গত একবছর থেকে লক্ষ্য করছি আমাদের তরুণ সমাজের মাঝে
স্মার্ট-ফোন ব্যবহারের কারণে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। এমনকি
তরুণদের গেমসগুলিও ছোট ছোট আকারে মোবাইলে চলে এসেছে। এতেই মনে হয় কম্পিউটার
ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার আর সুযোগও নেই। কারণ প্রযুক্তির সুফলগুলো হাতের মুঠোয় চলে
আসলে তখন নিশ্চয়ই কেউ চেয়ার টেবিল নিয়ে পড়াশোনার আদলে কম্পিউটারে বসতে চাইবে না।
কারণ কম্পিউটারের সব কাজ শুয়ে বসে মোবাইলে করা যাচ্ছে। তবে কি প্রয়োজন ল্যাপটপ বা
ডেস্কটপ কম্পিউটারে সামনে বসার। আর কোন উপায় নেই এখন আমাদের কম্পিউটার কার্যক্রম
মোবাইলেই নিয়ে আসতে হবে। ইমেইল চেক করে ইমেইলের উত্তরগুলি দিতে হবে মোবাইলের
মাধ্যমে। আমার ওয়ার্ড ডকুমেন্টের কার্যক্রম আনতে হবে মোবাইলে। পেপার-লেস অফিস গুলোতে ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তারা আজকাল মোবাইলে ইমেইলে সিদ্ধান্ত দেন। নির্দেশনা প্রেরণে ভাইবার বা আরো
অনেক কাষ্টমাইজ সফটওয়্যার ব্যবহার করেন।
এখন অফিসের কার্যক্রম আধুনিক তরুণ সমাজের জন্য মোবাইল
ইন্টারনেটের প্রযুক্তির মধ্যে আনতে পারলে ভাল হবে। একটা পর্যায়ে উপরস্থ
কর্মকর্তারা ডকুমেন্ট পড়তে চায় না। তারা তথ্যাদি শুনতে চান। কারণ তাদের অধীনস্থ
অন্যান্য কর্মকর্তারা তাদের সমস্ত তথ্য সরলীকরণ করে দিবেন আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা
সিদ্ধান্ত নিবেন। সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্টাফরা সব তথ্য তাদের মোবাইলে বা
ট্যাবে রাখবে। এ বিষয়ে আমার ছোট ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল সে পড়াশোনার ভয়ে ব্যবসা
শুরু করে । ব্যবসায় সফল হয়। কিন্তু এখনও কোন কিছুর পড়াশোনায় সে মোটেই আগ্রহী নয়।
ইনকাম ট্যাক্স উকিল তাকে বিস্তারিত বুঝিয়ে দেয়ার পর সে তার সিদ্ধান্ত জানায় ও
স্বাক্ষর করে তাও পড়ে দেখতে উৎসাহী নয়। এছাড়া লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজ তার
ম্যানেজার বুঝানোর পর সে বুঝে নিয়ে সিদ্ধান্ত দেয় ও সে স্বাক্ষর করে। একবার তার ম্যানেজার
বলল, এখানে কিছু শর্ত আছে। আপনি অবসর সময়ে পড়ে দেখতে পারেন। তার উত্তর, তুমি পড়েছ। জী হ্যাঁ পড়েছি। তুমি যদি পড়ে থাক, তবে
আমাকে পড়তে হবে কেন। তোমাকে বেতন দিচ্ছি কিসের জন্য। চিঠিতে লেখা শর্তগুলি তুমি
পড়তে থাক আর আমাকে বুঝাতে থাক। তদুপরি
তুমি বুঝতে না পারলে উকিল মোক্তার ভাড়া কর। এরপর আমার ধারনা হল ব্যবসা, অর্থ-বিত্ত সর্বদা ইত্যাদির জন্য পণ্ডিত আর কাগজ কলাম প্রয়োজন নেই।
একাউন্টট্যান্টদের বড় বড় লেজার বই লেখা এবং ক্লার্কদের সারি সারি ফাইল সাজানো
এগুলো আসলে তাদের অভ্যাসের ব্যাপার। সেইসাথে তাদের কাজকে জটিল ভাবে প্রদর্শনের
বিষয়। লেজার বই না হলেও একাউন্ট চলবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে লিপিবদ্ধ রেখে।
ডকুমেন্ট স্ক্যান করে পেপার-লেস করে ফাইলের সারি না রেখেও অফিস চালনা সম্ভব।
আমরা এমন যুগে এসেছি এখন ক্লার্কদের টাইপ করে কাগজে
প্রিন্ট করার প্রয়োজন নেই। তারা খসড়া তৈরি করবে। স্টাফ অফিসার ইমেইলে বসের কাছে
পাঠাবে । বস ওকে করলে চিঠি চলে যাবে পুনরায় স্টাফ অফিসারের কাছে। স্টাফ অফিসাররা
টয়লেটের কমোডে বসেই নিদ্দিষ্ট ইমেইলে সেন্ড করে দিবে যে কোন সময়।
আসুন আমরা একটি পরিবেশ কল্পনা করি। যেখানে কম্পিউটার
নেই। সবার আছে বড় বড় স্ক্রিনের মোবাইল ফোন। ক্লার্ক তার স্টাফ অফিসারের কাছে একটা
চিঠি ড্রাফট করার নির্দেশ পেল। ক্লার্ক বাসায় বা অফিসে বসে স্মার্ট ফোনে চিঠি
ড্রাফট করল। স্টাফ অফিসারের কাছে ইমেইলে সেন্ড করল। স্টাফ অফিসার প্রয়োজনীয় সংশোধন
বা কারেকশন শেষে বসের কাছে পাঠাল। বস তার মোবাইলে দেখে নিয়ে ওকে করল। স্টাফ
অফিসাররা যেখানে যেখানে পাঠানোর প্রয়োজন সেখানে পাঠিয়ে দিল। আর সম্পূর্ণ কার্যক্রম
হবে ক্লাউডে। কোন কারণে কেউ এক্সিডেন্টে মারা গেল বা কারো মোবাইল ডিভাইস হরিয়ে
গেল। এতে কাজ বন্ধ থাকবে না। কারণ সমস্ত তথ্যাদি থাকবে অনলাইনে। মোবাইল হারালে বা মানুষ মারা গেলে কোন সমস্যা
নেই।
এখন আসি
ছোট একটা প্রতিষ্ঠানে যদি মোবাইল ফোনে অফিসের কার্যক্রম করা যায়। তা হল একটি
অনাবাসিক স্কুল। স্কুলের প্রশাসন কিভাবে পেপার-লেস করা যায়। স্কুলের জন্য কিছু
অ্যাপস থাকবে। ক্লাস টিচার ক্লাসে কারা কারা উপস্থিত তাদের উপস্থিতি মোবাইলের
অ্যাপসে দিবে। একাউন্টট্যান্ট কোন কোন স্টুডেন্ট বেতন দিল তার আপডেট মোবাইলের
সফটওয়্যারে এন্ট্রি করবে। সহকারী প্রধান শিক্ষক শিক্ষকদের উপস্থিতি ও ছুটির রেকর্ড
তার মোবাইল অ্যাপসে আপডেট করবে। শিক্ষকদের কারণ দর্শাও ইমেইলে দিবে। প্রধান শিক্ষক
তার মোবাইল থেকে সব তথ্য দেখতে পারবেন। তাই মোবাইলের অ্যাপস ও অনলাইন স্টোরে সব
কাজ হয়ে যাচ্ছে। যদি কোন ডকুমেন্ট মামলা বা অন্য কোন কাজে প্রয়োজন হয় তখন তা
অনলাইন বা ক্লাউড থেকে প্রিন্ট করার ব্যবস্থা থাকবে। তাই আধুনিক ছেলে মেয়েদের আর
কম্পিউটার ও খাতা কলমে কাজ না শিখিয়ে মোবাইলে টাইপিং ও অনলাইনে কাজ আর অ্যাপস
ব্যবহার শিখাতে পারলেই তাদের দিয়ে অফিসিয়াল সব কাজ করানো যবে বলে ধারনা করা যায়।
ক্লাসের প্রস্তুতিও তারা মোবাইলের সফট বই পড়ে নিতে পারব। অনেক রেফারেন্সও তারা সফট বই পড়তে পারবে। হয়ত একজন টিচার বিয়ের অনুষ্ঠান
আছে। পরের দিন তার ক্লাস আছে। সে তার মোবাইলে বা ট্যাবে সফট কপি থেকে পড়ে নিতে
পারবে।
এখন সময় এসেছে কম্পিউটার বাদ দিয়ে সস্তা স্মার্ট মোবাইল
ফোনের মাধ্যমে সব কাজ করে আমাদের তরুণ সমাজকে দক্ষ জনবল হিসাবে গড়ে তোলা। মোবাইল
ফোনের এরূপ একটি টেকনোলজি যা কিনা যেকোনো স্থানে ও যে কোন সময়ে অফিসিয়াল কাজ করা
যাবে। এরা যারা কাজ করবেন তাদের দিবে অনেক অনেক স্বাধীনতা বা ফ্রীডম। আজকাল
কম্পিউটার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমে এসেছে। কারণ এখন কম্পিউটার ক্রয় করলে অটোমেটিক
শেখা হয়ে যাচ্ছে। তবে এখন মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার ও স্মার্ট-ফোন ব্যবহারের জন্য
তিনদিন বা সাত দিনের কোর্স চালু করা যেতে পারে। ফেইসবুক আর ভাইবার ব্যবহার করতে
করতে বর্তমানে যুব সমাজ স্মার্ট-ফোনে অনেক দক্ষতাই অর্জন করেছে। তাই এখন অফিসিয়াল
কাজ স্মার্ট-ফোনে করার ইনোভেটিভ আইডিয়া তাদের বের করতে হবে। প্রয়োজন মোতাবেক
নিত্যনতুন অ্যাপস বানাতে হবে। লেখাটি উদ্দোগতা বা অন্যান্য উচ্চপদস্থ
ব্যক্তিবর্গকে চিন্তার খোঁড়াক যোগাতে পারলে আমার এ লেখা সার্থক হবে।
No comments:
Post a Comment