Pages

Thursday, May 11, 2017

সরবরাহ লাইনের বিদ্যুৎ থাকার পরও সোলার হোম সিস্টেমের ব্যবহার

আমার বাবা টেলিফোন বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার পদ হতে রিটায়ার করার পর ১৯৯১ সাল থেকে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গ্রামে থাকেন। বাবা মাকে দেখার জন্য আমি দেশের যে প্রান্তেই থাকি না কেন প্রায়ই গ্রামে যেতে হয়। গ্রামে দায়িত্বের কারণে গেলেও বেশ ভালই লাগে। আত্মীয় স্বজনদের বেশ কাছ থেকে দেখে আসতে পারি। গ্রামের আত্মীয় স্বজনদের যুগের সাথে সাথে তাদের অগ্রগতিও চোখে পড়ে। যেমন টিউবওয়েলের সাথে এখন বেশীরভাগই মটর লাগিয়ে নিয়ে রার্নিং ওয়াটার ব্যবহার করছে। পাকা টয়লেট হয়েছে। বেশীরভাগেরই এখন পাকা বাড়ী। সকল বাড়ীর বাচ্চারা সরকারী প্রাইমারী স্কুলে যাচ্ছে। পায়ের রিক্সা ব্যাটারির রিক্সায় প্রতিস্থাপন হয়েছে।টাকা পয়সা প্রয়োজন হলে ক্ষুদ্র ঋণ পার্টি ঘরে এসে টাকা দিয়ে যায়। জীবন যাত্রার মানে শহরের সাথে পার্থক্য কমে যাচ্ছে।
গ্রামের এখন প্রায় সবার বাড়ীতেই বিদ্যুতের সংযোগ আছে। পল্লী বিদ্যুৎ গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতে ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে দিবে। তবে আমার গ্রামের সকল বাড়ীতেই বিদ্যুৎ সংযোগ আজ হতে প্রায় পাঁচ বছর আগে থেকেই আছে।আমি ২০১৭ সালের প্রথম দিকে ছুটি গিয়ে একটা বিষয় আমাকে বেশ আনন্দ দিয়েছে আর তা হল ঘরে ঘরে সোলার প্যানেল। বিদ্যুৎ আছে তবে সোলার প্যানেল কেন?
গ্রামের বিদ্যুতের সরবরাহ অনেক বেশী জটিল ও বিস্তৃত। গ্রামে বাড়ী বাড়ী সংযোগ প্রদান করার জন্য অনেকটুকু লাইন টানতে হয়। এই লাইনগুলো সাধারণত ছোট খুঁটির ও নিচু হাইটের। গ্রামের মানুষের বিদ্যুৎ ব্যবহার শহরের মত নয়। এছাড়া ভর্তুকি দরে সাধারণত গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। গ্রামের বিস্তৃত এলাকার তুলনায় লাইন ম্যানের ঘাটতি রয়েছে। ঝড় বাদলে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেলে তা উপজেলা বা সাব স্টেশন হতে লোক গিয়ে মেরামত করতে এক দুইদিন চলে যায়। রাস্তার পাশে বা গ্রামের ভিতর দিয়ে লাইনগুলো প্রায়ই বর্ষা ও ঝড় বাদলের দিনে এ ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মধ্যে পড়তে হয়। আপনি যদি সবসময় কেরোসিনের হারিক্যান ব্যবহারে অভ্যস্ত হন তবে তা কিন্তু একধরনের জীবন। কিন্তু আপনি যদি বিদ্যুতের লাইট ব্যবহারে অভ্যস্ত হন তবে বিদ্যুৎ না থাকলে আপনার জন্য চরম একটা কষ্টকর সময় পার করতে হবে। তাই গ্রামের মানুষের কাছে বিদ্যুৎ দেয়ার পর  নিয়মিত বিভ্রাট করায় তা চরম কষ্টের একটা বিষয়। অনেক সময় শহর এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবহার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য গ্রামে নিয়মিত লোড শেডিং দেয়া হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যায় যখন বাচ্চারা পড়াশোনা করবে তখনই বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনের উন্নয়ন হলেও ভৌত কাঠামোর আরও শক্তিশালী ও একাধিক বৈদ্যুতিক লাইন টানা না হলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে যাবে। অদূর ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন ঘটবে তা অনেকটাই নিশ্চয়তার সাথেই বলা যায়।
সৌর বিদ্যুতের কিস্তিতে সোলার হোম সিস্টেম বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সরবরাহ বিদ্যুতে সংযুক্ত থাকা গ্রামের মানুষকে এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে গ্রামে পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়। তাই রাতে বাতি সৌর বিদ্যুতে জ্বালাও। বিদ্যুৎ বিল কম হবে। অন্ধকারে থাকতে হবে না। আইপিএস কিনতে হবে না বা কিনলেও লাভ নেই। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের তার ছিঁড়লে দুইদিন কারেন্ট থাকে না। আইপিএস কিনে তা চার্জ করতে না পারলে লাভ নাই। ফলে সোলার হোম সিস্টেমই অধিক কার্যকরী। বিষয়টা বেশ স্মার্ট। লাইট, এলইডি টিভি ও ফোন চার্জ চলবে সোলার হোম সিস্টেমে। অন্যদিকে ফ্যান, রিফ্রিজিরেটর ও অন্যান্য সামগ্রী চলবে সরবরাহের বিদ্যুতে।
এটা অনেক চমকপ্রদ বিষয়। আমার গ্রামের প্রায় সব ঘরেই চালের উপর সোলার প্যানেল আছে। তারা সোলার হোম সিস্টেম হিসাবে কিস্তিতে ক্রয় করেছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে ঘরে ঘরে এখন আর অন্ধকার হচ্ছে না। কারণ তাদের লাইটগুলো এখন আর  সরবরাহের বিদ্যুতের উপর নির্ভর করে না। আমার এক আত্মীয় গর্ব করে বলছে। তোমরা শহরের লোকজন যাদের আইপিএস নাই তারা মাঝে মাঝে অন্ধকারে পর। আমরা কিন্তু সোলার হোম সিস্টেম থাকার করনে অন্ধকারে পরি না।

গ্রামের এই স্মার্ট আইডিয়াটা শহরেও চালু করা যেতে পারে। শহুরে লোকজন আইপিএস না কিনে রাতের সমস্ত লাইটের এ্যারেঞ্জম্যান্ট সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে করতে পারে। এতে লোড শেডিং মুক্ত থাকার পাশাপাশি রিনিউয়বেল উৎস হতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। সেই সাথে বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারবে। আইপিএস চার্জিং এর জন্য অনেক বিদ্যুৎ খরচ করে। অথচ সোলার হোম সিস্টেমে সেই বিদ্যুৎ খরচ নেই। পিক আওয়ারে সৌর লাইট ব্যবহার করায় বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। পরিশেষে বলব শহুরেরা যেখানে বিদ্যুতের সমস্যা আছে সেখানে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার শুরু করতে পারেন। এতে পরিবেশ রক্ষায় কল্যাণ নিহিত আছে।

No comments:

Post a Comment