মক্কায় এসে প্রকৃতির রুক্ষতার
বাস্তব রূপ দেখলাম। পাহাড়গুলিতে কোন লতা গুল্ম নেই। কোথাও কোন গাছ নেই। শক্ত
শিলা আর পাথরের পাহাড়। আমি সিয়েরালিওন ও কংগোর শিলার পাহাড় দেখেছি। সেখানে পাহাড়গুলো শিলার মাঝেও সবুজ ছিল। কারণ
সেখানে অনেক বৃষ্টি হয়। এখানকার পাহাড়গুলো কাল ও ধূসর। প্রকৃতি এখানে ভয়াবহ রকম
নির্মম। মানুষের বেঁচে থাকাটা অবিশ্বাস্য। তার মাঝে মানুষ বেঁচে আছে। বাংলাদেশ
থেকে আসার পর এরূপ রুক্ষ প্রকৃতিতে যে কেউ অবাক হবেন। এখন প্রচুর দালান হয়েছে।
সাগর থেকে পানি ডিস্যালানাইজ করে আনা হচ্ছে ।
অল্প পানিতে গাছ জন্মানো হচ্ছে।
গাছের গোড়ায় পাইপ লাইন দিয়ে ড্রিপ ইরিগেশন প্রক্রিয়ায় পানি দেয়া হচ্ছে।
রাস্তার মাঝের আয়ল্যান্ডে সবুজ সতেজ গাছ। দেখে মনটা কিছুটা রুক্ষতার মাঝে সতেজ
হয়। এখনকার গাছগুলো জন্মানো অনেক খরচের ব্যাপার। ড্রিপ ইরিগেশন আর গাছের নীচ
দিয়ে পাইপের মাধ্যমে অনেক ব্যয়বহুল পানির সরবরাহ।
গোটা সৌদি আরবে ২০১৭ সালের
আদমশুমারি অনুযায়ী লোকসংখ্যা ২ কোটি ৭১ লক্ষ। এর মধ্যে আরব ৮৪ লক্ষ। এখানে যে লোকের
বাস তার চেয়ে ছয় গুন বেশী হল বাংলাদেশের মানুষ। আরব দেশ বাংলাদেশ থেকে প্রায় দশগুণ
বড়। মক্কার পুরো জনপদ বেঁচে আছে আমদানি নির্ভরতার উপর। শহরের বাইরে প্লাস্টার
ছাড়া ঘন করে তৈরি করা দুইতলা তিনতলা বাড়িঘর। এগুলো রোহিংগা বা বার্মিজ লোকদের
বাড়ী। সাধারণত এরা নিজেদের চট্টগ্রাম বা
কক্সবাজারের বাসিন্দা হিসাবে পরিচয় দেয়। মক্কার পশুর হাট ও বড় বড় পাইকারি বাজার
কুষ্টিয়া বাড়ী একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার অত্যন্ত যত্ন সহকারে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাল।
অনেক জায়গা নিয়ে বিশাল পার্কিং এলাকা। আমরা বাংলাদেশীরা ভাগ্যবান আমাদের মাটি ও
প্রকৃতি বসবাসের জন্য অত্যন্ত ভাল। তাই মানুষ বেশী। গাছ বেশী। পশুপাখি বেশী সবই
আমাদের বেশী বেশী। মক্কার অদূরে বাঙ্গালীদের বসবাস এলাকায় দেখলাম পুরাণ ঢাকার মত
গিঞ্জি এলাকা ও পুরাণ ঢাকার মতই অপরিষ্কার সব্জিবাজার। মক্কায় মিসফালাহর আশে পাশে
দোকানের বেশীর ভাগ দোকানী চট্টগ্রামের বা কক্সবাজারের।
বাংলায় কথা বলার মানুষের অভাব নাই।
পাকিস্তানীদের আধিপত্য রয়েছে হোটেল ব্যবসা ও টেক্সি ব্যবসায়। পাকিস্তানীরা
হিন্দি বা আরবি দুইটিই ভাল বুঝে। ইংরেজি একদম বুঝানো যায় না। কবুতর এখানে বিশেষ
আদর পাচ্ছে। কিছু মহিলা পুরুষ কবুতরের খাবার বিক্রয় করছে। লোকজন কবুতরের খাবার
কিনছে আর তা কবুতরকে খাওয়াচ্ছে। এখানে সব কিছুর মূল্য এক রিয়েলের নীচে নয়। তাই এক
রুটির দাম এক রিয়াল বা ২২ টাকা হলে তা বেশীই বলতে হবে। সব কিছুর মূল্য বেশী।
খাবারের দামও বাংলাদেশ হতে বেশী। ওমরা বা হজ্বে বাসা বাড়ীতে প্যাকেজে রান্না করে
খেলে খরচ কম পড়তে পারে। এছাড়া হোটেলে হোটেলে খেলে খরচ যথেষ্ট পড়ে যায়।
মক্কায় চাইনিজ জিনিষে বাজার ভর্তি। এখানে এমন কোন আইটেম চেখে পড়ল না যা ঢাকা নিউ
মার্কেটে পাওয়া যায় না। তবে চাইনিজরা এখানে শুল্ক ছাড়া প্রবেশাধিকার পায় বলে
চাইনিজ দ্রব্যাদির মূল্য কম।
প্যাকেজে যারা আসেন তারা সম্পূর্ণ
ভাবে সব কিছু গাইড করেন। তাই অনেক বিষয় আবার ভালভাবে জানা যায়। সবাই দেশের জন্য
বাজার করতে চায়। বাংলাদেশী কোন ড্রাইভার সাথে থাকলে কোথায় কোন জিনিষটা ভাল পাওয়া
যায়। তার একটা গাইডলাইন পাওয়া যায়।
মক্কার এই বৈরী আবহাওয়ায় মাঝে
উদ্যান করার চেষ্টাটি যথেস্ট ভাল উদ্যোগ। হজ্জের নগরী বলে এই নগরীর যাবতীয়
কার্যক্রম বেশ মনোমুগ্ধকর। আমাদের বাংলাদেশী মানুষদের মরুভূমির রুক্ষতা দেখে সত্যি
মনে হয় আমাদের দেশটা মক্কার তুলনায় অনেক বেশী মানবীয়। তাই হয়তোবা আমাদের দেশে এত
জন সম্পদ। আমার বাবা অনেক দেশে ভ্রমণকারী একজন মানুষ। তিনি বাগান করা বেশ পছন্দ করেন।
তিনি প্রায়ই সবাইকে বলেন, বাংলাদেশের মাটি হল উর্বর। কোন বীজ
মাটি খুঁচিয়ে ফেলে রাখ সহজে গাছ হবে। আমি মক্কায় গিয়ে অনুধাবন করলাম মাটি কত রুক্ষ
ও পাথুরে হতে পারে। পাহাড়ের রং ধূসর বা কালো হতে পারে। পরিশেষে বলব, বর্তমানে রুক্ষ মরুভূমিতে সবুজের সমারোহ করার আরবিয় চেষ্টাগুলো প্রশংসার
যোগ্য।
No comments:
Post a Comment