Pages

Saturday, October 25, 2014

আমরাও হতে পারি মননশীল ও মহান মানুষ

আমরাও হতে পারি মননশীল(Intellectual) ও  মহান(Great) মানুষ এ লেখাটি সুত্রপাত হল আমার পড়া একটা মটিভেশনাল বই থেকে।
মাঝে মাঝে লেখকের লেখায় বন্ধত্য আসে। তেমনি বেশ কিছুদিন লিখতে গিয়ে অলসতায় পাচ্ছিল। ল্যাপটপ আর  কীবোর্ড নিয়ে লেখালেখি করতে ইচ্ছে করছিল না। এক সময় মনে হল বাংলা টাইপিং কষ্টকর বলে হয়ত লিখতে ইচ্ছে করছে না। বেশ হয় যদি কাগজে কলম দিয়ে লিখে কোন সহকারীর মাধ্যমে টাইপ করিয়ে নেয়া যাক। তাও ইচ্ছে করছিল না। সেদিন কোর্সমেট লে: কর্নেল তারেক, ইন্ঞ্জিনির্য়াসের মেইলটি পড়ে যা মনে আসে তাই লিখতে বসলাম। যা মনে আসে তাই লিখছি। তাও লিখতে বসি। তারেক, ইন্ঞ্জিনির্য়াসের মেইলটি  নীচে দিলাম:
“For quite sometime the group is maintaining a kind of sobriety. Particularly, missing the hot topics and writing from my friend Tareq Mahmood sarkar. I am sure he can read my mail from Kushtia and will continue exploring his writing skills. 

Even if I don't comment most of the times,  I enjoy these writings.  

As far as I can remember Akbar was talking about a G2G on 9 January 2015. I am not sure whether he still holds the same spirit. 

Tarek, Engrs”

বন্ধু তারেক,আমরা কেউ যদি প্রতিদিন সকালে ৫০০ ওয়ার্ড লিখি তাহলে বছর শেষে একটি বই লেখা হয়ে যাবে। প্রতিদিন লেখা এটা একটা শক্ত অভ্যাস অনেকটা নিয়মিত পিটিতে যাওয়ার মত। আর সকালে উঠে পিটিতে যাওয়ার সময় মনে পড়ে বিখ্যাত বানী
 “Early to rise and early to bed makes a man healthy , wealthy and wise”  
তবে এ কোটেশানটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে ঠিক নেই ।
সকালে উঠলে শরীর ভাল থাকে এটা সন্দেহ নেই। তবে সকালে না উঠে যারা বিকালে জিম করে তারাও তাদের স্বাস্হ্য ভাল রাখতে পারে। সকালে উঠলে বিদ্ধান হওয়া যায় এ কথাটাও ঠিক না। এখনকার বিদ্বানরা নিয়মিত রাত জেগে পড়াশোনা করে আর সকালে ঘুমায়। সেনানিবাসে পিটির আগে ঝাড়ু দেয় এনসিই পার্টি তারাই সবচেয়ে আগে উঠে অথচ তারা চতুর্থ শ্রেনী। আর সফল ব্যক্তিরা যাদের আর্থিক ও সামাজিক স্ট্যাটাস ভাল তাদের কিন্তু ঝাড়ুদারদের মত অত সকালে ঊঠতে হয় না।
দেখা যাচ্ছে, সকালে ঘুম থেকে উঠার সাথে স্বাস্থ্য, অর্থ ও বিদ্বান হওয়ার কোন যোগসূত্র নেই। এটা আবিষ্কার করার পর আমি আমার সন্তানদের আমার বাবার মত সকালে উঠার জন্য আর চাপ দেই না। তবে নামাজের জন্য সকালে উঠা পুনরায় ঘুমিয়ে নেয়া এটা আমাদের অনেকের অভ্যাসে আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সকালে উঠার অভ্যাস ধরে রাখার চেস্টা করছি কারন সকালে উঠলে মনটা ফুরফুরে থাকে। আর সকালে হাটাহাটি করে আসলে শরীরের অনুভুতি গুলো চাংগা থাকে এবং খিটমিটে মেজাজ হয় না।
আমার বয়ষী ক্যাডেট কলেজের বন্ধুরা বা সেনা বন্ধুরা আমাদের অধিকাংশের বর্তমান আর্থিক অবস্থানে মাসিক আয় ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে। হয়তবা দুই একজনের আরো বেশী হতে পারে(প্রবাসী ব্যতীত)। বয়ষ ৪২ হতে ৪৫ এর মধ্যে। আমাদেরই একজন সেনা অফিসারের কাছ থেকে আমি অনেকটা কৌতুকচ্ছলে জানতে পারি সেনা অফিসারদের “স্ট্যাটাসগত” শ্রেনী বিভাগ আছে। এর কোন না কোনটির মধ্যে আমাদের অবস্থান রয়েছে বা ভবিষতও থাকবে।
১। ভিআইপি মেজর (শরীরের ভিন্ন অংশের চুল সফেদ হওয়া অভিজ্ঞ মেজর)
২। আইপি অফিসার ( লে: কর্নেল/নন ভিআইপি)
৩। ভিআইপি(কর্নেল)
৪। জেনারেল (বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ও তদউর্ধ্ধ)
তবে ভিআইপি মেজরের আগে আরো কয়েকটি ক্যাটাগরী আছে যা আমরা পার করে এসেছি:
১। সাবালতান(সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট/লেফটেন্যন্ট)
২। জুনিয়ার অফিসার(ক্যাপ্টেন)
৩। জুনিয়ার মেজর (১৩ বছরের নীচে চাকুরী, শরীরের বিভিন্ন অংশের চুল এখনও কৃষ্ঞ বর্ন)
৪।সিনিয়র মেজর (১৩ বছরের উপরে চাকুরী, কমান্ড নেয়ার জন্য অনুশীলনরত এবং উধ্ধর্তন কর্মকর্তার প্রতি অতীব শ্রদ্ধাশীল)।
৫। সুপারসিডেট মেজর বা ভিআইপি মেজর।
যাক গে, এ ধরনের ফানি শ্রেনী বিভাগের বর্ননায় আমি যাচ্ছি না।  এটার আমার পরবর্তী বক্তব্যেও নাই। তবে আমাদের এ বয়সে আমরা নিজেদের মানবীয় গুনাবলীতে  দুইটি ক্যাটাগরীতে নিজেদের তৈরী করে নিতে পারি। এর সাথে ভিআইপি, নন ভিআইপি, কোটিপতি ও লাখপতির কোন ভেদাভেদ নেই। মানবীয় গুনাবলীর ক্যাটাগরীতে দুইটি শ্রেনী রয়েছে একটা সাধারন মানুষ ও অপরটি মননশীল মহান মানুষ। নিজেদের যাচাই করার জন্য আমি ব্রিটিশ লেখক ডেভিড জে শ্বার্টজ এর “The Magic of Thinking Big” অবলম্বনে (কিছুটা সহজীকরন করে উপস্থাপন) নীচের  ছকটি দিলাম:
কার্যক্রম/পরিস্থতি
সাধারণ মানুষ
মননশীল মহান ব্যক্তি
খরচপত্র
খরচ কম করে। আয় বৃদ্ধির পথ খুঁজে।
প্রয়োজনে উদারভাবে খরচ করে। আয়ের উৎস তৈরি করে।
কথাবার্তা বলা
বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিষয়ে  নিন্দা ও সমালোচনা করে।
সর্বদা প্রশংসা ও ভাল কথা বলে উৎসাহিত করে।
প্রগতি
প্রতিষ্ঠান নিয়মতান্ত্রিক পরিচালনায় সতর্ক পদক্ষেপ নেয়।
বিস্তার ও বৃদ্ধিতে আগ্রহী
ভবিষ্যৎ
মনে করে ভবিষ্যতের সম্ভবনা সীমিত
ভবিষ্যৎ অসীম সম্ভাবনাময় মনে করে
কাজ
প্রয়োজনীয় কাজের বাইরে কাজ করতে অনাগ্রহী
কাজের নিত্য নতুন পন্থা ও বিষয় অন্বেষণ করে অন্যদের কাজে সহায়তা করতে আগ্রহী
প্রতিদ্ধন্দিতা
সমসাময়িকদের সাথে ও নিন্মপদের লোকদের সাথে তুলনা /প্রতিদ্ধন্দিতা করে
শ্রেষ্ঠদের সাথে প্রতিদ্ধন্দিতা করে
বাজেটের সমস্যা
প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কম কেনে । সঞ্চয়ের পথ খুঁজে।
প্রয়োজনীয় দব্যাদি উদারভাবে কেনে। আয় বর্ধক কাজ করে।
লক্ষ্য
ছোটখাটো লক্ষ্য স্থির করে
বড় বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করে
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
স্বল্পকালীন পরিকল্পনা তৈরি করে
দূরদর্শী, দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা করে।
নিরাপত্তা
নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকে
নিরাপত্তাকে সফলতার সঙ্গী মনে করে
সহচর্য
সাধারণ মানুষের সহচর্য চায়
প্রগতিশীল ও বিচক্ষণ সঙ্গীদের সহচর্য চায়
ভুল-ত্রুটি
সামান্যতম ত্রুটিও বড় করে দেখে। অযথা সমস্যা বাড়ায়
অপ্রয়োজনীয় ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করে।

আমরা আমাদের যে কোন আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান থেকেই মহান ও মননশীল হওয়ার অনুশীলন করতে পারি। নিজেকে মহান করার অনুশীলনের জন্য নিচের বিষয়গুলি মনে রাখুন:
১। নিজেকে ঠকাবেন না। নিজেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। নিজের গুনগুলো খুঁজে দেখুন। আপনি নিজে যা মনে করেন আপনি তার চেয়ে বড় মাপের মানুষ। কেউ আপনাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলে আপনার উদারতা ও বিশলতা দিয়ে উত্তর দিন।
২। মননশীল ব্যক্তিদের শব্দাবলী ব্যবহার করুন। প্রশংসাসূচক, উদ্দীপক ও শ্রুতিমধুর শব্দ ব্যবহার করুন। যে শব্দে রয়েছে বিজয়, আশা-অভিলাষ, আনন্দ, খুশির প্রতিশ্রুতি তেমন শব্দ প্রয়োগ করুন। যে সব শব্দে মনে হতাশা, ব্যর্থতা ও দুখের অনুভূতি হয় সেগুলো বর্জন করুন।
৩। দৃষ্টি প্রসারিত করুন, যা আছে শুধু তাই নয়,যা হতে পারে, যা করা সম্ভব, তাও দেখুন। কোন বিষয়ে দক্ষতা পাবেন বিবেচনায় আনুন, কোন কোন মানব সম্পদ কাজে আসবে চিন্তা করুন, নিজের অমুল্য নেতৃত্বকে বিশ্বাস করুন।
৪। আপনার কাজের বৃহত্তর উদ্দেশ্যটা জেনে নিন। বিশ্বাস করুন, আপনার বর্তমান কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বর্তমান কাজের প্রতি আপনার ইতিবাচক মনোভাবই আপনার উন্নতির জন্য প্রয়োজন।
৫। তুচ্ছতা ও ক্ষুদ্রতাকে  উপেক্ষা করতে শিখুন। বড় লক্ষটির দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ রাখুন। তুচ্ছ ব্যাপারে নিজে জড়িয়ে যাওয়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, এটা কি সত্যি জরুরী?
পরিশেষে বলা যায় বড় মাপের মানুষ হয়ে ওঠার জন্য বড় বড় ভাবনা চিন্তা করুন

বিদেশী মটিভেশনাল বই থেকে ধার করা তথ্য উপস্থাপন করলাম, আমার বড় বড় বন্ধুদের জন্য। যারা দেশ জয়ের পাশাপাশি একসময় বিশ্বজয় করবে। আর আমিও একদিন সাহিত্যকে জয় করব।

No comments:

Post a Comment