Pages

Friday, January 15, 2016

অনলাইন ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন

বিয়ের রেজিস্ট্রেশন সারা পৃথিবীতে পূরুষতান্তিক সমাজে মেয়েদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। বিয়ের রেজিস্ট্রেশন মামলা মোকদ্দমায় বিশেষ করে নারীদের বিশেষ সহযোগিতা করে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরাও  বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ে সমস্যায় পড়তে পারে। আর তার থেকে উত্তরণের পথ হল বিবাহ রেজিস্টার। আর যেহেতু কাজীরা বিয়ের পূর্বের যাচাই বাছাই করতে হয়, তবে অনলাইন ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন হবে আধুনিক যুগের সমাধার। একটি ঘটনা আজ তুলে ধরছি। ডিসেম্বর ২০১৫ শেষে কুষ্টিয়ায় বিজিবির মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষ করা একজন সৈনিককে চাকরীচ্যুত করতে হয়েছিল। তখন আমি সেখানে চাকুরীরত অবস্থায় অবলোকন করি। কারণ হিসাবে জানা যায়, এই সৈনিকের ভেরিফিকেশনে বিবাহিত হিসাবে পুলিশ তথ্য দিয়েছিল। যদিও ছেলেটার চাকুরী থাকেনি। তথ্যে দেখা যায় ট্রেনিং শুরু হওয়ার পর কাজি অফিসে তার বিয়ে দেখানো আছে কোন একজন মেয়ের সাথে। অথচ মেয়েটি আর একজনের স্ত্রী ও স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার করছে। অথচ তিন মাস পর সেই মেয়ের সাথে ডিভোর্স দেখানো আছে। অথচ ছেলেটি বিজিবিতে ট্রেনিংরত ছিল। দালিলিক প্রমাণের কারণে তার চাকুরী রক্ষা করা যায়নি। হয়ত ছেলেটি মামলা মোকদ্দমা করে এ ষড়যন্ত্রের রেহাই পেতে পারে। কিন্তু বিজিবির নেতিবাচক ভেরিফিকেশনের জন্য চাকুরী রক্ষা করা যায়নি। পরে জানা গেছে পূর্ব শত্রুতার জের হিসাবে তার নিকটবর্তী কেউ এভাবে ধাপে ধাপে ঘটনা সাজিয়ে তার চাকুরী নষ্ট করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে কাজী অফিসের তথ্যের যাচাই বাছাই করার কোন ব্যবস্থা না থাকার কারণে। অথবা অসৎ কোন কাজি এ বিষয়ে শত্রুপক্ষের সাথে দুর্নীতিতে জড়িয়েছে।
এভাবে যেখানে অবিবাহিত শতে চাকুরী প্রতিনিয়ত মানুষের নানা ষড়যন্ত্র ও তৎপরতায়  অনেকের চাকুরী যাচ্ছে। এর সমাধান কি। বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর জন্ম অনলাইন রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। অনলাইনে যে কোন শিশুর অনলাইন সনদের নম্বরটি দিয়ে তাদের সনদটি অনলাইনে ভেরিফাই করা যাচ্ছে। একইভাবে প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় মৃত্যু রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। এগুলো খুবই ভাল বিষয়। গাড়ীর মালিকানা থেকে শুরু করে যে কোন তথ্য এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইন ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন বিষয়টি সরকারের প্রজেক্ট আকারে থাকলেও এখনো তা সকল স্থানে চালু  হয়নি। এটি আসলে অনেক  গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । একবার আমার অধীনস্থ একজনের স্ত্রী জানল, তার স্বামী তার খোজ খবর নিচ্ছে না ও তার ভরণপোষণে  খরচও দিচ্ছে না। তার স্ত্রী আরো জানাল সে আর একটি বিবাহ করেছে। আমরা তদন্ত দল প্রমাণাদি পেলাম কর্মচারী দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। কিছু সাক্ষীও পেলাম সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। এমনকি তার বড় ভাইও সাক্ষী দিয়েছে সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। কিন্তু তদন্ত দল সমস্ত তদন্তের পরেও কেবল মাত্র নিকটস্থ এলাকার কাজী অফিসে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন না পাওয়ায় কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। কারণ কাজি বলল, প্রতিটি জেলা ও এলাকায় বেশ কয়েকজন কাজী আছে। আর দেশের যে কোন জায়গায় গিয়ে যে কেহ বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করতে পারে তাই কারো বিয়ের রেজিস্ট্রেশন তার স্বীয় এলাকায় নাও করতে পারে। সাধারণত বিয়ের রেজিস্ট্রেশনটা মেয়ে পক্ষ করে থাকে। টাকা প্রদান করে ছেলে পক্ষ। মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য মেয়ে পক্ষ সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
আমাদের সমাজে এখনও রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বিয়ে চালু আছে।
কারণ কলেমা পড়ে দুইজন সাক্ষী থাকলেই সরিয়া মোতাবেক বিয়ে হয়ে যায়। এখন আমি আদর্শ ও  নিরাপদ একটা পরিস্থিতি বর্ণনা করব। যদি এমন ব্যবস্থা থাকে কেউ বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন হলে কাজীর কাছে গেল। কাজি প্রথমেই পাত্রের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করবে। এতে পাত্র পূর্বে বিয়ে করে থাকলে তার তথ্য বেরিয়ে যাবে। একইভাবে পাত্রী পূবে বিয়ে করে থাকলে তার তথ্য চলে আসবে। কাজী পূর্ববর্তী বিয়ের বিষয়ে ও বয়স নিশ্চিত হয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে পারবে। আর এটি তখনই সম্ভব যদি বিয়ে ও ডিভোর্স সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য অনলাইনে থাকে এবং তা সার্চ করে পাওয়া যায়। আর এটা করা বেশী জটিল নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি দম্পতির বিয়েতে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব। বতর্মানে প্রতিটি উপজেলায় ইনফরমেশন সেন্টার আছে। সে সব ইনফরমেশন সেন্টার থেকে কাজীরা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে। এজন্য কাজীরা ল্যাপটপ মোডেম না কিনেও তথ্যাদি অনলাইন করতে পারবে। এটা সম্ভব কারণ স্কুল কলেজের সকল ছাত্র/ছাত্রী বতর্মানে তাদের শিক্ষা বোডের্র রেজিস্ট্রেশন অনলাইনে স্কুল/কলেজ থেকেই কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে করতে পারছে। একইভাবে সপ্তাহে একটা ইউনিয়ন পরিষদে আনুমানিক সাত/আটটি বিয়ে রেজিস্ট্রেশন হতে পারে। আর এই সাত/আটটি বিয়ের রেজিস্ট্রেশন করতে তথ্য কেন্দ্রে  কয়েক  ঘণ্টা সময় ব্যয় হবে। জন্ম/মৃত্যু রেজিস্ট্রেশনের মত একটি সার্ভার জাতীয় পর্যায়ে তৈরি করতে হবে।  এ সার্ভার আবার জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভারের সাথে সংযোগ থাকবে যেন পাত্রপাত্রীর আইডি দিয়ে পাত্র/পাত্রীদের তথ্যাদি অনলাইনে ভেরিফাই করা যায়। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন সাভারের মধ্যে আর একটি অপশন থাকবে তালাক রেজিস্ট্রেশন। এটা  ম্যারেজ সাভারের সাথে সংযুক্ত থাকবে। এতে সুবিধা যেটা হবে তা হল, জাতীয় আইডির বিপরীতে যে কোন তথ্য সহজে যাচাই বাছাই করা যাবে।
বিবাহ রেজিস্টারের জন্য একটা ফরম ব্যবহার করা হয়। সম্পূর্ণ  ফরমটি কাজীরা পূরণ করে তাদের নথিতে লিপিবদ্ধ করে থাকে এবং তারা প্রতিটি বিয়ের অনুকূলে সরকার প্রদত্ত ট্যাক্স পরিশোধ করে থাকে। তাদের নথির সম্পূর্ণ ফরমটি অনলাইনে থাকতে পারে। কাজীরা অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের কাজের চাপ কমানোর জন্য বর বা কনে পক্ষ বর বা কনের তথ্য অনলাইনে দিয়ে  ড্রাফট কপি দিবে। কাজী ড্রাফট কপি অনলাইনে সম্পূর্ণ চেক করে বিয়ের রেজিস্ট্রি  চালান দাখিল করে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন  কনফার্ম করবে।
অনলাইন রেজিস্ট্রেশন চালু হলে পুরানো বিয়ের কেসগুলোও আপডেট করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে। পুরাতন রেজিস্ট্রেশনগুলো সরকার আলাদা বরাদ্দ দিয়ে কাজীদের দিয়ে করানো যাবে। দেশের সকল স্থানে প্রচারণা চালাতে হবে। এতে পূর্বের যাদের  বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়েছে তারাও  কাবিননামা গুলো পুনরায় অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করে নিবে। এতে হয়ত প্রাথমিকভাবে বেশী রেসপন্স পাওয়া যাবে না। পরে ধীরে ধীরে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বাড়তে থাকবে। আজকাল সমস্ত কিছু অনলাইনে বুকিং হয় তো অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন হয়ে থাকে। এত ব্যবস্থা থাকতে বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন হবে না তা মানা যায় না। বিয়ের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন পারিবারিক বিরোধ  দূর করবে। বিবাহ সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা হ্রাস পাবে। অনেক পুরুষের প্রতারণা হ্রাস পাবে।এটা করতে সরকারের যে পরিমাণ টাকা খরচ হবে তার চেয়ে বেশী সরকারের টাকা সাশ্রয় হবে পারিবারিক বিরোধের মামলা কমে যাওয়ার কারনে। এছাড়া  বিয়ে সংক্রান্ত টাকা কাজীরা যথাযথভাবে সরকারী কোষাগারে জমাদানে বাধ্য হবে এবং তা অনলাইনে চেক করা যাবে। কাজীরাও বিয়ে সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে জবাবদিহিতার মধ্যে আসবে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়ে ও ডিভোর্সের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বাস্তবায়ন হলে তা জাতীয় জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

4 comments:

  1. আমি আপনার সাথে এক মত

    ReplyDelete
  2. বিয়ে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করলে, বিভিন্ন প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, যেমন কিছু বন্ড প্রতারক প্রেমিক ,, প্রেমিকার দেহ ভোগ করার জন্য গোপনে ডুবলিকেট কাগজ তৈরি করে বিয়া করা বন্ধ হবে,, যা আমাদের ভোনদের জন্য সচেতন থাকলে আর এই প্রতারনায় পড়তে হবে না।

    ReplyDelete
  3. বিযে অনলাইনে রেজিস্কট্রেশন করা দরকার কারন কি জানেন ভাই অনেক মেযের বিযে হয়ে যায় কিন্তু কিছু দিন গেলে ওই ছেলেকে বাদ দিয়ে অন্য ছেলেকে প্রোতারনা করে যে ওই মেয়ে বিয়ে করে নাই এমন কথা বলে।।। আবার এমন হয় যে ছেলে মেযের ২ পরিবার থেকে মেনে না নিয়ে কাজীকে কিছু টাকা দিয়ে কাবিনের কাগজ ছিড়ে ফেলে দিয়ে মেযেকে অন্য ছেলের সাথে বিযে দেয় আর য়দি এই বিযেটা অনলাইনে করতো এমন অনেক বিভ্রান্তে কেও পরতো না

    ReplyDelete