Pages

Thursday, August 13, 2015

আইপিএসের বিকল্প সোলার হোম সিস্টেম

চাকুরীর কারণে গ্রামের বাড়ীতে ঘন ঘন যাওয়া হয় না। পারিবারিক কর্তব্যে পিতামাতার দেখা সাক্ষাতের দায়িত্ব হিসাবে গ্রামে মাঝে মাঝে আমরা অনেকেই যাই। আমার গ্রামের বাড়ী কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নে। কুমিল্লা জনবহুল এলাকা। এখন প্রতিটি পরিবারে একাধিক সদস্য বিদেশে থাকে। প্রায় প্রতিটি পরিবারে কেউ না কেউ আর্মি, পুলিশ, বিজিবি ও কোন না কোন সরকারী চাকুরী করে। অধিকাংশ পরিবারের ভূসম্পত্তির কৃষি ও অন্যান্য উৎস হত গড় আয় মাসিক ২০০০০ টাকার নীচে না। পাকা বাড়ী। অনেকেই গ্রামে দুই তালা/তিনতালা করেছে। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে আমাদের সম্পূর্ণ শশীদল ইউনিয়নে একটি দোতালা বাড়ী ছিল। আজ দুইতলা ও তিনতালা বাড়ীর সংখ্যা শতাধিক। এমনকি কয়েকটি পাঁচতলা হয়েছে। কেউ কেউ বাড়ীতে এয়ার কন্ডিশন লাগিয়েছে। কেউ কেউ আবার গাড়ীও রাখছে। গত বিশ বছরে গ্রামের এ পরিবর্তন অবাক করার মত। গ্রামের বাজারে ( ইউনিয়নের থেকে ছোট বাজার) ওয়ালটনের টিভি, ফ্রিজ, এসি ও মোবাইল ফোন ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ক্যাটালগ দেখে অর্ডার দিলে যে কোন জিনিস বাড়ীতে পৌঁছে দেয়। আমার মনে পরে ১৯৭৮ সালে আমার বাবা তার পকেট রেডিও বাজানোর জন্য গ্রাম থেকে লোক পাঠিয়ে শহর থেকে পেন্সিল ব্যাটারি আনিয়ে ছিলেন। ১৯৯১/৯২ সালে গ্রামের বাজারে বেনসন সিগারেট পাওয়া যেত না। ছুটিতে যাওয়ার সময় কুমিল্লা শহর থেকে বেনসন নিয়ে গ্রামে যেতাম। আজ গ্রামে মোবাইল ফোনে অর্ডার দিলে গ্যাস সিলিন্ডার, টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ হোম ডেলিভারি দিচ্ছে। শহরে থাকলে গ্রামের পরিবর্তনগুলো অনুধাবন করা যায় না। পণ্য বিক্রি করার জন্য গ্রামের ঘরে ঘরে গিয়ে শো রুমের ও দোকানের লোকজন মোবাইল নম্বর লেখা কার্ড দিয়ে আসছে। শুধু প্রয়োজন কলটি করা ও পণ্যটি নেয়া।
          কয়েকদিন আগেও এ পরিবর্তনটি আমার চোখে পড়েনি আর তা হল বিদ্যুৎ থাকার পরও সোলার প্যানেল লাগানো। গ্রামের বাড়ীতে পল্লী বিদ্যুৎ এর বিদ্যুৎ থাকার পরও বাড়ীতে বাড়ীতে সোলার প্যানেল লাগানো হচ্ছে। আমি আমার আত্মীয় স্বজনদের কাছে জানতে চাইলাম, আপনারা আইপিএস না কিনে সোলার হোম সিস্টেম কেন কিনলেন?
তাদের পরিষ্কার উত্তর, গাছপালা পরে তার ছিঁড়ে পল্লী বিদ্যুৎ এর লাইন ২/৩ দিনও থাকে না। এছাড়া দিনে ও রাতে নিয়মিত লোড শেডিং বিদ্যমান। তখন আইপিএস ব্যাটারি চার্জ করাই সম্ভব হয় না। তাই আইপিএস রেখেও অন্ধকারে থাকতে হয়। এর বিকল্প জেনারেটর। কিন্তু সোলার বিদ্যুৎ তারচেয়েও সাশ্রয়ী। বিদ্যুৎ থাকুক আর না থাকুক রাতে দুই/তিন ঘণ্টা সোলার লাইট নিশ্চিতভাবে জ্বালানো যায়। এছাড়া সোলার প্যানেল তিনবছর মেয়াদি স্বল্প সুদের কিস্তিতে ক্রয় করা যায়। বাড়ীতে বাড়ীতে এসে প্রতি মাসে সোলারের লোকজন মেরামত করে ও সোলারের কিস্তি নিয়ে যায়। তাই সব সময় সোলার প্যানেল চালু থাকছে। সোলার প্যানেল চালু না থাকলে কিস্তির টাকা আর দেয়া হয় না।
আইপিএস এর বিপরীতে সোলার প্যানেল ব্যবহার করায় গ্রামের লোকদের আমি সাধুবাদ জানাই। তারা প্রতি রাতে নিয়মিত লোড শেডিং এ জন্য আনুমানিক ২০/২৫ ওয়াট লোড দুই থেকে তিন ঘণ্টা করে চালনা করে আনুমানিক ৬০/৭৫ ওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে। যা কিনা জাতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে রিনিউয়েবল শক্তি হিসাবে যোগ হচ্ছে।
আমাকে একজন ব্যবহারকারী জানাল। এখন সাধারণত কেউ আর কেরোসিনের হারিকেন বা কুপি ব্যবহার করে না। বিদ্যুৎ না থাকলে চার্জার লাইট বা মোমবাতি ব্যবহার করে। চার্জার লাইটেরও আইপিএস এর মত সমস্যা। অনেক সময় চার্জ দিতে মনে থাকে না আর মনে করে চার্জ করতে না পারলেই বিপদ। আবার চার্জ করে নিলে চার্জার লাইট চলে সাধারণত দুই/তিন ঘণ্টা। যদি এর বেশী সময় বিদ্যুৎ না থাকে তবেই সমস্যা। মোমবাতির ব্যবহার করতে হয়।
তাই অনেক সময়ই দেখা যায় মাসে প্রায় একশ/দুইশ টাকার মোমবাতি লেগে যায়। সেই হিসাবে মাসিক ৩০০/৪০০ টাকা মাসিক কিস্তি দিয়ে ২৫/৪০ ওয়াটের সোলার হোম সিস্টেম ক্রয় করলে মন্দ হয় না? তিন বছর কিস্তি দিয়ে সোলার হোম সিস্টেম নিজের হয়ে যাচ্ছে। সোলার হোম সিস্টেম ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রাংশ রিপিয়ার ও মেনটেইন্যান্স করার পর সোলার প্যানেল ২০ বছরের বেশী সময় ব্যবহার করা যায়।
বর্তমানে প্রায় ২০-৩০ প্রতিষ্ঠান সোলার হোম সিস্টেম বিক্রয় করছে। তার বাংলাদেশ সরকারের ইডকলের মাধ্যমে ৪% ঋণ সহায়তা পাচ্ছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহার করে নিলে তা অবশ্যই দেশের জন্য ভাল । আইপিএসও অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ করে ব্যাটারি চার্জ করে। তাই আইপিএস এর মাধ্যমে ব্যাটারি চাজিং করে বিদ্যুৎ মজুদ করতে অনেক টুকু বিদ্যুৎ চার্জারের হি-টিং এর মাধ্যমে খরচ ও অপচয় হয়। পুনরায় ব্যাটারি বিদ্যুৎ এসিতে কনভার্ট করে লাইট ফ্যান চালালে প্রচুর বিদ্যুৎ শক্তির অপচয় হয়। মোট কথা আইপিএস এর মাধ্যমে লাইট ফ্যান চালাতে প্রায় ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। অপরদিকে সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সেই বিদ্যুৎ খরচ করা হচ্ছে আর এভাবেই লোড শেডিং এ আইপিএস অপেক্ষা সোলার হোম সিস্টেম অনেক বেশী সাশ্রয়ী ও জাতীয় জিডিপি গ্রোথ এ ভূমিকা রাখবে। সবশেষে বলা যায় সোলার হোম সিস্টেম বিক্রেতারা কিস্তির মাধ্যমে আইপিএস এর বদলে সোলার সিস্টেম বাজারজাত করে একটা প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।

আর এটা মনে হয় আরো উৎসাহব্যঞ্জক হচ্ছে কারণ আইপিএস ক্রয়ে সরকার কোন ঋণ সুবিধা দিচ্ছে না। আর কোন কোম্পানীও আইপিএস সোলার সিস্টেমের মত সহজ সরল কিস্তি সুবিধা দিচ্ছে না। পরিশেষে বলব সকলে আইপিএস ক্রয় পরিহার করে বাসস্থানের জন্য সোলার হোম সিস্টেম ক্রয় করলে বাংলাদেশ রিনিউবল বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। আইপিএস চার্জ বাবদ যে বিশাল পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হত তা সাশ্রয় হবে। বিদ্যুৎ বিল কমবে। পরিশেষে ছোট ছোট সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে করতে একসময় বড় বড় সোলার সিস্টেমের আগ্রহ বাড়বে। যেমন তিন বছরে একটা সোলার হোম সিস্টেম ক্রয় করার পর পরের তিন বছরে চলমান সিস্টেমটি বড় করার চাহিদা হবে। তাই আইপিএস না কিনে সোলার হোম সিস্টেম ব্যবহার করাটাই হবে আধুনিক সমাধান। সরকারী স্থাপনায়ও আমরা আইপিএস ব্যবহার না করে ধীরে ধীরে সোলার হোম সিস্টেম চালু করতে পারি। আমাদের এ ধরনের ছোট ছোট উদ্যোগে আমরা এগিয়ে যাব। আমরা এগুতে পারলে আমাদের সাথে দেশও এগিয়ে যাবে।

No comments:

Post a Comment