Pages

Thursday, May 4, 2017

নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে জ্বালানী কাঠের পরিবর্তে এলপিজি ব্যবহার

বাংলাদেশে গত দুই তিন বছর এলপিজি গ্যাসের দাম ১৩০০ হতে ১৫০০ ছিল। এমনটি ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসেও প্রতি সিলিন্ডার ১২০০ টাকার উপরে ছিল। হঠাত করে তা কমে প্রতি সিলিন্ডার ৮০০ টাকা নেমে এসেছে। দেশে আনুমানিক ১৬ টি কোম্পানি বর্তমানে এলপিজি রিফিল করে থাকে। আরও অনেক কোম্পানি লাইসেন্সধারী। এ কারণে বর্তমানে এলপিজির বাজার দর নিন্মগামী। মার্চ ২০১৭ মাসের এলপিজির বাজার দর নীচে দেয়া হল:
ক। ৩০ কেজির সিলিন্ডার রিফিল: ১৯০০ টাকা। কেজি প্রতি: ৬৩.৩০টাকা।
খ। ১২ কেজির সিলিন্ডার রিফিল:৯৪০ টাকা। কেজি প্রতি ৭৮.৩০ টাকা।
গ। ৫.৫ কেজির সিলিন্ডার রিফিল: ৪৫০ টাকা। কেজি প্রতি ৮১.৮০ টাকা।
মনে করি বহুল ব্যবহৃত ১২ কেজির সিলিন্ডার রিফিল ১০০০ টাকা হল। তবে কেজি প্রতি ৮৩.৩০ টাকা হবে। এ বছর প্রথম দিকেই বাংলাদেশ সরকার চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণ করবে। আশা করা যায় ১২ কেজির সিলিন্ডারের মূল্য কোন অবস্থায় ১০০০ টাকার উপরে উঠবে না। কারণ লাইন গ্যাস অপেক্ষা সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহারকে সরকার উৎসাহিত করছে। মাত্র কয়েকমাস পূর্বে এলপিজির ১২ কেজির সিলিন্ডার ৮০০ টাকায় অর্থাৎ কেজি প্রতি ৬৬.৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অনেক কোম্পানি প্রতিযোগিতার মধ্যে থাকায় হাজার টাকার উপরে ১২ কেজির সিলিন্ডার অতিক্রম করার সম্ভাবনা কম। আবার যত বড় কেজির সিলিন্ডার ক্রয় করা হবে কেজি প্রতি খরচ তত কমে আসবে। তাই ৮৩.৩০ টাকা সর্বোচ্চ কেজি ধরে আমরা হিসাব করতে পারি। আমরা অনেকদিন যাবত ৭০০ টাকায় সরকারী ভর্তুকি মূল্যে ব্যবহার করছিলাম। গত কয়েকমাসে ভাল কোম্পানির(বসুন্ধরা, টোটাল গ্যাস ইত্যাদি) ৮০০/৮৫০ টাকায় দাম হওয়ায় সরকারী ভর্তুকির ৭০০ টাকার সিলিন্ডার থেকে অনেকে সরে এসেছে। কারণ ৭০০ টাকার সিলিন্ডার অনেক পুরাতন হওয়ায় ময়লা ও গাদ জমে কম গ্যাস রিফিল হয় ও সিলিন্ডার পুরাতন হওয়ায় রিস্কি থেকে যায়। ফলে বেশী টাকায় বসুন্ধরা ও এ জাতীয় সিলিন্ডারে দাম বেশী হলেও মাপ সঠিক থাকায় অধিক সাশ্রয়ী।
আমি বিজিবি-বিএসএফ এর মিটিং এ অংশগ্রহণ করে ভারতীয় বিএসএফ থেকে জানলাম ছোট বড় সকল কুক হাউজে তারা এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করে। তাদের স্কেল হল প্রতি সৈনিক প্রতিদিন ৯০ গ্রাম করে। এতে একজন সৈনিকদের ৩০ দিনের খরচ হল ২৭০০ গ্রাম। ১০০০ গ্রামের বাংলাদেশে সর্বনিন্ম মূল্য ৬৩.৩০ টাকা। সেই হিসাবে ২৭০০ গ্রামের খরচ হবে ১৭০.৯১ টাকা ও হিসাবে সুবিধার জন্য ধরি ১৭১ টাকা।
অপরদিকে বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি বিজিবি সদস্যকে জ্বালানী কাঠের মূল্য বাবদ প্রদান করে ১৭০ টাকা। বিএসএফ এর স্কেলে ও বাংলাদেশের বাংলাদেশে সর্বনিন্ম মূল্য এলপিজি খরচ একদম সমান।
ছোট্ট একটি পাইলট প্রোজেক্ট ফেব্রুয়ারি ২০১৭ মাসে করা হয়েছে: আমাদের প্রতিষ্ঠানের জেসিও মেসে ১২ দিনে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডার শেষ হয়েছে। ৩০ দিনে ৩০ কেজির গ্যাস লাগবে। ৩০ কেজির সিলিন্ডারের ৩০ কেজির গ্যাসের রিফিল দাম ১৯০০ কেজি। এই মেসে গড়ে ১২ থেকে ১৫ জন জেসিও থাকেন। এতে জ্বালানী কাঠের বিল বাবদ তারা প্রাপ্ত হয় ২০৪০ হতে ২৫৫০ টাকা। সহজেই মেসটি গ্যাসে পরিচালনা করা সম্ভব।জেসিওরা মতামত দিয়েছেন জ্বালানী কাঠের জন্য আগে তাদের অতিরিক্ত কিছু টাকা খরচ হত। তারা ধারনা করছেন তাদের সে খরচ বাঁচবে।
বিজিবি বা পুলিশের ক্যাম্প/ফাঁড়ীতে ১৫ জনের উপরে সৈনিক থাকলে এবং ব্যাটালিয়ন সদরে ২০০ সৈনিকের জন্য এলপিজিতে রান্না করলে আরও গ্যাস সাশ্রয় করা সম্ভব। এমনকি ১০/১২ জনের বিওপিতে মাসে ৩/৪ কেজি গ্যাস মাসে কম পড়লে তা ব্যাটালিয়ন সদরের অধিক জনবল দ্বারা সাশ্রয় সম্ভব। ব্যাটালিয়ন সদরে ৪৫/৩৫ কেজির সিলিন্ডার ব্যবহার করলে আরও খরচ কমবে।
এই লেখার সময় জানতে পারলাম অনেক ব্যাটালিয়ন ও প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিষ্ঠানের মেসে বা কুক হাউজে এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার চালু করেছে। তারা আশা করছে তাদের জ্বালানী কাঠের খরচ আর গ্যাসের খরচ একই রকম হবে।
জ্বালানী কাঠের বিপরীতে এলপিজি ব্যবহারের ভাল দিক ও প্রতিবন্ধকতা সমূহ:
ক। এলপিজি পরিবেশ বান্ধব।
খ। এলপিজি বাবুর্চির স্বাস্থ্যের জন্য কম ক্ষতিকর।
গ। এলপিজি রান্নাঘর কম ময়লা করে।
পরিশেষে বলব এলপিজি মূল্য সাশ্রয়ী হওয়ায় আমরা অধিক পরিমাণ এলপিজি ব্যবহার করতে পারি। জ্বালানী কাঠ কম ব্যবহার করে আমরা বৃক্ষ নিধন বন্ধ করে আমরা পরিবেশ সুরক্ষা করতে পারি। খড়কুটা ইত্যাদি গবাদি পশুকে খাওয়ানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত কৃষি চাষ হতে আহরিত খড়কুটো বা অন্যান্য বর্জ্য বায়ুমস রিএ্যাক্টর স্থাপন করে তা পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে পুড়িয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে গ্রামে গ্রামে খড়কুটো পুড়িয়ে বিদ্যুৎ তৈরির অনেক অনেক স্থাপনা রয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এলপিজির ব্যবহার বাড়াতে পারি। এটি আমদানি নির্ভর হলেও এটা আমাদের গাছ কর্তন কমিয়ে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।

No comments:

Post a Comment