Pages

Saturday, July 26, 2014

রিচার্জেবল ব্যাটারি কি পরিবেশ বান্ধব?

এক জোড়া রিচার্জেবল পেন্সিল ব্যাটারিকে যদি ১০০ বার চার্জ করা যায় তবে তা ১০০ জোড়া সাধারণ পেন্সিল ব্যাটারি ক্রয় করা থেকে আমাদের রক্ষা  করবে এতে আমাদের পরিবেশে ১০০ জোড়া সাধারণ পেন্সিল ব্যাটারি বর্জ্য থেকে রক্ষা পাবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা ছোট ছোট পেন্সিল ব্যাটারি রিসাইক্যাল করি না। সাধারণত: এদের ভূমিতে বর্জ্যরুপে নিক্ষেপ করি। তাই একজোড়া রিচার্জেবল ব্যাটারি যদি ১০০ জোড়া ব্যাটারির বর্জ্য কমাতে পারে তবে রিচার্জেবল ব্যাটারিকে পরিবেশ বান্ধব খেতাব দেয়া যায়। রিচার্জেবল ব্যাটারি পরিবেশ বান্ধব আমার এ ধরনের একটা মজাদার আইডিয়া আসার কারণ হল আমি ইন্টারনেটে একটা মজার আর্টিক্যাল পরছিলাম। একজন এনজিও কর্মী আফ্রিকায় সাধারণ লোকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করছিলেন রিচার্জেবল ব্যাটারি বিতরণ করে। আর বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আফ্রিকানরা সবচেয়ে বেশী ছোট ছোট ড্রাই-সেল ব্যাটারি ব্যবহার করে। তিনি তাদের বলছিলেন, “তোমরা সাধারণ ব্যাটারি ব্যবহার না করে রির্চাজেবল ব্যাটারি ব্যবহার কর। এই ব্যাটারি সোলার প্যানেলে চার্জ কর আর তা টর্চ ও রেডিওতে ব্যবহার কর। এটা সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব
এই পরিবেশ বান্ধব বিষয়টিতে মনে একটু খটকা লাগতে পারে। কিন্তু পরিবেশ বান্ধব কথাটির তাৎপর্য খুঁজে পাই যেভাবে তা হল রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহারে নন রিচার্জেবল ব্যাটারি কম লাগছে। পরিবেশে কম নন রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার কমায় তার দ্বারা পরিবেশ কম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বেশী পরিমাণে ননরির্চাজেবল ব্যাটারি তৈরি করতে কার্বন ডাই অক্সাইড বহি:গমন হচ্ছে। এটা কিন্তু রোধ করা যাচ্ছে না। একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি তৈরিতে ব্যাটারির কোম্পানির দ্বারা বায়ু ও পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা ১০০টি  নন রিচার্জেবল ব্যাটারিতে ১০০ গুন বেশী ক্ষতি হচ্ছে। তাই ১০০টি নন রিচার্জেবল ব্যাটারির পরিবর্তে আমরা একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করব।

সাধারণত: যেসব ডিভাইস ও খেলনা ব্যাটারি বেশি বেশি ব্যবহার করে ও ব্যাটারি তাড়াতাড়ি শেষ করে সেসব ডিভাইস চালানোর জন্য আমাদের অনেকেই রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করছেন। রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহারে আর একটা বড় খরচের বিষয় রয়েছে আর তা হল চার্জার। সাহস করে একটি ভাল মানের চার্জার ক্রয় করতে পারেন। যা কিনা ৫০০ হতে হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। তবে একটু খোজা খুঁজি করলে বেশ ভাল ব্যাটারি চার্জার ৫০০ টাকার অনেক কমেও পাওয়া যাবে। ইচ্ছে করলে সোলার থেকেও সহজে রিচার্জেবল ব্যাটারি চার্জ করা ব্যবস্থা যাবে। সেজন্য অল্প কিছু টাকা খরচ করে চার্জার তৈরি করে নিলেই চলবে।
আধুনিক যুগে সচ্ছল পরিবারে এক/দুইটি টেবিল ঘড়ি ও দেয়াল ঘড়ি আছেই। এ ধরনের ঘড়িতে সাধারণত AA সাইজ বা পেন্সিল ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। ঘড়িগুলি খুব অল্প ব্যাটারির পাওয়ার খরচ করে। একটি পেন্সিল ব্যাটারি একবছর চলে যায় অনায়াসে। এখন আমি যদি প্রস্তাব করি, সাধারণ ব্যাটারির স্থানে  ঘড়িতে যদি রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করি তাহলে কেমন হবে। আমি জানি অনেকেই এ আইডিয়া মোটেই পছন্দ করবেন না। কারণ একটা সাধারণ ব্যাটারির দাম ১০ টাকা আর কমদামী একটি রিচার্জেবল ব্যাটারির দাম ৫০ টাকা। তাহলে পাঁচ বছরে পাঁচটি ব্যাটারির জন্য খরচ ৫০ টাকা আর একটি রিচার্জেবল ব্যাটারির জন্য খরচ ৫০ টাকা। তাহলে পাঁচ বছরের জন্য কেন রিচার্জেবল ব্যাটারি ক্রয় করব। আর পাঁচবছর রিচার্জেবল ব্যাটারি টিকবে কিনা সন্দেহ। বিষয়টি যাই হোক না কেন আমি কিন্তু পরিবেশ সচেতন হিসাবে আপনাকে সাধারণ ব্যাটারি অপেক্ষা রিচার্জেবল ব্যাটারি ক্রয় করার পরামর্শ দিব। কারণ পাঁচ বছরে পাঁচটি ব্যাটারি ব্যাবহার করে পাঁচটি বর্জ্য তৈরি করার চেয়ে পাঁচ বছরে রিচার্জেবল ব্যাটারির একটি বর্জ্য তৈরি করা যুক্তিসংগত। তেমনি ছয় মাস পর পর যদিও প্রয়োজন হয় তবুও পরিবেশের কথা চিন্তা করে রিমোট কন্ট্রোল গুলোতে রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করতে পারেন। যদি ঘড়ির ব্যাটারি পর্যন্ত আমরা রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার করতে সম্মত হই তবে আমাদের কাছে এমন আর কোন ব্যাটারির ব্যবহার বাকী থাকল না যা কিনা রিচার্জেবল ব্যাটারি দ্বারা না চালানোর আর কোন কারণ থাকতে পারে। একটা রিচার্জেবল ব্যাটারি থাকলে আর ব্যাটারি চার্জিং এ আর কোন ঝামেলাই থাকবে না।
বর্তমানে বাজারে যে কোন সাইজের রিচার্জেবল ব্যাটারি পাওয়া যায়। নিকেল ক্যাডমিয়াম ব্যাটারির আধিক্যই বেশী। রিচার্জেবল ব্যাটারি সাধারণত: ১.২ ভোল্টের হয়ে থাকে। তবে ১.৫ ভোল্টের ব্যাটারির স্থালেও সহজে ব্যবহার করা যায়। সাধারণ পেন্সিল ব্যাটারি ৫০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার লেখা থাকে। তবে রিচার্জেবল ব্যাটারি ৬০০,৮০০,১০০০,১২০০,১৫০০,১৮০০,২২০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার লেখা থাকে। ভাল ব্রান্ডে-ড কোম্পানি ছাড়া লেখা অনুযায়ী চার্জ থাকবে কিনা এটার ভিন্নতা দেখা যায়। আমি ইউকে থেকে আনা ৮০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারির সাথে বাংলাদেশ থেকে অনেক দামে একজোড়া ২২০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার লেখা ব্যাটারির তুলনা করে দেখলাম বাংলাদেশের ২২০০  মিলি অ্যাম্পিয়ার লেখা ব্যাটারি ইউকে এর ৮০০মিলি অ্যাম্পিয়ার লেখা ব্যাটারি থেকে অর্ধেক পরিমাণ সময় চার্জ ধারণ করে। তাই গায়ে কি লেখা তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রাকটিক্যালি কতক্ষণ চার্জ থাকে। রিচার্জেবল ব্যাটারি সাধারণত: ধরে নিতে পারি ১০০ বার চার্জ ও ডিসচার্জ করা যায়। আবার অনেক কোম্পানি ঘোষণা করে তাদের ব্যাটারি ১০০০ বার চার্জ ও ডিসচার্জ করা যায়। তবে আমার অভিজ্ঞতা হল রিচার্জেবল ব্যাটারি ক্রমাগত ব্যবহার করলে ব্যাটারি ভাল থাকে আর দীর্ঘদিন ব্যবহার না করে ফেলে রাখলে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। আবার শুধু চার্জ করে রাখলে এবং ডিসচার্জ না করলে ব্যাটারির ফটো এফেক্ট হয়। তবে নিকেল ক্যাডমিয়াম ছাড়া অন্য ব্যাটারিতে ফটো এফেক্ট থাকবে না।
বাজারে এখন নিকেল ক্যাডমিয়াম, নিকেল মেটাল হাইড্রেড ও নিকেল জিংক ব্যাটারি পাওয়া যায়। এর মধ্যে নতুন চালু হওয়া নিকেল জিংক পরিবেশ বান্ধব, মূল্য কম, বেশী ভোল্ট পাওয়া যায়। তবে এর চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতায় ঘাটতি দেখা যায়। নিকেল জিংক ব্যাটারির চার্জিং এর প্রক্রিয়াটাও অন্য রিচার্জেবল ব্যাটারী থেকে আলাদা হবে


আমার এতক্ষনের আলোচনায় পরিবেশ বান্ধব রিচার্জেবল ব্যাটারির ব্যবহারে আপনারা আগ্রহ পাবেন। ইন্টারনেটে আরো অনেক তথ্য আপনারা জানতে পারবেন। আসুন আমরা আমাদের ডিভাইসের উপযোগী ও প্রয়োজন মোতাবেক রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহার শুরু করি রিচার্জেবল ব্যাটারি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি।

No comments:

Post a Comment