Pages

Friday, July 24, 2015

এখনো জ্বলছে বিদ্যুৎ অপচয়-কারী বাতি

চাকুরীর সুবাদে গ্রাম ও শহরে অনেক স্থানে আমাকে ঘুরে বেড়াতে হয়। ঘুরে বেড়ানোর সময় একটি বিষয় আমাকে ভীষণ পীড়া দেয়। রাতের বেলা রাস্তা থেকে বাড়ী-ঘর ও দোকান-পাটের দিকে তাকালে দেখা যায় আগের দিনের গোল ফিলামেন্টের লাইটগুলো জ্বলছে। যা ইংরেজীতে বলে ইনকনডেনেসন্ট লাইট (Incandescent Light)। তখন অবাক হতে হয়। এই ভেবে যে, এখনো মানুষ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক লাইটস সম্পর্কে জানে না। তা কি ভাবা যায় ? অনেক সময় মনে হয় একজন বেশী বিদ্যুৎ অপচয়-কারী তাতে কি? ইলেকট্রিক বিলটা সেই দিচ্ছে। এতে আমাদের চিন্তিত হওয়ার বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। আমাদের উদ্বিগ্ন বা চিন্তিত হতে হচ্ছে এ কারণে আমরা বাংলাদেশে ভর্তুকি দরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি। এ ভর্তুকির টাকা আমাদের সবাইকে দিতে হয়। আর এতেই আমাদের সকলের কনসার্ন হওয়ার বা সজাগ হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
আমি নিশ্চিত যে আমাদের  দেশের অনেক মানুষ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইটের বিষয়ে জানে না। অথচ মিটার রিডাররা প্রতি মাসে মিটার চেকিং এর জন্য প্রতি মাসে অন্তত একবার বাড়ী বাড়ী যাতায়ত করছে। মিটার রিডাররা অবশ্যই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইট সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা উচিত। প্রয়োজনে মিটার চেকিং এর সময় কোন বাড়ীতে কয়টি বিদ্যুৎ খেকো ফিলামেন্ট লাইট জ্বলছে তার তালিকা তৈরি করতে পারে। এ তালিকা পরবর্তীতে সরকারী  অনুদানে এনার্জি লাইট ক্রয় করার জন্য সুপারিশ দিতে পারে।
Click to enlarge
আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষার হার এগুচ্ছে। তাই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইটের বিষয়ে কেউ জানবে না এটা মেনে নেয়া যায় না। সকলে অন্তত টিভি দেখে। টিভিতে এনার্জি সেভিং লাইট নিয়ে প্রচারণাও সবাই দেখতে পায়। তাহলে সমস্যা হল প্রাপ্যতা। এখনও বৈদ্যুতিক দোকানে ফিলামেন্ট বাল্ব পাওয়া যাচ্ছে এটাই হল বাস্তবতা। এখনও কিছু কোম্পানি ফিলামেন্ট লাইট তৈরি করছে। এছাড়া দোকানেও ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে। তাই মানুষজন এখনও ফিলামেন্ট বাল্ব কিনছে। আর কিনবেই না কেন। অনেক সস্তায় এ লাইট পাওয়া যায়। একটি সিএফএল বাল্ব যখন ২০০ টাকা আর এলইডি একই শক্তির বাল্ব ৪০০ টাকা তখন ২০/২৫ টাকা দিয়ে ফিলামেন্ট বাল্ব কেনাটাই অবশ্যই সহজ ও সাশ্রয়ী। মাসে মাসে বিদ্যুৎ বিল বেশী হবে এটা নিয়ে সাধারণ মানুষ কখনও কেউ চিন্তা করে না। কারণ আমরা ভর্তুকি দরে বিদ্যুৎ পাচ্ছি। আজ যদি ১০/১৫ টাকা কিলোওয়াট ইউনিট দরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হত তবে সবাই টাকা খরচ করে এনার্জি লাইট ক্রয় করতে পিছপা হত না। একটা রুম আলোকিত করতে ফিলামেন্ট লাইট দিয়ে পাঁচগুণ বেশী বিদ্যুৎ খরচ করে যে শুধু মূল্যবান রাজস্বের অপচয় হচ্ছে শুধু তাই নয় এতে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কয়লা, গ্যাস খনিজ তৈল ইত্যাদিরও অপচয় হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যেভাবে কার্বন নি:সরন হয় তাও বিদ্যুৎ অপচয়ের মাধ্যমে কার্বন নি:সরন বেশী হয়। তাই দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ খেকো ফিলামেন্ট লাইট ও এনার্জি সেভিং লাইট আমাদের পরিবেশ ও আর্থিক দিক দিয়ে পার্থক্য তৈরি করে। তাই সচেতন নাগরিক জেনে শুনে এ ভুল করাটা অপরাধ।
আমাদের দেশে বাংলাদেশ সরকার অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সিএফএল বাতি বিতরণ করেছে। অনেক প্রচারও করা হয়েছে। কিন্তু এখনও গ্রামে, হাটে, বাজারে ফিলামেন্ট লাইট দেখা যায়। এ ধরনের লাইটের পরিমাণ মোট লাইটের আনুমানিক ৩০ শতাংশ হবে। একটা বিষয় আমি লক্ষ করেছি বেশির ভাগ বাড়ীতে বা বাজারের ঘরগুলোর বাইরে এ ধরনের লাইটগুলো জ্বালানো হয়। এধরনের বিদ্যুৎ খাদক ফিলামেন্ট লাইট গুলো দামে কম। চুরি গেলে ক্ষতি নেই। আমাদের দেশের বাইরের লাইট প্রায়শই চুরি যায়। অথচ এসব লাইট সবচেয়ে বেশী সময় জ্বলানো হয়। একটানা প্রায় সারা রাত। এগুলো অবশ্যই এনার্জি সেভিং হওয়া প্রয়োজন। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় বেশী হবে। মনে করি বাইরের একটা এনার্জি সেভিং লাইট জ্বালানো হল রাতে ১০ ঘণ্টা। এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে মাসে: ১০ঘন্টা x ২০ ওয়াট x ৩০দিন ভাগ ১০০০ ওয়াট(এক ইউনিট) x ৫ টাকা = ৩০ টাকা। অনুরূপ ভাবে ১০০  ওয়াটের ফিলামেন্ট লাইট জ্বালালে এর পাঁচ গুন বিল উঠবে। অর্থাৎ ৫ x ৩০ টাকা = ১৫০ টাকা বিল উঠবে। তেমনি দুই মাসে বিল উঠবে ফিলামেন্ট লাইটের ক্ষেত্রে ৩০০ টাকা। অপরদিকে সিএফএল লাইট জ্বালালে বিল আসবে ৬০ টাকা। দেখা যাচ্ছে দুই মাসে প্রায় ৩০০ বিয়োগ ৬০ টাকা = ২৪০ টাকা বেশী খরচ হবে। দুই মাসে ২৪০ টাকা বেশী বিদ্যুৎ দেয়ার চেয়ে ২০০/২৫০ টাকা দিয়ে এনার্জি সেভিং সিএফএল লাইট কেনাটা অত্যন্ত জরুরী।
বর্তমানে আরো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি লাইট পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ কোয়ালিটির এলইডি লাইট সাধারণত্ব ৫/৭ ওয়াট ১২৫/১৫০ টাকায় পাওয়া যায়। ভাল কোয়ালিটির এলইডি লাইট ৫/৭ ওয়াট ৩৫০/৪৫০ টাকায় পাওয়া যায়। সেসব লাইটের আবার ২ বছরের ওয়ারেন্টি থাকে।
আমরা একটা অনুপাত দেখতে পাব আলোর উজ্জ্বলতায়।
যেমন: ১০০ ওয়াট ফিলামেন্ট লাইটের আলো=২০ ওয়াট সিএলএফ=৭ ওয়াট এলইডি।
প্রায় একি লুমেন্সের উজ্জ্বলতায় বিদ্যুৎ খরচের একটা ব্যাপক পার্থক্য আমরা দেখতে পাচ্ছি। মাত্র দুই মাসের পে ব্যাক হওয়ার মত কারণ থাকলেও অনেকে সিএলএফ ব্যবহার করছেন না। মনে হয় উচ্চমূল্য ও চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে বাইরের সিকিউরিটি জন্য দীর্ঘসময় জ্বলা লাইটগুলো সিএলএফ লাইট ব্যবহারে অনেকেই সাহস করছে না। বাজারে এখন কমদামী এলইডি লাইট পাওয়া যায়। ১০০/১২৫ টাকার এ লাইটগুলো ওয়াট অনেক কম দামও কম। এ ধরনের লাইটগুলো হয়ত সিকিউরিটি লাইট হিসাবে ভাল চলতে পারে। চুরি গেলেও খুব বেশী লস হবে না। এ লাইট গুলো চুরির জন্য এনার্জি সেভিং লাইটের মত অত আকর্ষণীয় নয়। তাই এলইডি কমদামী ডিস্ক টাইপ হল কম-মূল্যের ভাল সলিউশন।
সব শেষে আমরা সবাইকে সচেতন করতে পারি। কেউ যেন বিদ্যুৎ অপচয়-কারী বাতি ব্যবহার না করে। বিদ্যুৎ অপচয়-কারী বাতি বাজার থেকে বিতাড়িত করতে হবে। মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে। এটা করতে পারলে আমরা কার্বন নি:সরন কমিয়ে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে পারব।



No comments:

Post a Comment