এসি বিদ্যুৎ আর ডিসি বিদ্যুৎ দুই ধরনের বিদ্যুতের ব্যবহার
আমরা প্রতিনিয়ত করছি। এনার্জি এ্যাফিশিয়েন্ট সিএলএফ লাইট বা
বর্তমানে চালু কৃত এলইডি লাইট আমরা ডিসি এসি যে কোন বিদ্যুতেই ব্যবহার করতে পারি। এনার্জি এ্যাফিসিয়েন্ট( সিএলএফ) লাইট যখন বাজরে আসল তখন
দেখা গেল তাতে ইলেকট্রনিক্স সার্কিট ব্যবহার করা হয়েছে। কোন ডিভাইস বা যন্ত্রে
যখনই ইলেকট্রনিক্স সার্কিট ব্যবহার হয় তখনই এসি হতে কনভারসন করে ডিসি বিদ্যুতের ব্যবহারের
প্রয়োজন হয়। এখন এনার্জি এ্যাফিসিয়েন্ট( সিএলএফ)
লাইটের থেকেও আরো এ্যাফিশিয়েন্ট লাইট বেরিয়েছে আর তা হল এলইডি
লাইট। এনার্জি লাইট থেকে ৩০ থেকে ৫০% এফিশিয়েন্সি পাওয়া যাচ্ছে। এই এলইডি লাইট মূলত: ছোট ছোট অনেক লাইটের (লাইট ইমিটিং
ডায়োড) সমাহার আর
এই ছোট লাইটগুলো অল্প বিদ্যুৎ এ চলে। যেহেতু অল্প বিদ্যুৎ ও ডিসিতে এলইডি লাইটগুলো
জ্বলে তাই এসি উচ্চ ভোল্টে এগুলো চালাতে হলে এসি হতে লো ভোল্টেজ ডিসিতে কনভার্ট করতে হয়। আর কনভার্টের ক্ষেত্রে
যত বেশী কম কনভারসন তত বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয়। সোলারের সেল লো ভোল্টেজ ডিসি বিদ্যুৎ
তৈরি করে। সেই সেলগুলো সিরিজ প্যারালাল করে আমরা
নির্দিষ্ট ভোল্টেজ ও ওয়াটেজ এর বিদ্যুৎ পাই।
অপরদিকে লো ওয়াটের ব্রাশলেছ ডিসি মটর চালু হয়েছে। যাকে বলা হয় বিএলডিসি
মটর। এখন সিলিং ফ্যান বের হয়েছে যা ডিসি পাওয়ারে চলবে। এসব ফ্যান হয়তবা তুফানের
মত ঝড়ো গতিতে ঘুরবে না। কিন্তু এটা ঘুরবে মাধ্যম গতিতে আর এতে
বিদ্যুৎ ব্যবহার হবে এসি বৈদ্যুতিক পাখার চার ভাগের এক ভাগ। যেখানে এসি বৈদ্যুতিক
পাখা ৮০ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে আর সেখানে ডিসি বৈদ্যুতিক পাখা খরচ করে মাত্র ২০ ওয়াট। অন্য একটা বড় সাশ্রয়
হল যখন এসি ফ্যান অর্ধেক গতি বা তার কম গতিতে চালানো হয় তখন বিদ্যুৎ ব্যবহার বা খরচের
তেমন কোন তারতম্য হয় না। কিন্তু ডিসি পাখার ক্ষেত্রে এ বিদ্যুৎ
অর্ধেক কমালে বিদ্যুৎ খরচও অর্ধেক হয়ে যায়। এভাবে সার্বিক ভাবে ডিসি বৈদ্যুতিক ফ্যান
অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে।
আমি ইন্টারনেট হতে ইউটিউবের একটি ভিডিও দেখে একটা আইডিয়া
পেয়েছিলাম। বেশ কিছুদিন আগে দেখেছিলাম তাই ভিডিও
ও তার লিংক আমার সংরক্ষণে নাই। আইডিয়াটা হল আমরা আমাদের গ্রিড লাইনে
দুই ধরনের ওয়ারিং করতে পারি একটি হল ৪৮ ভোল্ট ডিসি আর অপরটি হল ২২০ ভোল্ট ভোল্ট এসি। এই ৪৮ ভোল্ট ডিসি পাওয়ার
ব্যবহার হবে ইলেক্ট্রনিক্স সার্কিট, লাইট ও ফ্যানের জন্য। আর ২২০ ভোল্ট এসি ব্যবহৃত হবে এসি, ফ্রিজ ও টিভি ইত্যাদি চালনা করার জন্য। হেভি ওয়াটের লোড বা
এসি লাইনগুলোর ওয়্যারিং হতে পারে বাসা বাড়ির দেয়ালের নীচের দিকে যেখানে ফ্রিজ ও ইত্যাদি
থ্রি পিন সকেট লাগানো হয়। অন্যদিকে দেয়ালের উপরের দিকের ওয়ারিংগুলো
হতে পারে ডিসি ৪৮ ভোল্ট বা ১২ ভোল্ট। হিসাব করে দেখা গেছে ডিসি ৪৮ ভোল্টর লাইনে
আমরা নিন্মবর্নিত দ্রব্যাদি চালাতে পারি:
১. এলইডি টিউব লাইট
৫টি x২০ ওয়াট=১০০ ওয়াট
২. ফ্যান তিনটি =৩টি x ২০ ওয়াট=৬০
৩. বাথরুমের ও অন্যান্য
লাইট=৮টি x ৫ ওয়াট=৪০
৪. ল্যাপটপ একটি
৪০ ওয়াট
৫. এলইডি টিভি ৬০
ওয়াট
৬. মোবাইল চার্জার,
রাউটার, সুইচ ও অন্যান্য ইলেক্টনিক্স গেজেট
১০০ ওয়াট
৭.রিজার্ভ ১০০ ওয়াট
৮. সর্বমোট:
৫০০ ওয়াট
এই ৫০০ওয়াট বিদ্যুৎ বৈদ্যুতিক লাইনে লাগাতার থাকবে কখনও লোড
শেডিং এর আওতাভুক্ত হবে না। অন্য দিকে এসি ২২০ ভোল্ট লাইনে এসি, ফ্রিজ, কুকার, ওয়াশিং মেশিন, ডিশ ওয়াসার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ইত্যাদি যাবতীয় হেভি লোড চলবে। এই এসি লাইন প্রয়োজন
মোতাবেক লোড শেডিং এর
মধ্যে থাকবে।
সর্বদা ৫০০ ওয়াট ৪৮ ভোল্ট বিদ্যুৎ পাওয়া তা কিন্তু বিশাল
ব্যাপার। ফ্যানের বিষয়ে বিএলডিসি সিলিং ফ্যান অনেক
জোরে বাতাস না দিলেও তাও স্বস্তি দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
দ্বৈত লাইনের ক্ষেত্রে আমরা ৪৮ ভোল্ট বেছে নিয়েছি কারণ ৪৮
ভোল্ট লাইন বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য অনেক বেশী সুবিধা দিবে। অপরদিকে বহুল ব্যবহৃত
১২ ভোল্ট ট্রান্সমিশন ভাল নয়। ২০/৩০ ফুট দুরে বিদ্যুৎ নিতেই ভোল্টেজ ড্রপ হয়। মোটা তার লাগে। তাই মোটামুটি চিকন তার
দিয়ে ৪৮ ভোল্টে বিদ্যুৎ পরিবহন করানো যাবে। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ৪৮ ভোল্টে
কমদামী এলুমিনিয়াম তার দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা যাবে। এর জন্য মূল্যবান তামার
তার ব্যবহার না করলেও চলবে।
৪৮ ভোল্ট ডিসি পাওয়ার গ্রিড লাইন থেকে বাসায় আসবে। আর গ্রিডের পাওয়ার হতে
পারে ১০০০ বা ৩৬০ ভোল্ট ডিসি। এই ডিসি সাব স্টেশনের এসি বিদ্যুৎ থেকে
রেক্টিফায়ারের মাধ্যমে কনভার্ট করে অতিরিক্ত ফেজ লাইন হিসাবে প্রবাহিত থাকবে। এ লাইনে আলাদা মিটার
হবে। দ্বৈত লাইনের ট্রান্সমিশন হবে এলাকা ভিত্তিক হয়ত ২০ টি বাড়ীর
জন্য একটি ১০ কিলোওয়াট ডিসি-ডিসি কনভার্টর
বসানো হবে। ১০০/২০০ কিলোওয়াটের জন্য একটি সাব স্টেশন থাকবে।
দ্বৈত লাইনের উপকারিতা হল বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের
জন্য সর্বদা লোড শেডিং ছাড়া বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা প্রায় কঠিন একটি কাজ। আবার বিদ্যুতের লোডের
বিচারে আমরা দেখতে পাই লো ভোল্টেজ লোড আর হাই ভোল্টেজ লোড। আমরা হাই ও লো ভোল্টেজ
লোড আলাদা করতে পারলে আমরা যে উপকারটা পাব তা হল আমরা খুব সহজে লো ভোল্টেজের জন্য সোলার
পাওয়ার সংযোগ দিতে পারব। এমনকি আমরা এমন ব্যবস্থা করতে পারি যাতে
৪৮ ভোল্ট ডিসি বিদ্যুৎ সরাসরি সোলার প্যানেল থেকে যুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ এর ডিমান্ড কমিয়ে
অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অন্যদের দিতে পারবে। আমেরিকায় লো ভোল্টেজ লাইনে স্ট্যান্ডার্ড
২৪ ভোল্ট পরিকল্পনা করেছে। অপর দিকে ভারত ৪৮ ভোল্টর গ্রিড লাইন পরিকল্পনা
করেছে। আমেরিকানরা ৪৮ ভোল্টের প্রবাহ রিস্ক মনে করছে তাই তারা ২৪
ভোল্ট লো ভোল্টেজ লোডে ব্যবহার করছে। বর্তমান যুগে লো ভোল্টেজ লোডে সোলার পাওয়ার
সহজেই যোগ করে অনেক বেশী এ্যাফিসিয়েন্ট তৈরি করা যায়। এসি কারেন্টের গ্রিড
টাই সিস্টেমে অনেক বেশী কনভার্সনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আর এ ব্যবস্থায় সোলার
পাওয়ার সরাসরি লো ভোল্টেজ গ্রিডে দিয়ে অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়। আমার এ প্রস্তাবটি হয়তবা
অনেক বেশী আগে চিন্তা করে ফেলেছি। হয়তবা ২০৫০ সালের দিকে এ ধরনের ধারনা ধীরে ধীরে
বাস্তবায়িত হতে থাকবে।
No comments:
Post a Comment