Pages

Thursday, December 14, 2017

আবাসন বীমা

বাংলাদেশের আবাসন শিল্প এখনও ভাল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ মানুষ একটা ঠিকানা চায়। তাই যাই দাম হোক একটা ফ্লাট, প্লট ও বাড়ী ঠিকানা হিসাবে সবাই চায়। আমি ২০১৭ সালে ৪৭ বছর বয়সেও একটা স্থায়ী নিবাস চাইযখন ফ্লাট ক্রয় করার চিন্তা করি এবং কিছুটা উন্নত ফ্লাটের দাম শুনি কোটি টাকা। তখন এক‌টি হিসাব মাথায় চলে আসে আর তা হল কোটি টাকার ফ্লাট ভাড়া দিলে কত ভাড়া পাব। যখন জানা যায় ভাড়া হবে ৩০/৩৫ হাজার টাকা তখন আর হিসাব মেলে না। মনে হয় ফ্লাট না কিনে টাকা ব্যাংকে রেখে তার লাভ দি‌য়ে বাড়ী ভাড়া প‌রি‌শোধ ক‌রেও আরও টাকা জমা‌নো যা‌বে। উপরন্তু কোটি টাকা অপরিবর্তিত থাকবে। যারা সুদ বা ব্যাংকের মুনাফা নি‌তে চান না তারা ব্যাংকের শরীয়া মোতা‌বেক একাউন্ট খুলে টাকার বিপরীতে লাভ বাড়া‌তে পারবেন। আমি ধারনা আবাসন আমরা চাই নিরাপত্তার জন্য। প্রথম নিরাপত্তা হল, আমি ভাড়া দিচ্ছি। মনে হচ্ছে‌ খালী খালী অনেক টাকা ভাড়া বাবদ অপচয় হচ্ছে। নিজের বাড়ী থাকলে এই টাকাটা খরচ হত না। দ্বিতীয় সমস্যা হল, বাড়ী ভাড়া নিয়মিত বৃদ্ধি পায়। যদিও ঢাকা শহরের বাড়ী ভাড়া বছর বছর না বেঁড়ে তা সাধারণত সরকারী চাকুরে‌দে‌র বেতন বাড়ার সাথে বেঁড়ে থা‌কে। তৃতীয় সমস্যা হল, ঘন ঘন বাড়ী পরিবর্তন। এটার কোন সমাধান নেই। কারণ একজন বাড়ীওয়ালা কখন কোন প্রয়োজ‌নে তার বাড়ীর প্রয়োজ‌ন হবে তা সে নিজেও জানে না। তাই ভাড়া বাড়ির স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা নেই। তবে প্যাক এন্ড পার‌সেল প্রতিষ্ঠানে টাকা দিলে পুরাতন ভাড়া বাড়ী হ‌তে নতুন ভাড়া বাড়ী‌তে হুবহু বদলী ক‌রে দেয়। এতে অনেক টেনশন কমে যাবে। চতুর্থ হল, পরিচয়। একটা ফ্লাট নিজের থাকলে নিজের স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে পরিচয় দেয়া যায়। ছেলে মে‌য়ের বি‌য়ে দি‌তে গেলে ব্যাংকে কত বিনিয়োগ আছে তা কেউ দেখে নাএই ক্ষেত্রেও ফ্লাট বা বাড়ীর মালিক হওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।
এখন এর কি সমাধান করা যায় তা নিয়ে একটু ভাবনা চিন্তা করলে মন্দ হয় না। বাংলাদেশের অনেক ব্যাংক আবাসন বীমাকর‌তে পা‌রে। যেমন: প্রতি মাসে আপনি ২৫০০০ টাকা করে দি‌তে পারেন কোন আবাসন বীমা কোম্পানী‌কেকোম্পানী‌টি প্রথম বছর ভাড়া বাবদ ১০,০০০ টাকা, ২য় বছর ১০,৫০০ টাকা পরের বছর ১১,০০০ টাকা অর্থাৎ প্রতি বছর ৫০০ টাকা বাড়াবে ও সর্বশেষে ২৯ বছরে ২৪,৫০০ টাকা ভাড়া প্রদান ক‌রে ৩০ বছরে কার্যক্রম শেষ করবে। ৫০০ টাকা করে ভাড়া বাড়ানোর কারণ হল প্রতি বছর কিছু কিছু করে বাড়ী ভাড়া বাড়তে থাকে। এর মধ্যে বীমা গ্রহীতা মারা গেলে নমী‌নি ৩০ বছর যাবত মাসিক বাড়ী ভাড়া প্রিমিয়াম না দিয়েও পেতে থাকবে এবং এটাই হবে বীমার সুবিধাআর মারা না গেলে ৩০ বছর ক্রমান্বয়ে ভাড়া গ্রহণের পাশাপাশি মেয়াদা‌ন্তে কোটি টাকা দেয়া হবে। এই হিসাবে ব্যাংকের ৬/৭ % হারে মুনাফা বা লভ্যাংশ ধরা হয়েছে। কেউ হয়ত ২০ বছর মাসিক ২৫০০০ টাকা প্রিমিয়াম দি‌য়ে মারা গেল। আর দশ বছর প্রিমিয়াম প্রদান করলেই  এক কোটি টাকা হ‌য়ে  যেততখন ন‌মিনী মাস ভিত্তিক পুরো পেমেন্ট চালু রেখে লাভসহ কোটি টাকা তুলে নি‌তে পারবে। এখন আসি ৩০ বছর পর কোটি টাকায় ফ্লাট বাড়ী কেনা যে‌তে পা‌রে। অথবা অন্য আর এক‌টি বি‌নি‌য়োগ সেবা নি‌তে পা‌রে। তা হল, ৫০ লক্ষ টাকার লভ্যাংশে বাড়ী ভাড়া প্রাপ্তি আর অবশিষ্ট ৫০ লক্ষ টাকায় প্রতি ১০ বছরে ডাবল টাকা প্রাপ্তি। এই পদ্ধতিতে গ্রাহকরা ১০ বছর সাইকেলে মূলধন ডাবল করার প্রক্রিয়া চালু রাখ‌তে পা‌রে। এই সিস্টেমে প্রতি দশ বছর পর পর সম্পূর্ণ টাকা দুই ভাগ ক‌রে এক ভাগ ফিক্সড ডি‌পো‌জিট ও অপর ভাগ মাসিক বাড়ী ভাড়া হিসাবে হা‌তে দেয়া হ‌তে থাকবে।
বাড়ীর বিষয়‌টি অনেক বেশী ইমোশনাল হওয়ায় মানুষ ধার কর্জ ক‌রে বি‌নি‌য়োগ বাড়ী বা ফ্লাট করার কাজে ক‌রে ফেলে। তাই ধার কর্জ ক‌রে বি‌নি‌য়োগ না ক‌রে জীবনের প্রথম থেকে সবাই যদি কিছু কিছু ক‌রে বাড়ী ভাড়ার অতিরিক্ত ক‌রে জমা‌তে থা‌কে তবে বাকী জীবনের বাড়ী ভাড়ার নিশ্চয়তা চলে আস‌বে। তারপর বাড়ী কেনার টাকা হা‌তে চলে আস‌বে।

ধার ক‌রে বাড়ী করে কোটি কোটি মানুষ নিজেদের মধ্যবিত্তের মধ্যে সীমিত রাখ‌তে পেরেছে। কখনও উচ্চবিত্ত হ‌তে পারেনি। সম্পূর্ণ সম্পদের ১০% বাড়ী ও গাড়ী জন্য সাধারণত বুদ্ধিমানরা ব্যয় ক‌রে থাকে‌। বাকী ৯০% সম্পদ বর্ধনশীল খা‌তে বিনি‌য়োগ ক‌রে থা‌কে। পরিশেষে বলব, “আবাসন বীমার যে ব্যবসায়ী মডেলটি দিলাম ব্যাংকি খা‌তের ও বীমা খাতের লোকজন ভেবে দেখ‌তে পারেন।

No comments:

Post a Comment