Pages

Thursday, July 10, 2014

আছে বৈদ্যুতিক খুঁটি, পাশেই অন্ধকার

বাংলাদেশে পল্লী বিদ্যুৎ এর ব্যাপক সাফল্য রয়েছে। মূলত: পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি হওয়ার কারণে বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে ব্যাপক বিদ্যুতায়ন হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ একটা সমিতির মাধ্যমে হওয়ায় গ্রাহকদের সংখ্যা ও লাভজনক হিসাবে পল্লী বিদ্যুৎ এর সংযোগের বিস্তার করা হয়। কয়েকজন মিলে বা কেউ একাকী পানির পাম্পের জন্য বৈদ্যুতিক সংযোগের আবেদন করলে পিলার দূরে হলে গ্রাহকদের নিজেদের টাকা খরচ করতে হয়। গ্রাহকরা সম্মিলিতভাবে বর্ধিত লাইনের পিলার কেনা, তার কেনা, ট্রান্সফরমার কেনা ইত্যাদি খরচ করে থাকেন। পল্লি বিদ্যুৎ এর পিলার রাস্তার পাশ দিয়ে বা রুট ম্যাপ অনুযায়ী টানা হয়। রাস্তার পাশে ও রুট ম্যাপে টানা পিলারের পাশে যাদের বাড়ী বা স্থাপনা রয়েছে তারা ভাগ্যবান। যাদের বাড়ী রাস্তা থেকে দুরে তাদেরকে কয়েকজনে মিলে ২০১৪ সালের জুলাই মাসের রেট অনুযায়ী ১০৩০০ টাকা প্রতি পিলারের দাম, পিলারের ক্যারিং খরচ ১০০০-৩০০০ টাকা, ৫০০০ টাকা এক পিলার থেকে অপর পিলারের তারের দাম, এছাড়া সংযোগ লাইনের তার মিটার/গজ প্রতি মূল্য ৩৩ টাকা, বিদ্যুৎ প্রবাহ মাপার বা বিলের জন্য মিটারের দাম ১২০০-১৫০০ টাকা  ইত্যাদি খরচ দিতে হয়। আবার কখনো কখনো বাড়তি খরচ গ্রাহক থেকে সম্পূর্ণ না নিয়ে কিস্তি আকারে গ্রাহকের বিলের সাথে আদায়েরও ব্যবস্থা আছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের বিদ্যুৎ সঠিক পরিমাণ বজায় রাখার জন্য ১০০ ফুটের বেশী দূরত্বের বাইরে গ্রাহক হলেই পিলার বসাবে। আবার ভোল্টেজ ড্রপ হলেই ট্রান্সফরমার বসাবে। মনে করি তিনটি পরিবার রাস্তা থেকে ২০০ মিটার দূরে আছে এখন তাদের বিদ্যুৎ পেতে দুইটি পিলার, তার, ট্রান্সফরমার বাবদ আনুমানিক ৯০,০০০ থেকে এক লক্ষ টাকা খরচ হবে। এ খরচ সেই তিনটি গ্রাহককে ৩০,০০০ টাকা করে দিতে হবে অন্যথায় বিদ্যুৎ নাই। এত টাকা খরচ করে গরীবদের আর বিদ্যুৎ নেয়া হয় না। যার ফলে বাতির নীচে অন্ধকারের মত। পল্লী বিদ্যুৎ এর পিলারের আশে পাশের অন্ধকার আর সহজে দূর হয় না। 
আমার বিকল্প ব্যবস্থা যেটা চিন্তা করেছি তা পরে আরো বিস্তারিত আলোচনা করব। এখন শুধু খরচের পাথর্ক্যটা তুলে ধরলাম। পল্লী বিদ্যুতের খুটি থেকে বিদ্যুৎ ৪৮ ভোল্ট করে বিকল্প ভাবে নিতে খরচ হবে, ২২০ ভোল্ট থেকে ৪৮ ভোল্ট স্টেপ ডাউন ট্রান্সফরমারে খরচ ২০০০ টাকা, ২০০ মিটার তার ৬৬০০ টাকা, ইনভারটার ৪৮ ভোল্ট থেকে পুনরায় ২২০ ভোল্ট করতে আনুমানিক খরচ ৩০০০ টাকা, ৪৮ ভোল্ট নিরাপদ লাইন টানতে ছোট ছোট বাঁশের খুঁটি গ্রাহকরা সংগ্রহ করে ফেলবে। দেখা যাচ্ছে ৯০ হাজার টাকার স্থলে তিনজন দরিদ্র গ্রাহক মাত্র ১২৬০০ টাকা অথাত ৪২০০ টাকা মাথাপিছু খরচে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। গ্রাহক সহজেই তার একটি গৃহপালিত ছাগল বিক্রি করে সংযোগ নিতে পারবে আর পল্লি বিদ্যুৎ এর খরচ গরু বিক্রি করেও পরিশোধ করা সম্ভব নয়।
পল্লী বিদ্যুৎ আবার ব্যক্তি নিরাপত্তা বা শক হেজার্ট বিবেচনা করে গ্রাহক তার কিনে, বিকল্প খুঁটি হিসাবে বাঁশ বা কাঠের খুঁটি দ্বারা স্ব-উদ্যোগে লাইন নিতে অনুমতি পায় না। এধরনের সংযোগ পিডিবির লাইনে দেখা যায়। বিশেষ করে পিডিবির পিলার থাকলে স্ব-উদ্যোগে অনেকে যে কোন ধরনের তার কিনে ১০০ ফুটের অধিক দূরে সংযোগ নিতে দেখা যায়। ১৯৯৩ সালে আমাদের গ্রামের বাড়ীর(কুমিল্লা জেলার ব্রাম্মনপাড়া উপজেলার দেউস গ্রামে) ৫০০ গজ দূরের বাজারে প্রথম বিদ্যুৎ আসলে আমরা ৫০০ গজ দূর থেকে একটি সিঙ্গেল তারের মাধ্যমে  ফেজ থেকে সংযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ পাই। এমনকি বৈদ্যুতিক তারটি বাঁশের খুঁটি বসিয়ে নদীর উপর দিয়ে আনা হয়। স্বাভাবিক কারণে ভোল্টেজ ড্রপ হয়। তবুও লাইট, ফ্যান ও টিভি চালানো যাচ্ছিল তাতেই যার পর নাই খুশী ছিল আমার বাবা মা। টিএন্ডটির কর্মকর্তা থেকে সদ্য রিটায়ারমেন্টের পর (১৯৯১ সালে) বাবা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শহরের আবাস ছেড়ে গ্রামে স্থায়ী হবেন। তাই বিদ্যুৎ বিহীন গ্রামে যাওয়ার পর অপ্রত্যাশিতভাবে সেখানে বিদ্যুৎ পেয়ে আনন্দে ছিলেন। অবশ্য তার তিন বছর পর তিনি পল্লী বিদ্যুৎ এর সংযোগ পান।
লো ভোল্টেজ হওয়ার পরও যদি লাইট,ফ্যান ও টিভি চালাতে পারলে সাধারণ কৃষক এবং শ্রমজীবীদের বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগ পূরণ হয়ে যায়। সেইসাথে যদি এনার্জি এ্যাফিশিয়েন্ট লাইট ব্যবহার করা যায়, তবে বড় চার ফুট দুইটি এলইডি টিউব লাইটে লাগবে ২০+২০=৪০ ওয়াট। ২৪ ইঞ্চি এলইডি টিভিতে খরচ ২৫ ওয়াট। দুইটি ব্রাশ লেস ডিসি সিলিং ফ্যানে খরচ ৩০+৩০=৬০ ওয়াট। আরো যদি রান্না ঘর, বাথরুম, বারান্দা ও নিরাপত্তা বাতিতে এলইডি ৫ ওয়াট করে ব্যবহার করা হলে লাগবে ৪x৫=২০ ওয়াট। তাহলে শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের মত লাইট জ্বালিয়ে বিদ্যুৎ খরচ হবে মাত্র ১৪৫/১৫০ ওয়াট। আর পল্লী বিদ্যুতের সর্বনিন্ম বিলের সুবিধাভোগীদের জন্য মাসিক ২৫ কিলোওয়াটের নীচে এটি থাকবে। এই ১৫০ ওয়াট ৪৮ ভোল্ট থেকে পেতে তারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতে হবে মাত্র ১৫০ ওয়াট ভাগ ৪৮ ভোল্ট অর্থাৎ ৩ অ্যাম্পিয়ার ৪৮ ভোল্টের বিদ্যুৎ। এ ধরনের ১০ জন গ্রাহকের জন্য দিতে হবে ৩x১০ =৩০ অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ যা কিনা অতি সহজেই  গ্রাহকের লাইনের এলুমিনিয়ামের তার দ্বারা প্রবাহিত করা সম্ভব। সম্পূর্ণ বিষয়টি সোলার প্যানেল থেকে সাশ্রয়ী ও এ্যাফিশিয়েন্ট হবে।এ ধরনের লো ভোল্টেজ বিদ্যুৎ বিতরণ করেও প্রায় ৯০% গ্রিড লাইনের এ্যাফিশিয়েন্সি পাওয়া যাবে। পরবর্তীতে ৪৮ ভোল্টকে ২২০ ভোল্ট এসিতে রুপান্তর করে এসি বিদ্যুতের সামগ্রীগুলো চালানো যাবে।

এবার আশা যাক হাই ভোল্টেজ ডিসি বিতরণ ব্যবস্থায়। আমেরিকা ও বাংলাদেশের প্যাটেন্ট প্রাপ্ত উদ্ভাবক ও সোলারিক কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী জনাব দিদারুল ইসলামের (দৈনিক প্রথম আলোর ২৪ জুন ২০১৪ তারিখের পত্রিকার ২০ পৃষ্ঠার নীচের অংশে ১-৩ কলামে বিশেষ প্রতিবেদন অথবা www.solar-ic.com  তথ্য রয়েছে
) হাই ভোল্টেজ ডিসি দিয়ে ন্যানো গ্রিড করেও এ ব্যবস্থা চালু করা যাবে। সোলারিকের ন্যানো গ্রিডের সোলার প্যানেল, ব্যাটারি ব্যাংক ও হাই ভোল্টেজ ডিসি কনভার্টার অংশ বাদ দিয়ে ২২০ ভোল্ট এসি থেকে ২২০ ভোল্ট    ১০/১৫ অ্যাম্পিয়ার ডিসি বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে পারলেই চলবে।
সোলারিকের ন্যানো গ্রিড অনুসরণ করলে খরচ কম হবে। কারণ চিকন তার ব্যবহার করে মাটির নীচ দিয়ে নিরাপদে হাই ভোল্টেজ ডিসি সহজেই নেয়া যাবে। ফলে খুঁটির খরচ ও মোটা তারের খরচ কমে যাবে। এতে পল্লী বিদ্যুৎ এর বিধিবদ্ধ শক হেজার্ড সমস্যা থাকবে না। সোলারিকের ন্যানো গ্রিডের বিস্তার ১ থেকে ১.৫ কিমি সহজেই করা যাবে। আর পল্লী বিদ্যুতের পিলারের আশে পাশের অন্ধকার এলাকা সাধারণত সোলারিকের বিস্তারের এলাকার জন্য যথেষ্ট হবে। সোলারিকের প্রিপেইড মিটার এ ধরনের সাব গ্রিড বা ন্যানো গ্রিডের টাকা সংগ্রহের জন্য উন্নত একটি ব্যবস্থা।

   পরিশেষে বলব, পল্লী বিদ্যুতের খুঁটির আশ পাশের অন্ধকার এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ বা পিডিবি থেকে নিরাপদ ৪৮ ভোল্টের লো ভোল্টেজ বিতরণ ব্যবস্থা অথবা সোলারিকের মাটির নীচ দিয়ে হাই ভোল্টেজ ডিসি লাইনের মাধ্যমে কম খরচে অন্ধকার দূর করা যেতে পারে। এ ধরনের নিরাপদ ও কার্যকরী ব্যবস্থা প্রাইভেট সেক্টরে অনুমতি দিয়ে পলিসি তৈরি করলে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা দিয়ে দেশের প্রায় ৬২ ভাগ বিদ্যুৎ প্রাপ্ত জনগোষ্ঠী থেকে সহজেই ৮০ ভাগে উন্নীত করা সম্ভব। প্রাইভেট সেক্টর ব্যবসায়িক ভাবে লাভজনক হবে বিধায় তা অতি দ্রুত কার্যকর করবে।

আমার এ ধারনাটি যারা পলিসি মেকার হিসাবে আছেন বা যাদের জন্য প্রযোজ্য তারা ভেবে দেখবেন। এতে যদি অন্তত এক কোটি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোতে আনা যায় তাতেই মানুষের জীবন যাত্রার উন্নয়নের পাশাপাশি আয় বর্ধক কাজ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের জিডিপির উত্তরণ ঘটবে।

No comments:

Post a Comment