ভারত ৮ নভেম্বর
২০১৬ তারিখে ৫০০ ও ১০০০ টাকা নোট বন্ধের পর ক্রেডিট ও ডেভিড কার্ড ও মোবাইল মানি
অনেক অনেক জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতে ২০১০ সালে বিজয় শেখর শর্মা
নামে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা ভারতে পড়াশোনা সম্পন্ন করা কম্পিউটার
ইঞ্জিনিয়ার একজন উদ্যোক্তা “ওয়ান৯৭ কমিউনিক্যাশন” নামে
একটি মোবাইল রিচার্জ প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। এ প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালে পেটিএম নাম ধারণ
করে। “পেমেন্ট থ্রো মোবাইল” সংক্ষেপে পেটিএম(Paytm)। রতন টাটা ও আলী বাবা পেটিএমএ বিপুল
পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করেছে। ২০১৬ সালের ৮ই নভেম্বরের পর কোম্পানিটি অনেক অনেক বেশী
জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ২০১৫ সালের পর ভারতের পেটিএম চালু হয়েছে। পেটিএম বাংলাদেশের
বিকাশ থেকে আরো উন্নত ব্যবস্থাপনা নিয়ে এসেছে। বিকাশ ২০০৭ সাল থেকে মূলত:
কার্যক্রমের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২১ জুলাই বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম
শুরু করে। বাংলাদেশের ব্র্যাক ব্যাংক ও ইউএসএর “মানি ইন মোশন”
নামক কোম্পানির সাথে যৌথভাবে কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে
মাইক্রোসফটের বিল গেটস বিকাশে ইনভেস্ট করে। বাংলাদেশ সরকার বিকাশকে দেশের ৪৫০১টি
ইউনিয়নের ইনফরমেশন সেন্টারে কার্যক্রম করার অনুমতি দিয়ে রেখেছে। অল্প টাকা লেনদেনে
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম বিকাশ। বিকাশ আগে শুরু হয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয়
বৃহত্তম মোবাইল ব্যাংকিং হলেও মনে হয় ভারতের পেটিএম অতি শ্রীগ্রই বিকাশকে হারিয়ে
দিবে। ৭৫ মিলিয়ন পেটিএম এ্যাপস ডাউন লোড হয়েছে। অর্থাৎ ৭.৫ কোটি মানুষ এটা ব্যবহারের
সাথে সম্পৃক্ত আছে।
বিকাশের সাথে
ব্র্যাক ব্যাংক লিংক থাকলেও অন্যান্য ব্যাংক এর সাথে লিংক নেই। ডাচ বাংলা ব্যাংকের
রকেট মানি ডাচ বাংলা ব্যাংকের সাথে লিংকড। বিকাশ বা বাংলাদেশের অনেক মোবাইল মানি
এজেন্ট ও অন্যান্য অনেক এজেন্ট নিয়োগ করে এটা টাকা পাঠানো ও পাওয়ার জন্য অর্থাৎ
মানি অর্ডারের বিকল্প হিসাবে উত্তম ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু ক্যাশলেছ ইকোনমির জন্য
ব্যবহার হচ্ছে না। এক কাপ চা খেয়ে পেটিএম হতে পেটিএম গ্রাহককে হস্তান্তর করলে কোন
ফি দিতে হয় না। অর্থাৎ পেটিএম থেকে পেটিএমএ টাকা প্রেরণে কোন ফি না থাকায় চায়ের বিল
চার টাকাও পরিশোধ করা যাচ্ছে। কেবলমাত্র পেটিএম থেকে টাকা ব্যাংকে নিতে শতকরা
একটাকা চার্জ দিতে হয়। ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা পেটিএমে নিতে কোন টাকা
দিতে হয় না। এতে বিকাশের মত কোন নিয়োজিত এজেন্ট না থাকায় এটা অনেক বেশী গ্রাহক
বান্ধব। পরিচালনা খরচ অত্যন্ত কম।
পেটিএম ক্যাশ ইন
ও ক্যাশ আউট করার জন্য এজেন্টের কাছে যেতে হয় না। নিজেই নিজের ব্যাংক একাউন্ট হতে
টাকা ইন আউট করা যাবে। পেটিএম ব্যাংক পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে পরিচালনা
ব্যয় আরো কমে যাবে। গ্রাহকরা আরো বেশী উপকৃত হবে। ক্যাশলেছ ট্রানজিশানে টাকা হাতে
ধরার প্রয়োজন নেই। নিজেই নিজের সকল ট্রানজিশন করা যায়। স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে
হওয়ায় কিউআর কোড স্ক্যান করে লেনদেন করা যায়। লেনদেনকারীর মোবাইল নম্বর ও একাউন্ট
নম্বর টাইপ করার প্রয়োজন হয় না এবং টাইপের মাধ্যমে ভুল হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। টাকা
লেনদেন স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে পাঁচ সেকেন্ড করা যায়।
পেটিএম ভারতে
ক্যাশলেছ ইকোনমির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এতে দুনীতি, কালোটাকা ও জাল
টাকার ব্যবহার হ্রাস করবে। পেটিএম এর টাকাটা জড় বস্তু না হয়ে ডিজিটাল সংকেত হওয়ার
কারণে বাজারে টাকার প্রবাহ ব্যাপক থাকবে ও ইকোনমি শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশের
বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, শিউরক্যাশ
ইত্যাদি মোবাইল মানির কার্যক্রম এখন এজেন্ট ও ক্যাশ নির্ভর না করে ব্যাংকের সাথে
সংযোগ স্থাপন করে ক্যাশলেছ কার্যক্রমে যাওয়া প্রয়োজন। বাস ভাড়া, রিক্সা
ভাড়া ও গ্রামের চায়ের দোকানের বিল সব এখন চলে আসতে পারে মোবাইল মানিতে। আর পাঁচ
টাকা আদান প্রদান ফি দিয়ে বিকাশে এটা সম্ভব নয়। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের ঘুষ ও
দুনীতি রোধে ট্রেসেবল ট্রানজিশন করা। টাকার ব্যবহারে ট্রেসেবল ট্যানজিশন হয়না।
টাকা দিয়ে সহজেই ঘুষ দুনীতি সহজ। কিন্তু মোবাইল মানি বা ব্যাংক ট্রানজিশন ট্রেসেবল
ও প্রমাণাদি থাকায় ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন কারটা কঠিন। বাংলাদেশের দুনীতি
ও ঘুষ কমিয়ে আনার জন্য এখন প্রয়োজন ভারতের পেটিএমের আদলে মোবাইল মানি ও ব্যাংকগুলো
ক্যাশলেছ ইকোনমির দিকে নিয়ে যাওয়া। পরিশেষে বাংলাদেশের জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং
দেশকে ক্যাশলেশ ইকোনমির দিকে নিয়ে যাবে এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা। কাগজের টাকা
হাতে ধরে অনেকেই আমরা হাত ধুতে পারি না বা সম্ভব হয় না। এতে টাকার মাধ্যমে অগণিত
জীবাণুর কাছে আমরা সব সময় থাকছি। আমরা আর টাকা হাত দিয়ে ধরে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও
দুর্নীতির ঝুঁকিতে থাকতে চাইনা। স্বাস্থ্যগত কারণে ও দুনীতির জন্য ক্যাশলেছ ইকোনমী
অত্যন্ত জরুরী।
No comments:
Post a Comment