পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ লেছ ক্যাশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে কেউ কখনও হয়ত কোন চিন্তা করেনি বা ভাবনায় আনেনি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথমে দেশের ৫০০ ও ১০০০ টাকা নোট হঠাত করে বন্ধ করেন। তার কারণ ভারতের জাল টাকা, কালো টাকা ও দুনীতি নির্মূল করার আন্দোলন। দুনীতি যারা করে তারা মূলত নগদ লেনদেনে যেতে চায়। ব্যাংকিং লেনদেনে যায় না কারণ এতে টাকা লেনদেনের
রেকর্ড থেকে যায়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ৮ ই নভেম্বর ২০১৬ প্রথমে নোট বন্ধের মাধ্যমে প্রায় ৮৪% টাকা যা কিনা ৫০০ ও ১০০০ টাকা নোট হিসাবে ছিল তা বন্ধ করে ব্যাংকে জমার মাধ্যমে টাকা একটা হিসাবের মধ্যে আনেন। পরে ২০০০ টাকা ক্রমান্বয়ে নোট ছেপে শূন্যস্থান পূরণ করেন। তারপরও চাপ থেকে যায়। আর এ চাপ কাজে লাগাচ্ছেন ভারতকে লেছ ক্যাশ করার জন্য। ফরমুলা একটাই আর তা হল সমস্ত টাকা পয়সার লেনদেন ইলেক্ট্রনাক্যালী হলে তার রেকর্ড থেকে যায়। রেকর্ড রেখে লেনদেন সাধারণত কালো টাকার মালিক ও দুনীতি পরায়ণরা করতে চায় না। বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিবেশী দেশ। ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে আমাদের মিল আছে। তাই তাদের দুনীতির ধরন আমাদের দুনীতির মিল আছে। দুনীতির সুচকে ভারত থেকে বেশী দুনীতিতে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। তাই লেছ ক্যাশ ড্রাইভ ভারতের জন্য কার্যকর হলে এটা আমাদের জন্যও কার্যকর হবে। দুনীতি পরায়ণ লোকজন নগদ টাকা মূলত খরচ করে স্বর্ণ,গাড়ী,জমি,বাড়ী ইত্যাদি প্রপার্টি ক্রয়ের জন্য। তাই যে কোন লেনদেন হয়তবা পাঁচ হাজার টাকা বা দশ হাজার টাকার উপরে কেনা যাবে না। তাই দশ লক্ষ টাকায় গাড়ী ক্রয় করতে প্রথমে দশ লক্ষ টাকা ব্যাংকে প্রদান করতে হবে। ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে ক্রয় করতে হবে । এভাবে যে কোন মূল্যবান সামগ্রী ব্যাংকের মাধ্যমে ক্রয় বিক্রি হলে তা রেকর্ড থাকবে। যে কেউ টাকার উৎস সম্পর্কে বিবরণ দিতে বাধ্য হবে। এ ধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ফলে দুনীতি অবশ্যই কমতে বাধ্য।
ভারত সরকার ক্যাশলেছ করার জন্য যে ধাপগুলো অনুসরণ করছে তার দিকে নজর দেয়া যেতে পারে।
১। ব্যাংক একাউন্ট ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে।
২। ক্রেডিট কার্ড ও ডেভিট কার্ডের মাধ্যমে(বর্তমানে ভারত সরকার ডেভিট ও ক্রেডিট কার্ডের সার্ভিস চার্জ শূন্য রেখেছে)।
৩। মোবাইল ব্যাংকিং ও মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে।মাধ্যমে(বর্তমানে ভারত সরকার মোবাইল ব্যাংকিং এর সার্ভিস চার্জ শূন্য রেখেছে)।
৪। ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার ব্যবহার করে চেক ও কার্ড ব্যতীত লেনদেন।
৫। চাওয়ালা, সব্জিওয়ালা, টেক্সিওয়ালা সকলকে বিনা খরচে কার্ড সোয়াপ মেশিন ও মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদির মাধ্যমে টাকা গ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬। প্রতি পরিবারের কমপক্ষে দুইজন সদস্যকে ব্যাংক একাউন্ট করানো। এভাবে ভারতে বিনা ডিপোজিটে ২০ কোটি একাউন্ট তৈরি হয়। এতে প্রায় ২৬০০০ কোটি রুপি জমা হয় তবে ৪.৫ কোটি জিরো ব্যালেন্স একাউন্ট হয়। তবে সেটাও জিরো থাকবে না কারণ সরকার ৩৩০ টাকা প্রিমিয়ামে ২ লক্ষ টাকার মৃত্যু বীমা, ১ লক্ষ টাকার আহত বীমা, ৩০ হাজার টাকা চিকিৎসা বীমা ও গ্যাস সিলিন্ডারের সাবসিডি সকল কিছু সেসব একাউন্টে আসবে। সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে টাকা গেলে দালাল ও দুনীতি পরায়ণ লোকজনের উপদ্রব কমবে।
ক্যাশ লেছ হলে ব্যাংকিং পরিচালনার খরচ কমবে। আমানতের সুদ বাড়ানো যাবে। লোণ কম সুদে দেয়া যাবে। বিনিময় প্রক্রিয়া দ্রুত হওয়ায় অর্থনৈতিক চাকা আরো গতিশীল হবে। ব্যাংকিং সুবিধা অনলাইনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা পাওয়া যাবে।
অনলাইন ব্যবস্থা দেশের দুনীতি কমানোর পাশাপাশি সকল কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াবে। মানুষের হয়রানী ও বিপর্যয় কমাবে। ভারতের অনুসরণে বাংলাদেশেও করা যেতে পারে। আমাদের সকল স্থানে মোবাইল ইন্টারনেট সুবিধা আছে। অধিকাংশ মানুষের কাছে মোবাইল আছে। সকল ব্যাংকের অনলাইন সেবা আছে। দেশে ২০টি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং চালু আছে। আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারত অপেক্ষা আরো দ্রুত ক্যাশলেছ হতে পারব। আমাদের প্রয়োজন শুধুমাত্র অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কার্ডের মাধ্যমের লেনদেনের সকল সার্ভিস চার্জ সরকার বহন করলেই লেছক্যাশ অর্থ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব। ক্যাশলেছ বা লেছক্যাশ হলে সরকারের টাকা ছাপানো ও বিতরণের খরচ কমে যাবে। এই সাশ্রয় থেকে সরকার সকল ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিং বা কার্ডের সার্ভিস চার্জ সরকারের পক্ষ হতে পরিশোধ করা সম্ভব হবে। আশা করি বাংলাদেশও একদিন লেছক্যাশ ইকোনমি গড়ে উঠবে।
No comments:
Post a Comment