১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে আধুনিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি ব্যাংকের সংবাদ পাই। তারা ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছে, মেশিন থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে। ফোন করে এক দুই অপশন চেপে একাউন্ট ব্যালেন্স জানা যাচ্ছে। যে কোন সুসজ্জিত ও শীতাতপ
নিয়ন্ত্রিত শাখায় গিয়ে ব্যাংকিং সুবিধা পাওয়া যায়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে প্রায় ১০ বছর একাউন্টে কার্যক্রম করার পর ২০০৬ সালে যখন আধুনিক একটি ব্যাংক কম খরচে ডেবিট কার্ড ও এটিএম সুবিধা নিয়ে আসে তখন আমি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড কার্যক্রম বন্ধ করে দেই। কারণ প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের চার্জ হিসাবে হিডেন ফি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রায় বছরে ২০০০/৩০০০ টাকা কেটে নেয়। তা খুবই কষ্টকর। আমি
পরবর্তীতে বিশেষ সংস্থার বিশেষ ব্যাংকে একাউন্ট খুলে আধুনিক ব্যাংকের সাপোর্ট নেই। অনেক কম সুদে লোণ দেয়। বিভিন্ন হিডেন চার্জ কম আছে। একবার একটা ঘটনায় আমি অত্যন্ত দু:খ পেয়ে
অন্য ব্যাংক খুঁজি। ঘটনাটি এরূপ। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় থাকার কারণে কুষ্টিয়া শহরের শাখায় চেক পাঠিয়ে পাঠিয়ে সাধারণত ব্যাংকের কার্যক্রম করছিলাম। একবার আমার ব্যাংকের এটিএম কার্ড ব্যবহার করতে গিয়ে দেখি এটিএম কার্ডটি কাজ করছে না। মনে হয় পিন ভুলে গেছি। কার্ডটি ব্যাংকে জমা করলাম। ১৫ দিন পর নতুন পিন ডাকযোগে আসল। ৩৪৫ টাকা কর্তন করা হল। তারপর এটিএম কার্ডটি চালু করতে গিয়ে ভুল করে কাগজে লেখা ইন্টারনেট পিনটি দিলাম এটিএমে। কার্ড ক্যাপচার হল। তারপর কুষ্টিয়ার ব্যাংক ম্যানেজারের সহায়তায় কার্ডটি ফেরত পেলাম। এবার ম্যানেজারকে নিয়ে পুনরায় এটিএমএ গেলাম কার্ডটি কাজ হল না। ম্যানেজার পুনরায় ব্যাংকের ঢাকার কেন্দ্রীয় শাখার সাথে কথা বলল কার্ডটির পিন রিসেট করতে হল। পুনরায় ১৫ দিন পর ডাক যোগে পিন আসল। এবার কুষ্টিয়ার ম্যানেজারকে সাথে নিয়ে
এটিএমএ পিন বদল করে কার্ডটি ব্যবহার উপযোগী করলাম। আমার উল্লেখিত ব্যাংকটি কম খরচে নি:সন্দেহে ভাল সেবা দেয়। এটি একটি ভাল ব্যাংক। এর অগ্রগতি ও মূলধন ইত্যাদিতে অত্যন্ত সেরা একটি ব্যাংক। আমার বাবা ও মা কুমিল্লার গ্রামে থাকায় বাড়ীতে গেলে সেই ব্যাংকের কাজের জন্য কুমিল্লা শহরে আসতে হয়। গ্রামের নিকটে সেই ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং এর কোন ব্যবস্থা নেই। তাদের এজেন্ট ব্যাকিং নেই। তাদের ফাস্ট ট্রাক জাতীয় ব্যবস্থা নেই।
আমি আমার নিকটবর্তী থানার পুলিশের
ওসির কাছে জানতে পারলাম ইদানীং পুলিশদের কাছে ডাচ বাংলা ব্যাংক বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। কারণ গ্রামে অনেক দোকানে রকেট মোবাইল ব্যাংকিং আছে, গ্রামের বাজারে এজেন্ট ব্যাংকিং হচ্ছে, উপজেলায় এটিএম মেশিন সহ ফাস্ট ট্রাক ইত্যাদি থাকায় বদলীর চাকুরী ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কোটায় ভর্তি পুলিশ সদস্যরা এই ব্যাংকটি পছন্দ করছে। কুষ্টিয়া জেলার পুলিশের সদস্যরা ডাচ বাংলা ব্যাংকে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। আমার চাকুরীরত স্থান কুষ্টিয়ার অনেক বিজিবি সদস্যরা ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্ট খুলে বসে আছে। কুষ্টিয়ার বিজিবি স্কুল ডাচ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ছাত্র/ছাত্রীদের বেতন জমাদানের কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। আধুনিক অনেক ব্যাংকের গ্রামে গঞ্জে শাখা প্রশাখা না থাকার কারণে আমি অনেক দিন থেকে আমার গ্রামে শাখা আছে এরূপ একটি ব্যাংক খুঁজতে ছিলাম। কারণ আমি জীবনে দুইবার ভ্রমণ করার সময় ছিনতাইকারীর পাল্লায় পরেছিলাম। সেজন্য আমি কখনও এক হাজার টাকার বেশী যাতায়তের সময় টাকা বহন করিনা। বাকী বিকাশে বা মোবাইল ব্যাংকিং এ টাকা নিয়ে ভ্রমণ করি। আর এটিএম কার্ড ও চেক নিয়ে কুমিল্লা গেলে টাকা তোলার ব্যবস্থা করি। একবার কুষ্টিয়া থেকে বাবার চিকিৎসার টাকা পাঠানোর কাজটি বিকাশে করেছিলাম। আমার টাকা বহন না করার অভ্যাসের কারণেও আমি সব জায়গায় শাখা আছে এরূপ একটি ব্যাংক খুজতেছিলাম। এ সময় ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং এর একজন এজেন্ট আমার অফিসে এসে আমার রকেট একাউন্ট খুলে দিল।
অতঃপর আর একদিন ফাস্ট ট্রাকে গেলাম আমার ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি নিয়ে। আমাকে দশ মিনিটের মধ্যে একাউন্ট খুলে এটিএম কার্ড হাতে দিল। আমি বেশ অবাক হলাম। উপজেলা থেকে একাউন্ট খোলার সাথে সাথে এটিএম কার্ড। এটা কি বাংলাদেশ না ইউরোপ। অথচ যে কোন উন্নত ব্যাংক কমপক্ষে একমাস সময় লাগাত। তারপর আবার অনেক ধরনের আবেদন নিবেদন করাত। এদের ব্যাংকিং এটিএম বেজ বলে এরা সাথে সাথে এটিএম কার্ডটি দিয়ে দিল। চেক বইটি কুষ্টিয়া শাখায় গেলে সাথে সাথে পাওয়া যেত। ফাস্ট ট্রাক একদিন সময় নিল চেক বইটি দেয়ার জন্য। অন্যান্য উন্নত ব্যাংক প্রায়শই এক সপ্তাহ সময় নেয়।
এরপর আমার ইচ্ছে হল আমার ডাচ বাংলা মুল একাউন্ট হতে যেন আমার রকেট মোবাইল ব্যাংকিং এ টাকা যেন আদান প্রদান করতে পারি। একইভাবে এজেন্ট ব্যাংকিং এ লিংক করার ব্যবস্থা করতে বললাম। সর্বশেষ ইন্টারনেট ব্যাংকিং করতে বললাম। এজেন্ট ব্যাংকিং এর কার্যক্রম হাতের আঙ্গুলের হাতের ছাপের মাধ্যমে হয় বিধায় হাতের আঙ্গুলের ছাপ দিতে হল।আমাকে সমস্ত কাজ ৩০ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন করে দিল । সর্বশেষ একজন এসে আমার মোবাইলের ইন্টারনেট খুলে কিভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয় তা দেখাল।
আমার মনে আছে আধুনিক একটি ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং করতে আমাকে প্রায় একমাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। একজন কর্মকর্তার জন্য একমাস অন্যদের জন্য হয়ত আরও অনেক বেশী। এটার কারণ অন্যান্য ব্যাংকগুলি অনেক বেশী তাদের হেড অফিসের উপর নির্ভরশীল। অথচ ডাচ বাংলা ব্যাংকের কার্যক্রম আমার কাছে মনে হয়েছে অনেক বেশী সহজ সরল। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা একদম নেই। সাধারণ কার্যক্রমে তারা তাদের হেড অফিসের উপর নির্ভরশীল নয়। এটা ওয়ার্ল্ড ক্লাস ব্যাংকিংই বলা যায়। মনে
হয় এই ব্যাংকটাই গরীব মানুষের সবচেয়ে কাছে আছে।
ডাচ বাংলা
ব্যাংকে ব্যাংকিং
এর যে স্বাধীনতা বিদ্যমান
তা নিন্মরুপ:
ক। সকল জেলা ও উপজেলায় ডাচ বাংলার এটিএম
ও ফাস্ট
ট্রাক আছে যেখানে টাকা জমা ও উঠানো যায়। টাকা খরচ করে শহরে যাওয়ার প্রয়োজন
পড়ছে না।
খ। কার্ড
ব্যবহার করে এটিএম থেকে অন্যান্য ব্যাংকের
মত টাকা তোলা যায়। তবে বাংলাদেশে
এই ব্যাংকের
এটিএম সর্বাধিক।
এই ব্যাংকটিই
গ্রামের মানুষের
হাতে সবচেয়ে
বেশী এটিএম
কার্ড তুলে দিয়েছে।
গ। এই ব্যাংকের রকেট একাউন্টের লিংক করে গ্রামে
গঞ্জের হাট বাজার হতে মোবাইল হাতে থাকলে রকেট মোবাইল ব্যাংকিং
এর মাধ্যমে
টাকা তোলা যাবে।
ঘ। আপনাকে
হাইজাকর ধরে মানি ব্যাগ,
এটিএম কার্ড
ও মোবাইল
নিয়ে গেল তবু আপনি টাকা তুলতে
পারবেন। এজেন্ট
ব্যাংকিং এ গিয়ে ফিঙ্গার
প্রিন্ট দিয়ে টাকা তুলে নিন। আঙ্গুল
কেটে গেলে কি করবেন।
দুই হাতের
বৃদ্ধ আঙ্গুল
ও শাহাদাত
আঙ্গুল এই চারটি আঙ্গুলের
যে কোন একটি আস্ত থাকলে টাকা তোলা সম্ভব।
ঙ। আপনার
ডিবিবিএল একাউন্ট
হতে আপনার
রকেট একাউন্টে
টাকা এনে আপনি বিকাশের
মত রকেট মোবাইল ব্যাংকিং
এর মত গ্রামে আত্মীয়দের
যাকাত বা দানের টাকা দ্রুত পাঠাতে
পারবেন নিজে নিজে এবং যে কোন সময়ই টাকা পাঠানো যাবে।
চ। ডিবিবিএল
এটিএম কার্ড,
ফিঙ্গার প্রিন্ট
ও মোবাইল
ব্যাংকিং এর অগ্রাধিকার থাকলেও
প্রচলিত ব্যাংকের
মত চেকের
মাধ্যমে ডিবিবিএল
সকল শাখা থেকে এই সেবা পাওয়া
যাবে। তবে এজেন্ট ব্যাংকিং
ও ফাস্ট
ট্রাকে এই সেবা নাই।
ছ। পিন ভুলে গেলে বিনা পয়সায়
রিসেট করা যায়। কার্ডের
বিভিন্ন সেবার
খরচ অন্যান্য
উন্নত ব্যাংক
থেকে অনেক কম।
পরিশেষে বলব আমার মত যাদের গ্রামাঞ্চলে যেতে হয় তারা এই ব্যাংকে
একাউন্ট করতে পারেন। কোন প্রতিষ্ঠান তাদের
লোকজনের বেতন ভাতার একাউন্ট
করতে চাইলে
এই ব্যাংক
ল্যাপটপ নিয়ে প্রত্যেকের কাছে হাজির হওয়ার
জন্য প্রস্তুত।
এটা একটা বিরল সেবা। বাংলাদেশের সকল মানুষ ব্যাংকিং
সেবায় আওতায়
আসুক এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণ মানুষ
ব্যাংকিং এর আওতায় আসলে তাদের জীবন আরও সঞ্চয়ী
হবে ও সমৃদ্ধি বাড়বে।
No comments:
Post a Comment