Pages

Thursday, June 11, 2015

সংসার জীবনের অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো

সামরিক সদস্যরা একটা বিশেষ শর্তের বয়স পূর্তির পর বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। যেহেতু বিয়ের আগে বেশ কয়েক বছর অবিবাহিত থাকেন, সেহেতু সংসার জীবন শুরু করতেই অনেক দ্রব্যাদির চাহিদা থাকে। তবে অনেক দ্রব্যের চাহিদা থাকে ইমোশনাল। আমাদের সমস্ত দ্রব্যাদি যে আমাদের সমানভাবে প্রয়োজন পড়বে তা কিন্তু নয়। সাংসারিক জীবনে খাট, বিছানা, ডাইনিং টেবিল ও ডাইনিং চেয়ার সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। রান্না ঘরে রান্না শুরুর সাথে সাথে দুইটি জিনিস চাকুরীজীবীদের জন্য অত্যন্ত জরুরী তা হল রিফ্রিজিরেটর ও মাইক্রোওয়েভ ওভেন। অনেকে ফ্রিজ ও মাইক্রোওয়েভ ক্রয় করতে দেরি করে। এটা প্রথম সাংসারিক জীবনে অনেক কাজের চাপ কমায় ও অপচয় রোধ করে। আমার এ লেখাটি মধ্যবিত্ত শ্রেণির সন্তানদের চাকুরীর শুরু ও বিয়ে করার পরবর্তী যে সাংসারিক চাপ ও আর্থিক চাপ নিয়ে অগ্রসর হয় তার উপর অভিজ্ঞতার আলোকে আমার জীবন থেকে লেখা। তবে যাদের অর্থ বিত্ত আছে এবং যারা একেবারে সমস্ত প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা সম্পূর্ণ করতে পারেন। তাদের জন্য এ লেখাটা ঠিক মন:পূত নাও হতে পারে। যেমন: যাদের সংগতি ভাল আছে তারা প্রথমেই বলবে, প্রথমে প্রয়োজন একটা ভাল মটর সাইক্যাল বা  প্রাইভেট কার। যেটা আরামদায়ক হবে যেন নির্বিঘ্নে মাইলের পর মাইল ঘুরে বেড়ানো যাবে। প্রথম অবস্থায় ফ্রিজ ও ওভেন প্রয়োজন নেই। কারণ নববিবাহিত দম্পতি বিভিন্ন জায়গায় বেড়াবে ও হোটেলে থাকবে। এভাবেই হয়ত দীর্ঘ সময় কেটে যাবে তারপর অন্যান্য চিন্তা ভাবনা। এটা অর্থ বিত্ত পরিবারের ধ্যান ধারনায় থাকলেও কৃষকের সন্তান বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান সবে মাত্র বিসিএস অফিসার হয়েছে বা চাকুরী পেয়েছে তার জন্যই আমার এ লেখনী। আমার ছয় ভাইবোনের পরিবারে সদস্য হিসাবে আমি চাকুরী পাওয়ার পর পরিবারের চাহিদা ও চাপ না থাকার পরও শখে শখে সাদা কালো টেলিভিশন পরিবর্তন করে নতুন রঙ্গিন টিভি কিনে দেই। বাড়ী সাজানোর অন্যান্য খরচের সহায়তা প্রদান করি। পরিবারের সদস্যদের নানা রকম উপহার দিতে দিতে শূন্য হয়ে যায় আমার বিয়ের পূর্বের তহবিল। এছাড়া দীর্ঘদিন প্রেম করার জন্য একস্থান হতে আরেক স্থানে গতিশীল ভাবে দৌড়ঝাঁপ দিয়ে টাকা পয়সা সব শূন্যের কোঠায় উঠে যায়। যখন বিয়ে করি তখন ব্যাংকে লোণ মাত্র ৬০,০০০ টাকা। বাবা মা ও পরিবারের সহায়তায় বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ চালাতে পারলেও বিয়ে পরবর্তী আর কোন টাকা নেই। তবে আমার একটা ডিপিএস ও ডিএসওপি মিলে সঞ্চয় ছিল ১,৫০,০০০ টাকা। অর্থাৎ পুরোপুরি মাইনাস ছিলাম না। আমার চেয়ে যারা বেশী কেয়ারফুল সহকর্মী ছিল তারা কিন্তু বিয়ের পূর্বে ব্যাচেলার জীবনের সঞ্চয়েই যথেষ্ট পরিমাণ অগ্রগামী ছিল। যেমন আমার একজন সমৃদ্ধশালী সিনিয়ারের কাছে শুনেছিলাম। তিনি তার বিয়ের আগের বছর ব্যাচেলার অবস্থায় ছুটিতে খরচ না করে একটা রিফ্রিজিরেটর ক্রয় করে ফেলেছিলেন। ব্যাচেলার অবস্থায় বিয়ের পূর্বে সঞ্চয়ে অগ্রগামী বেশী বুদ্ধিমান । তারা হয়তবা আমার পরিকল্পনায় চেয়ে উন্নত পরিকল্পনা বাতলাতে পারবেন। তারা নিজেরাই নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন।
আমার মত যারা খরুচে   সাধারণ মানুষ আছেন তারা আমার অভিজ্ঞতাগুলো জেনে নিতে পারেন। আমি ও আমার স্ত্রী মিলে যখন কুক হাউজ স্টার্ট করি তখন আমার স্ত্রী তার রান্নার গাইড হিসাবে রান্নার বই আর মায়ের কাছে ফোনের উপর নির্ভরশীল ছিল। তখনও আমরা ফ্রিজ কিনিনি। একটা কাজের ছেলে (ব্যাটম্যান) ছিল সে আমার স্ত্রীর ফর্দ অনুযায়ী বাজার নিয়ে আসত। আমার স্ত্রী তিনজনের জন্য রান্না করত কিন্তু দেখা যেত মাঝে মাঝে খাবার উদ্বৃত্ত হত। এছাড়া ফ্রিজ না থাকার কারণে প্রতিদিন বাজার লাগত। এতে কাজের লোকের মারিং কাটিং ও যাতায়াত ভাড়ায় অপচয় হত। আর ফ্রিজ থাকলে বাজার সপ্তাহে একদিন নিজে দেখে শুনে করলেই হত। ফ্রিজ না থাকার জন্য যে যে লোকসানগুলি হত তালিকা নীচে দিলাম:
১. ঘন ঘন বাজার করতে হয় ও নিজে বাজার করতে না পারার কারণে প্রতিদিনের বাজারে যাতায়ত ভাড়া ও অন্যকে দিয়ে বাজার করালে মারিং ও কাটিং এ অপচয় হয়।
২. খাবার বেশী রান্না হয়ে অপচয় হয়।
৩. দুইবেলা কাজের চাপ কমানোর জন্য দুপুর ও রাতের বেলায় একই রকম মেনু পরিকল্পনা করতে হয়।
আমার স্ত্রীকে নিয়ে সংসার শুরু করার প্রায় তিনমাস আমার ফ্রিজ ছিল না। এতে আমার মনে হচ্ছিল গড়ে প্রতি মাসে আমার ১০০০/১২০০ টাকা অপচয় হচ্ছিল (১৯৯৭ সালে)। তাই হিসাব করে দেখলাম কিস্তিতে ফ্রিজ কিনলেও অপচয়ের রোধ করে তা দিয়েই কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব। তাই সংসার শুরু করার প্রথম দিন থেকেই টিভি না থাকলেও ফ্রিজটা প্রয়োজন। ফ্রিজের টাকা না থাকলেও কিস্তিতে ক্রয় করাটা জরুরী। আর বড় ডীপের কমপক্ষে ১২ সিএফটি ফ্রিজ নিলেই হবে। আমি র‍্যাংগস কোম্পানির ১২ সিএফটি ফ্রিজ গত ১৮ বছর যাবত ব্যবহার করছি সমস্যা ছাড়াই। এই ফ্রিজটি প্রথম দেখে আমার কোর্স-মেট তৎকালীন ক্যাপ্টেন বারী। সে নিজে কিনে এবং তার একই মডেলের ফ্রিজ আমিও কিনি। সামনের দিনগুলোতে অবশ্য সেনাজীবন থেকে সিভিল জীবন শুরু করার সময় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্রিজ দিয়ে এটি বদল করার বিষয়ে মনস্থির করে রেখেছি। সাধারণত চাকুরী পাওয়ার পর ব্যাচেলার জীবনে সবাই একটা টিভি কিনে ফেলে। তাই সাংসারিক জীবনে প্রথম আইটেম হল ফ্রিজ,  এমনকি পালঙ্ক বা দামী খাট বাদ দিয়ে স্বল্প মূল্যের খাটে থেকেও ফ্রিজ কেনাটা প্রয়োজনীয়। কারণ ফ্রিজ আপনার অপচয় রোধ করে মিতব্যয়ী হতে সহায়তা করবে। আর যেহেতু ভাল কোয়ালিটির দেশী ফ্রিজ কম দামে ও কিস্তিতে পাওয়া যাচ্ছে তখন আর চিন্তা নেই। আমাদের বাংলাদেশের লোড শেডিং এর অবস্থায় দামী “নো ফ্রস্ট” কিনে লাভ নেই বরং কমদামী ফ্রস্ট কেনা ভাল। কারণ ২০/২২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলেও সমস্যা নেই। শুধুমাত্র লোডশেডিং এ ফ্রিজের দরজা না খুললেই হল। আমি অনেক চাকুরীজীবী সাংসারিকের সাথে কথা বলেছি। বেশিরভাগই মতামত দিয়েছেন, সংসার জীবনের প্রথম আইটেম হবে ফ্রিজ। অবশ্য কেউ কেউ মটর সাইকেল বা গাড়ীর পক্ষে মতামত দেন। তবে যিনি সাংসারিক জীবনে প্রথমেই গাড়ী কিনতে পারেন বা গাড়ী আছে তাদের ফ্রিজ কেনার অগ্রগন্যতা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবী সংসার শুরু করার প্রথম সামগ্রীটি হওয়া প্রয়োজন রিফ্রিজিরেটর।
সংসার জীবনে স্বস্থি ও অপচয় কমানোর অপর আইটেমটি হতে পারে মাইক্রোওয়েভ ওভেন। এটাতে অনেকে হয়ত একমত নাও হতে পারেন। তবে যে সমস্ত পরিবার মাইক্রোওয়েভ ওয়েব ওভেন ব্যবহারে অভ্যস্ত তারা এটার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবেন। আমি সংসার শুরু করার প্রায় দীর্ঘ তিন বছর পর আমার মালয়েশিয়া ফেরত একজন আত্মীয়া একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেন গিফট করার পর আমি ও আমার স্ত্রী তখন প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম এর প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা। এখন পর্যন্ত সেই ওভেন ব্যবহার করে যাচ্ছি। নষ্ট হলে হয়তবা নতুন কোন মডেল ক্রয় করব। মাইক্রোওয়েভ পাওয়ার পূর্বে খাবার গরম করার জন্য যে পরিমাণ  কষ্ট করা লাগত তা লাঘব হল। যেমন যে কোন খাবার গরম করতে হলে তা পুনরায় অন্য একটি পাত্রে নিয়ে গরম করতে হয়। এতে অন্য একটি পাত্র ধোয়া ও পরিষ্কারের চাপ হয়। অথচ মাইক্রোওয়েভ ওভেনে একই পাত্রে গরম করে খাওয়া যায়। এটা এত বিশাল এক সুবিধা যা কিনা বিদ্যুৎ, পানি ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি কায়িক পরিশ্রম কমায়। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি হল এটা চাকুরীজীবীদের জন্য তাদের মূল্যবান সময় সাশ্রয় করে। যারা পারিবারিক সূত্রে মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করেননি তাদের জন্য এ উদাহরণ তুলে ধরলাম। আপনি রাতে বাসায় ফিরলেন। আপনি ইতিমধ্যেই ফ্রিজ ক্রয় করেছেন। আপনার ফ্রিজে রান্না করা আছে ভাত, ডাল, সব্জি ও গরুর গোশত। এখন আপনি একটা প্লেটে ভাত ও সব্জি পরিমাণ মত নিয়ে নিলেন আর দুইটি বাটিতে পরিমাণ মত গোশত ও ডাল নিয়ে বাকী আইটেম ফ্রিজে তুলে নিলেন। এখন আপনার প্রয়োজন মোতাবেক মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরম করায় আপনার সময় ও বিদ্যুৎ খরচ কম হল। আর গ্যাসের চুলা বা স্টোভ না জ্বালানোর কারণে আপনার জ্বালানী খরচ লাগল না। কেবলমাত্র কয়েক মিনিটের জন্য অত্যন্ত অল্প পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হল। এছাড়া একই খাবার প্লেটে ভাত ও সব্জি গরম করার কারণে সময় ও গরম করার জন্য ব্যবহৃত পাত্র ধোয়ার জন্য পানি, সাবান, সময় ও কায়িক পরিশ্রম থেকে রক্ষা পাওয়া গেল। তাই সাংসারিক জীবনে ফ্রিজের পরের গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্যটি হল মাইক্রোওয়েভ ওভেন। যা সংগতি না থাকলেও কিস্তিতে ক্রয় করাটা জরুরী। মাইক্রোওয়েভ ওভেন পাত্রকে গরম না করে শুধুমাত্র খাদ্য কণাকে উদ্দীপ্ত করে খাবার গরম করায় এটা খুবই এনার্জি সাশ্রয়ী। একটা মাঝারী মাপের ফ্যামিলিকে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের জন্য একমাসে ১০০ টাকার বেশী বাড়তি ইলেকট্রিক বিল দিতে হবে না। যদি এ কাজটি সিলিন্ডার গ্যাসে ব্যবহার করা হত তবে আনুমানিক ৫০০ টাকার বেশী গ্যাসের খরচ হত। এছাড়া মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরমও চুলা থেকে তাড়াতাড়ি হয়।
এরপরের প্রয়োজনীয় আইটেমটি হতে পারে ওয়াশিং মেশিন ও তার পরবর্তী আইটেমটি হতে পারে ডিশ ওয়াসার। তবে এগুলো হুট হাট করে না কেনাই ভাল। এ বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি। আমি দশ বছর ব্যবহার করার পর ওয়াশিং মেশিন ও ডিশ ওয়াসার অনেক কয়বার মেরামত করে ব্যবহার করে শেষ মেষ আমার ওয়াশিং মেশিনটি ম্যাকানিককে বিনামূল্যে দান করে  দিয়েছি। ডিশ ওয়াসারও শীঘ্রই একইভাবে কার্যক্রম শেষ করতে হবে। কারণ ইন্টারনেটে অনেক ঘাটাঘাটি করে দেখলাম ওয়াশিং মেশিন ও ডিশ ওয়াসারের ফিনারেল ১০/১২ বছরের মধ্যেই হয়ে থাকে । তবে কেউ সৌখিন ভাবে ব্যবহার করলে সেটা ভিন্ন কথা। ইন্টারনেটে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী দুইটি মেশিনের সময় শেষ। তবে আমি বলব কাজের লোক একান্তই না পাওয়া গেলে মেশিনগুলো ক্রয় ঠিক আছে। আমি ডিশ ওয়াসার ও ওয়াশিং মেশিন কেনার পর ছয় মাস কাজের লোক ছাড়া চলতে পেরেছিলাম। অতঃপর ঠিকই কাজের লোক লেগেছে এবং ডিশ ওয়াসার ও ওয়াশিং মেশিন সোপিস হয়েছে। তারপর কাজের লোক কখনও অনুপস্থিত থাকলে  যন্ত্রপাতিগুলি ব্যবহৃত হয়েছে। আর এভাবে যন্ত্রগুলি তাদের বার্ধক্যে উপনীত হয়। এগুলি কখনোই কারো অগ্রগন্যতার তালিকায় থাকার প্রয়োজন নেই। তবে কারো সোপিস হিসাবে রাখা ও টাকা পয়সা যথেষ্ট ভাল কাজে খরচ করার ব্যবস্থা না থাকলে এগুলো কেনা যেতে পারে। কারণ এগুলো কখনও কখনও ভালই কাজে দেয় ও টেনশন কমায়। কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে ওয়াশিং মেশিনটা প্রয়োজনীয় কিন্তু জরুরী নয়। তবে বর্তমানে ৫০,০০০ টাকা খরচ করে সম্পূর্ণ অটো ওয়াশিং মেশিন কিনে অপচয় না করে ১২/১৩ হাজারে ম্যানুয়াল মেশিন কেনা যেতে পারে। বৃষ্টির দিনে স্পিন করে নেয়া বা কাজের লোকের অনুপস্থিত দিনগুলোতে কাজে লাগবে। ম্যানুয়াল মেশিনগুলি সহজে রিপিয়ার করা যায়। এমনকি জেলা ও উপজেলার ম্যাকানিকরা রিপিয়ার করতে পারে।

পরিশেষে আমাদের কনিষ্ঠ সহকর্মীদের আমার জীবনের আলোকে সাংসারিক দ্রব্যের অগ্রাধিকারের যে তালিকা দিলাম আশা করি তারা উপকৃত হবেন।


No comments:

Post a Comment