আমার রিনিউবল এনার্জি ব্যবহার ও ভাবনা মূলত: শুরু হয় ২০০৩ সালে
পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্যাম্পে থাকার সময় থেকে। তখন আমি সৌর শক্তি ব্যবহারের সুযোগ পাই
বা ব্যবহারে বাধ্য হই। ক্যাম্পের ওয়্যারলেছ সেটের ব্যাটারি সাধারণত সোলার প্যানেলে
চার্জ করা হত। আমি তখন একটি ল্যাপটপ কিনেছিলাম। দাম পড়েছিল ৬২ হাজার টাকা। তারপর কচ্ছপ
আকৃতির টিভি কার্ড কিনেছিলাম ৭৫০০ টাকা দিয়ে। ল্যাপটপটি তিন বছর ব্যবহারের পর নষ্ট
হয়। মাদার বোর্ড নষ্ট হয়। ঢাকায় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে দিয়েও রিপিয়ারে ব্যর্থ হই।
আর রিপিয়ার করাতে পারিনি। এই ল্যাপটপটি চালানোর জন্য আমি খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার
গ্রামীণ শক্তি অফিস থেকে ১৩ হাজার টাকায় ২৫ ওয়াটের দুইটি সোলার প্যানেল কিনি। যা এখনও
আমার সাথে বয়ে বেড়াচ্ছি। কম ব্যবহারের কারণে দুটি প্যানেল বেশ নতুন আছে। এ দুটির বর্তমান
(জুলাই ২০১৪) বাজারদর মাত্র ৩ হাজার টাকা। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন সোলার প্যানেলের দাম
কত কমেছে। তখন ওয়াট প্রতি প্যানেলের
মূল্য দিয়েছি ২৬০ টাকা আর এখন তা মাত্র ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা।
সত্যি অবাক করা ব্যাপার। যদিও আমাদের
এনজিওরা সোলার হোম সিস্টেম এখনও ২০০৩ সালের দামে বিক্রি করে যাচ্ছে। যা কিনা
বাংলাদেশের ব্যবসায়িক কালচার । একবার উচ্চ দাম থাকলে তা সহজে কমে না কারণ সবাই
বেশী দামে নাকি মজুদ করেছিল। তাই দাম কমাতে কয়েক বছর লেগে যায়। আর যেহেতু সোলার
হোম সিস্টেম কিস্তিতে ক্রয় করা হয় সেহেতু দাম কমানোর প্রশ্নই উঠে না। ২০০৩ সালে
সোলার হোম প্যাকেজের যা দাম ছিল এখনও সেরকম দামেই বিক্রি হচ্ছে। অথচ সব
যন্ত্রাংশের দামই কমে গেছে।
আমি
ল্যাপটপ চালানোর জন্য তিনটি ৬ ভোল্টের এসিড ব্যাটারি কিনেছিলাম। কারণ ল্যাপটপের
পাওয়ার ইনপুট ছিল ১৯.৫ ভোল্ট। তিনটি ব্যাটারি সিরিজে লাগিয়ে ১৮ ভোল্ট প্লাস ডিসি
সাপ্লাইয়ে ল্যাপটপটি চালানো যেত। তখন বাংলাদেশের গ্রামে গজ্ঞের বাজারে ৬/৮ ভোল্টের
স্থানীয়ভাবে সংযোজিত ব্যাটারি পাওয়া যেত। কারণ এ ব্যাটারিগুলো টেপরেকর্ডার চালাতে
ব্যবহৃত হত। এ ধরনের তিনটি ছয় ভোল্টের টেপরেকর্ডারের ব্যাটারি আমি সিরিজে ব্যবহার
করতাম। যতটুকু মনে পড়ে প্রতিটি ব্যাটারি ৫০০ টাকা করে চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট থেকে
কিনেছিলাম। রাতে ল্যাপটপে টুকটাক টাইপ করা। টিভি কার্ড দিয়ে ঘণ্টা দুয়েক
টিভি দেখতাম তাও আবার এন্টেনা দিয়ে বিটিভি দেখা। কারণ এখনকার মত তখন ক্যাম্পে ডিশ
এন্টেনা ছিল না। বিটিভিতে আমরা নাটক ও খবর দেখতে পারতাম। সৈনিকরা ১২ ভোল্টের সাদা
ও কালো টিভি দেখত। তখন অবশ্য ইটিভির( একুশে টিভি) টেরিস্টরিয়াল ট্রান্সমিশন হত।
বিটিভির পাশাপাশি একুশে টিভি পাহাড়ের উপরে লক্ষ্যিছড়ি উপজেলার দুইল্লাতলী ক্যাম্পে
দেখতে পারতাম। উঁচু পাহাড়ের উপরে থাকার করনে রিসিপশন ভালই ছিল।
সার্কিট
ব্যবহার করে এক ফুট দৈর্ঘ্যের একটা টিউব লাইট জ্বালাতাম। লেখালেখির কাজ বা বই পড়ার
সময় টিউব লাইটটি জ্বালাতাম অন্য সময় হারিকেনের বাতি। কারণ টিউবটি সর্বদা জ্বালাতে
পারতাম না ব্যাটারি খরচের জন্য। ক্যাম্পে মাঝে মাঝে বর্ষার পর মোবাইলের এরিয়েল
দিয়ে নেটওয়ার্ক পেতাম । আমার পরিবার ছিল চট্টগ্রাম সেনানিবাসে। তখন তাদের সাথে কথা
বলতাম। দুই একজন সৈনিকও নম্বর নিয়ে এসে আমার মোবাইল থেকে কথা বলত। তবে আউট গোয়িং
কল করতে পারলেও ইনকামিং কল হত না।
তবে
এরিয়েল দিয়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়ার চেষ্টা করতাম। এখন মোবাইলের এন্টেনা যাদুঘরের
আইটেম। বর্তমানে আমাদের দেশের সকল কোম্পানির নেটওয়ার্ক অনেক উন্নত হয়েছে। পার্বত্য
চট্টগ্রামে মোবাইল নেটওয়ার্কের অনুমতি না থাকায় মোবাইলের বিটিএস মূলত: পাহাড়ি
এলাকার বাইরের সীমানায় ছিল। পাহাড়ের উঁচু ক্যাম্পেরে উপর থেকে মূলত: চট্টগ্রামের
ফটিকছড়ি এলাকার বিটিএস থেকে আমরা নেটওয়ার্ক পেতাম। এ ধরনের মোবাইল এন্টেনা তখন বেশ
গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী ছিল। কোন ক্যাম্পে গেলে মোবাইল এন্টেনা সাথে থাকত।
এখন
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্যাম্প সোলার সিস্টেম আছে। জেনারেটর আছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক
আছে। মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট আছে। ডিশ এন্টেনার মাধ্যমে স্যাটেলাইট চ্যানেল
আছে।
তবে
আমার রিনিউবল এনার্জি ভাবনায় সোলার প্যানেল ব্যবহার করে ল্যাপটপ চালানো ছিল হাতে
কলমে সোলার এনার্জি ব্যবহারের অনুশীলন। এই অনুশীলন আমাকে সোলার এনার্জি নিয়ে ভাবতে
শিখায়। সুখের বিষয় এই যে, সোলার প্যানেলের ওয়াট প্রতি মূল্য এক ডলারের নীচে চলে
আসায় সারা পৃথিবী সোলার এনার্জি ব্যবহারে ব্যাপকভাবে এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ অবশ্য
সোলার হোম সিস্টেমে সারা পৃথিবীর জন্য মডেল স্বরূপ। এখন এই সবুজ এনার্জি নিয়ে কাজ
করতে পারলে আমার ভাবনা সার্থক হবে।
No comments:
Post a Comment