Pages

Thursday, May 21, 2015

ফরমালিন বিহীন জীয়ল মাছ


ঢাকার অভিজাত ডিপার্টমেন্টাল দোকানে বড় বড় একুরিয়ামে জীয়ল মাছ বা জ্যান্ত মাছ দেখা যায়। জ্যান্ত মাছ কেনায় সবচেয়ে বড় লাভ হয় ভেজালমুক্ত এবং ফরমালিন মুক্ত মাছ খাওয়া যায়। ঢাকার অভিজাত এলাকায় অনেকেই উচ্চ মূল্যে জীয়ল মাছ কিনে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। অথচ প্রায়ই হাটতে গিয়ে দেখি কুষ্টিয়ার মিরপুর এলাকার সাধারণ মানুষ জ্যান্ত মাছই বেশী কিনছে। কারণ, ঢাকার চেয়ে অনেক কম দামে জীয়ল মাছ সবসময়ই সাধারণ মানুষ  কিনতে পারছে। আমি ময়মনসিংহ ও বগুড়ায় মাঝে মাঝে জীয়ল মাছ বা জ্যান্ত মাছ বাজারে পেলে কিনতাম(২০০৬-৭ ও ২০১০-১২ সাল)। বেশ চড়া দামেই ক্রয় করতাম। তাজা বা জ্যান্ত মাছ কেনার আনন্দটাই আলাদা। পচা মাছ কেনার জন্য বাসায় বকা খাওয়ার ভয় নেই। ফরমালিন নিয়েও ভয় নেই। আমি প্রায়শই যখন বিকালবেলা কুষ্টিয়ার মিরপুর এলাকায় হাটা হাটি করি তখন জ্যান্ত মাছ বিক্রয়ের দৃশ্য আমাকে আনন্দ দেয়। এখানে দেখতে পাই একটা চারকোনা পানি ভর্তি ট্রেতে প্রায় সকল মাছ ওয়ালাই জীয়ল মাছ বিক্রয় করছে। মরা মাছ বিক্রয় হয় হাতে গোনা। তাও আবার মাছ পানিতে জ্যান্ত থাকতে থাকতে দীর্ঘ সময় থেকে পানির গরম বা নানা কারণে কিছু মাছ মরে । এছাড়া সকল ব্যবসায়ী তারা জ্যান্ত মাছ বিক্রয় করার চেষ্টা চালায়। আমি আমার বিচরণ এলাকা কুষ্টিয়া , মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও যশোর এলাকায় বিভিন্ন কারণে ভ্রমণ করার সময় সকল রাস্তার পাশে প্রায় সকল মাছই টিনের বড় ট্রেতে পানির মধ্যে রেখে জ্যান্ত মাছ বিক্রয় করতে দেখি। এটা সত্যিই চমৎকার একটি ব্যবস্থা। আমরা যেখানে ফরমালিন আতংকে আতংকগ্রস্থ তখন মাছওয়ালাদের এ উদ্যোগ আমাদের অনেক অনেক বেশী ভরসা দিচ্ছে তা আমরা হলফ করে বলতে পারি।
          আমি একবার আমাদের বিজিবি ক্যাম্পাসের কিছু মাছ বাহিরের লোকের কাছে বিক্রয় করি। সাধারণত সকল মাছ সবাইকে ভাগ করে দেয়া হয়। কখনও বেশী বেশী মাছ ধরা পড়লে বাইরে কিছু মাছ বিক্রয় করা হয়। এরূপ বিক্রয় যোগ্য মাছ সকাল বেলায় জেলেরা ধরে। আমি জানতে চাইলাম কখন তারা মাছ নিবে। তখন জানতে পারলাম, মাছ ধরার পর পর তারা সমস্ত মাছ পানির উপরে না তুলে জাল দিয়ে পুকুরে রেখে দিয়েছে। পুকুরের জাল থেকে দ্রুত তুলে মাছগুলো মেপে আর একটি পানিতে ডুবানো জালের খাঁচায় বা হাপুড়ে মাছগুলো জিইয়ে রেখেছে। তারপর যখন বাজারের সময় হল তখন মাছগুলো বড় বড় পানি ভর্তি ড্রামে রেখে নসিমন বা করিমনে করে বাজারে রওয়ানা দিল। বাজারে গিয়ে ড্রামের জীয়ল মাছ প্রয়োজন মোতাবেক টিনের পানি ভর্ত্তি ট্রেতে বিক্রয়ের জন্য তুলে রাখছে। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সাপ্তাহিক মংগলবাড়ীয়া বাজারের  মাছগুলো সাধারণত বিক্রয় স্থানের সন্নিকটে জিকে প্রজেক্টের ক্যানেলের পানিতে জালের খাঁচায় ডুবানো। সেখান থেকে প্রয়োজন মোতাবেক বিক্রয়ের জন্য তুলে নিচ্ছে।

অনেক জায়গায় আমরা আগে দেখতাম বড় বড় বাঁশের ঝাকায় মাছ রেখে বিক্রয় করত। এখনকার পানিপূর্ন ট্রেতে মাছ বিক্রয়ের এই টেকনিকটিকে আধুনিক বলা যায়। কারণ মাছ পানিশূন্য রেখে বেশি সময় রাখা যায় না। বরফ ছাড়া পানিতে জিইয়ে রেখে মাছকে দীর্ঘ দিন রাখা যাচ্ছে। আমার এখনও মনে আছে ছোটবেলায় দেখতাম গ্রামের বাড়ী থেকে পানিতে ভর্তি হাড়িতে করে শিং, মাগুর, কৈ ও টাকি মাছ আনা হত। এ মাছগুলো হাড়িতে বা পাত্রে জীয়ল রেখে দীর্ঘদিন খাওয়া যেত। বাসায় ফ্রিজ না থাকলেও কোন অসুবিধা ছিল না। এ মাছগুলো পাত্র থেকে জ্যান্ত তুলে কেটে কুটে রান্না করে চমৎকার ফ্রেস মাছ পাওয়া যেত। আমি হয়ত আমার বিচরণের পাঁচটি জেলার কথা বললাম। আমার মনে হয় এখন বাংলাদেশের প্রায় স্থানেই জীয়ল মাছ বিক্রয়ের কালচার শুরু হয়েছে। এটা একটা চমৎকার সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য পচনশীল মাছের তরতাজা ভাবে লাভজনক বিক্রয় পদ্ধতি। মাছ জিয়ল রাখার কারণে ব্যবসায়ীদের অবিক্রিত জীয়ল মাছ তাদের টেনশন কমিয়েছে। অন্যথায় মাছের পচনরোধে নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকতে হত। মাছ দীর্ঘসময় জীয়ল রাখার জন্য জেলেদের এ প্রচেষ্টায় সাধুবাদ জানাতে হয়। আমার মনে হয় একবার কোন বাজারে জীয়ল মাছের কেনাকাটা শুরু হলে মরা মাছ কেনা ও বিক্রয় কমে যাবে। মরা মাছ তখন কেবলমাত্র শুটকি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হবে।

No comments:

Post a Comment