নির্মাণের দুই
বছরের মধ্যেই কমিউনিটি ক্লিনিক নদী গর্ভে। এ ধরনের খবর আমরা মাঝে মাঝে পত্রিকায়
দেখি। তখন দু:খ লাগে নদী ভাঙ্গবে জেনে কেন এ ধরনের পরিকল্পনা ও স্থাপনা তৈরি। নদী ভাঙ্গনের নিকটবর্তী এলাকায় সাধারণত মানুষ পাকা বাড়ীঘর তৈরি করে না।
তারা সাধারণত টিন দিয়ে অস্থায়ী বাড়িঘর তৈরী করে। ব্যক্তি মালিকানার কোন পাকা বাড়ী
ঘর সাধারণত দুই বছরে নদীতে যায় না। ভাঙ্গতে
ভাঙ্গতে ২০/৩০ বছর পর নদী গর্ভে যায়। এদিকে নদীতে বাড়িঘর যাচ্ছে অন্যদিকে চর পড়ছে।
তবে যারা নির্মাণ করেছেন তারা সর্তক হলে নদী থেকে যথেষ্ট দুরে নির্মাণ করলে ১৬
লক্ষ টাকায় নির্মিত দুইতলা কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণের দুই বছরের মধ্যে নদী গর্ভে
যেত না।
কুষ্টিয়ায় চাকুরীর
সুবাদে দৌলতপুর চর এলাকা দেখার সুযোগ হয়। চর চিলমারী ও চিলমারী এলাকায় বিজিবি
ক্যাম্প আর স্কুল ছাড়া পাকা স্থাপনা নাই। ওখানকার লোকজন টিনের ঘরবাড়ী তৈরি করে
থাকে। কারণ বন্যা এলে উই স্থান ছেড়ে তারা চলে আসে। আবার পদ্মা নদী ভাঙ্গনেও কোন
সমস্যা নেই।
নদী ভাঙ্গন এলাকায়
জেনে শুনে পাকা স্থাপনা করা ভুল বলব না এটা হল অপরাধ। নদী ভাঙ্গন এলাকায় সরকারী
সমস্ত স্থাপনা অস্থায়ী টিন শেডে তৈরি হতে পারে । আর ভাঙ্গন ও বন্যা দুইটির ভয়
থাকলে সেসব স্থাপনা হবে কংক্রিটের খুঁটির উপর মাচা করে।
সরকারী স্থাপনা
সুন্দর ছিমছাম ও হাইজেনিক করতে হলে চমৎকার একটা ব্যবস্থা আছে আর তা হল
প্রি-ফেব্রিকেটেড(প্রিফেব) বাসস্থান। জাতি সংঘের শান্তি রক্ষী মিশনে দেখেছি
হাসপাতাল তৈরি হয়েছে প্রিফেব সিস্টেমে। প্রিফেবের স্যান্ডউইচ প্যানেল অত্যন্ত
সুন্দর ও হাইজেনিক। স্যান্ডউইচ প্যানেলের মেশিন ফার্নিশ রং সুন্দর ও দীর্ঘদিন
টেকসই হয়। সাধারণত জাতিসংঘে প্রিফ্রেব হাউজের আয়ুষ্কাল দশ বছর ধরা হয়। বাস্তবে এগুলি
২০/২৫ বছরও টিকে যায়।
নদী ভাঙ্গন এলাকায়
কম খরচে সরকারী স্থাপনা প্রিফ্রেব হাউজ তৈরি করা যায়। এই প্রিফেব হাউজগুলি নদী
ভাঙ্গন শুরু হলে ভাঙ্গন এলাকা থেকে ভিতরের দিকে স্থানান্তর করা যায়। এতে পুরাতন
স্থাপনা ধ্বংস হয়ে নতুন স্থাপনা পুনরায় তৈরি করার বিশাল একটা ক্ষয়ক্ষতি থেকে
সরকারী সংস্থা গুলো রক্ষা পাবে। শুধুমাত্র ভাঙ্গনের আগে প্রিফ্রেবগুলো খুলে
স্থানান্তর করে নিলেই চলবে। এমন কি বেশী পুরাতন হলে সেগুলো নিলামে বিক্রয় করে নতুন
করে তৈরি করে নিলেই চলবে। তবে প্রিফেবগুলো দালান হতে গরম বেশী লাগতে পারে। তার
জন্য এসি বা ফ্যানের ব্যবস্থা রাখলে ভাল হবে।
বাংলাদেশে এখন বেশ
কিছু সংস্থা প্রিফেব বাসস্থান তৈরি শুরু করেছে। যদি প্রিফ্রেব বাসস্থানের সরকারী
চাহিদা তৈরি হয় তাহলে বাংলাদেশে স্যান্ডউইচ প্যানেলের ব্যাপক বাজার তৈরি হবে। আর
বাজার বড় হলে এর মূল্যও কমে আসবে।
স্যান্ডউইচ প্যানেলে সাধারণত টিন শেড ঘর থেকে আনুমানিক দ্বিগুণ দাম পড়বে ধারনা করা
যায় আর দালান থেকে ৩৫-৪০% খরচ কম পড়বে। প্রিফেব হাউজের স্থানান্তরিত করতে পারার
গুনটির জন্য এটাকে দীর্ঘ মেয়াদি আরো সাশ্রয়ী বলা যাবে। দুর্গম এলাকায় ইট বালি বহন
করে স্থাপনা তৈরি করার খরচ থেকে কম খরচে ও দ্রুত করা যায়। একটা ২০০০ মিটার স্থাপনা
টিন দিয়ে করতে যাবে দুইমাস। ইটের গাঁথুনি ও কংক্রিট দিয়ে তৈরি করতে করতে লাগবে ছয়
মাস। অথচ একমাসের কম সময়ে প্রিফ্রেব হাউজ তৈরি করা যাবে।
যে কোন স্থানে
দ্রুত মান সম্পন্ন সরকারী স্থাপনা তৈরি করতে প্রিফেব হাউজের তুলনা মেলা ভার। জাতি
সংঘের মোতায়েন এলাকায় প্রথম তারা স্থাপন করে শক্ত প্লাস্টিকের বড় বড় তাঁবু। এর
ফ্রেমগুলো এলুমিনিয়ামের, এর পর তারা স্থাপন করে প্রিফ্রেব হাউজ। তারপর
আরো বেশী দীর্ঘ মেয়াদি হলে তারা স্থাপন করে পাকা দালান। তাদের এ ধারাবাহিকতা
বাংলাদেশ সরকার চর, নদী ভাঙ্গন এলাকায় এ ধরনের ব্যবস্থায়
যেতে পারেন। এতে সরকারী অর্থ অপচয় কম হবে। আমাদেরও দেখতে হবে না দুই বছরের মধ্যে
সরকারী স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন। আমরা সকলে সচেতন হলে সবার ও দেশের অনেক উন্নতি
হবে।
No comments:
Post a Comment