Pages

Saturday, April 18, 2015

বিদ্যুৎ তৈরিতে বায়োমস জ্বালানীর ব্যবহার


আমাদের বাংলাদেশে ঘরে ঘরে জ্বালানী হিসাবে পাতা, জমির শুকানো খড়, পাটখড়ি ও অন্যান্য গাছগাছালি ব্যবহার হচ্ছে। একটা গ্রামীণ পরিবার যেন তেন ভাবে কমপক্ষে দিনে ১০ কেজি লাকড়ি জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে। তাই প্রতিটি পরিবারের সমস্ত লাকড়িগুলো একসাথে করে (যেমন ১০০০ পরিবারের ১০০০০ কেজি জ্বালানী) আমরা আবদ্ধ প্রকোষ্ঠে প্রজ্বলিত করে তাপ উৎপাদন করতে পারি। আর সেই তাপ দিয়ে বাষ্পচালিত টারবাইন মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। বাংলাদেশের কাপাসিয়ায় একজন পোল্ট্রি ব্যবসায়ী লোড শেডিং এ অতিষ্ঠ হয়ে  ভারতের ধানের তুষ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল দেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনে উদ্যোগী হয়। তার এবিষয়টি দেশে ও বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। জামানি এ ধরনের বায়োমাস রিএ্যাকটর স্থাপন ও বিক্রয় করে। বায়োমস ইলেক্ট্রিসিটি দিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ দিলে এ ধরনের প্রচুর বায়োমাস রিএ্যাকটর বিশ্ববাজারে পাওয়া যায়। শুধু প্রয়োজন যোগাযোগ করা ও আমদানি করা।


আমাদের দেশের মহিলারা। এখনও উন্মুক্ত চুলা ব্যবহার করে যাচ্ছে। এ ধরনের চুলা তাদের জীবনী শক্তি কমিয়ে দিচ্ছে। তারা দীর্ঘস্থায়ী ভাবে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন তাদের ব্যবহৃত লাকড়ির চুলা তুলে দিয়ে তাদেরকে ভর্তুকি দরে ইলেকট্রিক ইনডাকশন চুলা দেয়া যেতে পারে, খাবার গরম করার জন্য মাইক্রোওয়েভ ওভেন আর ব্যাকআপ হিসাবে গ্যাস দেয়া যেতে পারে। ইনডাকশন চুলায় নিরাপত্তা ভাল। ইন্ডাকশন চুলা আনুমানিক ৩৫০০ টাকা+ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ৮০০০ টাকা + সিলিন্ডার সহ গ্যাসের চুলা ৫০০০ টাকা= সর্বমোট:১৬৫০০ টাকা তাদের খরচ করার প্রয়োজন হবে। বায়োমস সংগ্রহের আওতাধীন এলাকার গ্রামের মানুষদের ঘরবাড়িতে রান্নার জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন হবে। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে নেয়া হবে বায়োমস জ্বালানী। তাদের খড়কুটো, তুষ, অন্যান্য ফসলের জ্বালানী, গাছের পাতা ও মরা ডালপালা। অর্থাৎ যা দিয়ে আগুন জ্বালানো যায় তাই বায়োমস রিএ্যাক্টরের জন্য নেয়া হবে। ইন্ডাকশন চুলা প্রায় ৮৪% এনার্জি এ্যাফিশিয়েন্ট। অন্য দিকে গ্যাসের চুলার এ্যাফিসেন্সি হল ৩৪%, মাইক্রোওয়েভ আরো এনার্জি সাশ্রয়ী। সাধারণত ১০০ টাকার মাইক্রোওয়েভ বিল+ ৪০০ টাকা ইন্ডাকশন চুলার বিল+এক সিলিন্ডার গ্যাস শুধু বিদ্যুৎ না থাকলে ব্যবহার করলে মাসে গ্যাস খরচ(১৫০০/৩ অর্থাত তিন মাসে এক সিলিন্ডার) হবে ৫০০ টাকা। সর্বমোট খরচ ১০০০ টাকা। /৬ মন বায়োমস জ্বালানী বিক্রয় করে কৃষক পরিবার পাবে ১০০০ টাকা। সুতরাং বায়োমস বিক্রয় করে কৃষকের গ্যাস ও বিদ্যুৎ খরচ চালানো কোন ব্যাপারই নয়। আমরা কৃষকের ঘরে ঘরে বায়োমসের অগনিত চুলায় ব্যবহার করতে না দিয়ে সেই বায়োমস জ্বালানী দিয়ে ৭ থেকে ১২ মেগাওয়াটের রিএ্যাকটর প্রতিটি এলাকায় ১০০ বর্গ কিমি: আয়তনের  মধ্যে ব্যবহার করতে পারি।  বায়োমাস প্লান্ট ব্যবহার করে আমাদের গ্রামের মানুষ লাকড়ির পরিবর্তে ইনডাকশন কুকার আর মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করবে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে স্ট্যান্ড বাই হিসাবে গ্যাস ব্যবহার করে রান্না করবে।

আমার এ লেখাটি যে ধারনায় ও উদ্দেশ্যটা খুব সাধারণ আর তা হল গ্রামের মহিলারা যেসমস্ত জ্বালানী ছোট ছোট চুলায় জ্বালায় সেই জ্বালানীগুলো একত্র করে আবদ্ধ প্রকোষ্ঠ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তৈরি করে তা দ্বারা নিরাপদ বৈদ্যুতিক চুলা জ্বালানোটাই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সরাসরি অগুণের চুলার পরিবর্তে জ্বালানী থেকে বিদ্যুৎ তৈরি আর তা দ্বারা এফিশিয়েন্ট বৈদ্যুতিক চুলা জ্বালিয়ে পরিবেশ বান্ধব প্রক্রিয়ার অগ্রযাত্রা করা। গ্রামের মানুষদের বাড়ী বাড়ী ভ্যান বা ট্রাক যাবে তাতে তারা তাদের সমস্ত খড়কুটো যা জ্বালানীর জন্য ব্যবহার করা হত তা তুলে দিবে বা বিক্রয় করবে। এই খড়কুটো  জ্বালানী থেকে তারা পাবে বিদ্যুৎ। যা দ্বারা তারা রান্না সহ অন্যান্য কাজ করবে। রান্না কাজে ব্যবহৃত বাড়তি বিদ্যুৎ বিল তারা পরিশোধ করবে তাদের বিক্রয়লব্ধ বায়োমাস থেকে।
বায়োমস গ্রামের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে গ্রামের পরিবেশ অপরিষ্কার করে রাখে। তাই যখন গাছের পাতা থেকে শুরু করে সমস্ত বায়োমস বিক্রয় করা যাবে তখন গ্রাম এলাকায় আর বায়োমসের কারণে অপরিচ্ছন্নতা আর দেখা যাবে না। সবাই বায়োমস কুড়িয়ে নিয়ে বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করবে। এতে রিনিউবল উৎস থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের মত কৃষি-প্রধান দেশে সর্বদাই অফুরন্ত বায়োমাস দেখা যায়, এমনকি কৃষকরা জমিতে অনেক বায়োমস পুড়িয়ে ফেলে। যদি পাওয়ার প্লান্টের জন্য বায়োমস কেনাবেচা হয় তবে কেহই আর কিন্তু  জমিতে পুড়বে না। সবাই সে সমস্ত বায়োমস সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করবে। বায়োমস জ্বালানী হিসাবে উন্মুক্ত-ভাবে জ্বালানো হলে তা ব্যাপক হারে পরিবেশ দূষণ করবে। আর বৈদ্যুতিক রিএ্যাকটারে জ্বালানো হলে তা কম বায়ু দূষণ করবে।

বাংলাদেশের জন্য বায়োমস রিএ্যাকটর বিপ্লব সৃষ্টি করবে। এ ধরনের মেগাওয়াট মাপের বায়োমস রিএ্যাকটর প্রতিটি উপজেলায় পরিচালনা করা সম্ভব। আর বায়োমস রিএ্যাকটর চালাতে আর বায়োমস সংগ্রহ করতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রতিটি উপজেলায় যদি দশ মেগাওয়াটের একটি করে রিএ্যাকটর থাকে আর তা যদি ২৪ ঘণ্টা করে চলে তবে রিএ্যাকটরের জ্বালানী সংগ্রহ কাজ পরিচালনা করা হয় তবে এই কর্মকাণ্ডে প্রায় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আর প্রতিটি উপজেলায় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হলে পুরো দেশে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হওয়াটা মোটেই আশ্চর্যয়ের বিষয় নয়। যদি অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়। তবে ধারনা করা যায় দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রেও দ্রুত উন্নতি হতে থাকবে।

          ইন্টারনেটে এ বিষয়ে সার্চ করে জানা যায় ৭ থেকে ১২ মেগাওয়াটের রিএ্যাক্টারে আনুমানিক ১০ একর জায়গার প্রয়োজন। বায়োমাস জ্বালানী মজুদ করতে আরো ১০ থেকে ২০ একর স্থানের প্রয়োজন। এতে বর্তমান(২০১৫ সাল) প্রায় ৩০/৩৫ কোটি টাকা খরচ হবে। ২০০০ সালের পর হতে গত ১৫ বছরে ভারতে সর্বমোট ৯৯৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ৭-১০ মেগাওয়াটের অসংখ্য বায়োমস বিদ্যু কেন্দ্র চালু আছে। আমরা ভারত বা জামানি থেকে বায়োমসের রিএ্যাক্টর আমদানি করতে পারি। একটা ৭-১২ মেগাওয়াটের বায়োমস রিএক্টরের স্থাপনা তৈরী করতে ১৮ মাসের মত সময় প্রয়োজন। সহজেই বাংলাদেশে একাধিক বায়োমস রিএ্যাক্টর তৈরি সম্ভব,পরিশেষে বলব, গ্রামের মানুষ তাদের খড় ও অন্যান্য সামগ্রী থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে নিজেরা আর্থিক ও স্বাস্থ্যগত ভাবে লাভবান হতে পারে। এটা পল্লী বিদ্যুতায়নকে সহায়তা করবে। অনেকে ধারনা দিতে পারেন জ্বালানী পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিবেশ বান্ধব নাও হতে পারে। তবে লক্ষ লক্ষ খড়ি/লাকড়ির চুলায় জ্বালানী পুড়ানোর চেয়ে আবদ্ধ প্রকোষ্ঠে যথাযথভাবে কার্বন নির্গমন কমাতে পাড়লে বায়োমস রিএ্যাকটরও পরিবেশ বান্ধব হিসাবে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের বৈদ্যুত ঘাটতি মেটাতে এগুলো হবে অনেক বেশী কার্যকর।
Photos collected from internet search

No comments:

Post a Comment