আমার স্বদেশী দ্রব্যাদি ব্যবহারে বিশেষ প্রীতি আছে। আমি যখন ছোট। তখন বাবা, মা, ভাইবোন ও আত্মীয় স্বজন প্রায় সকলের মাঝে বিদেশী দ্রব্যাদির ক্রয় ও ব্যবহার করার একটা আগ্রহ দেখতাম। দেশের দ্রব্যে তাদের মন ভরত না। সেই ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৫ সাল ৩৫
বছর পর আমার দেশের সকল দ্রব্যের মান দিন দিন অনেক উন্নত হচ্ছে। একসময় বাচ্চার জন্য বিদেশী ড্রায়াপার ব্যবহার
করতাম আজ দেশী কোম্পানির উন্নত ড্রায়াপার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আমি দীর্ঘদিন ধরে দেশে উৎপাদিত নিত্য ব্যবহ্রত সামগ্রী যেমন: কসমেটিক্স, সাবান ও কাপড় ইত্যাদি ব্যবহার করছি। আগে ভারতীয় কাপড় চোপড় ক্রয় করা নিয়ে স্ত্রীর সাথে বিরোধ বাধত। এখন অবশ্য তা নেই। এখন স্ত্রী বিশ্বাস করে দেশী কাপড়ই ভাল। এমন কি
দেশী কাপড় কিনতে বেশী টাকা প্রয়োজন আর ভারতীয় কাপড় যথেষ্ট কমে পাওয়া যায়। ভারতীয় কাপড় টেকসই কম। ভারতীয় চকলেট ও খাবারে বাজার সয়লাব। এটা বাদ দিতে পারলে ভাল হত। বিদেশী খাবার সামগ্রী দেশে উৎপাদিত সামগ্রী থেকে মান সম্পন্ন হওয়ার কথা নয়। তবে কিছু সংখ্যক নীতি বিবর্জিত ব্যবসায়ী সততা বিনষ্ট করে মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে।
আমি যতই বিদেশী দ্রব্যাদি বর্জন করি না কেন, কয়েকটা দ্রব্যের ব্যবহার ছাড়তে পারছিলুম না। সেটা হল
রেজার ও সেভিং ফোম। বাধ্য হয়ে জিলেট জেল বা
ফোম দীর্ঘদিন যাবত ব্যবহার করে আসছিলাম। এটার দেশী কোন বিকল্প খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কয়েকদিন আগে(২০১৪ সালের নভেম্বরে) আমাদের প্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনে একটা সেভিং ফোম পেলাম। নাম কুল(Kool)। প্রথমেই ধারনা করলাম এটা ভারতীয়। পরে দেখতে চাইলাম। গায়ে “স্কয়ার” লেখা দেখে মনটা খুশীতে ভরে গেল। আমার দীর্ঘ দুই যুগের চাহিদা মূহুর্তেই মিটে গেল। তড়িঘড়ি করে কিনে নিয়ে আসলাম। বাসার জিলেটের প্রায় শেষের পর্যায়ে থাকা জেলের কোটাটি ছুড়ে ফেলে দিলাম। বিকালে গেমসে যাওয়ার আগে (প্রয়োজন ছাড়াই) স্কয়ারের
কুল ফোমটি দিয়ে সেভ করলাম। ম্যানথল থাকায় ভালই লাগল। মনে হল, অনেকদিন পর বহু আকাঙ্ক্ষিত একটা দেশী দ্রব্য ব্যবহার করছি। ঝটপট লিখে ফেলতে মনটা আকুপাকু করছিল। পড়ে মনে হল, আমি সাধারণত কোন কিছু রেজাল্ট না পেলে লিখি না। ঠিক করলাম তিনমাস ব্যবহার করে লিখব। তিনমাস ধরে ব্যবহার করছি বিরূপ কিছু মনে হয়নি। তবে একটা বিষয় ফিল করছি। একই মাপের জিলেট কনটেইনার যত তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে। এটা মনে হয়, তার চেয়ে ধীরে শেষ হচ্ছে। দামটা জিলেটের তুলনায় কম। ৪০০ গ্রাম বিগ সাইজ ২২৯ টাকা। ছোটগুলি যেমন ২০০ গ্রাম ও ১০০ গ্রাম আনুপাতিক হারে দাম বেশী। ৪০০ গ্রামের একটা ফোম কিনলে মনে হয়
৬ মাস পার হবে। আমার কুল ব্যবহারে কুল থাকার পর আমি আত্মতৃপ্তিতে আছি। তখন জানতে পারলাম আমার প্রতিবেশী একজন কর্মকর্তা এটা ব্যবহার শুরু করেছেন। মনে মনে তাকে শ্রদ্ধা জানালাম।
ওয়েবসাইট:
http://squaretoiletries.com/kool.php
আমার প্রতিনিয়ত ব্যবহ্রত আইটেমের মধ্যে বাকী থাকল রেজারটি। আশা করি কোন একদিন এটিও দেশের তৈরি পাব। এখনও হয়তবা ভাল মানের দেশী রেজার আছে। যা আমি জানিনা। হয়তবা দেশীগুলো মান সম্পন্ন হয়ে উঠেনি। কয়েকটা দিন দেরী হতে পারে। যেদিন রেজারটি দেশী(সেফটি রেজার) কোম্পানির পাব সেটিও হবে আমার জন্য আরেকটি সুখের দিন। দেশের টাকা দেশে রাখার জন্য ব্যক্তিগত পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে আমি ও
আমার পরিবার টেলিটক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যাচ্ছি। নেটওয়ার্ক-গত অনেক প্রতিবন্ধকতার পরেও। বর্তমান কালে গ্লোবালাইজেশনের যুগে দেশের জন্য অপ্রয়োজনীয় ভালবাসা হয়তবা অনেকের চোখে ফানি মনে হতে পারে।
দেশপ্রেম ভাবনার কিছু দিক আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আমার মত
ছাপোষা কর্মকর্তার দেশ প্রীতি অনেকটাই হাস্যকর। দেখুন, দেশ যারা চালান তাদের সন্তানরা-তো গ্লোবাল সিটিজেন। তার কারণ হয়ত আমাদের দেশের প্রতিহিংসার রাজনীতি। এটা স্বাভাবিক। নেতারা নিজেদের সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য বিদেশ মুখি হন। আজ যদি আমেরিকায় ইউক্রেনের মত
অবস্থা থাকত, তাহলে হয়ত ব্যারাক ওবামার সন্তানদের আমেরিকা ছেড়ে অন্য দেশে পাঠাতেন নিরাপদ আশ্রয়ে।
বর্তমান আইটির যুগে জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ খান একাডেমীর বদলে আমেরিকার মানের পড়াশোনার লেকচার ভিডিও বাংলাদেশে পাওয়া যায়। ইটালিয়ান পিজার রেসিপির ভিডিও দেখে আমাদের সন্তানরাই ঘরে বসে ইটালিয়ান পিজা তৈরি করে নিতে পারছে।। আমাদের অনেকের কাছে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন নিরাপত্তার জন্য। অনেকের জন্য রুজি ও রুটির প্রয়োজনে নিকটজনকে দেশে রেখে বিদেশ যাওয়া। অনেকেই আছেন বহির্মুখী হন বিদেশের আদলে দেশকে গড়ার জন্য। তাদের প্রতি রইল শুভেচ্ছা।
সেই সাথে দেশের দ্রব্যাদি ব্যবহারে দেশের টাকা দেশে রাখার মানসিকতায় থাকলে আমাদের সন্তানদের জন্য না হোক তাদের নাতি/পুতিদের জন্য বাংলাদেশ হবে বসবাসের জন্য কাঙ্ক্ষিত ভূমি। যেখানে প্রবাসীরাও ফেরত আসার জন্য বিচলিত থাকবে। আমাদের প্রবাসীরা প্রবাসে থাকলেও অনেকেই তাদের নিত্য ব্যবহার্য পণ্য দেশ থেকেই সংগ্রহ করেন এটাও দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত। আমরা সকলে আশাবাদী আরো কিছুদিন পর আমাদের দেশ বসবাসের জন্য নিরাপদ হবে। কারণ আমাদের সচেতনতা আরো বাড়বে ও নেতৃত্বে প্রতিহিংসা হ্রাস পাবে। আমাদের দেশ প্রেমের পাশাপাশি আমরাও স্বদেশী পন্য কিনে হব ধণ্য।
No comments:
Post a Comment