আমি বাচ্চাদের হাই টেক ব্যবহারের যে ফিরিস্তি দিব তা আমার সমকক্ষ
সবার ঘরে ঘরে ঘটছে। আমার সন্তান বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা নয় বরং এরা রাজধানী ঢাকার
বাইরের গ্রামে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিক।
গ্রামে থাকার কারণে ঢাকা বা দেশের বাইরের বাচ্চাদের থেকে পিছিয়ে থাকলেও ইন্টারনেট
এর মাধ্যমে হাই-টেক জ্ঞানগুলি এরা বেশ ভাল ভাবেই রপ্ত করছে। আমি গত ছয়মাস আগে স্যামসং
৪০ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি কিনি। সাধারণত আগে কোন ইলেক্ট্রনিক্স গ্যাজেট কিনলে সেই গ্যাজেটের
সমস্ত ব্যবহার আয়ত্তে আনার জন্য নিজে দিনরাত সময় ব্যয় করতাম। অথচ স্মার্ট টিভি কেনার
পর আমি আর এটার পিছনে সময় খরচ করে স্মার্ট হতে ইচ্ছে করল না। আমার টানা পূরণের মধ্যে
দুই ছেলে ইন্টারনেট ঘেঁটে স্মার্ট টিভি কেনার বায়না ধরল। যেহেতু সাধারণ একটা এলইডি
টিভি ছিল তাই দ্বিতীয় টিভি কিনতে আমি মোটেই আগ্রহী ছিলাম না। কারণ মাত্র ৬/৭ বছর ব্যবহার
করে আত্মীয় স্বজনদের মাঝে পুরাতন টিভিটি বিতরণ করায় আগ্রহী ছিলাম না। তারা স্মার্ট
টিভির স্মার্ট কাজ করার বায়না ধরল। আমি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে কম্পিউটারকে
গুরুত্ব দেই। ইন্টারনেটের ভিডিও দেখার জন্য আলাদা টিভি আমার কাছে কখনোই গুরুত্বপূর্ণ
মনে হয়নি। তাদের মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তার সঞ্চয় খালি করে স্মার্ট টিভি কিনতে সক্ষম হল।
তাও আবার অনলাইন অর্ডার করে হোম ডেলিভারি নিয়ে।
স্মার্ট টিভিটি কেনার পর এটার বিভিন্ন অপশন নিয়ে আমার দুই ছেলে
বেশ ব্যস্ত হয়ে পরে। প্রথমে তারা শুরু করল কম্পিউটার থেকে ডাউন-লোড করে পেন ড্রাইভের মাধ্যমে ভিডিও চালানো। বর্তমানে অধিকাংশ
ননস্মার্ট টিভিতেও পেন ড্রাইভ হতে ভিডিও দেখার অপশন গুলো আছে। তারপর তাদের অনুশীলনের
বিষয় হল স্মার্ট টিভির মেইন অপশন। আর তা হল ওয়াই ফাই ব্যবহার করা। কুষ্টিয়ার মিরপুর
উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে এডিএসএল মোডেমের রাউটার ব্যবহার করে প্রায় নিশ্চিত ১.৫ এমবিবিএস
গতির ইন্টারনেট পাচ্ছি। ভিডিও দেখার জন্য যথেষ্ট ভাল সংযোগ। ওয়াই ফাই ব্যবহার করে স্মার্ট টিভিতে ইন্টারনেট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে
দেখলাম ওরা ওদের মাকে টিভিতে অনলাইন পত্রিকা খুলে দিয়ে বেশ সহায়তা করছে। রান্নার ভিডিও
গুলো ইউটিউব থেকে দেখাচ্ছে। টিভি রিমোট থেকে মনে হল কর্ড-লেস মাউস ব্যবহার করলে স্মার্ট
টিভিতে ইন্টারনেট ভালভাবে ব্যবহার করা যায়। আমারও মাঝে মাঝে দুই একটি কোয়েরি করতে টিভির
ইন্টারনেট বেশ কাজে লাগল কারণ সবসময় ল্যাপটপ নিয়ে বসতে ইচ্ছে করে না। তাই মোবাইল ও
টিভির ইন্টারনেট মাঝে মাঝে কাজে দেয়। ইউটিউব দেখাটা বেশ মজাদার। স্পেশালি এইচডি ভিডিওগুলি
চমৎকার ভাবে দেখা যায়। এটা আমার ছোট মেয়ের রাইম ও বাড়বি মুভি দেখায় বেশ কাজে লাগছে।
কম্পিউটারের ছোট স্ক্রিন থেকে টিভির বড় স্ক্রিনে ভালভাবে দেখা যায়। আমিও মাঝে মাঝে
ইউটিউব দেখায় যোগ দেই। বিশেষ করে চাষাবাদের ভিডিও আমার বেশ ভাল লাগে। রেকর্ডকৃত টকশো
গুলি দেখা যায়। গ্রাম এলাকায় প্রায়শই ক্যাবলের লাইনে সমস্যা হয়। তখন অনলাইন টিভি বেশ
কাজে দেয়। আমার দুই ছেলের সাইক্যাল রেস, কার রেস ও ক্লাবের ফুটবল লাইভ খেলাগুলো অনলাইনে
দেখতে তাদের বেশ কাজে লাগছে। দুই ভাই মিলে
স্যামসং স্মার্ট টিভির আ্যাপস বা সফটওয়্যার পূর্নাংগ ব্যবহার শুরু করেছে। যেমন
যে কোন মুভি বা ভিডিও কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে সরাসরি স্মার্ট টিভিতে ওয়াই ফাই এর
সাহায্যে চালানো যাচ্ছে। টিভি কার্ড ছাড়াই
স্মার্ট টিভির সাহায্যে টিভির প্রোগ্রাম
ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে দেখা যাচ্ছে। এর জন্য স্মার্ট টিভির নিদ্দিষ্ট অ্যাপসটি
ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে ইন্সটল করলেই হল। স্মার্ট
ফোন থেকে পুরো টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। এমনকি মোবাইলের ফটো অর্থাৎ মোবাইলের স্ক্রিনে
যা আসে তা টিভির বড় স্ক্রিনে শেয়ার করা যাচ্ছে। মোবাইল ব্যবহার করে মোবাইলকে রিমোট
হিসাবে ব্যবহার করা যায়। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে টিভির চ্যানেলও বদলানো যায়। আবার
কম্পিউটার বা ল্যাপটপ থেকে ভিডিও ফাইল চালানো যায়। যা কিনা টিভিতেও সরাসরি সংযোগ ছাড়া চালানো যায়। শুধুমাত্র সবগুলো ডিভাইস একই রাউটারের
ওয়াই ফাই নেটওয়ার্কে থাকতে হবে। সাধারণত একটা রাইটার দিয়ে ২০০০ বর্গফুটের বাসা কাভার করা যাবে। বাসাটি এর বেশী
বড় হলে একাধিক রাউটারের প্রয়োজন হতে পারে।
আমার ছেলের একটা পেন-ড্রাইভ
ছিল। কয়েকদিন আগে হারিয়ে ফেলে। কয়েকদিন আগে জানতে চাইলাম তার আর পেন ড্রাইভের প্রয়োজন
কিনা। সে বলল ওয়াই ফাই দিয়ে সব ডিভাইস যুক্ত থাকায় তার আর পেন-ড্রাইভ প্রয়োজন নেই।
অর্থাৎ প্যান ড্রাইভ বা মোবাইল ড্রাইভে ছবি কপি করে টিভির পিছনে ইউএসবিতে লাগিয়ে আর দেখতে হবে না। টিভি টিভির জায়গায় আর কম্পিউটার
থাকবে তার জায়গায়। এগুলোকে রাখতে হবে ওয়াই ফাই রেঞ্জের মধ্যে। কম্পিউটার আর টিভির মধ্যে
যোগাযোগটা হবে ওয়াই ফাই লিংকের মাধ্যমে।
প্রতিটি স্মার্ট টিভির সাধারণত অ্যাপস স্টোর আছে।
যেমনটা আছে স্যামসং স্মার্ট টিভির জন্য। যেখান
থেকে অনেক প্রয়োজনীয় অ্যাপস ডাউনলোড
করা যায়। সেই সাথে নতুন নতুন অপশন যোগ করা যায়।
স্মার্ট টিভিতে ইউএসবি মোবাইল হার্ড ড্রাইভ ব্যবহার করে টিভি প্রোগাম রেকর্ড
করা যায়। তবে টাইম প্রোগাম সেট করে রেকর্ড করার অপশনটি ওরা বের করতে পারেনি। স্মার্ট
টিভির প্রোগাম কম্পিউটারে চালিয়ে তা স্ক্রিন ক্যাপচার ভিডিও সফটওয়্যার ব্যবহার করে
ভিডিও কপি করতে সক্ষম হয়েছে। নিজের ৪৫ বছরে এসে (সেপ্টেম্বর ২০১৫) সন্তানদের এ ধরনের প্রযুক্তির স্মার্ট ব্যবহার বেশ ভাল লাগছে। আমরা ছোট থাকতে
বড় রেডিও ছেড়ে ট্রানজিষ্টর রেডিও নিয়ে ঘুরতাম। ওয়াক-ম্যানে গান শুনতাম। ভিসিডিতে ছবি
দেখতাম আমাদের ছোটবেলার সেই প্রযুক্তিগুলো তখন আমাদের জন্য স্মার্ট প্রযুক্তি। সামর্থ্যবানরা
দেশের বাইরে থেকে আনিয়ে সনি বা অন্যান্য কোম্পানির সেট ব্যবহার করত। আর আমরা টাকা জমিয়ে
চায়না প্রডাক্ট কিনতাম। তারপর আসল সিডি ডিভিডি। আজ ওয়াই ফাই ইন্টারনেটে ঝেটিয়ে বিদায়
দেয়া হচ্ছে সিডি ও ডিভিডি। ওয়াই ফাই ও ইন্টারনেটের ব্যান্ড উইথ বাড়ার সাথে সাথে সংযোগ
সহজলভ্য হওয়ায় পেন ড্রাইভ ও মোবাইল ড্রাইভের ব্যবহার কমে যাছে। ক্লাউডের স্টোরেজ বেড়ে
যাচ্ছে। ক্লাউডের ও অনলাইনের ব্যবহার করে আমাদের সন্তানদের কাছে সিডি/ডিভিডি, পেন-ড্রাইভ
ইত্যাদি সবই বাতিল হয়ে যাচ্ছে। সমস্যা একটাই ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হলে তাদের অবস্থা
হয় দেখার মত।
প্রযুক্তির এই
বিবর্তনগুলো আমাদের অলক্ষ্যেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু নৈতিক শিক্ষায় আমাদের সন্তানদের
এগিয়ে নিয়ে আমরা তাদের প্রযুক্তির খারাপ দিক গুলো থেকে দূরে রাখতে পারি।
No comments:
Post a Comment