বৈদ্যুতিক লোড শেডিং এ জন্য অনেক সময় আইপিএস যথাযথ সময় ব্যাকআপ না দিতে
পারলে আমাদের জেনারেটর প্রয়োজন হয়। সকল সংস্থা যারাই অফিসের বাইরে কোন কাজ করেন
তাদেরই জেনারেটর প্রযোজন হয়। সেনাবাহিনীর অনুশীলন ও অন্যান্য ক্যাম্পিং এর জন্য
জেনারেটর প্রয়োজন হয়। কিছুদিন আগেও ক্যাম্পিং এর কিছু লাইট জ্বালানোর জন্য প্রয়োজন
হত কমপক্ষে পাঁচ কেভি জেনারেটর। বর্তমানে সাশ্রয়ী এলইডি লাইট ও অন্যান্য সাশ্রয়ী
প্রযুক্তির কারনে কমশক্তির জেনারেটর দিয়ে আমরা অনেক কাজ করতে পারব।
যে কোন জেনারেটর ২২০ ভোল্ট ও ৫০ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি বজায় রাখার জন্য ৩৬০০
আরপিএম এ ঘুরতে থাকে। ইনভার্টার জেনারেটর লোড অনুযায়ী ২৫% পর্যন্ত মুল ক্যাপাসিটির
আরপিএম এ ঘুরতে পারে। এতে প্রচুর জ্বালানী সাশ্রয় হয়। ইনভার্টার জেনারেটর প্রায়
৪০% জ্বালানী সাশ্রয় করতে পারে। সাধারণত এতে কোন ফ্লাই হুইল ব্যবহার করা হয় না।
পিস্টন থেকে জেনারেটর সরাসরি ড্রাইভ পায়। এতে প্রাথমিকভাবে অপরিশোধিত এসি বিদ্যুৎ
উৎপন্ন হয়। এই এসি বিদ্যুতটি যথেষ্ট পরিমাণ ভাল নয়। ভোল্টেজ উঠানামা করে ও
ফ্রিকোয়েন্সিও পরিবর্তিত হয়। এখন এই অপরিচ্ছন্ন এসি বিদ্যুতকে রেক্টিফায়ার দিয়ে
ডিসি করা হয়। উৎপন্ন ডিসিকে মাইক্রোপ্রসেসর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে ফ্রিকোয়েন্সি ও
ভোল্ট যথাযথভাবে স্থির করে বিশুদ্ধ ২২০ ভোল্ট ও ৫০ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সির বিদ্যুৎ
তৈরি করা হয়। আর ডিসি থেকে এসিতে রূপান্তরের এই প্রক্রিয়াটির নামই মূলত ইনভাটিং। এ
কারণেই এরূপ জেনারেটরের নাম হয়েছে ইনভার্টার জেনারেটর।
ইনভার্টার জেনারেটর লোডের উপর ভিত্তি করে আরপিএম এর কম বেশী হয় আর এটাই হল
এই জেনারেটরের সবচেয়ে স্মার্ট দিক। লোডের কমবেশি করে জেনারেটরের থ্রটল নিয়ন্ত্রণ
করে মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক সার্কিট।
ইনভার্টার জেনারেটর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানি ৪০০০ ওয়াটের বেশী তৈরি
করেনি। তবে মজার বিষয় হল বেশী ওয়াটের প্রয়োজন হলে দুইটি জেনারেটর প্যারালাল সংযোগ
দিয়ে লোড ৮ কেভি করা যাবে। ৪০০০ ওয়াটের
বেশী ইনভার্টর জেনারেটর তৈরি না করার
পিছনে যে কারণ থাকতে পারে তা হল সাধারণ বা ননইনভার্টার জেনারেটর বেশী ক্যাপাসিটির
হলে তা সাধারণত জ্বালানী এফিশিয়ন্টে হয়। যত বড় জেনারেটর হবে তত বেশী জ্বালানীর
কিলোওয়াট প্রতি খরচ কম হবে। তাই বড় মাপের ইনভার্টারের খরচ অনেক বেড়ে যাওয়াই
স্বাভাবিক। ৪০০০ ওয়াট ইনভার্টার জেনারেটর কিন্তু ব্যবহারের জন্য কম নয়।
৪০০০ ওয়াট জেনারেটরে কি কি সামগ্রী চালানো যাবে:
১। ১.৫ টনের ইনভার্টর এসি: ১৫০০ ওয়াট।
২। একটি রিফ্রিজিরেটর: ৩০০ ওয়াট।
৩। এনার্জি এফিশিয়েন্ট ৫টি সিলিং
ফ্যান: ৬৫ গুন ৫= ৩২৫ ওয়াট।
৪। স্মার্ট টিভি: ১২৫ ওয়াট
৫। ল্যাপটপ কম্পিউটার: ৫০ ওয়াট।
৬। এলইডি লাইট ৭০টি/মোবাইল চার্জার/রাউটার ইত্যাদি=৭০ গুন ১০=৭০০ ওয়াট।
৭। ইনভার্টর মাইক্রোওয়েভ ওভেন/আয়রন/ ইনভার্টর ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদি
চালানো: ৫০০/৭০০ ওয়াট।
৮। আরো অন্য কিছু চালানো যাবে এসি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে।
৯। সর্বমোট: ৪০০০ ওয়াট।
ইনভার্টার প্রযুক্তির গৃহ স্থলীর বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার করে অনেক অনেক
বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যায়। উপরে ৪০০০ ওয়াটের হিসাব দিলেও একসাথে এত ব্যবহার কখনোই হবে না। তাই ১০০০ ওয়াট
এক ধরনের জ্বালানী খরচ হবে। ২০০০ ওয়াটে আর একটু বেশী এবং ৩০০০ ওয়াটে প্রায়
সম্পূর্ণ শক্তির জ্বালানী খরচ হবে। এই এধরনের ওয়াটের কম বেশীর জন্য জ্বালানী ব্যবহারেরও
তারতম্য হতে থাকবে।
আমাদের বাংলাদেশের আর কয়েক বছর পর ক্যাম্পিং এর জন্য বিদ্যুতের অভাব হবে
না। কারণ গ্রামের আনাচে কানাচে এখন বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে তবু বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা
অন্য কোন কারণে হাতের পাঁচ হিসাবে ইনভার্টার জেনারেটর খুবই উপকারী একটি সামগ্রী
হবে তা নি:সন্দেহে বলা যায়।
এধরনের জেনারেটর বিয়ে বা অন্য কোন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা যাবে। একটি
জেনারেটরের শক্তি পর্যাপ্ত না হলে আরো একটি একই শক্তির জেনারেটর সমান্তরাল ভাবে
সংযোগ দিয়ে শক্তি বাড়ানো যাবে। জেনারেটরের এ ফিচারটি অত্যন্ত ভাল এবং কার্যকরী।
সারা পৃথিবী চলছে এখন কার্বনমুক্ত জ্বালানী থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ইনভার্টার
জেনারেটর জ্বালানী সাশ্রয় করে কার্বন নি:স্মরণ কমাতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে।
হয়ত বেশীদিন দূরে নয় যখন আমরা পরিবেশের বিবেচনায় জ্বালানী সাশ্রয়ী ও বিদ্যুৎ
সাশ্রয়ী সামগ্রী ব্যবহার করে আমরা সকলে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখব।
No comments:
Post a Comment