আমার
বাবা আমার বড় বোনের চার ও পাঁচ বছর বয়সে তার জন্য একটি তিন চাকার বেবি রিকসা
সাইকেল কিনে দেন। সেই বেবি রিকসার কাঠামোটা
ছিল ভীষণ মজবুত। সেই বেবি রিকসাটি আমরা সর্বমোট ছয় ভাই বোন ২৫ বছর যাবত
ব্যবহার করি। ছোট ভাই বড় হওয়ার পর কেজি দরে ভাংগারীওয়ালার কাছে বিক্রয় করা হয়।
হয়তবা যত্ন করলে আরো কিছুদিন চলত। অবাক ব্যাপার নয় কি? বাবা দুই তিনবার সেই বেবি
রিকসাটির সিট ও আনুষঙ্গিক মেরামত করিয়েছিলেন। মূল কাঠামো সব সময় ঠিক ছিল।
এই ধারনাটা আমাকে ভীষণ নাড়া দেয়।
চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট থেকে আমিও খুঁজে খুঁজে সলিড চাকার তাইওয়ানের তৈরি স্ট্যান্ড
চাকা লাগানো বাই সাইকেল কিনি। যা আমার বড় ছেলে, মেঝ ছেলে ও
মেয়ে চালানোর পর সামান্য মেরামত করে আত্মীয়ের বাচ্চাকে দিয়ে দেই।
আমার
এই বিষয়টি তোলার কারণ হল,
বাচ্চাদের অনেক ধরনের ব্যবহারের সামগ্রী ও খেলনা আমরা ক্রয় করি।
এগুলো নিন্মমানের ও ক্ষণস্থায়ী। চায়না আরো নিন্মমানের ওয়ান টাইম সামগ্রী দিয়ে
বারোটা বাজাচ্ছে। আমার মনে হয় আমাদের দেশী কোম্পানীগুলো চাইনিজ বাজে ওয়ান
টাইম দ্রব্যাদির অনুকরণে না গিয়ে টেকসই ও মূল্যবান দামী দ্রব্যাদি তৈরি করতে পারে।
এতে মনে হবে, বোধ হয় বিক্রি কমে যাবে। ব্যবসা কম হবে।
এমনকি মজবুত সামগ্রী বানানোর জন্য ব্যবসা পরিবর্তন করতে হতে পারে।
তবু
বলব দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে টেকসই, মজবুত ও উন্নত সামগ্রী উৎপাদন করলে তা পরিবেশের জন্য
ভাল এবং সাধারণ মানুষের প্রাথমিক খরচ বেশী হলে লং রানে অর্থ সাশ্রয়ী হবে। প্রয়োজনে
ব্যবসায়ী ব্যবসার পরিবর্তন পরিকল্পনায় রাখবেন।
আমার
কাছে মনে হয় বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের সাইকেল, ঠেলা গাড়ী, দোলনা ও আসবাব
পত্রসহ আরো বহুবিধ সামগ্রী উন্নত সামগ্রী ও কাঁচামাল দিয়ে শক্ত, কঠোর ও মজবুত বানাতে হয়। বাচ্চাদের যে কোন সামগ্রী সর্বদা অত্যন্ত
শক্ত বানানো প্রয়োজন। বাচ্চা তাদের খেলনা ছুঁড়ে মারে। ফেলে দেয়। লাথি মারে।
বাড়ি দেয়। অনেক অনেক জানা অজানা প্লেফুল কাজ করে। তাই তাদের খেলনাগুলি ইস্পাত
কঠিন হওয়াটা অনেক বেশী প্রয়োজন। অনেক সময় দেখবেন আমেরিকা, ইউরোপ
বা চায়না থেকে বাচ্চাদের সামগ্রী মেইড চায়না কিনবেন আর আফ্রিকা ও বাংলাদেশ থেকে কিনবেন।
অনেক পার্থক্য দেখবেন। কোয়ালিটি সাধারণ মানের ও দামে কম পাবেন। তাই এশিয়ার ও
আফ্রিকার সাধারণ মানুষের জন্য এই ধরনের সামগ্রী মূল্য কম ও দূর্বল মানের। চায়নার তৈরির সাধারণ মানুষের
জন্য সামগ্রীগুলো আমরা যতই তাদের বলি ভাল ও টেকসই করে বানাও। তা তারা একটা কারণে
বানাবে না। তা হল, বাজার ধরা। কম দামী পণ্য মানেই
ভাল বাজার এটা তারা ভাল করে জানে। তাই তাদের শুধরানো যাবে না। শুধরাতে
হবে আমাদের। সেটা হল মূল্য বেশী হলেও সরকার ভর্তুকি দিয়ে দেশী কোম্পানী দিয়ে
উন্নত সামগ্রী বাজারে ছাড়তে হবে। হোম সোলার সিস্টেম সকল দেশেই ব্যবহার হয়। হোম সোলার সিস্টেমে দেশী সোলার
প্যানেলের দাম বেশী। চায়নার তৈরি প্যানেলগুলোর দাম কম। দেশী কোম্পানীর
সোলার প্যানেল দাম বেশী হলেও অনেকেই তা কিনছেন। বিক্রি মন্দ নয়। কারণ সবাই জানে চায়নিজ
প্যানেল থেকে দেশে তৈরি প্যানেল দাম বেশী হলেও কোয়ালিটি ভাল এবং টেকসই। যা লং
রানে মূল্য সাশ্রয়ী। মজবুত, টেকসই ও ভাল সামগ্রী বানালে এবং
দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে চাইনিজ বা অন্য বিদেশীরাও খারাপ মালামাল
বাংলাদেশে পাঠাতে হাজারবার ভয় পাবে। তারাও টেকসই ও উন্নত সামগ্রী পাঠাবে ও
অনুপ্রাণিত হবে। টেকসই ও মজবুত সামগ্রী এককালীন বেশী খরচ করাবে ঠিকই কিন্তু এটা
পরিবেশ বান্ধব। ওয়ান টাইম জিনিস ব্যবহার না করে রিইউজিবল সামগ্রী ব্যবহার করে
খরচও ধীরে ধীরে কমে আসবে। যারা সস্তায় নিন্মমানের সামগ্রী ক্রয় করত, তারা তখন
উন্নতমানের রিকন্ডিশন সামগ্রী কিনবে। আরো সস্তা দামে। আর এভাবে রিইউজিবল
সামগ্রীর মার্কেট গড়ে উঠবে ও কর্মসংস্থান বাড়বে। দেশী ব্যবসায়ীরা ভেবে দেখতে পারেন।
No comments:
Post a Comment