Pages

Thursday, July 16, 2015

শোবার ঘরে উপকারী এলইডি ঘড়ি

মোবাইল আসার পর থেকে আমার মত অনেকেই হাতঘড়ি পরা ছেড়ে দিয়েছে। এখন প্রায় ভুলেই গেছি হাতঘড়ি কি জিনিষ। হাতঘড়ি ত্যাগ করার সাথে সাথে আমার অভ্যাসে একটা বিষয় ঢুকে গেছে। তা হল । প্রতিটি ঘরে দেয়াল ঘড়ি রাখা। এমনকি বাথরুমের বেসিনের তাকে একটি করে টেবিল ঘড়ি স্থাপন। এটা এমন একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে কোন ঘড়ি বন্ধ হলে কারো না কারো নজরে পড়ে যায়। সেইসাথে দ্রুত মেরামতের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়।
আমার মনে হয়। ঘড়ির মূল্য কম হওয়ার কারণে আর ব্যাটারি খরচ কম থাকায় এখন দেয়াল ঘড়ির যথেষ্ট ব্যবহার সব জায়গায় হচ্ছে। তবে হাতঘড়ি ব্যবহার করলে হয়ত এত দেয়াল ঘড়ির অভ্যাস হত না। মোবাইলের কারণে আমার মত অনেকেই হাতে আর একটি ঘড়ি ব্যবহারের মত ঝামেলায় থাকতে চায় না। তবে আমার দুই ছেলে আবার পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় হাতঘড়ি নিতে হচ্ছে কারণ মোবাইল নট এলাউড।


এখন আসি মূল আলোচনায়। আমার ব্যক্তিগত ঘড়ি ব্যবহারের বর্ণনা আমি সবাইকে দিলাম। এখন শোবার ঘরের দেয়াল ঘড়িটাই মূলত বেশী দেখা হয়। সমস্যা হল, বিছানায় শোয়ার পর সময় জানতে হলে মোবাইলটা নিয়ে দেখতে হয়। অনেক সময় মোবাইলে চার্জ কম থাকলে চার্জে রাখলে তা বালিশের অবস্থান থেকে একটু দূরে রাখতে হয়। তখন সময় দেখতে হলে বিছানা থেকে উঠে দেখতে হয়। অন্যথায় লাইট জ্বালিয়ে দেয়াল ঘড়ি দেখতে হয়। যেহেতু হাতঘড়ি ব্যবহারের অভ্যাস ত্যাগ করেছি তাই বিছানায় শুয়ে অন্ধকারে ঘড়ি দেখার ইচ্ছেটাকে দমন করা যায়না। আবার অনেক সময় সকালে উঠতে গেলে ঘড়ি দেখার ইচ্ছে করে সবচেয়ে বেশী। কিন্তু ৪/৫টার আলো আধারিতে দেয়াল ঘড়ির সময় বুঝা যায় না।

রাতে বিছানায় থেকে ঘড়ি দেখার সমস্যার সমাধান করার জন্য আমি দীর্ঘদিন যাবত লাইট জ্বালা এলইডি ঘড়ি কেনার ইচ্ছে ছিল। আজ থেকে চার বছর আগে এলইডি লাইটের ঘড়িটি কেনার চিন্তা করলাম। তখন ঘড়িটির দাম যতটুকু মনে আছে তিন হাজার টাকা ছিল। ক্রয় করতে সাহস হয়নি। কারণ সাধারণ দেয়াল ঘড়ি ২০০/৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর পাঁচটি রুমে পাঁচটি ঘড়ি রাখতে খরচ ১০০০ বা ১২০০ টাকা আর সেখানে একটি ঘড়ি ৩০০০ টাকা। খরচটা বেশী মনে হল। গত বছর একবার দাম জানতে চাইলাম ১২০০ টাকা জানাল। না কিনে ফেরত আসলাম। মনে হল ১০০০ টাকার মধ্যে আসলে ক্রয় করব। এভাবে কিনব কিনব করে আর কেনা হচ্ছিল না। অবশেষে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে  একদিন কুষ্টিয়ার ঘড়ির দোকানে লাল এলইডি,র ছোট আকারের  ঘড়িটির দাম জানতে চাইলাম। আমাকে জানাল ৬৫০ টাকা। আমি ঠিক আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমি পুনরায় জানতে চাইলাম, ৬৫০ টাকা? মনে মনে আমি চীনদেশকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম না। চীনাদের বদৌলতে আমরা এত কম দামে ইলেক্ট্রনিক দ্রব্যাদি পাচ্ছি। আমি যেটা কিনেছি সেটার উপর ক্যাসিও লেখা। আনুমানিক এক ফুট লম্বা এবং তিন ইঞ্চি প্রস্থ। এ্যাডাপটারের মাধ্যমে চলে। ডিসি ৯ ভোল্ট ইনপুট। এতে ঘণ্টা, মিনিট বড়(১.৫ ইঞ্চি) সাইজের ডিসপ্লে আছে। এছাড়া ছোট আকারে প্রায় এক ইঞ্চি প্রস্থে আছে আরো ডিসপ্লে যা ১০/১২ ফুট দূর থেকে ৬/৬ চোখের পাওয়ারে পড়া যায়। সেগুলো হল তারিখ, মাস, সাল একদিকে। অন্যদিকে সপ্তাহের কততম দিন এবং তাপমাত্রা।

বিছানায় শুয়ে শুয়ে তারিখ ও বার জানতে ইচ্ছে করলে অন্ধকারে জ্বল জ্বল করে প্রদর্শিত এলইডি ঘড়ি থেকে জানা যাচ্ছে। ঘরে ব্যবহৃত এসিতে যদি তাপমাত্রার ডিসপ্লে না থাকে, তবে ঘড়ির তাপমাত্রা থেকে তা জানা যাচ্ছে।

এ ঘড়িতে এলার্ম দেয়া যায়। বেশ জোরে শব্দ করে এলার্ম বাজে। প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় মিউজিক বাজানোর জন্য সেট করা যায়। একটা স্মার্ট অপশন আমার ভাল লেগেছে। তা হল রাত দশটার পর এলার্ম ছাড়া ঘণ্টায় ঘণ্টায় মিউজিক বাজবে না। এভাবে ঘড়িটি নি:শব্দে চলবে সকাল ৬টা পর্যন্ত যেন রাতে শব্দ দূষণ না হয়। আবার সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টার মিউজিক বাজতে থাকবে। অবশ্য প্রয়োজনে এ মিউজিক দিনের বেলাও বন্ধ রাখা যায়। আমি ঘণ্টায় ঘণ্টায় মিউজিকটি চালু রেখেছি বাচ্চাদের সচেতনতার জন্য। ঘড়িটি বিদ্যুৎ চলে গেলে সমস্যা নেই। এর ভিতর থাকা বোতামের মত ছোট রিচার্জেবল ব্যাটারি ঘড়িকে চালু রাখে। তাই বিদ্যুৎ গিয়ে আবার বিদ্যুৎ আসলে এলইডি ডিসপ্লে না হলেও ঘড়ির সময় চলমান থাকে। ঘড়িটির ডানদিকে টাচ বাটনের মাধ্যমে সময়, এলার্ম ও অন্যান্য অ্যাপস চালানো যায়। সময় এ্যাডজাষ্ট করা যায়। বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘড়ির ডিসপ্লে বন্ধ হয়ে যায়। এর জন্য আপনি ঘড়িটিকে আইপিএস যদি থাকে তাতে সংযোগ দিতে পারেন। আর বাসার কম্পিউটারে যদি ইউপিএস থাকে তাতে সংযোগ দেয়া যায়। ঘড়িটি আমি ছয় মাস যাবত ব্যবহার করছি। যদি দুই বছরও ব্যবহার করা যায় তাতেও ৬৫০ টাকা মূল্যের হিসাবে যথেষ্ট। আশা করি এলইডি ঘড়ির এই আলোচনাটি আপনাদের কাজে লাগবে।

No comments:

Post a Comment