Pages

Thursday, August 11, 2016

আমার কৃষি ভাবনা

আমার দাদা ছোটবেলা থেকেই জাত কৃষক ছিলেন। আমার নানা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক থাকার পরও জমি ছিল ও কৃষি ছিল। নিজে সরাসরি কৃষিকাজ না করলেও মুনি মজুর দিয়ে জমি করাতেন। আমার বাবা ১৯৯১ সালে তৎকালীন টিএন্ডটি ইঞ্জিনিয়ার পদ থেকে রিটায়ার করার পর থেকে গ্রামের বাড়ীতে থাকেন ও পুরো দস্তুর কৃষক। গত দুই বছর হল স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী হওয়ার পর থেকে সরাসরি গাছ লাগানো ও গাছের পরিচর্যা ইত্যাদি করতে পারছেন না। আমার বাবা সরকারী কোয়ার্টারে চাকুরীকালীন সারা জীবন কাটিয়েছেন। সরকারী ক্যাম্পাসে তার বাসস্থান সংলগ্ন স্থানে তিনি সব্জির চাষাবাদ না করে থাকতে পারতেন না। অপরদিকে আমার মাও কখনও বসে থাকতেন না। বাড়ীর আসে পাশে তার সব্জি গাছ লাগানো চাই। এখনো সাতাত্তর আটাত্তর বয়সে টুকটাক সব্জি গাছ লাগিয়ে যাচ্ছেন।
আমার পিতা মাতার কৃষি প্রীতি আমার মাঝেও সংক্রামিত হয়েছে। ২০০০ সালে একবার চাকুরীর সুবাদে সেনাবাহিনীর একতালা স্বতন্ত্র বাসস্থানে থাকার সুবাদে কিছু কৃষির প্রচেষ্টা করেছিলাম। বিজিবিতে দুইবার চাকুরীর সুবাদে সামগ্রিক ভাবে সবার জন্য কিছু কৃষির ব্যবস্থা করছি। একবার আমার সিনিয়র জেনারেল বলেছিলেন আমরা যদি আমাদের ক্যাম্পাসে একটি কুমড়ো উৎপাদন করতে পারি তবে আমরা স্থানীয় বাজার হতে একটি কুমড়ো কম কিনলাম, এতে বাজারে একটি কুমড়োর চাহিদা কম হল ও আমরা জাতীয় জিডিপিতে একটি কুমড়ো যোগ করলাম। এই ধারনার পর থেকে আমি সকলকে সব্জি চাষে উৎসাহ দেই। আর যদি একান্তই চাষাবাদ করতে না পারে তবে সরকারী বা বেসরকারি কোন স্থান ফেলে না রেখে দ্রুত লীজ দেয়ার ব্যবস্থা করি। প্রয়োজন যাতে সর্বদা স্থানগুলো উৎপাদনশীল থাকে। আমি বড় জমিতে একাধিক চাষকে প্রাধান্য দেই। ছোট ছোট প্লটে একাধিক ফসলের উৎপাদন সহজেই বিতরণ করে শেষ করা যায়। একবার আমাদের ক্যাম্পাসে বড় জমিতে শুধু টমেটো চাষ করল। পরে সেই টমেটো অত্যন্ত সুলভে বাজার ছাড়তে হল। তারপর থেকে ছোট ছোট প্লটে অনেক জাতের সব্জি চাষ করেছিলাম। এতে অপচয় কমে আসল। সহজেই সবাইকে বিতরণ করে শেষ করা যায়।
আমার প্রধান হবি কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক্স হওয়ার পরও আমার চাষাবাদে আগ্রহের কারণে আমি প্রতিনিয়ত চাষাবাদের উপর জ্ঞান অর্জন করে চলেছি। আমার কৃষির উপর জ্ঞান অর্জনের বিষয়গুলি অনেককে উৎসাহিত করতে পারে। তাই বিষয়গুলি সকলের সাথে শেয়ার করলাম। আশা করি আমার জানা বিষয়গুলি অনেককে কৃষির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য উৎসাহিত করবে।
আমার জানা কৃষির বিষয়গুলি হল:
. ছাদে বাগান করা
. টবে বাগান করা
. বস্তায় বাগান করা
. ভার্টিক্যাল বাগান করা
. কীহোল গার্ডেন করা
. ড্রিপ ইরিগেশন
. পিভিসি ইরিগেশন
. লীফ কালার চার্ট
. কম্পোষ্ট তৈরির নিয়ম
১০. রেইজ বেড গার্ডেন
১১. পট গার্ডেনিং
১২. হাইড্রোপনিক চাষাবাদ
১৩. ধান ক্ষেতে সম্বন্বিত মাছ চাষ
১৪. ভাসমান সব্জি চাষ
১৫. কান্দি কেটে সব্জি চাষ
১৬. গ্রীষ্মকালে শীতের সব্জি চাষ
১৭. শীতকালে গ্রীষ্মের সব্জি চাষ
১৮. স্ট্রবেরী, ক্যাপসিক্যাম ও ড্রাগন ফল
১৯. ছোট পুকুরে ভিয়েতনামী কই চাষ
২০. চিড়িং চাষ
২১. বিভিন্ন ধরনের মাছের চাষ
২২. আমবাগান উন্নয়ন ও পরিচর্যা
২৩. খাঁচায় মাছ চাষ
২৪. সিমেন্টের রিং এর রেইজ গার্ডেনে চাষাবাদ
২৫. বাসস্থানের ফেলে দেয়া কনটেইনারে ও পুরাতন টায়ারে গার্ডেনিং
২৬. গাছের পাতার আর্বজনা হিসাবে না পুড়িয়ে কম্পোস্ট তৈরি
২৭. বোতল মাধ্যমে ড্রিপ ইরিগেশন

আমার লিষ্ট যা মনে পড়েছে তা এখানেই লিপিবদ্ধ করলাম। আরো নতুন নতুন কৃষি গভেষনা ভবিষ্যতে আমি যুক্ত করব। আমার এ ধারনা ও চেকলিস্ট অনেকেই কৃষির নতুন নতুন বিষয় জানতে উৎসাহিত করবে। আমাদের দেশের কৃষির উপর আলাদা কোন টিভি চ্যানেল নাই। একবার শুনেছিলাম বাংলাদেশে কৃষির উপর চ্যানেল অতি প্রয়োজনীয় হবে। আমরা আমাদের অবসর সময় অবশ্যই সবুজের সাথে কাটালে আমরাও নিজেকে সবুজ রাখতে পারব।

No comments:

Post a Comment