Pages

Thursday, November 19, 2015

ডেস্কটপ থেকে ল্যাপটপ ও ল্যাপটপ থেকে স্মাটর্ফোন

প্রযুক্তির পরিবর্তনগুলি এত তাড়াতাড়ি হচ্ছে যে আমরা আজও তাল সামলাতে পারছি না। এই তো ২০০৮ সালে এখনও মনে আছে ডেস্কটপে আমরা প্রায় সকল কাজই করতাম। মাঝে মাঝে ল্যাপটপে ব্যবহার করতাম। একসময় দেখলাম ল্যাপটপে আমার কাজ ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। ডেস্কটপে কাজ কমে যাচ্ছে। ডেস্কটপ ধীরে ধীরে আমার ছোট ছেলেদের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এক সময় ডেস্কটপে আমার কাজ সত্যিই কমে গেল। আমার ধারনা হল ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ ব্যবহারটা হল অভ্যাসের বিষয়। ডেস্কটপের বড় কীবোর্ডে টাইপ করতে করতে ল্যাপটপের ছোট কীবোর্ড একসময় ঠিক আরামদায়ক ছিল না। একসময় ল্যাপটপে বেশী বেশী কাজ করে ল্যাপটপের ছোট কীবোর্ড আরামদায়ক হয়ে গেল। তখন আবার ডেস্কটপের বড় কীবোর্ড তত আরামদায়ক মনে হল না। ধীরে ধীরে ল্যাপটপের কীবোর্ডে ও ছোট মনিটরে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। অনেকের মত আমিও দিনের বেশ খানিকটা সময় কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করি। কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের কারণে টিভি দেখা কমে গেছে। কম্পিউটারে আর্টিক্যাল টাইপ করি। কোন বিষয় মাথায় আসলে ইন্টারনেট ব্রাউজ করে পড়াশোনা করি। এটাই হল উল্লেখযোগ্য কাজ। মূলত: কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যবহারের দিকটা নিয়ে দীর্ঘদিন নাড়া চাড়া করে আমার কাছে ধারনা হল। ইন্টারনেট ব্যবহার কোনটায় আরামদায়ক ডেক্সটপ না ল্যাপটপ এটা মূলত অভ্যাসের ব্যাপার। এখন ল্যাপটপ ব্যবহারে অভ্যাস হয়েছে। তাই ডেক্সটপ আর ল্যাপটপের মধ্যে পার্থক্য তেমন লাগে না। তবে একটা পার্থক্য বেশ অনুভব করি তা হল পরিবেশ। ল্যাপটপে কাজ করি আর ডেস্কটপে কাজ করি না কেন আমাদের প্রত্যেকের নিজ ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের পরিবেশটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার লেখালেখির কাজ অন্য একটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে বসে করতে পারি না। কারণ লেখার মত একটা জটিল মনস্তাত্ত্বিক কষ্টকর ও ধৈর্যের কাজ নিজ পরিবেশেই কেবল মনোমত করা যায়। নয়ত গদ্য আর মাথা থেকে বেরুতে চায় না। লেখার আইডিয়া ও কথা যখন বের হতে থাকে তখন ঝর্নার জলের মত কলকলিয়ে ছুটে চলে। আবার মাঝে মাঝে দিনের পর দিন কোন লেখা ছুটে না। ডেক্সটপ আর ল্যাপটপ মধ্যে পরিবেশের পার্থক্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মূল বিষয় থেকে লেখালেখির বিষয়ে চলে গেছি। ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ ব্যবহারের সাথে ব্যক্তিগত ভাবে আমার লেখালেখি একটা যোগসূত্র রয়েছে। যা অন্যদের অনুভূতি থেকে আলাদা। আমার মনে হয়  আমার মত অনেকেরই তাদের লেখার পরিবেশ ও পদ্ধতির সাথে মনস্তাত্ত্বিক কোন সংযোগ বা অনুভূতি অনুভব করেন। অপরদিকে লেখার পরিবেশ ঠিক রেখে ব্যবহারের অভ্যস্ততার কারণে ধীরে ধীরে ডেস্কটপ থেকে ল্যাপটপের দিকে আমার অভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে। 
এখন আসি স্মাটর্ফোন ব্যবহার প্রসঙ্গে। এই তো কয়েক বছর আগে ট্যাব বা মোবাইল ফোন ইন্টারনেটের ব্যবহার ও অন্যান্য পড়াশোনায় কোন কাজে লাগবে ভাবিনি। ধীরে ধীরে লক্ষ করলাম এগুলোও কাজের হয়ে উঠেছে। ছাত্র অবস্থায় ধারনা ছিল পড়াশোনা ভাল ভাবে করতে চেয়ার টেবিল ছাড়া কোন বিকল্প নাই। তথাপিও মাঝে মাঝে মনের ফুর্তিতে বা আয়েশে শুয়ে শুয়ে বই পড়ারও অভ্যাস করে ফেলি। অন্তত অলস সময়ে শুয়ে শুয়ে আরাম করে গল্পের বই পড়া যেত। শুয়ে শুয়ে আরাম করে রাত জেগে গল্পের বই পড়ার অভিঞ্জতা নাই এমন নিরস মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। শিক্ষিত মানুষ মাত্রই পড়তে পছন্দ করে। আর শুয়ে আরাম করে বই পড়া বই পড়ুয়াদের তা টিভি দেখার চেয়েও বেশী আনন্দের কাজ।
ল্যাপটপ ব্যবহার করতে করতে হাতে একসময় আসল বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোবাইল ও ট্যাব। টাচ মোবাইল। ৪ ইঞ্চি স্ক্রিনের মোবাইল ফোন ও ৫ ইঞ্চি স্ক্রিনের মোবাইল ফোন ইত্যাদি ইত্যাদি। বিভিন্ন রকম মোবাইল ফোন আর তার সাথে ট্যাবও ব্যবহার করলাম। ল্যাপটপ ও ট্যাব যাই বলিনা কেন এর থেকে বেশী পরিমাণে হাতের মধ্য থাকছে ও ব্যবহারর বেশী হচ্ছে স্মার্ট ফোনগুলি। ২০০৩ সালে প্রথম ল্যাপটপ কেনার পর থেকে আমি ছুটি বা কাজে যেখানেই বাড়ী হতে দুরে যাই না কেন আমার সাথে কিন্তু সর্বদা ল্যাপটপ থাকে। কিন্তু এ বছর পাঁচ ইঞ্চি মাপের স্ক্রিন সম্বলিত মোবাইল ফোন হাতে নেয়ার পর হতে আমি আর ল্যাপটপ সাথে নিয়ে আর কোথাও ছুটি কাটাতে যাইনি। মোবাইল ফোনের পাঁচ ইঞ্চি স্ক্রিনেই ইন্টারনেট ব্যবহার। এসএমএস টাইপিং ও আর্টিক্যাল টাইপিং ইত্যাদি কিছু কিছু কাজ করে নিতে পারছি। আমরা সবাই ছুটতে পছন্দ করি। ছুটে চলা মানুষ যাতায়তের সময় তার সময়গুলি কাজে লাগাতে চায়। সেই কাজগুলো ইমেইল চেক, ভাইবার চেক ও ওয়েব সার্চ করা ইত্যাদি কাজ। এসব কাজ প্রায়শই ল্যাপটপ নিয়ে বা ডেস্কটপে বসে সবসময় করা যায় না। তাই মোবাইলে কাজটা কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে মন্দ হয় না। আর এ কারণে স্মার্ট ফোনগুলির কদর বাড়ছে।
একবার আমি আমার একজন বন্ধুর কাছে জানতে পারলাম আজকাল ছেলে মেয়েরা যারা আউটসোর্সিং এর সাথে জড়িত তারা বড় স্ক্রিনের মোবাইল ব্যবহার করে। তাদের আউট সোর্সিং এর কাজ এতে অনেকটুকু করা যায়। যদি কনটেন্ট রাইটিং প্রয়োজন হয় তবে খুব সহজেই কনটেন্ট রাইটিং এর কাজটি স্মার্ট-ফোনে করা সম্ভব। টাচ স্ক্রিনের কী বোর্ডে টাইপ করা মানে হল অভ্যাসের ব্যাপার। বেশ কিছুদিন টাচ বাটনে টাইপ করতে করতে এটাও অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। প্রথম প্রথম টাচ স্ক্রিনে টাইপ করাটা বেশ বিরক্তিকর ছিল। মনে হত ফিক্সড বাটন থেকে টাচ স্ক্রিন বেশ কষ্টকর ও ধীর। তবে অভ্যাস করে ফেলায় এখন ভাল গতিতেই মোবাইলের টাচ স্ক্রিনে টাইপ করতে পারছি কোন সমস্যা ছাড়াই। প্রথম প্রথম অনেক সময় লাগলেও এখন বিজয় লে আউটে মোবাইলে বাংলা টাইপও করতে পারছি। অভ্র ও ফোনেটিক্স দিয়ে যে কেউ সহজেই বাংলা টাইপ করতে পারবে। এতে যে লাভগুলি হচ্ছে তা হল যেকোনো জায়গা থেকেই মোবাইলটা হতে নিয়ে আমার মত যারা লেখালেখির কাজগুলি করেন তারা উপকার পাবেন। যাতায়ত বা অলস সময়কে কোয়ালিটি সময় করতে পারবেন। মোবাইলে বাংলায় টাইপ করে আমার বেশ কয়েকটি আর্টিক্যালের ২০০-৩০০ শব্দ টাইপ করে ফেলেছিলাম। মূলত ড্রপ বক্সের অনলাইন ফোল্ডারে টাইপ করে নিলে লাভ হয়। যা কিনা পরে ল্যাপটপের ড্রপ বক্সের ফোল্ডার থেকে সরাসরি ব্যবহার করা যাবে। টাইপের সাথে সাথে তা ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে ড্রপ বক্সের ফাইল মূহুর্তেই আপডেট হয়ে যাবে। আমি কয়েকদিন আমার গ্রামের বাড়ী বেড়াতে গিয়ে ধীরে ধীরে অনলাইনে আমার ড্রপ-বক্স ফোল্ডারে টাইপ করে বেশ কিছু আর্টিক্যাল জমা করতে পেরেছিলাম। এ লেখাটিরও প্রথম অংশ আমি মোবাইল ফোনে টাইপ করেছিলাম। মোবাইল ফোনের স্ক্রিন ছোট থাকায় বেশ কিছু লিমিটেশন থাকলেও বিভিন্ন পন্থায় অনেক কাজ করা যায়। স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে এখন প্রায় সকল পত্রিকাই চমৎকার ভাবে পড়া যায়। এখন অনেক ওয়েবসাইট মোবাইল বান্ধব হওয়ায় তা ৫ ইঞ্চি মোবাইল ফোনে কলাম আকারে বেশ আরাম করে ভাবে পড়া যায়। পত্রিকার কলামের মত আরাম করে পড়া যায়। আর যেসব ওয়েব সাইট মোবাইল বান্ধব নয় সেগুলো প্রয়োজনীয় টপিকটি জুম করে নিয়ে আগে পিছে করে সুন্দর ভাবে পড়া যায়। যদি একান্তই অসুবিধা হলে আমি টেক্সটি কপি করে নিয়ে ড্রপ বক্সের একটা নতুন ওয়ার্ড প্যাডের মত ডকুমেন্ট খুলে তাতে পেস্ট করে নিয়ে কলাম আকারে মোবাইল বান্ধব ওয়েবসাইটের মত চমৎকার ভাবে কলাম আকারে পড়তে পারি। পত্রিকার মত কলাম আকারে লিটারেচার সহজে ও আরামদায়ক ভাবে পড়া যায়। পত্রিকার কলাম করা হয় মূলত সহজে ও দ্রুত পঠনের জন্য। তেমনি মোবাইল ফোনের আকৃতির কারণে এরূপ কলাম আকারে লিটারেচার পাওয়া যাওয়ায় তা দ্রুত ও চমৎকারভাবে পড়া যায়। শুধুমাত্র ছবি দেখতে হলে তা আলাদা ভাবে বড় করে দেখা যায়। মোবাইলে সমস্ত ছবি ও টেক্সট ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের মত একবারে দেখতে না পারলেও যেখানে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ ব্যবহার করা ঝামেলা, সেখানেই স্মার্ট ফোন ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের চমৎকার বিকল্প। স্মার্ট-ফোনের মত খুদে ডিভাইসটি আমাদের নি:সন্দেহে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। এখন অনেকেরই দৈনিক এক/দুই ঘণ্টা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্রাউজ করে সময় ব্যয় হয়। আমাদের প্রযুক্তির এ পরিবর্তনগুলো ধীরে ধীরে আমাদের চোখের সামনে ঘটছে। আর বেশী দূরে নয় যখন আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় প্রায় ৮০ শতাংশ কাজই করব মোবাইল ফোনে।  ডেস্কটপ আর ল্যাপটপ ব্যবহার করব মাঝে মাঝে। এখন অনেককেই দেখা যাচ্ছে অফিসের কম্পিউটারে মেইল চেক ও অফিশিয়াল কাজ করেন। অপরদিকে মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে এসএমএস, ভাইবার, পত্রিকা পড়া ও ছোটখাটো গুগল সার্চ করা। ট্যাব ব্যবহার হচ্ছে শুয়ে শুয়ে বই বা পত্রিকা পড়ার জন্য। ল্যাপটপ ব্যবহার হচ্ছে বাসায় বিশেষ প্রয়োজনে অফিসের কাজ বা প্রেজেন্টেশন তৈরি করার জন্য। তদুপরি স্মার্ট টিভি হচ্ছে ইউটিউব সহ অনলাইনে টিভি দেখার জন্য। তবে শীঘ্রই আবার গুগল স্মার্ট ওয়াচ যোগ হচ্ছে। এখনকার প্রযুক্তির শক্তিশালী দিক হল সব ডিভাইসকে ইন্টার কানেক্ট করা যায় ও তথ্য আদান প্রদান করা যায়। পরিশেষে বলা যায় মোবাইল ফোনের মোবাইল (সহজে বহনযোগ্য আর তড়াত ব্যবহার করা যায়) গুনটির জন্য ভবিষ্যতে এটাই থাকবে সর্বে সেরা ডিভাইস বা গেজেট। সাধারণ মানের স্মাটর্ফোনের দাম ল্যাপটপের তিনভাগের একভাগ। আর বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে বহুগুণ।


No comments:

Post a Comment