পৃথিবীর অনেক দেশে নাকি বিদ্যুৎ যায় না। এটা শুনতে একটু
অবাক লাগে। যে সব দেশে বিদ্যুৎ যায় না তাদের বিষয়ে জানলে একটু অবাক হতে হয়।
বিদ্যুৎ যায় না মানে হয়ত মাসে একবার দুইবার ম্যান্টেনেন্সের জন্য বলে কয়ে এক দুই
ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকাটা গ্রহণ যোগ্য। কিন্তু বিনা নোটিশে প্রতিদিন দুই/তিনবার
বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করলে সত্যিই সমস্যায় পরবেন। যারা আইটি ও কম্পিউটার নিয়ে কাজ
করেন তাদের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। তাই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
একটি বিষয়। এই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এর জন্য আমাদের বিনিয়োগ কিন্তু উল্লেখ করার মত।
জেনারেটর,
আইপিএসও ইউপিএস। তার সাথে আবার এসব যন্ত্রপাতির মেরামত ও
রক্ষণাবেক্ষণের একটা চাপ থেকেই যায়। এখন লোডশেডিং মুক্ত যদি আমরা হতে পারলে আমাদের
আর বিদ্যুৎ ব্যাকআপ এর যন্ত্রপাতি ক্রয় করার প্রয়োজন হত না। বলা যায় বিনিয়োগের
প্রায় ৩০% টাকাই সাশ্রয় হয়ে যেত। এভাবে যদি গোটা দেশের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকার
জন্য একটি দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ ব্যাকআপ যন্ত্রপাতির বিনিয়োগ থেকে
রেহাই পাওয়া সম্ভব। আর এই হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করে তা আরো বেশী উন্নয়নে খরচ করা
যাবে। পাওয়ার যে কোন যন্ত্রের বা ডিভাইসের চালিকা শক্তি। তাই এই চালিকা শক্তি
নিরবচ্ছিন্ন করতে পারলে সাফল্য ধরে রাখাটা অতি সহজ।
বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন করলেন। তারপর আর কি প্রয়োজন। ২০১৬
এসে আমরা দেখছি ভয়েজ, ভিডিও ও ডাটা সমস্ত কিছুই পারাপার হচ্ছে
অপটিক্যাল ফাইবারে। বাংলাদেশের মত ঘন বসতির দেশে অপটিক্যাল ফাইবার টানার স্থান
গুলোই হল আমাদের রাস্তার পাশ দিয়ে। এই লাইনগুলো এখন ইন্টারনেট ও ভয়েস কল সবকিছুরই
চালিকা শক্তি। এই অপটিক্যাল ফাইবার লাইনগুলো প্রতি মাসে একাধিকবার কাটে। এখন অবশ্য
লাইন কাটলে একদম নিদ্দিষ্ট দূরত্বে কাটার স্থান আমরা বের করতে পারি। তাই অপটিক্যাল
লাইন কাটলে তা বের করতে তেমন বেগ পেতে হয় না। কিন্তু কাটা তারগুলি জোড়া দিতে মাটি
খুড়ে অপটিক্যালের কাটা স্থান বের করে একটার পর একটা ফাইবার জোড়া দিতে হয়। এতে যত
তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করুক না কেন সর্বনিন্ম তিন/চার ঘণ্টা ও একদিন লেগে যায়। এভাবে
মাসের অনেকটা দিন ইন্টারনেটে সমস্যা দেখা দিলে যারা ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে
বিভিন্ন কাজ করেন তারা সত্যিকার অর্থেই সমস্যায় পড়ে যান। আমি একবার একজনকে ওয়াইফাই
এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য তিন হাজার টাকার প্রিপেইড কার্ড কিনতে দেখে
বললাম আপনি এডিএসএল বা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিলে আপনার খরচ কম পড়ত। তখন ভদ্রলোক
বিনয়ের সাথে জানালেন আপনার প্রস্তাবটি খুবই ভাল। যদি আপনার প্রস্তাবটি কাজে লাগাতে
পারলে খুবই খুশি হতাম। কিন্তু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে যে হারে অপটিক্যাল লাইন কাটে
এবং মাঝে মাঝে দুই একদিনের জন্য ইন্টারনেট থাকে না এতে আমার আউট সোর্সিং এ কাজের
বারোটা বেজে যাবে এবং আমার হাজার টাকা লসে পরব। তার চেয়ে আমার আনইন্টারাপ্টেড
উচ্চমূল্যের ইন্টারনেট অনেক ভাল। একই রকম উচ্চ গতি ও হঠাৎ নেট চলে যায় না। একবার
একজন ব্যবসায়ী আমার বাসায় পরিচয় সূত্রে বেড়াতে আসল। আমার বাসায় টেলিফোন লাইনের
এডিএসএল মোডেমে রাউটারের মাধ্যমে ওয়াইফাই করা আছে। তাকে বললাম আপনি চাইলে রাউটারের
ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারেন। তিনি আমাকে বললেন আপনার বাসায় মোবাইল নেটওয়ার্কের
থ্রিজি পাওয়া যাচ্ছে। আমি সাধারণত থ্রিডি লাইন পেলে ওয়াইফাই খুঁজি না। কারণটা
স্বাভাবিক। টাকা বেশী খরচ হলেও লাইন সাধারণত স্থিতিশীল থাকে। গতির হেরফের কম হয়।
থ্রিজির আনলিমিটেড অনেক খরচের ব্যাপার। যারা সামর্থ্যবান তারা আনলিমিটেড থ্রিডি
ব্যবহার করলে কিছু যায় আসে না। কমফোর্ড ও আনইন্টারাপটের বিষয়। যারা আমরা বেশী গতি
কম খরচে খুঁজি তাড়াই সাধারণত ব্রডব্যান্ডের ব্রড সমস্যার শিকার হই। আর দিনের পর
দিন ইন্টারনেট ছাড়া কাটাই। বিদ্যুতের ইউপিএস ও আইপিএস এর মত আমাদের একাধিক
ব্যবস্থা খোলা রাখতে হয়। ব্রডব্যান্ড না থাকলে জরুরী কাজ করার জন্য তখন মোবাইল
মোডেম ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পরে। আপনার গুরুত্বপূর্ণ মেইল আসবে। আপনার ভাইবার বা
হোয়াটস অ্যাপে ম্যাসেজ আসবে। আপনাকে আউটসোর্সিং এর গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে তাই
মোডেমের মাধ্যমে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যাকআপ ছাড়া কোন উপায় নাই। তাই এডিএসএল ও
অন্যান্য যে কোন মাধ্যম রাখলেও এখন আনইন্টারাপ্টেড ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার জন্য
মোবাইল মোডেম চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বিদ্যুৎ যদি নিরবচ্ছিন্ন করা যায় তবে ইন্টারনেট কেন পারা
যাবে না। সম্প্রতি গুগল উচ্চ গতির ওয়্যারলেস ইন্টারনেট চালু করেছে। একটু কম গতি
থাকলে ম্যান্টেনেন্স ফ্রি ওয়্যারলেস ইন্টারনেট ভাল সলিউশান। আমাদের দেশের প্রচুর
অপটিক্যাল ফাইবার লাইন বসানো হচ্ছে। এমনকি অপটিক্যাল লাইন ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত
চলে গেছে। অপটিক্যাল লাইন অনেক দুর টানা হলো সমস্যা একটা থেকেই যাচ্ছে। তা হল।
বিকল্প ব্যবস্থা নাই। আর মোডেমের মাধ্যমে উচ্চ মূল্যের মোবাইল ইন্টারনেট হলো
বিকল্প। বাংলাদেশের অপটিক্যাল লাইনের বিচ্ছিন্নতা দুর করতে যা করা যায় তা হল:
১. একাধিক অপটিক্যাল লাইন বিভিন্ন পথ দিয়ে বসাতে হবে।
২. ওভারহেড অপটিক্যাল লাইন টানানোর প্রয়োজন আছে। কোথাও
আন্ডার গ্রাউন্ড লাইন কাটা গেলে উপরের ওভার হেড লাইন কানেক্ট করে দ্রুত চালনা করা
যায়। আন্ডার গ্রাউন্ড ও ওভার হেড কানেকশন দুইটিই চালু রাখা যেতে পারে। ঝড়ে ওভারহেড
লাইন নষ্ট হলে আন্ডার গ্রাউন্ড লাইন দিয়ে কার্যক্রম চলতে থাকবে।আবার আন্ডার
গ্রাউন্ড লাইন কাটা পড়লে দ্রুত ওভারহেড লাইন ব্যাকআপ দিবে। এরূপ করলে অপটিক্যাল
ফাইবারের লিংক ডাউনের পরিমাণ অনেক কমে যাবে।
পরিশেষে সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসাবে মোবাইলের কানেকটিভিটিই
হল ভরসা।
আমাদের দেশের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের আরো সচেতন
হওয়ার প্রয়োজন আছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এর মত এখন প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট।
সবচেয়ে ভাল হয় অপটিক্যাল লাইন টানা পার্টি আলাদা থাকবে। অপটিক্যাল লিংক যত বেশী
সময় ডাইন থাকবে তথ্য টাকা কর্তন হবে। তাই তারা লাইন সর্বদা যে কোন উপায়ে চালু
রাখবে। এখন অপটিক্যাল লাইন কাটা গেলে অপারেটররা একাধিক দিন নেয়। এতে মাসিক বিল
সাধারণত একই থাকে। তাই তাদের দায়বদ্ধতা কম। তাদের দায়বদ্ধতা বাড়ানোর জন্য যত সময়
ইন্টারনেট থাকবে না সেই অনুপাতে ব্রডব্যান্ড কোম্পানির ফাইন করার ব্যবস্থা থাকবে।
যেমন মাসে যদি বরদ ব্যান্ডের জন্য ১২০০ টাকা দেই তবে একদিন লাইন না থাকলে ফাইন হতে
পারে ৪০ টাকা আর প্রতি ঘণ্টায় ফাইন হতে পারে ১.৬৭ টাকা। এ ব্যবস্থা থাকলে দেশের
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের দায়িত্ব বাড়বে।
পরিশেষে আমাদের সকলের আশা উন্নত দেশের মত আমাদের দেশেও
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা উন্নত হবে।
No comments:
Post a Comment