Pages

Thursday, February 4, 2016

পরিবার নিয়ে কলকাতায় বেড়ানো

২১ জানুয়ারি ২০১৬ আমার পরিবারের জন্য এক‌টি স্মরণীয় দিন। আমার পরিবারের সকল সদস্য পাস‌পোর্ট ও ভিসা নি‌য়ে দেশের বাইরে আসল। আমার কেজিতে পড়ুয়া ছোট মে‌য়ে ‌ইমিগ্রে‌শনে স্বহ‌স্তে স্বাক্ষর করল। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের সুবাদে অনেক দেশ দেখার সৌভাগ্য হলেও বিভিন্ন কারণে পরিবার নি‌য়ে দেশের বাইরে পা রাখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে বিএসএফ আ‌য়ো‌জিত ফ্যামিলি প্রোগ্রামে যদিও বর্ডারের আসে পাশে দুইবার পরিবার নিয়ে বিনা পাস‌পোর্ট ও ভিসায় ভারত গমন করেছিলাম।
পরিবার নি‌য়ে বিদেশ ভ্রমণ না কর‌তে পারার জন্য আর্থিক কারণটাই মুখ্য। প্রথম কারণ বিপুল পরিমাণ টাকা শেয়ার মার্কেটে হারি‌য়ে ঋনগ্রস্থ হওয়া। দ্বিতীয় কারণ পিতার রিটায়‌মে‌ন্টের পর পিতামাতা গ্রামে থাকার কারণে গরীব আত্মীয় স্বজন‌দের অহরহ টাকা দি‌তে হয়। তখন মনে হয় কারণ ছাড়া শুধুমাত্র বেড়ানোর জন্য বিদেশ গি‌য়ে লক্ষ টাকা খরচ করার চেয়ে দশ হাজার টাকা ক‌রে দিলেও এক লক্ষ টাকায় অন্তত গ্রামের ১০ জনের ভাগ্য বদলের সহায়তা কর‌তে পারি। চাকুরীর ক্যারিয়ারে সচেতন না হওয়ার কারণে অনেকের মত প্রমোশন উন্নতি লাভ করে ও বিদেশে  কোস ও অন্যান্য অগণিত কর্মকাণ্ডে সরকারী খরচে  অনেকের মত বিদেশ যাওয়ার ভাগ্য আমি তৈরি করতে পারিনি। যাতে পরিবার উৎসাহ পাবে।
যাকগে যা হোক বিজিবিতে চাকুরী করার সুবাদে ‌বিএসএফ এর সাথে পতাকা বৈঠকের সময় অনেক বিএসএফ অফিসাররা ছুটি নি‌য়ে ভারত বেড়ানোর জন্য আমন্ত্রণ করেছিল। বিশেষ ক‌রে যে সব ‌বি‌এস‌এফ অফিসাররা বাংলাদেশে কোর্স করেছে বা ভিজিট করেছে তাদের আগ্রহটাই বেশী। পরে হিসাব করে দেখলাম দর্শনা বর্ডার দিয়ে ভারতের কলিকাতায় বেড়ানো বেশ সাশ্রয়ী। দূরবর্তী দেশে বেড়ানোর চিন্তা বাদ দিয়ে কাছাকাছি দেশ দিয়ে পারিবারিক বিদেশ ভ্রমণ শুরু করা যেতে পারে। বিশেষ করে বর্তমান যুগে নিজের সংগতি থাকতে দুই একটা দেশে না ঘুরালে সন্তানরা মনো কষ্ট পাবে। যেখানে সমসাময়িক কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের বিদেশ ভ্রমণের গল্প শুনতে শুনতে পরিবার হীনমন্যতায় ছিল।
আমার ইঞ্জিনিয়ার পিতা নিজে অনেক দেশ ঘুরলেও আমাদের মাকে সহ ছয় জন ভাইবোনকে অন্য দেশ দেখানোর মত সাহস করেননি। অবশ্যই তা খরচের জন্য। সেজন্য আমার শখের মধ্যে প্লেনে উঠার শখ‌টি চাকুরীর পাওয়ার প্রথমে পূরণ করে ফেলি। ঢাকা সৈয়দপুর বিমান ভ্রমণ ক‌রে। তবে বিয়ের প‌রে চাকুরীর টাকায় টানা পূরণে পুনরায় আর্থিক কারণে বিদেশ যাওয়ার অভিঞ্জতা অর্জনে ব্যর্থ হই। তবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যাওয়ার কারণে বিদেশ যাওয়ার সু‌যোগ‌টি পাই চাকুরীর নয় বছরের মাথায়।
কলিকাতা শহর আর ঢাকা শহরের মধ্যে তেমন পার্থক্য চো‌খে পড়েনি।
লোকজনের পোষাকে একটা পার্থক্য দেখা যায়। ঢাকার রাস্তা ঘাঁটে লুঙ্গি পড়া লোকের সংখ্যা বেশী। এখানে কম। ইন্টারনেটে বাংলাদেশ থেকে কলিকাতার বেড়ানো সহায়ক অনেক অনেক তথ্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। কলিকাতার গুগল ম্যাপ অনেক বেশী আপডেটেড। নিজ লোকাশান থেকে অন্য লোকেশানে গেলে অনলাইন রাস্তার তথ্য, বাসের তথ্য ও ট্রাফিক জ্যামের তথ্যাদির আপডেট পাওয়া যায়। রিয়েল টাইম ইনফরমেশন এভাবে  পাওয়া যাবে। যে কোন সময়ে যে কোন স্থান হতে যেতে পাবলিক ট্রান্স‌পোর্ট ট্রেন,বাস ও হাটা ইত্যাদি পন্থায় ‌নি‌দ্দিষ্ট  স্থানে কিভাবে যেতে হয় তার গাইড গুগল ম্যাপে পাওয়া যায়। তা সত্যি চমৎকার।‌  গুগল ম্যাপে ঢাকা শহরের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ও অন্যান্য তথ্যাদি পাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করে দেখলাম। ঢাকার পাবলিক ট্রান্সপোটের্র কোন তথ্য নেই।
দেশে থাকতেই কোথায় কোথায় বেড়া‌নো যায় তার সমস্ত তথ্যাদিই আমার ছেলেরা ইন্টারনেট থেকে নিয়ে‌ছিল। মুলত: সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের বেড়ানো আগাচ্ছিল। থাকা ও খাওয়ার জন্য বিএসএফ এর বন্ধু অফিসাররা ব্যবস্থা ক‌রে দিয়েছিল। যার ফলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ ব্যবস্থা পেয়েছিলাম। দুই একদিন বন্ধু অফিসাররা ‌ গাড়ী ও গাইড দিয়ে সহায়তা করেছিল।
আমাদের‌ বেড়ানোটা যেভাবে করি তা নিমরুপ:
২১জানুয়ারী ২০১৬: বাংলাদেশ হতে দর্শনা ও গেতে হয়ে ভাড়া করা কারে কলিকাতা আসা।
২২ জানুয়ারি ২০১৬: কলিকাতা নিউ মার্কেট গমন ও কিছু কেনাকাটা করা। মার্কেটে কি কি পাওয়া যায় তার ধারনা করা।
২৩ জানুয়ারি ২০১৬: বিএসএফ কলিকাতা সেক্টরের নিকটবর্তী আলম বাজার এলাকায় বেড়া‌নো। হাওড়া এলাকায় হুগলী নদীর তীরবর্তী স্বামী বিবেকানন্দের বেলুড় মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয় দেখা। পিলার বিহীন বিশাল উঁচু হাওড়া ব্রিজ দেখা। দক্ষিনেশ্বর মন্দির দেখা।
২৪ জানুয়ারি ২০১৬: ‌নিউটাউন এর সাইন্স সিটিতে ঘোরে বেড়ানো।
২৫ জানুয়ারি ২০১৬: নিউ মার্কেট ও নিকটবর্তী এলাকায় বেড়ানো।
২৬ জানুয়ারি ২০১৬: ইকো ট্যুরিজম পার্ক দেখা  ও সল্ট লেকের সিটি সেন্টারের কেএফসিতে ডিনার করা।
২৭ জানুয়ারি ২০১৬: ভি‌ক্টো‌রিয়া মেমোরিয়াল ও পার্ক স্ট্রীট এলাকার ডোমিনোজে লাঞ্চ করা।
২৮ জানুয়ারি ২০১৬: প্রি‌ন্সেপ ঘাটে বেড়ানো ও হাওড়ার এ্যাভোনী রিভারসাইড মলের ম্যাকডোনালসে লাঞ্চ করা।
২৯ জানুয়ারি ২০১৬: ‌অলিপুর চিড়িয়াখানায় বেড়ানো ও নিউ টাউনের সিটি সেন্টার-২ শপিং মলের সাবওয়ে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করা। দমদম এয়ারপোটের্র কাছে হলদি রামের শোরুম থেকে শুকনো মিষ্টি কেনা।
৩০ জানুয়ারি ২০১৬: কলকাতা হতে ভাড়া করা কারে গেদে দিয়ে বাংলাদেশে  প্রবেশ।
কলিকাতায় যাওয়ার পর দুইদিন পর্যন্ত নতুন স্থানে গমন ও আবহাওয়ার ভিন্নতার কারণে আমার ছেলেমেয়েদের ভাল লাগছিল না। তৃতীয় দিন থেকে তাদের ভাল লাগা শুরু হয়। আমার ভয় হচ্ছিল দশ দিন ছুটি কাটাতে পারি কিনা।  পরে দেখা গেল একনাগাড়ে আটদিনের প্রতিদিন বেড়িয়েও সন্তানদের উৎসাহের কমতি ছিল না। যাওয়া ও আসা সহ দশদিন সুন্দরভাবে আমার সন্তানরা কলিকাতায় কাটাতে পেরেছিল। এজন্য তারা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আমার স্ত্রী আমা‌দের সাথে বড়সড় হাটায় ও বেড়ানোতে অংশগ্রহণ করতে পেরেছিল।

পরিশেষে কলিকাতায় ছোট পরিসরে পরিবার নিয়ে বিদেশ ভ্রমণের অনুভূতি চমৎকার। ছোট বাজেটে বিদেশ ভ্রমণের স্বাদ পেতে কলিকাতা মন্দ নয়।

No comments:

Post a Comment