গ্রাম অঞ্চলে বা পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন যারা
আছেন। যারা জেনারেটর রেখেছেন। তাদের প্রতিদিনই একাধিকার জেনারেটর চালাতে হয়। ঝড়
বৃষ্টির দিনে প্রায়শই গাছপালা পড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। তখন বেশ কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ
থাকে না। পল্লী বিদ্যুৎ এর লাইনগুলো গ্রামের ভিতর দিয়ে সাধারণত টানা হয়। এসব পিলার
বা লাইনের চারিদিকে অনেক গাছগাছালি থাকে। এসব গাছগাছালি প্রায়শই বিদ্যুৎ লাইনে পড়ে
লাইন ছিঁড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট করে থাকে। যদিও প্রতিনিয়ত লাইনের কাছের গাছগাছালির
বর্ধিত ডালপালা কেটে রাখার ব্যবস্থা আছে। তবু কখনো কখনো দুই একটি বর্ধিত গাছ ও
ডালপালা ঝড় বৃষ্টিতে সমস্যার সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বর্তমান আর্থিক সংগতিতে
বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জেনারেটর চালানোর সামর্থ্যটা
রয়েছে। কোন কোন স্থাপনায় বা প্রতিষ্ঠানে দিনে কম শক্তির জেনারেটর বা রাতে বেশী
শক্তির জেনারেটর চালানো হয়। একবার সরবরাহ বিদ্যুৎ, একবার
জেনারেটরের বিদ্যুৎ ইত্যাদি বিভিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহারে আমাদের থাকতে হয়। বিভিন্ন
ধরনের বিদ্যুৎ চালনার জন্য চেঞ্জওভার সুইচ ও কাট-আউট ইত্যাদির মাধ্যমে বিদ্যুৎ
সোর্সের পরিবর্তন করে নিতে হয়। পূর্বে ও বর্তমানে আমাদের দেশে চেঞ্জওভার ও
কাট-আউট বেশ জনপ্রিয় ব্যবস্থার সিস্টেম চালু আছে। যদি জেনারেটর লাইন চালু থাকে তবে
জেনারেটর লাইনে চেঞ্জওভার দিয়ে ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয় আবার পুনরায় সরবরাহের
বিদ্যুৎ আসলে জেনারেটর সরবরাহ থেকে চেঞ্জওভার ঘুরিয়ে বা কাট-আউট বদলিয়ে সংযোগ
পরিবর্তন করে সরবরাহের বিদ্যুৎ-এ আনা হয়। এরূপ ভাবে একবার সরবরাহ লাইন এবং একবার
জেনারেটর লাইন এ ধরনের আবর্তে সিস্টেমটি চলতে থাকে। যদি আইপিএস থাকে তাতে অবশ্য
লাইন বদলাবদলির চাপ কমে যায়। সমস্যা হয় যদি আইপিএস ও জেনারেটর দুটি থাকে তবে
আইপিএসকে সরবরাহ লাইন অথবা জেনারেটর লাইন এ দুটি অপশনে রাখতে হয়। আবার জেনারেটর কম
শক্তির হলে আইপিএস বা জেনারেটর এ ধরনের অপশনে ঠিক করে নিতে হয়। আমরা যে অপশনে থাকি
না কেন আমাদেরকে চেঞ্জওভার বা কাট-আউটে
পাওয়ার লাইনের সোর্স বদল করে দেয়ার প্রয়োজন পরে। চেঞ্জওভার হউক বা কাট-আউট
হোক আমাদের সশরীরে যে কোন সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সাথে করতে হবে। অন্যথায় অন্ধকারে
ও ফ্যান ছাড়া গরমে কাটাতে হবে। যদি যথেষ্ট শক্তি সম্পন্ন (অর্থাৎ বেশী ব্যাক আপের)
আইপিএস না হয় তবে জেনারেটর নির্ভরশীল হলেও চেঞ্জওভার বদলের কষ্টকর কাজটি করতে হবে।
হয়ত কোন কাজে ব্যস্ত, পড়াশোনায় ব্যস্ত বা ঘুমিয়ে আছেন তখন সরবরাহের
বিদ্যুৎ গেল এবং আপনার সংস্থার বা কমিউনিটির জেনারেটর চালু হল। ঠিক তখন, আপনাকে কষ্ট করে সময় অসময়ে চেঞ্জওভারটি ঘুরাতে
হবে বা কাট-আউটটি বদলী করতে হবে। এ ধরনের সময় ও অসময়ে এ ধরনের কাজগুলো বিরক্তিকর।
আর এ ধরনের বিরক্তির কাজ থেকে পরিবর্তনের একটা সহজ ব্যবস্থা হয়তবা স্থানীয় ভাবে
অনেক ম্যাকানিক রিলে দিয়ে সার্কিট করে দেয়। তবে এ ধরনের সার্কিট সাধারণত যথেষ্ট
পরিমাণে টেকসই হয় না। কারণ নির্দিষ্ট এ্যাম্পিয়ারের মান সম্পন্ন রিলে অনেক সময়
পাওয়া যায় না। সাধারণত জাহাজের পুরাতন রিলে ম্যাকানিকরা ব্যবহার করে। এতে রিলের
কন্ট্রাক্ট পয়েন্টগুলো স্পার্কে দ্রুত ক্ষয়ে গিয়ে কার্যকারিতা হারায়।সাধারণত এয়ার
টাইট রিলে ভাল। এগুলো সুইচিং এর সময় স্পার্কে কন্ট্রাক্ট পয়েন্টগুলো কম ক্ষয় হয়।
বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর লাইন তারপর বিদ্যুৎ
আসলে পুনরায় বদল। এ ব্যবস্থায় বর্তমানে কিছু অটো সুইচ পাওয়া যায়। এ ধরনের অটো সুইচ
চাইনিজ/ ভারতীয় হতে পারে। এ মুহূর্তে আমার জানা মতে বাংলাদেশের কোন কোম্পানির (জুন
২০১৫) সন্ধান পাইনি যারা এ ধরনের সুইচ বানায়।
খুব কম স্থাপনাই আছে যারা কিনা তাদের সম্পূর্ণ
বিদ্যুৎ লোডই জেনারেটরে দিতে পারে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সুইচ-বোর্ডে লোড ভাগ
বাটোয়ারা করে দিতে হয়। আইপিএসও বাড়তি তার টেনে এটা করা হয়। যেমন এক রুমের তিনটি
লাইট ও দুটি ফ্যানের মধ্যে,
একটি লাইট ও একটি ফ্যানের লোড
জেনারেটরে বা আইপিএস এ দেয়া হয়। এতে চেঞ্জওভার বা কাট আউট সহজ অপশন হিসাবে ব্যবহার
করা যায়। দুইটি কাট-আউটের একটি কাট-আউট হল জেনারেটর লাইন এবং অপরটি হল সরবরাহের
লাইন। বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর লাইনে কাট আউট দিয়ে লাইন পৃথক করে জ্বালানো যায়।
এধরনের ব্যবস্থাই আমরা অটোমেটিক করে নিলে
অনেকটা ঝামেলা মুক্ত থাকতে পারব। যখন যে বিদ্যুৎ সোর্স আসবে সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ সোর্স
পরিবর্তিত হয়ে বাসস্থানের লাইনে সরবরাহ হতে থাকবে। এ ধরনের অটো সুইচে জেনারেটর
লাইন ইন্ডিকেট করা থাকে সে অনুযায়ী সংযোগ দিতে হবে। আবার মেইন পাওয়ার লাইন
ইন্ডিকেট করা থাকে। আউটপুট লাইন হতে সাধারণত বাসস্থানের লোড দেয়া হয়। অনেক অটো
সুইচে জেনারেটর স্টপ লাইন থাকে। যা কিনা মেইন বিদ্যুৎ আসলে ছোট খাট জেনারেটর বন্ধ
করতে কাজে লাগে।
আবার একাধিক সোর্স থাকলে তাও নিয়ন্ত্রণে রাখা
যাবে এবং অটো সুইচ দিয়ে। মনে করুন আপনার প্রতিষ্ঠানে ২৫ কেভি জেনারেটর দিনে চলে আর
রাতে ৫০ কেভি জেনারেটর চলে। কখনো কখনো যে কোন একটি জেনারেটর নষ্ট হয়ে গেলে আপনাকে
রাতে বা দিনে যে কোন একটি জেনারেটর দিয়ে কাজ চালাতে হবে। এজন্য আপনাকে মাল্টিপল
এন্ট্রি করতে হবে আর তা করা যাবে অতিরিক্ত একটি অটো সুইচ ব্যবহার করে। একটি অটো
সুইচে দুইটি জেনারেটরের লাইন দিতে হবে এবং সেখান আউটপুট এনে সর্বশেষ অটো সুইচের
ইনপুটে জেনারেটরের লাইনে দিতে হবে। এতে আগের জেনারেটরগুলো থেকে যে কোন চলমান
জেনারেটরের প্রথম অটো-সুইচের মাধ্যমে কেবলমাত্র একটি ইনপুট সর্বশেষ অটো সুইচে আসবে
তা মেইন সাপ্লাইয়ের অনুপস্থিতি হলেই লোডের বা আউটপুটের লাইনের মাধ্যমে ঘরের লাইট, ফ্যান ইত্যাদিতে সরবরাহ পাবে। আইপিএস থাকলে অটো
সুইচের আউটপুট থেকে সরবরাহ দিলে ভাল হয়।
এ ধরনের ব্যবস্থাপনায় আশাকরি আপনারা
আনইন্টারাপ্টেড বিদ্যুৎ পাবেন। কখন কোন সোর্স থেকে বিদ্যুৎ আসবে বা যাবে টেরই
পাওয়া যাবে না। আর মধ্য রাতে বিদ্যুৎ যাওয়ার পর গরমে ঘেমে ঘুম ভেঙ্গে আর চেঞ্জওভার
বদলী করার প্রয়োজন হবে না। আসা করি এ তথ্য অনেকের কাজে লাগবে।
No comments:
Post a Comment