আমার জীবনের দুইটি জাতিসংঘের মিশনে চাকুরীর সুবাদে আমার
বেড়ানো সিয়েরালিওন ও কঙ্গো দেশ দুটিতে গাইড ম্যাপ ও লোকজনের সহায়তায় নিয়ে ঘুরে
বেড়াতে পেরেছি। গত ২১ জানুয়ারি ২০১৬ আমি সপরিবারে ভারতের কলিকাতায় যাই। কলিকাতার
সমস্ত বেড়ানো বলা যায় কারো কাছ থেকে তেমন কোন ব্রিফিং না নিয়েই আমরা বেড়াতে
সক্ষম হই। ভারতে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগেই আমার দুই ছেলেকে ( ২০১৬ সালে দশম ও পঞ্চম
শ্রেণীর ইংরেজি ভার্সনে অধ্যয়নরত) নিয়ে
ইন্টারনেট ঘেঁটে কলিকাতার বেড়ানোর মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বের করে ফেলি।
তারপর গুগল ম্যাপে সে সমস্ত স্থানের ঠিকানা, দূরত্বও অন্যান্য বিষয়
বিবেচনায় আনি। ইন্টারনেট হতে স্থান নির্ধারণের পর আমরা যে স্থানে থাকব সে স্থান হতে প্রতিটি
স্থানের দূরত্ব ও সম্ভাব্য খরচ আমরা হিসাব করি। আমার দুই ছেলেকে নিয়ে আমাদের
ভারতের কলিকাতার বেড়ানোর পরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলি।
কলিকাতায় যাওয়ার পর একটা ব্রিফিং পেয়েছিলাম
ট্যাক্সিওয়ালারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে এরূপ আন্দাজ করতে পারলে মোটামোটি গোটা
কলিকাতা ঘুরে বেড়িয়ে বিভিন্ন রাস্তা ঘুরিয়ে মিটারে যথেষ্ঠ পরিমাণ বিল তুলে দেয়।
একটা উপায় অভিজ্ঞ জনেরা বাতলে ছিল আর তা হল ট্যাক্সি নির্দিষ্ট গন্তব্যে
চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নির্ধারণ করে যাওয়া। চুক্তিভিত্তিক ভাড়া গিয়েও কোন লাভ পাইনি।
কারণ এরা চুক্তিভিত্তিক ভাড়া আরো বেশী দাবী করে। তবে উপায়। মিটারে অপ্রয়োজনে কি
গোটা কলিকাতা চক্কর দিয়ে ট্যাক্সিওয়ালা মর্জিমাফিক কি বেশী ভাড়া দিতে থাকব। আমি আর
আমার বড় ছেলে একটা উপায় বের করলাম। আর তা হল। ট্যাক্সিওয়ালা সন্দেহজনক ভাবে
ঘোরাঘুরি শুরু করলে আমি ছেলেকে বলব জিপিএস অন্য করার জন্য। ছেলে জিপিএস তার
মোবাইলে অন্য করে ঘুরানো রাস্তা হলে ট্যাক্সি চালককে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা
দিবে। এতেই ট্যাক্সি চালক সর্তক হয়ে ঘোরাঘুরি বন্ধ করে সোজা রাস্তা ধরবে। কারণ সে
অপরিচিত রাস্তায় নিয়ে মুরগা বানানোর কাজ থেকে বিরত থাকবে। আমাদের এ ব্যবস্থাটি বেশ
কাজে লেগেছিল। আমাদের তেমন মুরগা বনতে হয়নি। তবে আমার মনে হয়েছে কলিকাতার বেশীরভাগ
ট্যাক্সিচালক তেমন ধান্ধাল নয়। মিটারে ঠিকঠাক ভাবে সাধারণত যায়। কলিকাতার যে কোন
পয়েন্টে থেকে জিপিএস ও লোকেশন অন্য করলে পরবর্তী গন্তব্য জিপিএস এর গুগল ম্যাপে
সার্চ দিলে এই পয়েন্ট কখন কোন বাস আসছে ও ট্রেন কাছাকাছি কোথায় আছে সকল তথ্য পাওয়া
যায়। ইতিপূর্বে অনেকের কাছ শুনেছি জিপিএস ব্যবহার নিয়ে। কলিকাতায় মোবাইলের
জিপিএসএর এত চমৎকার ব্যবহার করা যায় তা কলিকাতায় না আসলে আমি ও আমার ছেলেরা জানতাম
না। আমরা কোন স্থানে যেতে কাউকে তেমন একটা জিজ্ঞাসা করতে হয়নি। জিপিএস মোবাইলের
চার্জ কমিয়ে দেয় ও ইন্টারনেট খরচ করে। তাই যখনই কোন স্থান ঠিকমত মন হচ্ছে না, সাথে
আমার জিপিএস এর হটস্পট অন করি। আমার বড় ছেলে ওয়াই ফাই অন্য করে আমার মোবাইলের
সহায়তায় গুগল ম্যাপে আমাদের গন্তব্যের বিস্তারিত তথ্যাদি বের করে। এভাবে পথ হারানো
থেকে রক্ষা পেতাম। বড় বড় শপিং মল ও বড় বড় দোকানের ছবিসহ বিবরণ গুগল ম্যাপে পাওয়া
যায়।
কলিকাতার গুগল ম্যাপে একটা বিষয় আমাকে সহায়তা দিয়েছে আর
তা হল নির্দিষ্ট স্থানের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর। একবার আমরা কলিকাতার অলিপুর নামক
স্থানে চিড়িয়াখানায় যাব। আগের দিন গুগল ম্যাপ থেকে চিড়িয়াখানার তথ্য নিতে গিয়ে
দেখি চিড়িয়াখানা পরের দিন বন্ধ থাকবে। গুগল ম্যাপে এ তথ্য না পেলে আমরা পরের দিন
চিড়িয়াখানায় যেতাম আর বন্ধ দেখে ফেরত আসতাম। গুগল ম্যাপের বন্ধ থাকার তথ্যের সাথে
অনুসন্ধানের মোবাইল নম্বর থাকায় আমি মোবাইলে কল করে আরও নিশ্চিত হতে পেরেছিলাম।
সত্যি জিপিএস আর গুগল ম্যাপের কার্যক্রম অসাধারণ। আমাদের বাংলাদেশে সমস্ত রাস্তা ও
ডিটেইলস গুগল ম্যাপে না থাকলেও অনেকটুকু উপকারে আসে ও অনেক কাজে লাগে। ভারতের
কলকাতার রাস্তায় আরও একটা ভয়াবহ বিষয় হল ট্রাফিক জ্যাম। বাংলাদেশের ঢাকা থেকে কোন
অংশে কম নয়। গুগল ম্যাপে কলিকাতার ট্রাফিক জ্যামের বিষয়টি অত্যন্ত চমৎকার ভাবে
জানা যায়। কতটুকু রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম আছে। ট্রাফিক ঘনত্ব কেমন। জ্যামে পড়ে থাকতে হবে আনুমানিক কত সময়। ইত্যাদি বিষয় খুবই
উপকারী। এভাবে ট্রাফিক জ্যামের তথ্য জানার কারণে জ্যামের রাস্তাগুলো বাদ দিয়ে
বাইপাস করার ভাল সুযোগ হয়। আমার ছেলে গুগল ম্যাপ দেখে ট্যাক্সি চালককে যখন বলে, আংকেল
সামনে জ্যাম আছে। আপনি বামে এই এই রাস্তা ধরে গিয়ে জ্যাম থেকে বাচতে পারবেন।
চালকরা একটু অবাক হয় জানতে চায় সে কিভাবে জানে। যখন বলা হয় মোবাইলের গুগল ম্যাপ
থেকে তখন অনেকেই বিষয়টি জানার জন্য বেশ আগ্রহী হয়।
আমি চাকুরী জীবনের ২৫ বছর ধরে ঢাকার বাইরে আছি। তাই
ঢাকার গুগল ম্যাপের অগ্রগতি তেমন ধারনায় নাই। তবে আমার চাকুরীর এলাকা কুষ্টিয়া ও
কাছাকাছি অনেক শহরের ডিটেইলস গুলো মফস্বল এলাকা হিসাবে ভালই পাওয়া যাচ্ছে।
কলিকাতায় মোবাইলে জিপিএস ব্যবহার করে আমার একটা ধারনা হল আমরা ও আমাদের সন্তানরা যারা
আইটি ঞ্জান নিয়ে বড় হচ্ছে। তাদেরকে পৃথিবীর যে কোন স্থানে জিপিএস সম্বলিত মোবাইল
দিয়ে ছেড়ে দিলে তারা চমৎকার ভাবে রাস্তা চিনে নিতে পারবে। এখন বিদেশ ভ্রমণ হয়েছে
পানির মত সহজ ও চিন্তামুক্ত।
No comments:
Post a Comment