প্রতিটি টোল
প্লাজায় পয়েন্ট অব সেল(পিওএস) মেশিন দিলে কমে যাবে অনেক দুনীতি ও সেইসাথে বাড়বে রেভিনিউ। আমরা আজকাল
আভিজাত্যের কারণে কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করি। আবার ডেভিড/ক্রেডিট কার্ড নিয়ে চলাচল করাটা
আমাদের উঁচুমানের জীবন ব্যবস্থা প্রমাণ করে। এখনও ব্যাংকগুলি তাদের ভ্যালুড
কাস্টমারদের কার্ড প্রদান করে। একটা ব্যাংক আমার নজরে এসেছে তারা ফাস্ট ট্রাক,
এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ফরমাল ব্যাংকিং এর আওতায় আনছে। তার নাম হল ডাচ বাংলা ব্যাংক
লিমিটেড। ডাচ বাংলা ব্যাংক গ্রামের মানুষের হাতে হাতে ডেবিট কার্ড তুলে দিচ্ছে।
অন্য ব্যাংকের ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড পেতে সাত দিন লাগলেও এদের ফাস্ট ট্রাক নামক
গ্রামের বুথে লাগে ১০ মিনিট। পিন নম্বর ভুলে গেলে আমাকে একটি ব্যাংক দুইবার করে
৩৪৫ টাকা চার্জ করে। অথচ এরা কোন টাকা চার্জ করে না। এভাবে এই ব্যাংক গরীবের জন্য
কার্ড রাখাটা অনেক সহজ করে দিয়েছে। এই ব্যাংকটি
গ্রামে গঞ্জে এটিএম কার্ড ছড়িয়ে নেয়ায় আমার মনে এসেছে সরকারী সমস্ত টোল
প্লাজাগুলো ক্যাশলেস করা যায়।
প্রথমত: সরকারী
ব্যাংক মোবাইল সিম কানেক্টেড প্রয়োজনীয় সংখ্যক পিওএস মেশিন প্রতিটি টোল প্লাজাতে
দিবে। একটি একাউন্ট নম্বরে একাধিক পিওএস মেশিন এ্যাসাইন করতে হবে। যেন পাঁচটি বুথ
অপারেটর করলে একই একাউন্টে টাকা জমা হয়। এছাড়া একটি রিজার্ভ একাউন্ট রাখতে হবে ও
রিজার্ভ পিওএস মেশিন থাকবে যাতে কোন কারণে মুল একাউন্টে গোলযোগ হলে রিজার্ভের
মাধ্যমে কাজ করা যায়।
টোল প্লাজায়
প্রতিটি বুথে পিওএস মেশিন নিয়ে টোল কালেক্টররা বসবে। তারা প্রতিটি গাড়ীর চালক বা
গাড়ীতে আসীন ব্যক্তিদের কাছ টোলের টাকা ডেভিড/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আদায় করবে।
প্রথম দিকে অধিকাংশ চালকের কাছে ডেভিড বা ক্রেডিট কার্ড থাকবে না। যাদের কার্ড নাই
তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে তা হল কিছু সংখ্যক দালাল নিয়োগ করতে হবে তারা
কার্ডধারী হবে। তারা নিজেদের একাউন্ট থেকে কার্ড সোয়াইপ করে যাদের কার্ড নাই তাদের
ক্যাশলেস পেমেন্ট দিয়ে দিবে এবং প্রতি ট্রানজিশানে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫/১০
টাকা সার্ভিস চার্জ নিবে। এতে দেখা যাচ্ছে ১০০ গাড়ীর কার্ড সোয়াইপ করাতে পারলে
তাদের ৫০০ টাকা রোজগার হবে। এতে সরকারের টোল আদায় ব্যবস্থাপনা দক্ষ হবে। তার সাথে
কিছু লোকের নতুন ধারার সাময়িক কর্মসংস্থান হবে। যারা ইমানদার ও নীতিবান টোল
অপারেটর তাদের টাকা পয়সার হিসাব মিলানোর জন্য কোন কষ্ট করতে হবে না। ডিউটি শেষ
টাকা জমা করার ঝামেলা নেই। পরের ব্যক্তি দায়িত্ব হস্তান্তর করে সহজেই চলে যেতে
পারবে। কত টাকা তুলল আর কত টাকা জমা নিল তা নিয়ে বুথ অপারেটরদের সাথে নিয়ন্ত্রণ
কর্তাদের ঝামেলা নেই। নিয়ন্ত্রণ কর্তারা ব্যাংকের কার্ড সোয়াইপের সংখ্যার ব্যাংক
স্টেটমেন্টে দেখে কতটি গাড়ী ভিডিও রেকর্ডে প্রমাণ পাচ্ছে তার সাথে ব্যাংক রেকর্ড
মিলালেই হবে। ক্যামেরায় রেকর্ডকৃত গাড়ী পাসের সময়ের সাথে পিওএস এর কার্ড সোয়াইপ
টাইম মিলিয়ে টোল আদায় সহজে মিলানো যাবে। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে গাড়ীর আগমন
নির্গমন সহজে ইন্টানেটে আইপি ক্যামেরা দ্বারা স্মার্ট ফোনে দেখা যাবে। ব্যাংকের
পিওএস হিসাব একাউন্টে কতগুলি ট্রানজিশন হল তার রেকর্ড পাওয়া যাবে। ইচ্ছে করলে
একাউন্টধারী নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা প্রতিটি কার্ড সোয়াইপের এসএমএস পাওয়ার অপশনটি
নিতে পারেন। নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা যেখানেই থাকুন না কেন মোবাইল নেটওয়ার্কের মধ্যে
থাকলে টোল আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারবেন। এতে হয়ত
দূর্নীতিগ্রস্থ অপারেটর টোল আদায় না করে গাড়ী ছেড়ে দিতে পারে। এটা ব্যাংক
ট্রানজিশনের সাথে ভিডিওতে গাড়ী কাউন্ট করেই বের করা যাবে। ক্যাশ হাতে না থাকার
কারণে টোল অপারেটরদের ক্যাশ পকেটে নেয়ার অভ্যাসও কমে যাবে।
টোল প্লাজা
ক্যাশলেস হয়ে যাচ্ছে প্রাথমিকভাবে কিছু সংখ্যক কার্ডধারী ব্যক্তিবর্গ ও কিছুসংখ্যক
কার্ডধারী দালালের মাধ্যমে। প্রথমদিকে কিছু দালাল তৈরি হলেও ধীরে ধীরে দালাল কমে
যাবে। কারণ নিয়মিত চালকরা বাৎসরিক ৩৫০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক থেকে কার্ড সংগ্রহ করে
নিবে এতে করে তাদের আর কার্ডধারী দালালদের প্রতি ট্রানজিশানে অতিরিক্ত ৫/১০ টাকা
দিতে হবেনা। টোলের টাকাটা সরাসরি কার্ড সোয়াইপ করার সাথে সাথে ব্যাংকে জমা হওয়ায়
টাকা নিয়ে দুনীতি করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়ে যাবে।
কার্ডবিহীন গাড়ী চালক ও ব্যক্তিদের জন্য কার্ডধারী দালাল তৈরি করে সাময়িক
কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে। ধীরে ধীরে টোল আদায়ে পরিচালনা ব্যয় কমানো যাবে।
টোল আদায়ের আলাদা টিকেট না ছাপিয়ে পিওএস মেশিনের পেমেন্ট টিকেট হতে পারে টোল
টিকেট। আমরা এভাবে অতি সহজে সরকারী টোল ব্যবস্থাপনাকে ক্যাশলেস করতে পারি। এতে টোল
আদায় বাড়বে ও দেশ এগিয়ে যাবে। টোল
আদায় ব্যবস্থাপনা দুর্নীতিমুক্ত হবে।
No comments:
Post a Comment