লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস(এলপিজি) হল পরিবেশ বান্ধব জ্বালানী। এলপিজি সাধারণ চাপে লিকুইড ফর্মে রাখা যায়। প্রাকৃতিক গ্যাস মূলত মিথেন গ্যাস। এই গ্যাস সাধারণ অবস্থায় লিকুইড ফর্মে রাখা যায় না। প্রাকৃতিক গ্যাস কমপ্রেস অবস্থায় সিলিন্ডারে রাখা যায়। আর এ কারণে প্রাকৃতিক গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে বেশী খরচ পড়ে। অপরদিকে এলপিজি প্রোপেন ও বিউটেন গ্যাসের মিশ্রণ। বাংলাদেশে সরকার মূলত প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে এলপিজি গ্যাস ব্যবহার বাড়াতে চায়। এলপিজি গ্যাস প্রাকৃতিক উৎসের পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে উৎপাদন সম্ভব। মিথেন গ্যাসে সার তৈরি ও আরও কিছু স্পেশালাইড ব্যবহার আছে তাই রান্নার কাজে ও যানবাহনের কাজে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার মোটেই ভাল অপশন নয়। তবে একসময় বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যেত তখন বাসায় বাসায় গ্যাস লাইন ও গাড়ীতে গাড়ীতে সিএনজি আজও ব্যবহার হচ্ছে।
২০১৬ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশে এলপিজি ১২ কেজির সিলিন্ডার ১২০০-১৬০০ টাকা রিফিল প্রাইজ ছিল। যেটা কিনা ২০১৭ সালের প্রথম দিকে ৮০০-৯০০ টাকায় চলে আসে। এই মূল্য কমের পিছনে বাংলাদেশে এলপিজি ব্যবসার মনোপলি ভেঙ্গে তা কয়েক ডজন কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এলপিজি মূল্যে কমে গেছে। সরকারী চাকুরীজীবীরা ৭০০ টাকার সাবসিডির এলপিজি ব্যবহার করলেও বর্তমানে সে সকল সিলিন্ডার ব্যবহারে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। তার কারণগুলো হল অনেক পুরাতন সিলিন্ডার, নিয়মিত প্রেশার টেস্ট করা হয় না। এর ভিতরে দীর্ঘদিন ব্যবহারে গাদ/ ময়লা জমে। এতে সিলিন্ডারের ওজন অনেক বেড়ে যায়। ফলে সিলিন্ডারের ভিতরে ১২ কেজির জায়গায় কম পরিমাণ গ্যাস সংকুলান হয়। এসব বিবিধ কারণে আমি আমাদের স্থাপনার রেস্ট হাউজে ও বাসায় সরকারী ভর্তুকি গ্যাস ব্যবহারে ব্যবস্থা থাকলেও তা বাদ দিয়ে বাজার হতে সিলিন্ডার ক্রয় করে ব্যবহার করছি। বাংলাদেশে এলপিজি সিলিন্ডারও কয়েকটি কোম্পানি তৈরি করছে আর এ কারণে এই সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহার গ্রামে গঞ্জে ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। যাদের লাকড়ি বা জ্বালানী ক্রয় করতে হয় তারা এখন আর লাকড়ি ব্যবহার না। তারা ক্রমান্বয়ে এলপিজি ব্যবহারের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
প্রতিদিন রাস্তায় বের হলে এখন শহর এলাকায় বিপুল পরিমাণ গাড়ী এলপিজি সিলিন্ডার বিতরণ করতে দেখা যায়। এমনকি উপজেলা শহর, ইউনিয়নের বাজার ও গ্রামের বাজারে সিলিন্ডারের গ্যাস বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। এতেই এলপিজি এর বিপুল চাহিদা তৈরি হয়েছে। এটা সহজেই অনুমান করা যায়। দেশের রাস্তায় বিপুল পরিমাণ এলপিজি বহনকারী ট্যাংক লরী দেখা যায়। এই এলপিজি ট্যাংক লরিগুলো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, সিলেটের বিভিন্ন রিফাইনারি ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হতে এলপিজি বহন করে ঢাকা, বগুড়া ও খুলনা ইত্যাদি বিভিন্ন জেলার এলপিজির সিলিন্ডার রিফিল প্লান্টে নিয়ে যায়। সেসব নির্দিষ্ট প্লান্টে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এলপিজি,র খালী সিলিন্ডারগুলো রিফিল হয়ে তা পুনরায় দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এলপিজি বহনের জন্য একটা বিশাল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবহৃত হয়। এতে বিপুল পরিমাণ যানবাহন চলাচল করে বিপুল পরিমাণ জ্বালানী তৈল পুড়ে ও বিশাল খরচ হয়। আমরা যদি চাহিদা অনুযায়ী এলপিজি প্রতিটি জেলা বা উপজেলায় এলপিজি সিলিন্ডার রিফিলিং স্টেশন স্থাপন করি তবে পরিবহন খাতের বিপুল পরিমাণ জ্বালানীর ব্যবহার কমবে। কম মূল্যে এলপিজি সরবরাহ করা যাবে। স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান হবে।
আমি একটা সাধারণ হিসাব করে দেখেছি এলপিজির গ্যাসসহ ১২ কেজি সিলিন্ডারের ওজন প্রায় ২৫ কেজি। এই ধরনের শতাধিক সিলিন্ডার ট্রাকে করে কুষ্টিয়া শহর থেকে রিফিল করতে খুলনা নেয়া ও রিফিল করে আনায় আনুমানিক ৫০/৬০ টাকা যাতায়তে খরচ হয়। তাই কুষ্টিয়ার একজন গ্রাহক খুলনার একজন গ্রাহকের তুলনায় ৫০/৬০ টাকা বেশী মূল্যে ক্রয় করাটা স্বাভাবিক। এখন এই সিলিন্ডার যদি স্থানীয়ভাবে কুষ্টিয়া জেলা হতেই রিফিল তরা হয় তা হলে খুলনা হতে রিফিল করা সিলিন্ডার হতে ৫০/৬০ টাকা কমে স্থানীয় গ্রাহকের দেয়া যাবে। এভাবে কেজি প্রতি ৪/৫ টাকা গ্যাসের দাম কমে যাবে।
স্থানীয়ভাবে গ্যাস রিফিলের চ্যালেঞ্জগুলো কি কি?
এতে সিএনজি রিফিল স্টেশনের মত স্থাপনা বসাতে হবে। বড় বড় এলপিজি ট্যাংকার সরাসরি পোর্ট হতে এলপিজি রিফিল হয়ে এলপিজি নিয়ে কুষ্টিয়া জেলার এলপিজি রিফিল স্টেশনের বড় বড় কয়েক হাজার লিটার ধারণ ক্ষম ট্যাংকগুলো বিশেষ পাম্পের মাধ্যমে পূর্ণ করতে হবে। অনেকটা পেট্রোল পাম্প যেভাবে ট্যাংকারের মাধ্যমে পেট্রোল সরবরাহ করার মত ব্যবস্থা। পরে একইভাবে রিফিলিং মেশিনের মাধ্যমে সিলিন্ডারে লিকুইড এলপিজি রিফিল করে নিতে পারলেই কাজ শেষ।
এলপিজির ব্যবসাটি বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির হতে। সরকারী এলপিজি সাবসিডি দেয়ার পরও পদ্মা ওয়েল কোম্পানির এলপিজি বাজারে তেমন চলছে না। এমতাবস্থায় প্রতিটি জেলায় সরকারীভাবে এলপিজি রিফিল স্টেশন চালু করলে সরকার একটা ভাল রেভিনিউ পাবে। সরকারী সংস্থা পদ্মা ওয়েলের মাধ্যমে করা যাবে। এটা করলে সরকার এলপিজি পরিবহন খাতে জড়িত বিপুল পরিমাণ জ্বালানী সাশ্রয় করতে পারবে। বিপুল পরিমাণ কার্বন ইমিশন কমবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যাদের পেট্রোল পাম্প আছে তাদের অব্যবহৃত এলাকায় বড় ট্যাংক বসিয়ে এলপিজি রিফিল করলে তাদের জন্য অনেক লাভজনক হবে। হয়ত আরও ৫/১০ বছর পর এলপিজি আরও চাহিদা বাড়লে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো উপজেলা পর্যায়ে এলপিজি রিফিলিং প্লান্ট বসাতে কোন কার্পণ্য করবে না। এটা এখন কেবলমাত্র সময়েরই ব্যাপার। সরকারের প্রয়োজন এলপিজির ব্যবহার উৎসাহিত করার জন্য প্রথম ধাপে প্রতি জেলায় এলপিজি রিফিলিং প্লান্ট বসানো।
No comments:
Post a Comment