আফ্রিকার জন্য ব্রিটিশ
বেইজ এনজিওদের আবিষ্কার হল কী-হোল গার্ডেন। কী-হোল গার্ডেন হল ছয় ফুট ব্যাসের আনুমানিক
দুই ফুট উচ্চতার একটি রেইজ বেড গার্ডেন যার মাঝে একটি কম্পোস্ট বিন আছে।ইন্টারনেটে
Key hole Garden লিখে সার্চ দিলে এটির তৈরি প্রক্রিয়ার ভিডিও পাওয়া যাবে। আমার মনে
হয় ইন্টারনেটের ইউটিউবে কী-হোল লিখে সার্চ দিলে এই বাগান তৈরির প্রক্রিয়া বিস্তারিত
পাওয়া যাবে। এ ছয়ফুট ব্যাসের গোলাকার এই বাগানে মাঝে কম্পোস্ট ফেলার স্থান অনেকটা গোল
এগ পুডিং থেকে এক স্লাইস কেটে নেয়ার মত। উপর থেকে দেখলে মনে হবে তালার চাবির গর্তের
আদলে একটি রূপ তার জন্য এর নাম কী-হোল গার্ডেন। আমি এই লেখায় চিত্র সংযুক্ত করলাম ইন্টারনেট
থেকে তৈরি প্রক্রিয়ার ছবি দেখে নিতে পারবেন।
Link: http://www.inspirationgreen.com/keyhole-gardens.html
যেসব স্থানের মাটি
উর্বর নয় ও পানির সংকট সেসব স্থানে এ ধরনের গার্ডেন বেশ কার্যকরী। আমি কী-হোল গার্ডেন
সম্পর্কে জানতে পারি ইউটিউব একটি ভিডিও দেখে ভিডিওটি তৈরি করেছে বিবিসি যা কিনা বাংলাদেশের
দক্ষিণাঞ্চলের আইলা বিধ্বস্থ এলাকা নিয়ে। সেসব এলাকায় লবণাক্ত পানির জন্য বাড়ীর আশে
পাশে ফসল উৎপাদন অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ছিল। আর এ কষ্ট দূর করার একটা ব্যবস্থা হল এই কী-হোল
গার্ডেন। এ ধরনের গার্ডেনে সার দিতে হয় না। পানি কম লাগে। উঁচুতে হওয়ার কারণে বন্য
পশুতে নষ্ট করতে পারে না।
আফ্রিকার স্কুল
গুলোতে বাচ্চাদের এ ধরনের বাগান স্কুলে করিয়ে দেখানো হয়। এমনকি অনেক স্কুলে এ ধরনের
বাগান স্কুলে নমুনা স্বরূপ রাখা হয় যেন বাচ্চার দেখে শিখতে পারে ও বাড়িতে বানাতে পারে।
এতে রান্না ঘরের উচ্ছিষ্ট কম্পোস্ট তৈরি করার জন্য প্রতিনিয়ত ঢালা হয়। কম্পোষ্ট পচে
ধীরে ধীরে নীচ দিয়ে কী-হোল গার্ডেনে নিয়মিত ছড়িয়ে যেতে থাকে। কী-হোল গার্ডেনে মাঝের
কম্পোস্ট বিনেই রান্না ঘরের গ্রে ওয়াটার দেয়া হয়। এছাড়া বেডে কোন পানি দেয়া হয় না।
বেডের গাছের শিকড় বেডে পানি না পেয়ে নীচে শুকনো ঘাস ও লতা পাতা দেয়া ভেজা স্তর থেকে
পানি শোষণ করে। এভাবে খড়া বা শুকনো সময়ে একদম কম পানিতে গাছ বেচে থাকতে পারে।
তবে কী-হোল গার্ডেন
বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরের একাধিক থাকতে পারে। এটা শুধুমাত্র রান্না ঘরের ওয়েস্ট প্রডাক্ট
দ্বারাই চালু রাখা যাবে। আবার রান্না ঘরের ধোয়া বাছার পানি দিয়ে সেচ করেই এগুলোতে সবজি
ফলানো যাবে। তাই আমাদের দেশের প্রতিটি রান্না ঘরের আশে পাশের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য
এ ধরনের বাগান বেশ কার্যকরী। আমি ছোট বয়স থেকে দেখছি আমার মা সাধারণত রান্না ও অন্যান্য
ময়লা বড় গর্ত করে ফলতে থাকেন। সাধারণত দুই তিন মাস পর গর্ত পূর্ণ হলে নতুন গর্ত খুড়িয়ে
নেন। পুরাতন গর্ত মাটি দিয়ে ভর্তি করিয়ে নিতেন। সেই ভর্তি গর্তে লাউ,সিম,মিষ্টি কুমড়া
ও চাল কুমড়া ইত্যাদি লতা জাতীয় গাছ লাগিয়ে দিতেন। একটি বা দুইটি লতা গাছে এত সবজি ধরত
তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। এখনও অনেককে দেখি সাধারণত গ্রাম এলাকায় ময়লা ফেলার স্থানে
একপাশে লাউ, কুমড়া ইত্যাদি লাগিয়ে দিতে। এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে আমরা ময়লার ডেপোর
পাশে গাছ না লাগিয়ে কী-হোল গার্ডেন বানিয়ে নিলে আমরা রান্না ঘরের বর্জ্য ডানে বামে
না ফেলে কী-হোল গার্ডেনে ফেলে পরিবেশ ভাল থাকবে। ময়লা কম্পোস্ট হয়ে অর্গানিক সবজি উৎপাদনে
কাজে লাগবে।
ময়লা কম্পোস্ট তৈরি
করার ব্যবস্থা হওয়ায় বাড়ীর আশে পাশে লিটারিং বা ময়লা যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ দূষণের
ভয় থাকছে না। পরিবেশ সুন্দর করে রাসায়নিক সার ক্রয় না করে গৃহ স্থলীর ময়লা চারপাশে
না ফেলে চমৎকার পদ্ধতিতে বাগান করার অনন্য দৃষ্টান্ত এটি।
কী-হোল গার্ডনে
আমরা লাউ, কুমড়ো, শসা, করল্লা ইত্যাদি লতা জাতীয় গাছের পাশাপাশি ঢেঁড়স,বেগুন ও টমেটো
লাগাতে পারি। আমাদের রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা সবজির আবাদ করতে পারি। সাধারণত এই
মূল্যবান প্রক্রিয়ায় আমরা ফল গাছ লাগাব না। মাটির ব্যবহার কম হওয়ায় ও মাটি উত্তপ্ত
থাকায় এই কী-হোল গার্ডেনে আমরা শীতের সবজি শীত শেষ হওয়ার পরও চাষাবাদ করতে পারি। আবার
গ্রীষ্মের সবজি গ্রীষ্ম শেষ হওয়ার পরও আমরা চাষাবাদ করতে পারি। এই বাগান মাটি ও আবহাওয়ার
বিরূপ অবস্থায় গাছের অনুকূলে থাকে। যেমন বিরূপ আবহাওয়ায় শিকড় গভীরে যায় ও মাটির গভীরের
লতা পাতা ও কম্পোষ্টের স্তর থেকে পানি ও খাদ্য নিয়ে থাকে। এতে মাটি রুক্ষতা ও আবহাওয়ার
বিরূপতায় এর কোন ক্ষতি হয় না।বাংলাদেশের জৈব সার তৈরির প্রকল্পের মত আশে পাশের ডালপালা
ও ইট-পাথর ব্যবহার করে এটা তৈরি করা যেতে পারে। এমনটি দুইজন লেবার নিয়ে এটা তৈরি করে
সবজি সংগ্রহের মাধ্যমে কিস্তি পরিশোধ করা যেতে পারে। ইট সিমেন্ট দিয়েও এটা সেমি পার্মানেন্ট
ভাবে তৈরি করে নেয়া যায়। এটি এক দুই বছর পর পর মাটি ও কম্পোস্ট নাড়াচাড়া দিয়ে পুনরায়
সব সেট করে নিলেই চলবে। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে একটা করে কী-হোল
গার্ডেন তৈরি করা গেলে এটা আমাদের আর্থিক ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে
এ আশাই ব্যক্ত করছি।
No comments:
Post a Comment