আজ থেকে ৩০/৩৫ বছর
আগে আমার মধ্যবিত্ত বাবার পরিবারে আমরা ছয়জন ভাইবোন প্রায়শই একটা ডিমকে শেয়ার করে খেতাম। কখনো একটা সিদ্ধ ডিম দুই ভাগে বা তিনভাগে খেতে হত। মাঝে মাঝে আমরা ছোটরা কেউ একাধিক টুকরো খেতে চাইলে মায়ের ভাগ বা
বাবার ভাগ দিয়ে দিতেন। ১৯৯৭ সালের
পর আমি যখন সংসারী হলাম হয়ত বাবার থেকে একটু উপরের ধাপে উঠলাম কমিশন অফিসার হওয়ার কারণে। আমার বাবা বিটিএন্ডটির অফিসার হলেও ছয় সন্তান ও তাদের পড়াশোনার
খরচ চালাতে গিয়ে আমার মা ডিম আস্ত না দিয়ে কয়েক টুকরো করে আমাদের ভাই বোনদের খেতে দিতেন। আমাদের এখনকার সন্তানরা অজস্র পোলট্রি ফার্মের কারণে ও সহজলভ্য
হওয়ার কারণে ডিম শেয়ার করে খাওয়া হয় এটা হয়ত চিন্তায় আনতে পারবে না। তাদের জন্য প্রতি নিয়ত ডিম খাওয়ানোর জন্য পরিবারের স্ত্রীরা বা
সন্তানদের মায়েরা এত ব্যস্ত থাকেন যে ভাবতেও অবাক লাগে। এমন হয় সন্তানের জন্য ডিম সিদ্ধ করা হল কিন্তু সন্তান বলল ডিম
সিদ্ধ খাব না পৌচ খাব তখন সিদ্ধ ডিম থাকা সত্ত্বেও পৌচ করতে হয়। আর এ অব্যবহৃত সিদ্ধ ডিম অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মা বাবাকে
অতিরিক্ত ডিম খেতে হয় আর ওজন বাড়াতে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের
সমস্যা হল কারণে ও অকারণে খাবার নষ্ট করতে পারে না। ছেলে মেয়েরা খেল না আর পিতা মাতা খেয়ে নিবে বা কাজের লোককে দিবে
এটা বেশী হয় মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোতে। কারণে ও অকারণে
খাদ্য দ্রব্য ফেলে দেয়ার মত ভয়ানক মানসিক শক্তি সাধারণত ধনী পরিবার গুলোতে হতে পারে। মধ্যবিত্ত পরিবার সাধারণত অতিরিক্ত খাবার খেয়ে হলেও খাবার ফেলে
না দিয়ে তা কাজে লাগায়। এভাবে চাহিদার
বাইরে অপরিকল্পিত খাবারই সাধারণত আমাদের শরীরে বারোটা বাজিয়ে দেয়। অধিকাংশ পরিবারের স্ত্রীদের ওভার ওয়েট হওয়ার কারণ অনেক ক্ষেত্রেই
বলা যায় সন্তানদের জন্য তৈরি করা বেচে যাওয়া খাবার ফেলে না দিয়ে নিজেদের চাহিদার অতিরিক্ত
হিসাবে সেসব খাবার ব্যবহার করা।
একটা কথা প্রচলিত আছে
চোখের খিদা। এটা একটা মারাত্মক
দিক। আমি অনেকেই দেখেছি খাবার তুলে নিতে গেলে
অনেক খাবার তুলে নেন কিন্তু বাস্তবে খেতে পারেন না। অনেক খাবার অপচয় হয় এ ধরনের চোখের খিদা মিটানোর কাজে।
চোখের খিদা মিটানোর
জন্য বেশী রান্না করা। বাচ্চাদের জন্য
প্রয়োজনের তুলনায় বেশী রান্না করাটা অনুচিত। আর বাচ্চাদের
বেশী রান্নার ভার বইতে হয় সাধারণত পিতামাতাকে। মাঝে মাঝে এরূপ হয় ছোট ছেলে কিছু খাচ্ছে না, তার জন্য রান্না করা ভাত, মাছ ও মাংস বেচে যাচ্ছে। আমি তখন ঘটনার গভীরে গিয়ে দেখলাম। স্কুল থেকে আসার পথে ছোট ছেলে মাঝে মাঝে ব্যাকারী থেকে স্ন্যাকস
ও কোল্ড ডিংকস খেয়ে বাসায় ফেরা। বাসায় এসে আইসক্রিম, বিস্কুট,
চানাচুর ও আরো বেশ কিছু ড্রাই খাবারের সদব্যবহার হয়েছে। তখন স্বাভাবিক ভাবে স্ত্রীকে পয়েন্ট আউট করে বললাম, ছেলের
পেটের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী ভাত ও সাধারণ খাবার দ্বারা পরিপূর্ণ না করে আগেই অন্য খাবারে
চাহিদা পূর্ণ করেছে করে ফেলেছে। তাই বাসার খাবার
বাড়তি হয়েছে। এ সকল ক্ষেত্রে
সাধারণত অনেক বাবা মা সন্তানদের বুঝাতে পারলে বাইরের খাবার পরিহার করাতে পারেন। আর একান্তই না পাড়া গেলে স্বাভাবিক খাবারের পরিমাণ এই সন্তানের
জন্য অর্ধেক করে বা প্রয়োজনে আরো কমিয়ে রান্না করতে হবে। এতে পিতামাতারা ফোর্স ইটিং থেকে রক্ষা পাবেন।
অনেক পিতামাতা সন্তানদের
অপ্রয়োজনীয় জাংক খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আবার আমরা অনেকেই পারি না, যারা পারি না তারা সন্তানদের জন্য একেক জনের পছন্দমাফিক একেক খাবার
তৈরি করে পরিবেশন করার চেস্টা করি যেন বাচ্চারা পেটপুরে তৃপ্তিতে খেতে পারে। আর্থিক সংগতি থাকায় ও কাজের লোক বা নিযুক্তিতে লোক প্রাপ্তির সুবিধা
থাকলে আমরা অতিরিক্ত মেনু তৈরী নিয়ে তেমন একটা চিন্তা করি না। কিন্তু এটা ক্রমান্বয়ে অহেতুক বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে
প্ররোচিত করে। পরিণামে মা
বাবা সহ গোটা পরিবার ওভার ওয়েটের যাতা কলে পিষ্ট হয়। এটা থেকে উত্তরণের একটা উপায় আছে। তা হল সুষম ও কঠোর খাদ্যাভ্যাস।
পরিকল্পিত খাদ্য অভ্যাস
আমাদের খাবার অপচয়ের পাশাপাশি আমাদের অযাচিত মুটিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে, খাওয়ার পরিমাণ সব সময় করতে হবে পরিমাণ থেকে কিঞ্চিত কম। খাবার কম পড়লে ইজ্জত গেল এ ধরনের মানসিক চিন্তায় না থেকে খাবার
কম পড়বে এবং কম খাব, এই নীতিতে আগানোই সবচেয়ে ভাল। খাবার কম পড়লে পুনরায় একই জাতীয় খাবার বা বিকল্প খাবার পরিকল্পনা
করলে সব সময় খাবারের বিষয়ে টাইট অবস্থানে থেকে ডায়েট কন্ট্রোল করা যায়। পরিশেষে বলব আমরা নিজেদের সুচারু পরিকল্পনায় খাদ্য শৃঙ্খলার মাধ্যমে
সুস্থ থাকব এটাই হোক আমাদের সকলের একান্ত কামনা।
No comments:
Post a Comment