প্রায় দুবছর হতে চলল আমি ও আমার ছেলে কোন সিডি কিনিনি। গত দুই
বছরে আমি কোন সিডি ব্যাবহার করেছি কিনা মনে পরছে না। এখন পেন ড্রাইভ, ইমেইল
এটাচ ও ড্রপ বক্স ইত্যাদির ওপর নির্ভর করার কারণে সিডির ব্যবহার কমে গেছে। ২০১০
সালে আমি একটি নোটবুক পিসি বা আসুসের ইপিসি কিনি। এটার আকার ছোট ও ১২ ইঞ্চি মনিটর।
সিডি-রম বা ডিভিডি রম নেই। আমি নোটবুকটি ক্রয় করার সময় আমাকে বিক্রেতা বললেন,
এক্সটারনাল ডিভিডি ড্রাইভ নেয়ার জন্য। কখনও অপারেটিং সিস্টেম
রি-ইন্সটল করতে হলে এক্সটারনাল ডিভিডি ড্রাইভ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে। আমি তখনও
জানতাম না পেন-ড্রাইভ দিয়ে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা যায়। হয়ত জানলে আমি
এক্সটারনাল সিডি-রম ড্রাইভ ক্রয় করতাম না। এক্সটারনাল সিডি রম ড্রাইভ ক্রয় করার পর
আমি লক্ষ করলাম। ড্রাইভটি কেনার পর থেকে ছয় মাসের মধ্যে আমি মাত্র তিনবার ব্যবহার
করেছি। তখন আমি বিক্রেতার সাথে কথা বলি। আমি ৫০০০ টাকায় ক্রয় করা একদম নতুন
ড্রাইভটি তাকে পুনরায় ৩৫০০ টাকায় ফেরত দেই। কারণ ৬ মাসে মাত্র তিনবার ব্যবহার করা
ডিভিডি ড্রাইভটি সংরক্ষণ করার আগ্রহ আর হল না।
বর্তমানে সিডি-রমের প্রয়োজন নেই। আপনি শুধু গত একবছরে আপনার
সিডি-রম ড্রাইভটি কতদিন ব্যবহার করেছেন। এ তথ্যটি পেলে আপনি আপনার সিডি-রম
ব্যবহারের প্রয়োজনটা বুঝতে পারবেন। একটা অফিসে ১৫/২০ টি কম্পিউটারের মধ্যে একটি
কম্পিউটারে ডিভিডি/সিডি-রম থাকলেই যথেষ্ট। অন্যরা প্রয়োজন অনুযায়ী সিডি বা ডিভিডির
তথ্য পেন ড্রাইভ বা এক্সটারনাল ড্রাইভে কপি করে নিলেই চলবে। সিডি রম ড্রাইভের অন্য
একটি অতি প্রয়োজনীয় ব্যবহার হল গান শোনা ও ছবি দেখা। এখন প্রায়ই গাড়ীতে দেখি
সিডি-রম ড্রাইভের পরিবর্তে পেন ড্রাইভে কপি করে নিয়ে পেন ড্রাইভ চলে এরূপ প্লেয়ার
দিয়ে অনেকেই গান শুনছেন। কোন ছবি দেখার প্রয়োজন হলে এখন খুব কমই দেখা যায় সিডি বা
ডিভিডি ড্রাইভ ক্রয় করতে। অধিকাংশই ইন্টারনেট থেকে প্রয়োজনীয় মুভি বা গান ডাউন লোড
করে নেয়। বাংলাদেশের ইউনিয়ন ইনফরমেশন সেন্টারগুলোতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট রয়েছে।
আর অনেকেই থ্রিজি ব্যবহার করেন। দেশের যে কোন স্থানেই ব্রডব্যান্ড থাকায় তারা যে
কোন স্থানে যাতায়াতে থাকলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যাদি সংরক্ষণ ও ব্যবহার করতে
পারেন। আমি ২০১১ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে(কঙ্গোতে) যাওয়ার সময় দেখলাম
আমাদের একজন ইয়ং ক্যাপ্টেন এক টেরাবাইট সাইজের মোবাইল ডিক্স ক্রয় করেছে। আর যাদের
থেকে ক্রয় করেছে তাদেরকে কিছু টাকা দিয়ে বাংলা,ইংরেজি ও হিন্দি মিলিয়ে আটশত
সিনেমা কপি করে নিয়েছে। এই হার্ডডিক্স থেকে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী ছবি কপি করে
নিচ্ছিলাম। অবশ্য আপনি কপিরাইট লঙ্ঘনে সচেতন থাকলে হয়ত কপি না করে মুভি
ডিভিডি/সিডি ক্রয় করে ব্যবহার করবেন। এখন অবশ্য অনেকেই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে
পেমেন্ট করে ইন্টারনেট হতে ছবি ডাউন-লোড করে নেয়। তারপর তার থেকে অন্যরা কপি করে
নিতে থাকে।
ল্যাপটপ ও নোটবুক পিসি সিডি-রম ছাড়াও চলতে পারে। যদিও অধিকাংশ
ল্যাপটপে ডিভিডিরম বিল্টইন। কিন্তু ডিভিডিরম বিহীন ল্যাপটপ দিয়েও আপনি নির্ধিদ্দায়
চলতে পারবেন। আমি ২০১০ সালের মার্চ হতে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ডিভিডি ড্রাইভ
বিহীন ল্যাপটপ ব্যবহার করে চলেছি সমস্যা ছাড়া। এ ল্যাপটপটিতে কোন বিল্টইন ডিভিডি
ড্রাইভ নেই। গত পাঁচ বছরে আমার হাতে গোনা পাঁচ/ছয়বার সিডি-রম ড্রাইভের প্রয়োজন হয়।
তখন আমি সিডি-রম ড্রাইভের তথ্যাদি কোন ডেস্কটপ কম্পিউটার থেকে কপি করে পেন ড্রাইভে
নিয়েছি। অত:পর পেন-ড্রাইভ থেকে ল্যাপটপে নিয়ে কাজ করেছি।
আপনার যদি ডিভিডিরম না থাকে আর কখনও তা ব্যবহারের প্রয়োজন হলে
মাঝে মাঝে সাইবার ক্যাফে থেকে কপি করে নেয়া যাবে। আমরা একসময় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ
তথ্যাদি ফ্লপি ডিস্ক, টেপে বা সিডি-রম ড্রাইভে কপি করে রাখতাম। এখন
আমরা মোবাইলের মেমোরি কার্ডে ও পেন ড্রাইভে কপি করে রাখতে পারি। আজকাল অনলাইন
স্টোরিং বেশ জনপ্রিয়। আমার কাছে মনে হয় অনলাইন
স্টোরিং কম্পিউটারকে ভাইরাস-মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
আমার মত অনেকেই অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী জমিয়ে রাখতে মোটেই পছন্দ
করে না। এইতো সেদিন অনেকগুলো ছবির ফিল্ম (নেগেটিভ) ধ্বংস করলাম। কারণ হিসাব করে
দেখলাম ২০০৫ এর পর থেকে আমি ক্যামেরায় কোন ফিল্ম লোড করিনি। ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি
উঠানো চলছে। আমার সংগ্রহ থেকে কোন ফিল্ম(নেগেটিভ) নিতে হয়নি ছবি ডেভেলপ করার জন্য।
তাই দীর্ঘ দিনের ছবির ফিল্ম জমিয়ে না রেখে আমার চেস্ট অব ড্রয়ার খালি করে দিলাম।
অপ্রয়োজনীয় হিসাবে সকল নেগেটিভ কেটে-কুটে ফেলে দিলাম।
আর একদিন আমার চেস্ট অব ড্রয়ার থেকে সব সিডি বের করে ফেলে
দেয়ার জন্য উদ্যত হলাম। আমার বাসার ঝাড়ুদার তার বাচ্চাদের খেলনা বানানোর জন্য নিতে
চাইল। আমি চোখা একটা পয়েন্টার দিয়ে দাগ কেটে সিডিগুলো অকেজো করে খেলনা হিসাবে দান
করলাম। কারণ একটাই, গত দুই বছর আমার কোন সিডি ব্যবহারের প্রয়োজন
হয়নি। তাই অপ্রয়োজনীয় কোন দ্রব্য বাসায় রেখে দেয়া মোটেই ঠিক নয়। হয়তবা স্মৃতি
হিসাবে হয়ত রাখা যেতে পারে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট থাকলে অনলাইন স্টোরিং করা যায়। যেমন সব
সিডি ফেলে দিলেও আমার গুরুত্বপূর্ণ স্ক্যান করা ডকুমেন্ট ও ছবি ল্যাপটপে এবং
ডেস্কটপে ব্যাকআপ রেখেছি। আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ড্রপ-বক্সে অনলাইন
স্টোরেজে রাখছি। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আর অনলাইন স্টোরেজে আমাদের ডাটা হারানোর ভয়
কমিয়েছে। যে কোন স্থান থেকে ডাটা প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে। এতকিছুর আগমন ঘটায় আমার
কাছে মনে হচ্ছে সিডির ব্যবহার শেষের পথে আর সিডি ব্যবহার অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে।
No comments:
Post a Comment