২০১৬ সালের
মার্চ মাসে কলিকাতার একটি ডিপার্টমেন্টাল শপে আমি কেনাকাটা করার পর কাউন্টারে আমার
কাছে জানতে চাইল আমি কোন শপিং ব্যাগ এনেছি কিনা? আমি চিন্তা করলাম ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে
এটা কোন ধরনের ভদ্রতা। বাংলাদেশে কত সুন্দর করে এক বা একাধিক ব্যাগে কাউন্টার থেকে
গুছিয়ে দেয় কত সমাদর। আর এখানে আমাকে জিঞ্জাসা করা হচ্ছে মালামাল নেয়ার জন্য আমি কোন
ব্যাগ এনেছি কিনা। আমি না বলায় কাউন্টার থেকে ব্যাগ দিল ও আমার কাছ থেকে তিন রুপি চার্জ
কেটে নিল। সাময়িক ভাবে এদের এই ব্যবস্থায় আমার রাগ হলেও একটা বিষয় চিন্তা করে আমার
রাগ সব পড়ে গেল। আর তা হল পরিবেশ সচেতনতা। সত্যি তাদের এ ব্যবস্থাপনা কৃপণতা নয় বরং
বলব তারাই সঠিক কাজটি করছে। আমি ২০১৭ সালে মে মাসে ঢাকায় বদলী হয়ে আসার পর বেশ কিছু
ডিপার্টমেন্টাল বা চেইন শপে কেনা কাটা করার সুযোগ পাচ্ছি। আমি কয়েকদিনে একটা বিষয় খেয়াল
করলাম বাংলাদেশের চেইন শপগুলো হিউজ পরিমাণ প্যাকিং মেটারিয়েল পণ্যের সাথে দিচ্ছে। কাউন্টারে
ভাল কোয়ালিটির ব্যাগ তারা রাখতে পারে যা তারা বিক্রয় করবে। ৩/৫ টাকার ব্যাগ নয় বরং
তারা রাখতে পারে ১০/১৫ টাকার টেকসই সুন্দর ও ভাল ব্যাগ। যা কিনা তারা বাই ব্যাক করবে।
ক্রেতারা ব্যাগ আনতে ভুলে গেলে তারা ব্যাগ কিনবে ১০/১৫ টাকা দিয়ে। পুনরায় ফেরত দিলে
একই টাকা ফেরত পাবে। এতে ক্রেতা বিক্রেতা দুই পক্ষই লাভবান হবে। ডিপার্টমেন্টাল শপ
প্রতিটি ক্রেতার সামগ্রী বহনের জন্য একাধিক বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী ব্যাগ দেয় এতে ক্রেতা
পিছু তাদের ১০/২০ টাকা খরচ করে। অপর দিকে তারা যদি ভাল কোয়ালিটির টেকসই ব্যাগ যাতে
এই ডিপার্টমেন্টাল শপের নাম ও লোগো থাকবে তা বিক্রয় করে ১৫/২০ টাকায় এবং এই ব্যাগ বাই
বেক করে একই দামে তবে ক্রেতারা একটা বড় ইনেসনটিভ পাবে। যেমন আমি এক মাসে ১০ দিন বাজার
করলাম আমি দশ দিনে দশটি ব্যাগ পেলাম। দশটি ব্যাগ পরিষ্কার করে বাসায় জমা করলাম। একদিন
ডিপার্টমেন্টাল শপে গিয়ে দশটি ব্যাগ ফেরত দিলাম ও আমি ১৫ গুণন ১০ অর্থাৎ আমি ১৫০ টাকা
ফেরত পেলাম। ক্রেতার জন্য ইনসেন্টিভ হল সে কষ্ট করে জমিয়ে কিছু পরিমাণ টাকা ফেরত পেল।
ডিপার্টমেন্টাল শপ সকল ক্রেতাকে ইনসেন্টিভ দিতে পারল রিইউজ করে। এ ধরনের পদক্ষেপ সকলকে
পরিবেশ রক্ষায় সচেতন করবে ও রিইউজ করায় অনুপ্রাণিত করবে। পৃথিবীটি আমাদের সকলের। এটি
আমাদের সকলকেই রক্ষা করতে হবে। আপনি চিন্তা করুন একটা ডিপার্টমেন্টাল শপে যদি ১০০০
ক্রেতা প্রতিদিন কেনা কাটা করলে আপনি যদি ১০০০ ব্যাগ উপাদন কমাতে পারেন কি পরিমাণ পরিবেশ
দূষণ কমবে। ৩০ দিনে ৩০০০০ ব্যাগ। ডিপার্টমেন্টাল শপেরও কি পরিমাণ টাকা বেচে যাবে চিন্তা
করুন। তবে এই প্রক্রিয়ায় দৃষ্টি নন্দন সুন্দর ও দামী ব্যাগ হতে হবে যেন তা ফেলে দিতে
ইচ্ছে না করে। বরং ফেরত দিয়ে মূল্য ফেরত পেতে ইচ্ছে করে। ডিপার্টমেন্টাল শপগুলো এমনকি
বাজার করার সময় ব্যাগ গুলোর মূল্য নাও ধরতে পারে তারা ব্যাগগুলো ক্রয় মুল্যে ক্রেতার
কাছ থেকে বাই বেক করলেও তাদের লাভ আছে।
ডিপার্টমেন্টাল
শপের রেডি খাবার বা ফ্রোজেন খাবার গুলো অধিক পরিমাণ প্যাকিং মেটারিয়েল ব্যবহার হয়।
এই সব খাবার গুলো পলিথিনে না বিক্রি করে ১০/২০ টাকা দামের শক্ত প্লাস্টিকের বাক্সে
প্যাকেট করা থাকতে পারে। সে সমস্ত প্লাস্টিকের বাক্সগুলি ডিপার্টমেন্টাল শপ বাই বেক
করে নিতে পারে। গ্লোবালী একটা ছোট জনগোষ্ঠী জিরো ওয়েস্ট আন্দোলনে নিয়োজিত আছে। তারা
বাজারে যাওয়ার সময় বৈয়াম, কন্টেইনার ও ব্যাগ ইত্যাদি সাথে নেয় যেন কোন অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য
বাসায় আনতে না হয়। আপনি পরিবেশ সচেতন হলে ডিপার্টমেন্টাল শপের বিপুল পরিমাণ বর্জ্য
আপনাকে আর বাসায় বয়ে নিয়ে আসতে হবে না। সাধারণ চাষি বাজার বা পাড়ার দোকাণ গুলোতে পলিথিন
ব্যবহারের ব্যাপকতা আছে। ক্রেতার চাহিদার কারণে এটা বাড়ে। পাড়া মহল্লায় দোকান গুলোতে
ব্যাগ হয়তবা ২০/৩০ টাকায় বিক্রয় হতে পারে কিন্তু যে কোন দোকানে ব্যাগ ও কন্টেইনার বাই
ব্যাক করার ব্যবস্থা থাকলে ক্রেতারা দামী ও টেকসই কন্টেইনার ক্রয় করতে কুণ্ঠাবোধ করবে
না। কারণ সে জানে কয়েকদিন কষ্ট করে ব্যাগ বা কন্টেইনার জমিয়ে জমা দিলে সে মূল্য ফেরত
পাবে। এভাবেই নতুন পুরাতন ব্যাগ ক্রয় বিক্রয় হলে তা পরিবেশ বান্ধব ব্যবস্থাপনা হবে।
পরিবেশ
আন্দোলন পৃথিবীব্যাপী জোরদার হচ্ছে। এখন যেখানে যেখানে ব্যাপক পরিমাণ অপ্রয়োজনীয় প্যাকিং
সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো রিইউজের মাধ্যমে পরিবেশের একটা চমৎকার পদ্ধতিতে আমরা
উপকার করতে পারি। ডিপার্টমেন্টাল শপের কর্ণধাররা এই বিষয়টি চিন্তা করলে পরিবেশের অনেক
উকার হবে।
No comments:
Post a Comment