফ্লাটের ইমোশনাল ভ্যালুর বিষয়ে চিন্তা করে ফ্লাট না কিনে বাড়ী ভাড়া সেইভ করে তার বিনিময়ে প্রপার্টিতে কনভার্ট করার ফর্মুলাতে গেলে তা লাভজনক হবে। পরিশেষে বলব আপনি তখনই ফ্লাট কেনার যোগ্যতা অর্জন করবেন যখন আপনার কাছে আরও সম পরিমাণ টাকা বিনিয়োগের জন্য মজুদ থাকবে।

No comments:

Post a Comment