Pages

Wednesday, July 4, 2018

আধুনিক ছেলেমে‌য়ে ও ভঙ্গুর সম্পর্ক


আমার কিছু নিকট আত্মীয়‌দের দেখছি বি‌য়ে‌ টিকছে না। বি‌য়ে বা সংসারে টি‌কে থাকাটায় মনে হয় পরস্পর সমঝোতা বা বোঝাপড়া অনেক বেশী প্রয়োজন। আর্থিক চাহিদার সাথে উপার্জন সমন্বয় না হলে মহা বিপদ। আমি সাংসা‌রিকভা‌বে ভয়াবহ উদাসীন। লেখালেখি করি। সারাদিন নিরস রচনা, প্রবন্ধ ও ফিচার পড়‌তে থাকি। আমি পরিবারের কোন কাজ না করা সত্ত্বেও কেবলমাত্র আমার স্ত্রী চাকুরী না করার কারণে সে ভয়াবহ সাংসারিক চাপ সহ্য করছে। তার জায়গায় অন্য কোন চাকু‌রে স্ত্রী হলে আমা‌কে হা‌তে হা‌রিক্যান ধরিয়ে ভেগে যেত।
আমার কাছে মনে হয়, একজন স্ত্রী যখন চাকুরী করবে, তিনি কিছু কিছু বিষয়ের উপর ট্রেনিং নি‌তে পারেন। কিভাবে বাসার সকল সদস্যের খাবার, ক্ল‌দিং, পড়া‌শোনা ও অসুখ বিসুখ টেকাল দি‌তে হয়; তার মানসিক গ্রহন‌যোগ্যতার অনুশীলন। কিভাবে আউট সোর্স‌িং ক‌রে সকল‌কে ম্যা‌নেজ ক‌রে কাজগুলি করা যায়; তার উপর প্রশিক্ষণ হ‌তে পা‌রে।
যে সব ছেলে চাকুরীজীবী বউ বি‌য়ে করবে; তাদের রান্না করা, কাপড় ধোয়া, ঘর মোছা ও বাচ্চা‌কে লালন পালন করার বিষয়গু‌লি মানসিকভাবে গ্রহণ করা ও অনুশীলন করা প্রয়োজন। স্বামী স্ত্রী দুইজন চাকুরীরত‌দের সম্ভব হলে যৌথ পরিবারে থাকাটা খুব ভাল। তদুপরি বলব, বি‌য়ে টিকা‌নোর সবচেয়ে ভাল পন্থা হল, পিতামাতা মেয়েদের পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়গু‌লি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করবেন। সে বিষয়গু‌লি মিলিয়ে ছেলে খুঁজে পেলে মেয়েকে বি‌য়ে দিবেন। নয়ত চাকুরী ধরিয়ে দি‌য়ে মেয়েকে তার পছন্দ মত বি‌য়ে করার অনুমতি দেয়াটা মঙ্গলজনক। মে‌য়ে নিজে পছন্দ করে বি‌য়ে করলে তখন আবার চাকুরীরত মে‌য়ে সংসার টিকা‌নোর জন্য চাকুরী বাকরী ক‌রে উদয়াস্ত পরিশ্রম ক‌রে যাবে। কম‌প্লিন কম করবে। এ ধরনের কেসে সংসার টি‌কে যায়। তব‌ে আমার ম‌নে হয় সংসার টিকা বা না টিকা সম্পূর্ণই মেয়ে‌দের কাছে। কারণ যুগ যুগ ধ‌রে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মে‌য়েরা অনেক আত্মত্যাগ ক‌রে পরিবারকে ধ‌রে রাখে। এমনকি অনেক পরকীয়ারত ছেলেকেও স্ত্রীরা ফিরিয়ে আন‌তে সক্ষম। কিন্তু কোন স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত হলে কোন স্বামী তা‌কে ফিরিয়ে আন‌তে পা‌রে না। যদি না সেই মে‌য়ে নিজে নিজে ফেরত আসে।
সংসার ও বি‌য়ে টিকা‌নোটা এখনকার সময় ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ। দুই‌ আলাদা সত্ত্বার মিল করাটা যার পর নাই কঠিন এক‌টি বিষয়। আর এই  কঠিন বিষয়‌টি সহজ কর‌তে প্রয়োজন মে‌য়ে বা ছেলের আন্তরিক ইচ্ছে। দুইজন দুইজন‌কে ছাড় দি‌তে হবে। দুইজন দুইজন‌কে বুঝ‌তে হবে। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন অনেকেই বি‌য়ে‌ শাদীতে সম্পর্ক ভাঙ্গার অনুঘটক হিসাবে কাজ ক‌রে। বি‌য়ে‌তে তারা ছেলে মেয়েদের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি এমন ভাবে তুলে ধ‌রে যে সম্পর্ক নষ্ট ক‌রে দেয়।  বি‌য়ে‌তে পান আনল কিনা। মাছ আনল কিনা এরূপ ছোটখাট বিষয় নি‌য়ে কিছু কুটনি আত্মীয় সম্পর্ক নষ্ট ক‌রে। ভাল সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য ম্যা‌সেঞ্জা‌রের ভাষায় কুটনী আত্মীয়দের ব্লক মার‌তে হবে। নচেৎ এরা আপনা‌দের সুন্দর সম্পর্কের মাঝে ব্লক দিয়ে দিবে। স্বামী ও স্ত্রী সম্পর্ক টিকা‌তে লাভ ক্ষতির বিচার করলে চলবে না। শুধু মনে রাখ‌তে হবে সম্পর্ক টিকা‌তে হবে যা ঝড়ই আসুক না কেন। স্বামী ও স্ত্রী এই  মান‌সিকতায় থাকলে  সম্পর্ক টি‌কে যাবে।
ভাল সম্পর্কের জন্য অনুশীলন ও স্টাডি কর‌তে হবে। এটাও একটা চর্চা যা হেলা করা যাবে না। অনেক সময় আইনি মার প্যাঁচে সম্পর্ক ম্যাড়ম্যাড়ে ভাবে টি‌কে থা‌কে। এটাও ঠিক না। সম্পর্ক হবে ইস্পাত কঠোর। তাই সম্পর্ক হ‌য়ে গেলে, তা রক্ষা করার সব রকম চেষ্টা ক‌রে যে‌তে হবে। আধুনিক ছেলে মে‌য়ের অনেক ধরনের সম্পর্ক থাক‌তে পা‌রে। তাই আধুনিক ছেলে মে‌য়েরা একটা ম‌টি‌ভেশন মেনে চলতে দেখা যায় তা হল; বিয়ের আগে যা করেছ, ভুলে যাও। বিয়ের পরে সম্পর্ক‌ে আস্থা ও বিশ্বাস রাখ‌তে বল‌তে হবে। পরিশেষে বল‌তে হয়, সংসার ও সম্পর্ক টিকা‌নোর সবচেয়ে বড় ফর্মুলা হল বাপ, মা, ভাই, বোন ও আত্মীয় স্বজন কারো কথা শোনা যাবে না। নিজেরা ঝগড়া ঝাঁটি বাদ দি‌য়ে আলোচনায় বস‌তে হবে কিভাবে সংসার টিকা‌নো যায় ও সমস্ত সমস্যার আলোচনা ক‌রে সমাধান বের কর‌তে হবে। এটা যদি করা যায় তবে ‌নি‌শ্চিতভা‌বে বলা  যায় সংসার আর ভাঙ্গবে না।


No comments:

Post a Comment