Pages

Thursday, October 6, 2016

ফসলী জমিতে ফসলের সাথে বিদ্যুৎ উৎপাদন

নবায়নযোগ্য জ্বালানী নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করা হল আমার একটি অভ্যাস। এই অভ্যাসের কারণে কয়েকদিন আগে  ইন্টারনেট হতে কিছু তথ্য পেয়ে আমার বেশ আনন্দ হয়েছে। বাংলাদেশ ছোট একটি দেশ। কৃষিনির্ভর দেশ। স্বাধীনতার পর অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে আমরা কৃষিতে স্বনির্ভরতার দিকে অগ্রসর হয়েছি। ২০১৪ সালের পর থেকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পথে হাঁটছি। আর তখনই আমাদের সামনে একটি অদ্ভুত আবেদন পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো হতে। আর তা হল কোন ফসিল ফুয়েল জ্বালানী নয় সৌর শক্তি থেকে বিদ্যুৎ তৈরি। বিদ্যুৎ তৈরি করতে জমি প্রয়োজন। আমরা ছোট দেশে জমি পাব কোথায়।

এ বিষয়ে জাপানের কিছু কৃষি বিজ্ঞানী ১৯৯৪ সাল থেকে অনেক ভাবে গভেষনা করে জমিতে সোলার  প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য একটা পদ্ধতি বের করে। পদ্ধতিটা হল, তারা প্রমাণ পায় জমিতে ৩২ শতাংশ অংশ ফাকা ফাকা করে ঢেকে দিলে জমির ফসলের কোন ক্ষতি হয় না। উৎপাদন ব্যাহত হয়না। এর জন্য তারা প্রতি পাঁচ মিটারে ২/৩ হতে এক মিটার প্রশস্ত প্যানেল সাজেস্ট করে। লম্বা দেড় মিটার প্রস্থ ২/৩ মিটার প্যানেল আড়াআড়িভাবে এক মিটার দুরে দুরে সেট করা যায়। এতে ৩২ পারসেন্টের কম স্থান সোলার প্যানেলে আবরিত হবে। প্যানেলগুলি ১০ ফুট উপরে সেট করা প্রয়োজন। ১০ ফুট উপরে ফাকে ফাকে সোলার প্যানেল সেট করলে দিনের বিভিন্ন সময় সূর্যের দিক পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে প্যানেলের ফাঁক দিয়ে সৌর আলো তাপ নীচে গাছে পৌঁছাবে ও গাছের সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকবে।

সৌর প্যানেলগুলো ১০ ফুট উচ্চতায় মাচা আকারে বসাতে হবে। তবে জাপান কৃষি অধিদপ্তর আবার একটা শর্ত দিয়েছে মাচার পিলারগুলোর বেইজ পাকা করা যাবে না। ঝড় ও বাতাসের তীব্রতা থেকে মুক্ত রাখার জন্য যতদূর প্রয়োজন গভীর করা যেতে পারে। জাপানী বিঞ্জানীরা দুই ফুট গভীরে বসিয়ে ১০ ফুট উপরে ৩ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ দিয়ে পিলার গুলো বানিয়ে নিয়েছে। তারা মাচাটা এমনভাবে তৈরি করে নিয়েছে এবং প্যানেলগুলো সেট করেছে যাতে দিনের বিভিন্ন সময় সৌর আলোর দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ঘুরানো যায়। পিলারের উচ্চতা ও পিলার থেকে পিলারের দূরত্ব এমনভাবে সেট করা হয়েছে যাতে ট্রাক্টর ও হারবেস্টর এর ভিতর দিয়ে সমস্যা ছাড়া চালনা করা যায়। জাপানের রৌদ্রের সাধারণ তাপমাত্রা অপেক্ষা আমাদের দেশে তাপ বেশী তাই এই ব্যবস্থা আমাদের দেশে করলে জমি সান বার্ন কম হবে। জমির পানি ও রস কম বাষ্পীভূত হবে। এতে জমি বেশী পরিমাণে উর্বর থাকবে। পানি কম দেয়া লাগবে। ফসলের উৎপাদন বাড়বে। জমির উপরে ৩০/৩২% ছায়া থাকায় কৃষিকাজ করতে কৃষক কম সান বার্ন হবে। প্যানেলের ছায়ায় থেকে থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী সময় কাজ করতে পারবে। কৃষক কম পরিশ্রান্ত হবে বেশী পরিমাণ উৎপাদনশীল থাকবে।

জাপানের কৃষকরা এর নাম দিয়েছে সোলার শেয়ারিং। জাপানের কৃষি কাজে সরকার বরাবর ভর্তুকি দিয়ে আসছে। তথাপি বর্তমান ও আধুনিক জেনারেশনের কৃষিকাজে আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তার একমাত্র কারণ কৃষিকাজে অন্যান্য শিল্প কারখানা থেকে আয় রোজগার কম। কিন্তু সোলার শেয়ারিং জাপানের যুব সমাজকে কৃষিতে ফেরত আনবে বলে মনে করা যায়। জাপানে এক বিঘা জমিতে  ফসল থেকে সাধারণত আয় আসে ১ লক্ষ ইয়েন। ১ ইয়েন আমাদের এক টাকার কাছাকাছি (০.৭৭ টাকা) অপর দিকে সৌরবিদ্যুত এর আয় ১ লক্ষ ৬০ হাজার ইয়েন। এক বিঘা জমি হতে বছরে সর্বমোট ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা কৃষক পাচ্ছে । যা কিনা তার ফসলের আয় হতে ১.৬ ভাগ বেশী। এখানে আর একটি বিষয় আছে জাপানে বেসরকারি ব্যক্তি বর্গের কাছ থেকে সরকার ৪২ ইয়েন দামে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ক্রয় করে। আমাদের দেশে সরকার সবোর্চ্চ ১৫ টাকা রেটে পিংকিং পাওয়ারের ডিজেল জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করে থাকে। অবশ্য বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত সুলভ মূল্যে ৩ টাকা হতে ৮ টাকার মধ্যে বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে বিদ্যুৎ বিক্রয় করে থাকে। ফলে আমাদেরে দেশ অপেক্ষা জাপানে জমির উপর বিদ্যুৎ বিক্রয় করা অনেক লাভজনক।

বাংলাদেশের মত ঘনবসতির দেশে জাপানের এই উদাহরণটি বেশ গুরুত্ব পেতে পারে। কারণ আমাদের মূল্যবান জমিগুলি সোলার শেয়ারিং এর কাজে ব্যবহার করলে কৃষক যেমন লাভবান হবে আমাদের দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে অনেকদূর এগিয়ে যাবে।  

1 comment:

  1. যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত ও গুরুত্বপূর্ন লিখা গুলি ,আমি ও আপনার শাথে এক মত কিন্তু সোলারের মূল্যতো কমছে না ,কিকরাজায় আমার বাজেট কম তো তাই টেনশানে আছি।

    ReplyDelete