Pages

Thursday, December 13, 2018

তিন লক্ষ টাকার বিয়ের কার্ড


আমার স্ত্রী বলল, জান মু‌কেশ আম্বানী মে‌য়ের বি‌য়ে‌তে যে কার্ড ছাপিয়েছে তার দাম তিন লক্ষ টাকা। আমি বললাম, সে একটা ছাগল। সে ধনী মানলাম তবে কি এভাবে প্রদর্শনের প্রয়োজন আছে। প্রতিটি কার্ড তিন লক্ষ টাকার না ছাপিয়ে মে‌য়ে বি‌য়ে উপলক্ষ‌ে হাজার হাজার মানুষ‌কে তিন লক্ষ টাকা ক‌রে দান কর‌তে পারত।
কে আসলে ধনী? ধনী আসলে সে, যে নাকি কারো কাছে হাত পা‌তে না। যার আয় থেকে ব্যয় কম। যার প্রবৃদ্ধি আছে। সে ধী‌রে ধী‌রে ধনীর পথে আগাবে। কেউ একজন মনে করি আয় থেকে ব্যয় কম ক‌রে সে সঞ্চয় করছে বা বি‌নি‌য়োগ করছে। সেও ফতুর হ‌তে পা‌রে যদি তার পরিবারের কেউ দূরা‌রোগ্য বা অনেক খরচের কোন রো‌গে আক্রান্ত হয়। অনেকে দুর্ঘটনা ও নানা জুলুমে ক্ষ‌তিগ্রস্থ হয়। কোটি কোটি টাকার মালিক আমরা জানি আবার পিছনে আছে কোটি কোটি টাকা ধার। তবে তার সম্পদের বাজার দ‌রে মূল্য ও অন্যান্য আয়, ধারকৃত টাকার ব্যাংকের সুদ ইত্যাদি সমস্ত কিছু দি‌য়ে সে যদি প্রবৃদ্ধির মধ্যে থাকে তবে তার উন্নতি হ‌য়ে‌ছে বা ধনীর রাস্তায় হাঁট‌ছে বলা যাবে। যে তার টাকা লায়া‌বি‌লি‌টিসএ খাটিয়েছে যেমন গাড়ী বা ফ্লাট এবং ভাল কোন ইনভেস্ট করেনি নিশ্চিত ভাবে বলা যায় সে গরীবের খাতায় লিখাল।
মনে করি একজন রিকশাওয়ালা প্রতি দিন ৬০০ টাকা কামাই ক‌রে প্রতিদিন  ৪০০ টাকা খরচ করার পর প্রতিদিন ২০০ টাকা জমায়। মাসে ৬০০০ টাকা কামাই ক‌রে বছরে ৭২ হাজার টাকা কামাই হচ্ছে।  ৩ বছর পর এক‌টি সিএন‌জি কিনে ফেলল। তারপর দিনে সঞ্চয় হবে ৪০০ টাকা। পাঁচ বছর পর সঞ্চয়‌য়ের টাকা দি‌য়ে মাই‌ক্রো কিনে ফেললেন। তখন সঞ্চয় হবে দিনে ৮০০ টাকা। আবার সঞ্চয় ক‌রে পাঁচ বছর পর মিনিবাস কিনে ফেললেন। প্রতিদিন জমা হ‌তে থাকল দিনে ২০০০ টাকা। পাঁচ বছর পর বড় বাস কিনে ফেললেন। প্রতিদিন জমা দিনে হ‌তে লাগল ৪০০০ টাকা। তার পাঁচ বছর পর আরো দু‌টি বাস হবে। তার পাঁচ বছর পর চার‌টি বাস হবে। তার চার বছর পর আট‌টি বাস হবে। যখন আপনার প্রতি দিনের ইনকাম ৩২ হাজার। মাসে ১০ লক্ষ আর বছরে কোটি টাকার উপ‌রে। এতে ৩৩ বছর পার হবে। আপনার বয়স হবে ৫১ বছর। তার পর যত বছর বেঁচে থাকবেন আপনার টাকা গাণিতিক হা‌রে বাড়বে। তাই ধনী হওয়ার আর কোন ফর্মুলা নাই। আপনার আ‌য়ের চে‌য়ে ব্যয় কমাতে হবে। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
রিকশাওয়ালাদের অনেকে ধনী বা প্রবৃদ্ধি না হওয়ার কারণ দেখা যায় তা‌দের অপরিকল্পিত আয় ও অপরিকল্পিত ব্যয়। দিন আনে দিন খায়। এই বিষয়টি তা‌দের সঞ্চয়ের পথে বাধা। যারা ভাড়ায় রিক্সা চালায় তারা প্রতিদিন রিক্সার মালিককে জমা নামক একটা কার্যক্রমে জড়িত। এটার সাথে যদি তারা সঞ্চয় করত, তবে তারা অগ্রগামী হয়। দিনের আ‌য়ের লোকজন আরেকটি ভয়াবহ বিপদে আক্রান্ত। তা হল, বিভিন্ন কারণে কিস্তি নেয়া এবং তা সুদযুক্ত কিস্তিতে প‌রি‌শোধ করা। এখানেও বিপদ দৈনিক আ‌য়ের লোকজন সচ্ছল মানুষের ক্রেডিট কার্ড‌র মত আনন্দ ফুর্তিতে কিস্তিতে টাকা নেয় ও খরচ ক‌রে প‌রে চো‌খের পানি ও ঘামের টাকা এক ক‌রে প‌রি‌শোধ কর‌তে থা‌কে। তখন আর প্রবৃদ্ধি না হ‌য়ে অবনতি হ‌তে থা‌কে।
তাই ধার ও কিস্তি টাকা বাণিজ্যিক কাজ ছাড়া কোন ক্রমেই নেয়া অনুচিত। চল‌তে হবে ইতিবাচক পথে। দিন মুজু‌রের জন্য সাপ্তা‌হের প্রথম দিনের উপার্জন ব্যয় কর‌তে হবে খাবার কিনে। প্রয়োজ‌নে পুরো সাপ্তা‌হের চাল কিনে ফেল‌তে হবে। তার পর দিনের আয় থেকে অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী। এভাবে করলে একটা লেবার কাজে কোন বিপদে বা অসুখে পড়লেও তা‌দের লোন কর‌তে হবে না।
উন্নতির ধারাবাহিকতা শর্ত হল লোন ক‌রে লায়া‌বি‌লি‌টিস কেনা যাবে না। তাই পরিকল্পনা ক‌রে ধী‌রে ধী‌রে উন্নয়নের পথে চললে আমা‌দের দেশেও মূ‌খেশ আম্বানী হওয়া সম্ভব। তবে কেউ মূ‌খেশ আম্বানী হওয়ার পর তিন লক্ষ টাকার কার্ড বিতরণ না ক‌রে বিল গেটসের মত সারা পৃথিবীর বাচ্চা‌দের মত টিকাদানের মত কর্মসূচি না হোক অন্তত ছোট বড় অনেক উন্নয়ন করা সম্ভব।
আমি নিশ্চিত বিল গেটস আর ওয়ারেন্ট বা‌ফেট আর যাই হোক ধনাঢ্য প্রদর্শনের জন্য তিন লক্ষ টাকার কার্ড বিতরণ কর‌তে যাবে না।

No comments:

Post a Comment