Pages

Thursday, August 6, 2015

ক্যাম্পাসের পানি ব্যবস্থাপনায় সাবমার্সিবল পাম্পের সাশ্রয়ী বিনিয়োগ

২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে আমি কুষ্টিয়া সেক্টর সদর দপ্তরে থাকাকালীন সময়ে সেখানকার পানি বিতরণ সিস্টেমে একটা ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়। এটা করা হয় মূলত বৈদ্যুতিক বিল সাশ্রয় করার জন্য। কুষ্টিয়ার সেক্টর কমান্ডার পরীক্ষামূলক কাজটির অনুমোদন দেন। সম্পূর্ণ পরীক্ষাটিতে আনুমানিক ১,৫০,০০০ টাকা খরচ হয়। তবে এর ফলাফল বিরূপ হলে সম্পূর্ণ খরচটাই বিফলে যেতে পারত। এটি একটা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রজেক্ট ছিল। উদ্দেশ্য ছিল, পাঁচটি মটর, দুইটি গ্রাউন্ড ট্যাংকির সম্পূর্ণ সিস্টেম বাদ দিয়ে একটি মাত্র সাবমারসিবল পাম্প ব্যবহার করে পানির বিতরণ ব্যবস্থা তৈরি করা। পরে এ পরীক্ষায় সফলতা পাওয়ায় তা পানি বিতরণের জন্য মূল ব্যবস্থা হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
একটা ক্যাম্পাসে যখন পরিবারসহ আনুমানিক ১৩০০/১৪০০ লোক বসবাস করে সেখানে পানি উত্তোলনের জন্য বেশ বড় ধরনের সিস্টেম ব্যবহারের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পানি উত্তোলনের জন্য বিদ্যুৎ ব্যবহারের একটা সমীক্ষা চালালাম। ডিপ টিউবওয়েল থেকে একটি ভার্টিকাল পাম্প (উপুড় করে লাগানো মটর) দিয়ে আনুমানিক ২০,০০০ লিটার ধারণ ক্ষমতার দুইটি গ্রাউন্ড রিজার্ভারে পানি দেয়া হয়। সেই দুইটি গ্রাউন্ড রিজার্ভার থেকে সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের সাহায্যে পানি দালানের ছাদে তোলা হয়। প্রতিটি পাম্প হাউসে দুইটি করে পাম্প আছে। এভাবে দুইটি গ্রাউন্ড রিজার্ভারে দুইটি দুইটি করে চারটি পাম্প আছে। আমি সবগুলো পাম্পের আনুমানিক বিদ্যুৎ ব্যবহারের একটা হিসাব করলাম। ভার্টিক্যাল পাম্পে আনুমানিক ২০,০০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল হয়। দুইটি রিজার্ভারের একটিতে আনুমানিক ৩০,০০০ টাকা অন্য একটি রিজার্ভারে আনুমানিক ২০,০০০ টাকা বিল হয়। তিনটি অবস্থানের পাঁচটি পাম্পে আনুমানিক ৭০,০০০ টাকা বৈদ্যুতিক বিল হচ্ছিল। অনেক হিসাব নিকাশ করে দেখা গেল পাঁচটি পাম্প ব্যবহার না করে একটিমাত্র সাবমাসিবল পাম্প ব্যবহার করে একই রকম পানি পাওয়া যাবে। তার জন্য একটি মাত্র পাম্প লাগাতে হবে। তা হল সাবমাসিবল পাম্প। সাবমার্সিবল পাম্প পানিতে থাকার কারণে পানিকে টেনে আনার জন্য কোন শক্তি খরচ করতে হয় না। অর্থাৎ সাকসনে কোন শক্তি খরচ নেই। কেবলমাত্র পানি পুশ বা থ্রো করার জন্য শক্তি ব্যয় হয়। এ কারণে সাবমার্সিবল পাম্প এনার্জি এ্যাফিসিয়েন্ট। একটা সাবমার্সিবল পাম্প শুধুমাত্র দিনে ৬ ঘণ্টা চালনা করে আনুমানিক ৬x২০=১২০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। দিনে আনুমানিক ১২০x৮=৯৬০ টাকা খরচ। মাসে খরচ হল ৯৬০x৩০=২৮,৮০০ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ বর্তমান পাঁচ পাম্পের সিস্টেমের তুলনায় আনুমানিক প্রায় ৪১,২০০ টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। একটা ২০ কিলোওয়াটের সাবমার্সিবল পাম্পের দাম ১,৭০,০০০ টাকা ( ২০১৫ সালের মূল্য) । এ পাম্পে যদি পানির সিস্টেমে মাসে সাশ্রয় হয় ৪১,২০০  টাকা তবে আনুমানিক ৪/৫ মাস বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের টাকা দিয়েই একটা সাবমার্সিবল পাম্প ক্রয় করা যাবে।
ক্যাম্পাসের পানি বিতরণ সাধারণত বেশীর ভাগ স্থানে সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের সাহায্যে করা হয়। কারণ সেন্ট্রিফিউগাল পাম্পের কিছু সুবিধা রয়েছে। এটা সাধারনতঃ সাবমারসিবল পাম্পের মত পানির নীচে না থাকার কারণে দাম কম। সাবমারসিবল পাম্পে ওয়াটার সীল্ড করা হয়। এটা খুবই ব্যয়বহুল প্রযুক্তি। আর এ কারণে সাবমারসিবল পাম্পের সাধারণত দাম বেশী। সাবমারসিবল পাম্প আমাদের দেশে যেখানে পানির স্তর নীচে সে সমস্ত স্থানে ব্যবহার করা হয়। তবে চুয়াডাঙ্গা বিজিবি তাদের গ্রাউন্ড রিজার্ভ ট্যাংকে অধিনায়ক পরীক্ষামূলক ভাবে হরাইজেনটাল ভাবে ব্যবহার করে সফলতার সাথে ওভারহেড ট্যাংকে পানি তুলছে। যে পানি তুলতে তাদের ৬০  হর্স পাওয়ারের ৫ ঘন্টা প্রয়োজন হত সে পানি তুলতে ২০হর্স সাবমারসিবল পাম্পের ৪ ঘণ্টা প্রয়োজন হবে। কাজেই দেখা যাছে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে যা কিনা পরীক্ষিত। যদি আপনার ক্যাম্পাসে পানির জন্য ১ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল হয় তা সাবমারসিবল পাম্প ব্যবহার করে সহজেই ৩০-৪০ হাজার টাকায় নামিয়ে আনা সম্ভব।
দেশের মূল্যবান বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের সাথে পানি বিতরণের দক্ষ প্রযুক্তির ব্যবহার অতীব প্রয়োজন। আমরা সকলে এ বিষয়ে সচেতন হলে দেশ এগিয়ে যাবে। কারন বাংলাদেশে এখন সাবমারসিবল পাম্প প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। নষ্ট হলেও সহজে মেরামত করা যায়।

No comments:

Post a Comment