Pages

Thursday, October 13, 2016

সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি শতভাগ রিসাইক্যাল যোগ্য গ্রীন এনার্জি

আমি অনেকের সাথে গ্রিন এনার্জি নিয়ে আলোচনায় প্রায়ই কয়েকটা প্রশ্নের মুখোমুখি হই। প্রথম প্রশ্ন। সোলার প্যানেল তৈরি করতে অনেক বিদ্যুৎ ও তাপ প্রয়োজন হয়। সেই বিদ্যুৎ ও তাপ ফসিল ফুয়েল হতে আমাদের নিতে হয়। প্রথমত আমরা সৌর প্যানেল তৈরির সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সোলার বা নবায়নযোগ্য জ্বালানী উৎস হতে নিতে পারি। তেমনি সিলিকন গলিয়ে প্যানেল বানানোর ফার্নেসও আমরা সোলার কণসেনট্রেটরের মাধ্যমে পেতে পারি। তাই সোলার তৈরির প্রতিটি পর্বেই আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানী ও সৌরশক্তির ব্যবহার করতে পারব। এখন আসি সোলার প্যানেলের আয়ু। সোলার প্যানেলে সাধারণত ২০/২৫ বছর পর্যন্ত ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি দেয়া হয়। কিন্তু পৃথিবীতে ৬০ বছরের প্রাচীনতম সোলার প্যানেল এখনও বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছে। পৃথিবীর উপরে বায়ুমণ্ডলে স্থাপিত অনেক স্যাটেলাইট দীর্ঘদিন (আনুমানিক ৫০/৬০ বছর)ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছে। হয়ত আরো অনেক অনেক বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাবে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে সৌর প্যানেলগুলো বছরের পর বছর অল্প অল্প করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হারাতে থাকবে। তথাপিও ৫০ বছর পরেও এগুলো সন্তোষজনক মানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। আমাদের অনেক ইলেক্ট্রনিক দ্রব্যাদি দুই বছর ওয়ারেন্টি থাকলেও তা অনেক সময় তিন চার বছর অর্থাৎ ওয়ারেন্টির দ্বিগুণ লাইফ টাইম পার করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ২৫ বছর দেয়া ওয়ারেন্টি থাকলে তা দ্বিগুণ সময় সহজেই পার করতে পারবে। যদি ৫০ বছর সোলার প্যানেল বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তবে তা বিশাল অর্জন। যদি ১০০০ ওয়াটের প্যানেল এখনকার দামে ওয়াট প্রতি ৬০ টাকা খরচ করি তবে ১০০০ ওয়াট এর মূল্য হবে ৬০০০০ টাকা। প্রতিদিন সর্বনিন্ম ৪ ঘণ্টা( অনেক সময় ৬/৭ ঘণ্টা পাওয়া যাবে) বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তবে এক দিনে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ হবে ৪ গুন ৫ টাকা ( আমাদের দেশে এক কিলোওয়াট বিদ্যুতের গড় মূল্য ৫ টাকা)=২০ টাকা। তবে ৩৬৫ দিনে হবে ৩৬৫ গুন ২০ টাকা=৭৩০০ টাকা। ৫০ বছরে হবে ৭৩০০ গুন ৫০=৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০১৬ সালে ধরা ৫ টাকা বিদ্যুৎ বিল ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে তাতে ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার বেশী অর্জন সম্ভব। প্রায় ৩ লক্ষ ৫ হাজার টাকা লাভ হবে। সোলার প্যানেল সম্পূর্ণ রিসাইক্যাল করা যায়। রিসাইক্যাল করে প্রায় ৯৫% সিলিকন, কপার, সীসা ও এলুমিনিয়াম ইত্যাদি রিসাইক্যাল করানো সম্ভব। সোলার প্যানেল আমরা পুনরায় ৯৫% রিকভার করে পরিবেশের ক্ষতি হওয়া থেকে মুক্ত করতে পারি। নি: সন্দেহে সোলার প্যানেল আসলেই গ্রিন এনার্জি এতে কোন দ্বিমত বা বিতর্ক নেই।
এখন আসি ব্যাটারির বিষয়ে। অনেকের মত আমিও জানতাম ব্যাটারি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।  কিন্তু ব্যাটারির রিসাইক্যাল বিষয়ে কিছু স্টাডি করে দেখলাম। ব্যাটারি পরিবেশের জন্য মোটেই ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ব্যাটারি তৈরির প্লান্টটি হতে পারে সম্পূর্ণরূপে রিনিউয়েবল এনার্জি নির্ভর তাহলে ব্যাটারি তৈরির জন্য পরোক্ষভাবে আমরা পরিবেশের ক্ষতি করব না। এবার আসি রিসাইক্যালের জন্য প্লান্টটিও আমরা রিনিউবল এনার্জি নির্ভর করে নিব। রিসাইক্যালের ব্যাটারির প্লাস্টিককে আলাদা করে তা গলিয়ে পুনরায় ব্যাটারির প্লাস্টিক কেসিং বানানো সম্ভব। ব্যাটারির এসিড লবণ মিশ্রিত করে ডিএসিডিক করে  পরিশোধন করে ভূমিতে পরিচ্ছন্ন পানি হিসাবে মুক্ত করা সম্ভব। ব্যাটারি শীশা ও কপার গলিয়ে পুনরায় ব্যাটারির প্লেট বানানোর কাজে লাগানো যায়। অপরদিকে নিকেড ব্যাটারি ও লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি বর্তমানে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ইলেকট্রিক গ্যাজেটে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা যায়। এগুলো সবই চমৎকারভাবে রিসাইক্যাল করা যাবে।

সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি এগুলোর বিষয়ে যাদের ধারনা আছে এগুলো তৈরিতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।  ব্যবহার শেষে এগুলো দ্বারা ভূমি দূষণ হচ্ছে। এ ধারনায় যারা ছিলেন তারা নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট হতে পেরেছেন। সোলার প্যানেল ও ব্যাটারি নবায়নযোগ্য জ্বালানী  ব্যবহার করে উৎপাদন করা সম্ভব। এগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার করে পুনরায় রিসাইক্যাল করা সম্ভব। রিসাইক্যালে ৯৫% রিকভারী সম্ভব। সবার শেষে অবশ্যই সোলার প্যানেল ও ব্যাটারিকে সম্পূর্ণ গ্রিনে এনার্জির তকমা দিতেই হবে এবং আমরা নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারি। ব্যবহার শেষে ডানে বামে ফেলে না দিয়ে রিসাইক্যাল ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে  দিলে পরিবেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা কমাতে পারি। তদুপরি আমরাও পরিবেশ সচেতনতার প্রমাণ দিতে পারি।

No comments:

Post a Comment