Pages

Thursday, August 27, 2015

মধ্যবিত্তের স্যামসং গ্যালাক্সি মোবাইল

টেলিভিশনে একটা বিজ্ঞাপন আমাকে বেশ নাড়া দেয়। আর তা হল,সাধারণ চাকুরীজীবী  একজন বাবা তার মেয়ের জন্য একটি ভাল মোবাইল সেট কিনতে চান। তার জন্য মধ্যবিত্ত বাবা তার জমানো সঞ্চয় ভাঙ্গতে চান। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য দূ:খজনক একটা অনুভূতি। তবে আমার প্রশ্ন বিজ্ঞাপনে উল্লেখিত মোবাইলে কি এমন কাজ করব‌ে যা কিনা স্যামসং গ্যালাক্সি মোবাইল ব্যতীত  সম্ভব নয়?
আমার মনে হয় গতির পার্থক্য ছাড়া আর কোন পার্থক্য নাই। তাহলে মধ্যবিত্ত পরিবারে ইংগিত করে এ ধরনের বিজ্ঞাপন ভুল ম্যাসেজ দেয়। মধ্যবিত্ত  পরিবারের মেয়েদের সামর্থ্য না থাকল‌েও স্যামসং  গ্যালাক্সিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করত‌েই হব‌ে। এ ধারনা হাস্যকর। অন্য অনেক কমদামী মোবাইলেও ভালভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার সম্ভব।
আমাদের মাঝে অনেকে আছ‌ে যারা ইম‌োশনাল‌ি পরিচালিত হয়। তারা বাস্তবতা ও প্রয়‌ো‌জন দ্বারা পরিচালিত হয় না। কম্পিউটার বা ডিজিটাল  গেজেট কেনার বিষয়ে  আমার জ্ঞান হল এরূপ প্রথম‌ে  একটা কাগজ‌ে আমার ক‌ি ধরন‌ে‌র ডিজিটাল কাজ করত‌ে  হব‌ে তা লিখে  নিব। এবার হিসাবে আনব আমাদের আর্থিক সংগতি। মোবাইলের কাজের পরিধি আর আর্থিক সংগতির সমন্বয়ে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত মোবাইল সেট ক্রয় করতে পারব।
এখন আসি  বিজ্ঞাপনটির প্রসঙ্গে। মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ের কেন  স্যামসং গ্যালাক্সি ফোন প্রয়‌োজন? ইন্টারনেট ব্যবহার, ভাইবার ব্যবহার, মেইল চেক  ইত্যাদি। তব‌ে  তাক‌ে  স্যামসং গ্যালাক্সি  সিরিজের মোবাইল কিনতে  হব‌ে? এটা কেমন কথা। আমরা নিজেদের ভাব ও আভিজাত্য বাড়াতে অনেক বেশী তৎপর। তাই আমরা অনেকেই সামর্থ্যের বাইরে কাজ করি। পরে আমরা ধার, কর্জ ইত্যাদি করে সর্বস্বান্ত হই। আমাদের চাহিদাগুলো হতে হবে আমাদের সামর্থ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
স্যামসং মোবাইলে বা দামী মোবাইল কাজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে এটা আবশ্যক নয়। শখ বা আভিজাত্যের জন্য হয়তবা এটা প্রয়োজন।  আমি একটা খবরে অনেক মর্মাহত হয়েছিলাম। তা হল হংকং এ একটা ছেলে আই-ফোন কেনার জন্য নিজের কিডনি বিক্রি করে দেয়। এটা অত্যন্ত দূ:খজনক। প্রযুক্তি বিকাশের যুগে মানুষের শখ মানুষকে এত বেশী ইমোশনাল করে দেয় যে মানুষ মরাত্মক ও ভয়াবহ কাজ করতে পিছপা হত না। ছেলেটি নিরীহ বলে কিডনি বিক্রয় করেছে। দুর্দান্ত তরুণ হলে হয়ত বা মানুষ খুন করে টাকা নিত। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে তার ফ্যাশন বা  শখ মিটাতে স্যামসং গ্যালাক্সি ফোন ক্রয় করতে বাবা মাকে ঋনগ্রস্থ করে ফেললে তা সত্যিই দূ:খজনক হবে। এ ধরনের তরুণীরা বা তরুণরা মিতব্যয়ী হওয়াটা অত্যন্ত দূরহ হবে। জীবনভর ফ্যাশন সচেতন ও পারিপার্শ্বিক সামাজিক প্রতিযোগীটায় বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে।

মানুষের শখ, আবেগ ও ফ্যাশন সচেতনতা একটা ভয়াবহ বিষয়। বিশেষ করে তরুণ তরুণীরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত। তাই ১০,০০০ টাকার মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলেও সচ্ছল পরিবারের বন্ধু/বান্ধবের কাছে মূল্যবান গ্যালাক্সি ট্যাব দেখে অসচ্ছল পরিবারের সন্তানরা বাবা মাকে ইমোশনালী ব্ল্যাক মেইল করে সংগতির বাইরে ধার কর্জ করে দামী মোবাইলের মালিক হতে চায়। ঘরে ঘরে হয়ত এরূপ জ্বালাতন আছে। অনেকে বলবেন এটা যুগের চাহিদা। আর আমার কাছে মনে হয় এটা অপচয়। আমাদের সন্তানদের প্রয়োজন অনুযায়ী চাহিদা তৈরি করতে পারলে মধ্যবিত্ত পরিবারের পিতামাতা শান্তিতে থাকতে পারবেন। আমাদের দেশের বিজ্ঞাপন যারা প্রচার করেন তাদের সচেতনতার অভাব আছে। আমাদের সামাজিক ক্ষতিকারক কোন বিজ্ঞাপন ভাল আইডিয়া ও উন্নত নিন্মান শৈলীর হলেও প্রচার করা উচিত নয়। কারণ এ বিজ্ঞাপনে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের এ ধরনের মোবাইল ক্রয় করার জন্য পিতামাতাকে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। স্মার্ট ফোনের ব্যবহার কি এবং এটা কিভাবে কাজে লাগে? এটা এ যুগের জেনারেশনকে শেখাতে হবে না। তবে মিতব্যয়ীটা শেখানোর প্রয়োজন এর জন্য এ যুগের জেনারেশনকে সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য শেখানোর প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন ও শখ এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা প্রয়োজন। আমাদের সকলের প্রয়োজন ভাল থাকার জন্য মিতব্যয়ীতা ও বাহুল্যবিহীন জীবন ধারণ করা। এতে আছে শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য।

No comments:

Post a Comment