আমি অনেকদিন থেকে চিন্তা করছিলাম
কিভাবে একটি বাসস্থানে অত্যন্ত কম পরিমাণে বর্জ্য উৎপাদন করে থাকা যায়। এখন ধীরে
ধীরে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। প্রথমে জানার চেষ্টা করি একটি
বাসস্থানের কিচেনে ও ডাইনিং টেবিলে কি কি বর্জ্য তৈরি হয়।
১। রান্না ঘরের সবজি ও ফসলের খোসা।
২। মাছ, মাংস কাটাকুটির পর বর্জ্য।
৩। পোড়া তৈল ও রান্না করার পর উৎচ্ছিষ্ট
পণ্য।
৪। ডাইনিং টেবিলে খাওয়ার পর উৎছিষ্ট।
উপরের বর্জ্যগুলি আমরা কিভাবে কমাতে
পারি। রান্না ঘরের সবজি ও ফলের খোসা আমরা যত কম ফেলব তত কম বর্জ্য তৈরি হবে। কলার
ছোলা, নারিকেলের ছোলা ও কমলার ছোলা ইত্যাদি
ফেলতে হবে। তাই বলে আপেল ছিলে খাওয়ার প্রয়োজন নেই। ফুল কপির ফুল ছাড়াও পাতা ডাটা
সবকিছু রান্নায় নেয়া যায়। আলু চামড়া ছিলে খাওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্যান্য শাক
কচি/শক্ত বাছ বিচার না করে সম্পূর্ণ রান্নায় নেয়া যায়। খাওয়ার সময় চিবিয়ে ফেলে
দিলেই হল। আমি মাঝে মাঝে ক্যাডেট কলেজ থেকে ছুটিতে বাসায় এসে মাকে বলতাম কলেজের
বাবুর্চিগুলো সবজিগুলো জাস্ট ধুয়ে কেটে টুকরো করে রান্না করে। আলুর ছোলা, কুমড়োর ছোলা, লাউয়ের ছোলা ইত্যাদি সকল সবজির ছোলাসহ
রান্না করা যায় আর তা স্বাস্থ্য সম্মত। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন লিখছি তখন
দেখছি এই ব্যবস্থাই পরিবেশ বান্ধব। সবজি কাটাকুটি করে আমাদের গৃহিণীরা ৩০-৪০%
বর্জ্য উৎপাদন করে। এটা সহজেই ৫-১০% বর্জ্যে আনা সম্ভব। সবজি কাটাকুটির পর ছোলা ও
অন্যান্য যা অবশিষ্ট থাকবে তা প্রায় একমাস ফ্রিজে জমিয়ে রেখে কোন ছুটির দিনে
একসাথে করে পানি দিয়ে সিদ্ধ করে ভেজিটেবল স্যুপের জন্য ভেজিটেবল স্টক বানানো
সম্ভব। খেয়াল করে দেখুন, আমি এতক্ষণ যা লেকচার ছাড়লাম তা অনুসরণ
করে আপনারা ভেজিটেবল ওয়েস্ট কিন্তু অনেক অনেক কমাতে পারবেন। মাছ, মাংস ও ডিম ইত্যাদির বর্জ্য প্রতিদিন
না ফেলে পলিথিনে জমিয়ে সাপ্তাহিক বা মাসিক ছুটির দিনে বাইরে কম্পোস্ট পিটে দেয়া
যাবে। একইভাবে রান্না খাবার খাওয়ার সময় বিশেষ করে বাচ্চারা কোন খাবার নষ্ট করলে
প্রতিদিন না ফেলে ফ্রিজে জমিয়ে রেখে বেশী হলে সাপ্তাহিক বা মাসিক ছুটিতে যেখানে কম্পোস্ট
করা হয় সেসমস্ত স্থানে ফেলে আসা যায়। সমস্ত বর্জ্য প্রতিদিন না ফেলে ফ্রিজে রাখার
আইডিয়া এজন্য দেয়া হচ্ছে যাতে করে যারা হাই রেইজ দালানে থাকেন নিয়মিত বর্জ্য ফেলা
খরচের ব্যাপার ও সময়ের ব্যাপার তারা বর্জ্য ফ্রিজে রেখে দিলে বর্জ্য পচবে না বা
গন্ধ হবে না। যখন খুশী তখন ময়লাগুলো ফেলা যাবে।
পোড়া তৈল জমিয়ে রেখে তা একবারে
সুনির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা যায় বা বায়ো ফুয়েলের
ব্যবহারের জন্য দেয়া যেতে পারে। এতক্ষণের আলোচনায় আমরা রান্না ঘরের ময়লা
ফেলার জন্য পরিষ্কার ধারনা পেলাম।
এবার প্যাকিং মেটারিয়েল নিয়ে কি করা
যায়? আমরা নতুন সামগ্রী কম কিনলে কম পরিমাণ
প্যাকিং সামগ্রী পাব। আমরা প্যাকিং সামগ্রী যাই পাই না কেন তার থেকে প্লাস্টিক
আলাদা ও কাগজ আলাদা করে নিতে পারি। বর্জ্য কাগজ আমরা স্রেডিং করে কুচি কুচি করতে
পারি। স্রেডিং কাগজ কম্পোস্টে চমৎকারভাবে ব্যবহার করা যাবে। এজন্য বাসায় একটি
পেপার শ্রেডার আমরা রাখতে পারি। কাগজ স্রেডিং করে নিলে তা অতি দ্রুত পচে মাটিতে
মিশে যাবে। প্লাস্টিকগুলো একসাথে করে যারা রিসাইক্যাল করে তাদের মাসে একবার সরবরাহ
করতে পারি। খাদ্য দ্রব্য খোলা বাজার বা চাষি বাজার থেকে ক্রয় করলে রিইউজেবল
প্লাস্টিক ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ বা কাচের কন্টেইনার
ব্যবহার করে বাজার থেকে অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক ঘরে আমদানি করা থেকে আমরা বিরত থাকতে
পারি।
স্যানিটারি সামগ্রী যেমন প্যাড, কনডম, ড্রাইপার, ব্যান্ডেজ সিরিঞ্জ ইত্যাদি আমরা ছোট
সাইজ ইনসেন্ডারী ডিসপোজাল মেশিন ব্যবহার করে সেসমস্ত গোপনীয় দ্রব্যাদি ময়লার বিনে
না ফেলে পুড়িয়ে ফেলতে পারি। এতে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ব্যক্তিগত গোপনীয় সামগ্রী
ডিসপোজ করতে আর কোন সমস্যা থাকবে না।
পুরাতন কাপড়, পুরাতন অন্যান্য সামগ্রী অর্থিক চাহিদা
সম্পন্ন মানুষকে জমিয়ে রেখে দেয়া যেতে পারে। বিক্রয় করা যেতে পারে। রিসাইক্যালে
দেয়া যেতে পারে।
পরিশেষে বলব পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব
পৌরসভা ও রাষ্ট্রের একার নয়। আমরা যদি ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতিদিন মাথাপিছু এক কেজি
ট্রাশ থেকে কমিয়ে একশ গ্রামে আনতে পারি, তবে চিন্তা করুন এতেই বর্জ্য দশ ভাগের একভাগে কমে যাবে। বর্জ্য যত
কমবে রিসাইক্যাল প্রক্রিয়া ততবেশী কার্যকরী করা যাবে। এভাবে আমরা আগামী দিনের জন্য
একটি বর্জ্য মুক্ত পৃথিবী গড়ায় অঙ্গীকারবদ্ধ হতে পারি।
No comments:
Post a Comment