Pages

Thursday, June 18, 2015

ক্রোকারিজ যখন শোপিস

আমরা ছোটবেলা থেকে আমাদের নিজেদের আত্মীয় স্বজনকে শোকেসের মধ্যে সারি সারি কাচের ও চীনামাটির ক্রোকারিজ ও কাটলারিজ সাজিয়ে রাখতে দেখেছি। আমার পরিবারে এমন অনেক ক্রোকারিজ ছিল যা সবসময় সাজানোই থাকত। কোনদিন ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা আমার জানা নেই। আগে ড্রইংরুমে ক্রোকারিজ সাজানো থাকত। এখন ক্রোকারিজ সাজানো হয় ডাইনিং স্পেসে। বিশেষ ধরনের কাচের আলমারিতে। এখনও গ্রামে গন্জ্ঞে বসার ঘরে ক্রোকারীজ সাজিয়ে রাখতে দেখা যায়। আর বিশেষ অতিথি গেলে অতিথির সামনেই সেই সব বিশেষ ক্রোকারীজ বের করে তাদের জানানো হয় যে, তারা এই পরিবারের বিশেষভাবে সম্মানিত অতিথি। আমি মাঝে মাঝে গ্রামে এ ধরনের দৃশ্য দেখে বেশ মজা পাই। আমি সেনাবাহিনীর  একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার স্টাফ অফিসার থাকাকালীন সময়ে তিনি একবার গল্প করেছিলেন। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার স্ত্রীর অনেক বেশী শখ ক্রোকারীজ কেনা। মার্কেটে আন কমন ক্রোকারীজ দেখলেই তার সেটা ক্রয় করতে হবেই। উক্ত অফিসার প্রায়ই তার স্ত্রীকে বলতেন, “তোমার ক্রোকারীজগুলো কবে ব্যবহার হবে। নাকি শুধুই শো পিস হিসাবে থাকবে। শুধু সাজিয়ে রাখা আর মোছামোছি করতে করতে জীবন শেষ”।  তার স্ত্রী প্রতি উত্তরে বলত, “দেখেনিও বড় গেস্ট এলে এটা ব্যবহার করব”। তারপর তিনি বড় গেস্টের অপেক্ষায় থাকেন। বাসায় বন্ধু বান্ধব যেই গেস্টই আসুক মেস ও রেস্ট হাউজের ক্রোকারীজে খাওয়া দাওয়া হয়। কিন্তু বিশেষ ক্রোকারীজ আর ব্যবহার হয় না। একসময় সেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ভাবলেন, হয়ত সন্তানদের বিয়ে শাদী হলে তাদের শশুর বাড়ীর আত্মীয় স্বজনের জন্য বিশেষ বিশেষ ক্রোকারীজগুলি ব্যবহার হবে। কিন্তু তার যেহেতু একমাত্র ছেলে রয়েছে তাই ছেলের বউকে খাওয়ানোর জন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার স্ত্রী সেই ক্রোকারীজ ব্যবহার করবেন কিনা সেটা তিনি সন্দেহ করছেন। কারণ বাঙ্গালী শাশুড়িরা জামাই আদর যতটুকু আগ্রহের সাথে করেন, বউ আদর তত আগ্রহের সাথে করেন না। সর্বশেষ তিনি এই ধারনায় উপনীত হলেন তার স্ত্রীর দীর্ঘদিন কষ্ট করে জমানো ক্রোকারিজ হয়তবা তাদের জীবদ্দশায় ব্যবহার না হলেও পরবর্তী প্রজন্মের কাজে লাগতে পারে। তবে ডিজাইন ও রুচির প্রতিনিয়ত পরিবর্তনে পরবর্তী জেনারেশন হয়তবা ব্যবহার না করে স্মৃতি হিসাবেই রাখবে । যেমন আমার দাদীর কাছ পাওয়া ক্রোকারীজ আমাদের আধুনিক ক্রোকারীজের তুলনায় বেশ ফানি মনে হত এবং এগুলো স্মৃতি হিসাবেই রাখা হত। এভাবে পৃথিবীর কোটি কোটি বাসস্থানে ক্রোকারীজ ব্যবহার না হয়ে শোপিস বা শখের জিনিষ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। আমি আমার বিবাহিত জীবনের প্রথম থেকেই ক্রোকারিজ যেন ক্রয় না করে তার জন্য স্ত্রীর বিরুদ্ধাচরণ করতাম। আমি বিয়ের পর উপহারগুলি হিসাব করে দেখলাম। আমি আমার বাসায় সাধারণত ২৪ জন অতিথি নিজস্ব ক্রোকারীজে সামাল দিতে পারি। তাই সেই পরিমাণ ক্রোকারিজ রাখলেই চলে। বাকীগুলো আমি আমার ভাই ও বোনদের দিয়েছিলাম। এরপর যখনই বাসস্থানে অতিথিদের দাওয়াত করেছি মেস/ রেস্ট হাউস/ ডেকোরেটরের কাছ থেকে ভাড়া না নিয়ে নিজের ক্রোকারীজ দিয়ে অতিথি পার করে যাচ্ছি। বছরে হয়তবা ১০/১২ দিন বিশেষ অতিথি আপ্যায়নের জন্য অনেক অনেক খরচ করে কেনা ক্রোকারীজ জমিয়ে না রেখে ব্যবহার করা ভাল। নিত্য নতুন ভাল লাগার ক্রোকারীজ কিনে নিজেরা খাদ্য গ্রহণ করলেও নিজেদের ভাল লাগবে। পৃথিবীতে যে কোন মূল্যবান জিনিষ শোপিস করে রাখা যত না আনন্দ, তার চেয়ে তা ব্যবহার করে আরো বেশী তৃপ্তি ও আনন্দ পাওয়া যায়।

ইমোশনাল হয়ে বা শখে অনেকেই প্রচুর পরিমাণে ক্রোকারিজ কিনে। আবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে উপহার হিসাবে পায়। অনেকে বেশী ক্রোকারীজ পেলে প্যাকেট সহ সেসব অতিরিক্ত ক্রোকারিজ ও কাটলারিজ রেখে দেয়। যা পুনরায় রি-প্যাক করে দাওয়াত খেতে কাজে লাগে। আবার অনেকে অতিরিক্তগুলো বিতরণ করেন। এটাও বেশ ভাল কাজ। অন্তত অহেতুক ব্যবহার না করে শোপিস করার মানে হয় না। তবে আবারও বলে রাখা ভাল। যাদের  ক্রোকারিজ ক্রয় করা ও সাজিয়ে রাখা হবি, তারা আমার এ লেখায় কষ্ট পাবেন না। তারা একটা কাজ করতে পারেন। তা হল। সুন্দর সুন্দর ক্রোকারিজ কিনবেন। ব্যবহার করবেন। নিকট আত্মীয়দের বিতরণ করবেন। বিশাল আকারে সংগ্রহ না করে বরং পুরানো ধাঁচের গুলি ছবি তুলে রেখে আত্মীয়দের বিলিয়ে দিলে আনন্দ পাবেন। অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত ক্রোকারিজ ও কাটলারিজ ক্রয়ও একটা অপচয়। এটা না করে অনেক গুরুত্ব পূর্ণ কাজে আমরা তা ব্যয় করতে পারি। যে কোন কিছুর অতিরিক্ত করাও অপচয়। আর অপচয় যে কারো জন্য ক্ষতিকর। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্রোকারিজ কেনাও মূলত অপচয়। আমরা অহেতুক অপচয় এড়িয়ে চলতে অবশ্যই চেষ্টা করব। আশা করি অতিরিক্ত ক্রোকারিজ না কিনে তার থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভাল কাজ আছে যা আমরা করতে পারব। সেটাই হবে মঙ্গল।

No comments:

Post a Comment