মনে করুন, আপনি জিমের মেম্বার। আপনার বাসা থেকে জিমে যাওয়ার দূরত্ব ৩০ মিনিটের পথ। আবার
ফিরতে ৩০ মিনিট। যাতায়াত ওবারে খরচ মনে করি যেতে ১৫০ টাকা। আবার আসতে ১৫০ টাকা।
মোট যাতায়ত ৩০০ টাকা। মাসে হয়ত ২০ দিন যান। তাহলে খরচ ৬০০০ টাকা। জিম মেম্বারে
খরচ আরো ৫০০০ টাকা। মোট ১১০০০ টাকা। আমি বলব ১% মানুষও জিম মেম্বার না। তারপরও
বলব, বাংলাদেশে নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ৮০ ভাগ মানুষ কিন্তু ওবিস নয়। সুস্থ আছে।
তারা কিভাবে সুস্থ আছে। সেটা হল লাইফ স্টাইল। আপনি জিমে যাওয়া আসায় এক ঘণ্টা আর
জিমে আরো এক ঘণ্টা মোট দুই ঘণ্টা ব্যয় করেছেন। আমি বলব, এটা কেমন হয়, যদি আপনি আপনার কাজের স্থানটিতে
গাড়ী ব্যবহার না করে হেঁটে যান। বাজারে হেঁটে যান। বাজার শেষে কেনা কাটার
পরিমাণের উপর নির্ভর করে বাহনে ফেরেন। অনেকের মত মসজিদে জামাতে নামাজ পড়েন।
ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কাপড় ধুয়ে ফেলুন। ঘর ঝাড়/ঘর মোছার কাজগুলো করছেন। তবে
কিন্তু আর আপনার প্রতিদিন দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করে জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
জিমের খরচ বাঁচল ও সাধারণ কাজ করে আপনি ফিট থাকছেন। যদি জিম স্টেটাস সিম্বল হয়
সেটা আলাদা বিষয়। এখন অনেকে প্রশ্ন করবেন। আমাদের দেশে রিক্সা, গাড়ী,
ঘোড়া ও ধূলা বালির জন্য হাঁটা যায় না। এটা খোড়া অজুহাত।
অনেক অনেক মানুষ হাঁটছে। তবে তারা নিন্ম শ্রেণী। কিন্তু স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য
কাজে যাওয়ার পথে হাঁটা শুরু করুন, বাজারে হেঁটে যান।
গবীবের এই স্টাইলটি ফলো করলে আমরা
অনেক বেশী সুস্থ থাকব। বাচ্চাদের সর্বদা হেঁটে বা বাই সাইক্যাল চালিয়ে স্কুলে
যাওয়ার জন্য আমরা উৎসাহ দিতে পারি। এতে তাদের স্বাস্থ্য অনেক ভাল থাকবে।
ইউরোপ ও আমেরিকায় অনেক মানুষ আছে
তারা নাকি জিমের মেম্বারশীপ করে সাধারণ বা নিন্মবিত্ত মানুষ একটা মাত্র কারণে তা
হল ভাল পরিবেশে শাওয়ার নেয়ার জন্য। কারণ সেই লোকগুলি বস্তিতে থাকে বা গাড়ীতে
থাকে। অথচ আমাদের দেশে জিম মেম্বারশীপ হল স্ট্যাটাস সিম্বলধরীরা ব্যবহার করে।
মধ্যবিত্তদেরও রোগটি আছে। তারা জিমের জন্য উপার্জনের বড় একটা খরচ করে ফেলে।
আমার উপদেশ মূলত তাদের জন্য। শরীর ফিট রাখার এত এত ব্যবস্থা থাকতে, কেন এত অপচয়ে যাওয়া। স্বাস্থ্য সচেতনরা তেড়ে আসবেন। কি বলছেন, আজে বাজে কথা। স্বাস্থ্যের জন্য বিনিয়োগ এটা তো অতি উত্তম। আমি বলব, ধনীদের জন্য জিমে বিনিয়োগ উত্তম। মধ্যবিত্তের জন্য জিম মেম্বারশীপ অপচয়। একজন
মধ্যবিত্তের হাঁটা ও কায়িক পরিশ্রমের জন্য এত এত সুযোগ আছে তারা একটু নজর দিলেই
ফিট থাকার মাল মশল্লা পেয়ে যাবে। কায়িক পরিশ্রমযুক্ত লাইফ স্টাইল অনেক বেশী জরুরী।
আমাদের দেশে দুই কদম আমরা হাঁটতে চাই না। রিক্সা নেই। সামর্থ্য থাকলে গাড়ী ব্যবহার
করি। অথচ সুস্থ ও ভাল থাকার জন্য কর্মস্থলে আসা যাওয়াটা হেঁটে করাটা সবচেয়ে ভাল।
বিকালে খেলাধুলার সুযোগ না থাকলে হাঁটার অভ্যাসটা অনেক ভাল হতে পারে। অনেক টাইট
ডায়েটিং করেও হাঁটার অভ্যাস না থাকার কারণে অনেকেই ওজন কমাতে ব্যর্থ হয়।
যারা অফিসে বসে বসে কাজ করেন তারা
অফিসে আসাটা সকালে হেঁটে আসতে না পারলেও ফেরত যাওয়াটা হেঁটে করতে পারেন। ফেরত যাওয়ার পথটা গাড়ীতে বেশী সময় ও
দূরের রাস্তা হলে ৪০/৫০ মিনিট হাঁটার রাস্তা থাকতে গাড়ী ছেড়ে দিলে মন্দ না। আশে
পাশে বাজারে যাওয়ার জন্য গাড়ী, রিক্সা ইত্যাদি
ব্যবহারটা পরিহার করাটা বাঞ্ছনীয়। কেবল মাত্র হাতে মালামাল থাকলে গাড়ী বা বাহন
সাথে যেতে পারে।
আমি অনেক দেশেই দেখেছি মানুষ
অনেকটুকু রাস্তা হেঁটেই যায়। আমাদের দেশের মত ছোট ছোট দূরত্বে রিক্সা বা বাহন
ব্যবহার করতে তারা অভ্যস্ত হয় না। বেশীর ভাগ দেশেই আমাদের দেশের মত ছোট রাস্তা পার
হওয়ার জন্য রিক্সার মত স্বল্প খরচের বাহন নেই। তাই গাড়ীর স্ট্যান্ড ও পার্কিং
পর্যন্ত হেঁটেই যেতে হয়। এভাবে হাঁটার অভ্যাস হয়ে যায়। পরিশেষে বলব, আমাদের সুস্থ ও কার্যক্রম থাকার জন্য জিম নয় বরং আমাদের সকলকে হাঁটাটা অভ্যাসে
আনাটা অনেক বেশী জরুরী।
No comments:
Post a Comment