আমার ছোটবেলায় আমি যখন বুঝতে শিখলাম
তখন দেখতাম আমার গ্রামের মামা ও চাচারা গ্রামের বাজারে তৈরি কাল রংয়ের বড় বড় এসিড
ব্যাটারি বাজার থেকে বা দুরে বিদ্যুৎ আছে উপজেলার বাজার থেকে চার্জ দিয়ে টু-এন-ওয়ানে ক্যাসেট বাজাতেন।এসিড
ব্যাটারি শুধু গ্রামেই নয় শহরের ঘরে ঘরে আছে। আইপিএস এর সাথে। প্রাইভেট কারের
সাথে। গ্রামে সোলার বিদ্যুতের ব্যাটারি ব্যাংক। জেনারেটরের র্স্টাটার। মোটর
সাইক্যালের র্স্টাটার। মিলিটারির ওয়্যারলেস সেট সবই চলছে লিড এসিড ব্যাটারি দিয়ে।
সেই লিড এসিড ব্যাটারিকে আমি গুড বাই বলতে চাচ্ছি। বাড়াবাড়ি হয়ে গেল নিশ্চয়ই।
মনে করি একটা লিড
এসিড ব্যাটারির তিন ভাগের এক ভাগ ওজন, তিন ভাগের একভাগ আয়তন, তিনগুণ থেকে পাঁচগুণ বেশী লাইফ। ৩০ মিনিটে ৮০% চার্জ সম্ভব। আবার লিড এসিড থেকে বেশী পরিমাণে বিদ্যুৎ না কমিয়ে ডিসচার্জ
সম্ভব। তবে দামটা বেশী প্রায় তিন গুন। এত গুন নিয়ে বড়
আকারে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি আগমন করছে। এ অবস্থায় লিড এসিড ব্যাটারির বিদায় ঘণ্টা
বাজাটা অত্যন্ত যৌক্তিক। অনেক আগে থেকেই অনেকে লিড এসিড ব্যাটারিকে পরিবেশ বান্ধব
বলতে অনেক বেশী কার্পণ্য বোধ করতেন। কারণ এসিড ও সীসা পরিবেশের জন্য খারাপ। তবে
যাই হোক লিড এসিড ব্যাটারি যথাযথভাবে রিসাইক্যাল করলে শতকরা ৯৫% রিকভার বা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। তাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ তকমাটা
লাগানো হয়ত ঠিক হবে না। অপর দিকে লিথিয়াম আয়ন পরিবেশের জন্য কোন ক্ষতির কারণ হয়
না। লিথিয়াম আয়ন ১৯৭০ সালে আবিষ্কার হলেও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার শুরু হয় ১৯৮১
সালে। প্রথম ভার্সনে লিথিয়াম ও কোবাল্ট দিয়ে লিথিয়াম কোবাল্ট অক্সাইড তৈরি করা হয়।
এটার বিদ্যুৎ ধরে রাখার মান ভাল হলেও ওভার চার্জে আগুন ধরার ঘটনা আছে। তবে
বিঞ্জানীরা লিথিয়াম,আয়রন ও ফসফেট দিয়ে
সামান্য কম শক্তির লিথিয়াম-আয়রন-ফসফেট তৈরি করেছে যা আগুন লাগার ঝুকিমুক্ত করেছে। এখন লিথিয়াম আয়ন
ব্যাটারি অনেক অনেক নিরাপদ। লিড এসিড ব্যাটারি থেকে নিরাপদ। এসিড ব্যাটারি ওভার
চার্জ হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির আধুনিক ভার্সনে এ ধরনের
সমস্যা মোটেই নেই। লিড এসিড ব্যাটারি এসিড হতে গ্যাস হয় বিধায় উন্মুক্ত স্থানে
রাখা হত। লিথিয়াম আয়ন সংকীর্ণ স্থানে উপর নীচ, বাঁকা তেড়া যেকোনো
ভাবে রাখা যায়। এসিড ব্যাটারি যে কোন স্থানে যে কোন ভাবে রাখা যায় না কারণ এসিড
পড়ে যাবে। এসিড ব্যাটারি ভারী হওয়ায় পরিবহন একটি বড় সমস্যা হত। লিথিয়াম আয়ন
ব্যাটারির পরিবহন সহজ।
লিড এসিড ব্যাটারি
অপেক্ষা অনেক অনেক দিন বেশী ব্যবহার করা যায় তদুপরি পরিবেশ বান্ধব হল লিথিয়াম আয়ন
ব্যাটারি তাই আমাদের সাশ্রয়ী জ্বালানী ও প্রযুক্তির বিচারে অবশ্যই লিড এসিড
ব্যাটারিকে বিদায় জানানোর সময় এসেছে। তবে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি তৈরির প্রক্রিয়া
অনেক বেশী স্পর্শকাতর ও উন্নত মেশিন প্রয়োজন হয় বলে এর দাম অনেক বেশী। লিড এসিড
ব্যাটারির প্রায় তিনগুণ দাম। অপরদিকে লিড এসিড ব্যাটারি সাধারণ ৫০০ সাইক্যাল চার্জ
করা যায় অন্যদিকে আধুনিক লিথিয়াম ব্যাটারি ৫০০০ সাইক্যাল পর্যন্ত চার্জ করা যায়। এ
কারণে লিড এসিড ব্যাটারি দুই বছর টিকলে লিথিয়াম আয়ন প্রায় দশ গুন অর্থাৎ বিশ বছর
টিকে যাওয়ার কথা।
লিথিয়াম আয়নের পাওয়ার
ডেনসিটি এসিড ব্যাটারি হতে অনেক বেশী। আবার ছোট ছোট পেন্সিল ব্যাটারি আকৃতির ব্যাটারি একসাথে সিরিজ প্যারালাল সংযুক্ত করে
১০০ ওয়াট হতে ১০০ কিলোওয়াট ব্যাটারি তৈরি করা সম্ভব। লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির জন্য
ইলেকট্রিক গাড়ী এক চার্জে ৩০০ কিমি উপরে ভ্রমণ করা সম্ভব হয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকার
টেসলা কোম্পানি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম গাড়ী তৈরি
করেছে। হোম পাওয়ার স্টোর করার জন্য তারা পাওয়ার ওয়াল তৈরি করেছে। আর কিছুদিন হয়ত
আমরা লিড এসিড ব্যবহার করব। কিছুদিন পর লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে
এর দাম কমবে ও লিড এসিড ব্যাটারি চির বিদায় নিবে।
রাইট
ReplyDelete