Pages

Sunday, July 20, 2014

তৈরি করুন সমবায় ভিত্তিক সোলার ডিসি মাইক্রো গ্রিড সিস্টেম

সোলার প্যানেল বিজ্ঞানের এক বড় আবিষ্কার । ছোট ছোট ছবির ফ্রেমের মত প্যানেল রোদে রেখে দিচ্ছি আর বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। একেকটা যেন ছোট ছোট বিদ্যুৎ তৈরির কারখানা। বিষয়টা ছোট খাট ব্যাপার নয় বিশাল আবিষ্কার। আজ থেকে কয়েক যুগ আগে সোলার প্যানেল আবিষ্কার ও ব্যবহার হলেও অতি উচ্চ মূল্যের জন্য বিদ্যুতের বিকল্প হিসাবে সোলার প্যানেলকে বিবেচনা করা যায়নি। ২০১৪ সালে পদার্পণ করে মনে হচ্ছে সৌর বিদ্যুতই আমাদের ভবিষ্যতের ভরসা। কারণ মাটির নীচের গ্যাস, জীবাশ্ম তৈল শেষ হবেই,এটা সীমিত, যেহেতু পৃথিবীর পেটে এগুলো আছে আবার পৃথিবীর আকারও বেড়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাহলে আমাদের নাতিরা বা তাদের নাতিরা কিভাবে বাঁচবে। তার সমাধান ঠিকই হয়ে গেছে। এখন আর উত্তর খোজার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাওয়া ও প্রযুক্তির বাস্তবায়ন। বিদ্যুৎ আসবে সৌর, বায়ু আর পানি থেকে। গাড়ীর জন্য তৈল আর ইথানল আসবে গাছ থেকে। নবায়নযোগ্য জ্বালানীর জন্য প্রয়োজন ঘরে ঘরে সোলার সেল জুড়ে জুড়ে প্যানেলের দাম কমিয়ে আনা। কুটির শিল্পের ভিত্তিতে ছোট ছোট এলইডি লাইট তৈরি করা। ঘরে ঘরে চার্জ কন্ট্রোলার তৈরি। জেলা ও উপজেলায় ছোট আকারের ব্যাটারি উৎপাদন কারখানা চালু করা।
আমি প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময়ে ছোটবেলার একটি গল্প পড়েছিলাম কিভাবে কয়েকজন চাষি অল্প অল্প সঞ্চয় করে বিশাল কৃষি যন্ত্রপাতি, জায়গা জমি ও উন্নত জীবন যাত্রা অর্জন করেছিল। আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য সমবায় করে কিভাবে পুরো গ্রামের বিদ্যুৎ সমস্যার মোকাবিলা করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন গ্রামবাসীর সমবায় উদ্যোগ।
বিদ্যুৎ বিল গড়ে ধরে নিলাম ৩০০ টাকা। ৫০টি পরিবার গ্রিড সংযোগের বাইরে আছে। মনে করি সামর্থ্য-বান এক দুইজনের হোম সোলার সিস্টেম আছে বাকীদের কিছুই নেই। ভারতে আমাদের দেশের দশগুণ মানুষ আছে। তাদের নন-গ্রিড এলাকার মানুষও আমাদের দেশের দশগুণ। সেখানে সবাই যে হোম সোলার সিস্টেম লাগাতে পেরেছে তা কিন্তু নয়। ভারতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারা তৈরি করেছে বৈদ্যুতিক বাতির চার্জ স্টেশন। একেক জন ৬০/১০০টি বাতি সৌর প্যানেলে বসিয়ে চার্জ দিয়ে দিচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক কেরোসিন বাতির ব্যবহার দুর করা যাচ্ছে। আমাদের গ্রামের গঞ্জের এসিড ব্যাটারি চার্জিং দোকানের মত। প্রতিদিন দুই টাকা দিচ্ছে আর চার্জ করা সোলার লাইট ভাড়া নিয়ে সবাই ব্যবহার করছে। মাসে ৬০ রুপি খরচ। এভাবে কুপির কেরোসিনের খরচের পরিবর্তে মাত্র ৬০ টাকা ব্যয়ে উন্নত ও উজ্জ্বল লাইট পাওয়া যাচ্ছে।
আমাদের দেশের ইডকল ও এনজিওদের মিলিত উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে সোলার হোম সিস্টেমের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। আমরা সোলার হোম সিস্টেম যতই ব্যবহার করি না কেন এটার সরবরাহ কিন্তু বিদ্যুতের সাথে তুলনা চলে না। সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ অনেক সস্তায় ব্যবহার করা যায়। যদিও কিস্তিতে ক্রয় করছে তবুও প্রতিটি সোলার সিস্টেম ২০ হাজার টাকা হলে ৫০ জনের হোম সোলার সিস্টেমের দাম হবে ৫০ x ২০ হাজার অর্থাৎ ১০,০০,০০০ বা দশ লক্ষ টাকা। বর্তমানে ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে ৫ কিলোওয়াটের হাইব্রিড সিস্টেম চালনা করা সম্ভব। এতে সৌর বিদ্যুৎ, তার সাথে স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর ও ব্যাটারি ব্যাকআপ ইত্যাদি ব্যবস্থায় প্রতিদিন প্রত্যেকে গড়ে ৫০০০/৫০=১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব। এতে একজনের বাড়ীতে কি কি চলতে পারবে। একটি সিলিং ফ্যান ৩০ ওয়াট, একটি ২৪ ইঞ্চি এলইডি  টিভি ২৪ ওয়াট, একটি ছোট ল্যাপটপ ৩২ ওয়াট, পাঁচ ওয়াটের দুইটি এলইডি বাতি, তিন ওয়াটের একটি এলইডি বাতি অথবা এক বা একাধিক মোবাইল চার্জার। দেখা যাচ্ছে যে, ১০০ ওয়াটও কিন্তু কম বড় না। এখন এই ১০০ ওয়াটে ল্যাপটপ ও টিভি একবারে ব্যবহার না করলে ৩০ ওয়াটের আরও একটি সিলিং ফ্যান ব্যবহার করা যাবে। আবার সিলিং ফ্যান ব্যবহার না করে একাধিক ১০/১৫ ওয়াট টেবিল ফ্যান ব্যবহার করা যাবে। তদুপরি সবাই যে ২০ ঘণ্টা ধরেই ১০০ ওয়াট ব্যবহার করবে তা কিন্তু নয়। রাতে ঘুমানোর পর ব্যবহার কমবে। দিনের বেলায় লাইটের ব্যবহার কমে যাবে। অন্যদিকে সবাই যে ১০০ ওয়াট ব্যবহার করবে তা কিন্তু নয় অনেকেরই লাইট ও ফ্যানের বাইরে অন্য কোন চাহিদা নাই। তাদের ১০০ ওয়াটের বরাদ্ধের মধ্যে খরচ হবে মাত্র ৫০/৬০ ওয়াট তাদের বেচে যাওয়া ৪০/৫০ ওয়াট অন্য গ্রাহক যার বেশী প্রয়োজন সে ব্যবহার করতে পারবে। পুরো সিস্টেমটি প্রিপেইড বা পোষ্ট পেইড মিটারে পরিচালিত হতে পারে।
৫০ জনের প্রত্যেকে ১০০ ওয়াট করে বিদ্যুৎ পেতে হলে ৫ কিলোওয়াট সোলার সিস্টেম প্রয়োজন। যেহেতু ৫ কিলোওয়াট লোড একবারে নাও লাগতে পারে সেহেতু আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ক্রমাগতভাবে স্থাপনের সুবিধার জন্য ৩.২ কিলোওয়াট নির্ধারণ করি। কারণ আমরা ৪ বারে ৮০০ ওয়াট করে প্যানেল লাগিয়ে ৩.২ কিলোওয়াটের প্যানেল স্থাপন করতে পারব।
৩২০০ ওয়াট প্যানেল, ব্যাটারি ব্যাকআপ ও স্ট্যান্ড বাই জেনারেটর দিয়ে নীচে আনুমানিক বাজার দরে সিস্টেমের খরচের হিসাব দেয়া হল:
১। ৩২০০ ওয়াট প্যানেল ওয়াট প্রতি ৫০ টাকা হিসাবে মূল্য: ৩২০০x৫০=১,৬০,০০০ টাকা।
২। ১৬ টি,১২ ভোল্ট ১৩০ এএইচ ডিপ ডিসচার্জ ব্যাটারি: ১২০০০x
১৬=১,৯২,০০০
৩। এলুমিনিয়ামের গ্রিড লাইনের তার: ১০০০x৩৩ টাকা মিটার=৩৩,০০০ টাকা।
৪। মিটার প্রিপেইড(Solaric এর তৈরি www.solar-ic.com): ৫০x২৫০০ টাকা=১,২৫,০০০ টাকা।
৫। সোলার প্যানেল রাখার জন্য ফ্রেম, চার্জ কন্ট্রোলার, ওয়্যারিং এর তার, এলইডি লাইট, সকেট, সুইচ ইত্যাদি: ১,০০,০০০ টাকা।
সর্বমোট: ৬,১০,০০০ টাকা।
এখন আমরা দেখি কিভাবে সমবায়ের মাধ্যমে আগানো যায়। হোম সোলার সিস্টেম আপনাকে কিস্তি দিচ্ছে এবং সরকারী ভর্তুকি আছে ঠিকই তবুও ২০,০০০ টাকা সোলার সিস্টেমে কমপক্ষে ৫০০০ টাকা এনজিওদের লাভ থাকেই। ৫০০০ করে ৫০ টা হোম সিস্টেমে ২,৫০,০০০ টাকা লাভ বাবদ চলে যাচ্ছে। এ টাকাটা সমবায়ের মাধ্যমে সমবায়ীরা নিজেদেরই কাজে ব্যয় করতে পারবেন।
সমবায়ের মাধ্যমে ডিসি মাইক্রো গ্রিড স্থাপন করার জন্য ধাপ সমূহ:
১ম ধাপ:
১ম মাসে প্রথম চাঁদা ৫০০ টাকা। সর্বমোট ৫০০x৫০=২৫,০০০ টাকা। সকল বাড়ীকে এলুমিনিয়ামের গ্রিড লাইনে সংযোগ করা। গ্রিড লাইনটি এমন হবে যেন তা গ্রামের মাঝামাঝি স্থানে কেন্দ্রীয় স্থানে স্থাপন করা হয়। চার থেকে পাঁচটি লাইন লোড অনুযায়ী ভাগ হবে। প্রতিটি লাইনে ২০ অ্যাম্পিয়ারের বেশী লোড দেয়া হবে না। ২০ অ্যাম্পিয়ারের বেশী প্রবাহ করলে সিস্টেম কম এফিসিয়েন্ট হবে। শর্ট সার্কিট রিস্ক বেড়ে যাবে। সার্কিট ব্রেক ঠিকভাবে হবে না।
২য় থেকে ৪র্থ মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ২০০ ওয়াট করে সৌর বিদ্যুৎ যোগ করে চার মাসে ৮০০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
২য় ধাপ:
ছয়মাস পরে এ ধাপ সম্পন্ন হবে। সবাই ৩০০ টাকা করে চাঁদা পরিশোধ করতে থাকবে। ৪টি ১২ ভোল্টের ১৩০ অ্যাম্পিয়ার আওয়ার ব্যাটারি দিয়ে ৪৮ ভোল্ট সাপ্লাই তৈরি করা হবে। এখন প্রথম ধাপের পর গ্রাহকরা রাতে ও দিনে সৌর বিদ্যুৎ পেতে থাকবে। প্রত্যেক গ্রাহক কমপক্ষে দুইটি করে ৫ ওয়াটের এলইডি লাইট ও মোবাইল চার্জার লাগাতে পরবে।
৩য় ধাপ:
ছয় মাস পর থেকে ১২ মাসে সম্পন্ন হবে। সকল গ্রাহকের মিটার লেগে যাবে।
৪র্থ ধাপ:
১৩ থেকে ৩০ মাস প্রতি ছয় মাস পরপর প্রত্যেকবারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৮০০ ওয়াট প্যানেল এবং ৪টি ১২ ভোল্টের ১৩০ এএইচ  ব্যাটারি সংযোগ হতে থাকবে ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তে থাকবে। সমবায়ের গ্রাহকরা এ পর্যায়ে গ্রাহক চাঁদা ৩০০ টাকা থেকে কমিয়ে সর্বনিন্ম ১০০ টাকা করতে পারে বাকীটা বিলের মাধ্যমে আদায় করতে পারবে।
৫ম ধাপ:
 ৩১ থেকে ৩৬ মাস এ পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি স্থাপন করা হবে। মিটারে বিল তোলা হবে। গ্রাহকরা ১০০ টাকা করে চাঁদা দিবে। জেনারেটর ক্রয় করা হবে। মেঘলা বা বৃষ্টির দিনে জেনারেটর ব্যাকআপ হিসাবে থাকবে।

আমরা ব্যাংক লোণ ছাড়া সেলফ ফাইনান্সিং এর মাধ্যমে সমবায়ের মাধ্যমে অনেক কম খরচে ৫০ জনকে অনেক শক্তিশালী গ্রিড লাইন উপহার দিতে পারব। তবে সম্পূর্ণ প্রজেক্টের জন্য ইডকল(IDCOL) থেকে লোণ নেয়া যাবে। এতে প্রজেক্টটি একবারে তৈরি করা যাবে। একবারে তৈরি করলে গ্রাহক পর্যায়ে ব্যাংক লোণের সুদ বাবদ একটু বেশী খরচ গেলেও ধাপে ধাপে সময় ক্ষেপণ না করে সম্পূর্ণ প্রজেক্টি একবারে চালু করা যাবে এবং অনেক বেশী সুবিধা আমরা শুরু থেকেই পেতে থাকব। যে সব এলাকার মানুষের অধিকাংশের হোম সোলার সিস্টেম আছে তারা শুরু থেকে ব্যাংক লোণ নিয়ে সম্পূর্ণ সিস্টেমটি একেবারে চালু করতে পারেন। পরে সমবায়ের মাধ্যমে বিল পরিশোধ ও নির্দিষ্ট চাঁদা পরিশোধ করে সমবায়-ভিত্তিক ডিসি মাইক্রো গ্রিড সিস্টেমটি বাস্তবায়ন করতে পারেন। আসুন আমরা সমৃদ্ধির পথে আমাদের প্রিয় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই।

No comments:

Post a Comment