মনে করুন আপনি পরিবেশবাদী
একজন মানুষ। আপনি পৃথিবীকে দূষন মুক্ত রাখার পক্ষে কথা বলেন। আপনি শহরে গেলেন
দাপ্তরিক কাজে। কাজ শেষে ফিরছেন। স্ত্রী মোবাইলে জানাল,
ফ্রিজে মাছ বা মাংস কিছুই নেই ক্রয় করা প্রয়োজন।
বাইরে যেহেতু আছেন বাজারটা করে আসতে পারেন। অথচ আপনি বাজারের ব্যাগ সাথে নিয়ে
আসেননি। এখন বাজারের ব্যাগ বাসা থেকে আনতে আপনার ২০+২০ =৪০ টাকা রিক্সা ভাড়া খরচ।
আবার বাজার থেকে ব্যাগ কিনতে ১৫/২০ টাকা খরচ। তদুপরি বাসায় এত ব্যাগ আছে যে পুনরায়
ব্যাগ কিনে টাকা খরচ করতে মন সায় দেয় না। তাহলে সহজ হিসাব কি?
এক/দুই টাকার পরিবেশ
বিনষ্টকারী পলিথিনই হল এর সমাধান। আর এভাবে বাংলাদেশ তথা সারা পৃথিবীতে ঘোরতর
পরিবেশবাদীরাও এভাবে পরিবেশ নস্টকারী বিপদজনক ব্যাগ কেবলমাত্র অত্যন্ত সস্তা হওয়ার
কারণে ব্যবহার করে থাকেন। আর এভাবে সারা পৃথিবীকে লক্ষ কোটি পলিথিনের কমদামী পাতলা
ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। পলিথিনের ব্যাগ যত পাতলা হবে তত বেশী পরিবেশ দূষণ করবে।
আমরা পলিথিন ব্যাগের
বিকল্প কি দিতে পারি রিইউজিবল মোটা ও টেকসই পলিথিন ব্যাগ,
কন্টেইনার ও লিকুইড নেয়ার জন্য বোতল ও বৈয়াম।
মনে করুন পরিবেশবাদী বা সরকারী ব্যবস্থাপনায়
বাজারে একটি শপ দেয়া হল। এই শপে মোটা পলিথিনের রিইউজেবল ব্যাগ,
প্লাস্টিক কনটেইনার ও প্লাস্টিক বৈয়ম পাওয়া
যায়। এগুলো ব্যবহারের নিয়ম অনেকটা ধার করে নিয়ে যাওয়ার মত হবে। আপনার কাজ হল
জামানত দিয়ে ব্যাগ, কন্টেইনার ও বৈয়ম
নিয়ে বাজার করা। আপনি যদি পরিবেশ সচেতন হন তবে এখন আর ব্যাগ বা কন্টেইনারের অভাবে পরবেন না আর
পলিথিন ব্যবহারে থেকে সরে আসবেন। যদি শতাধিক বার রিইউজ করা যায় এবং তারপর তা যদি
রিসাইক্যাল করা যায় তবে সে সমস্ত পলিথিনের সামগ্রী পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর।
অপরদিকে সেই তুলনায় একটি টেকসই মোটা পলিথিন ব্যাগের বিপরীতে ১০০ কাগজের ব্যাগ
ব্যবহার করলে পরিবেশের আরও ব্যাপক ক্ষতি করা হবে। তাই রিইউজিবল রিসাইক্যাল পলিথিন
ব্যাগ, প্লাস্টিক কন্টেইনার,
প্লাস্টিক বোতল ও প্লাস্টিক বৈয়াম অনেক বেশী
পরিবেশ বান্ধব। এখন আমাদের প্রয়োজন পরিবেশ বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা। আর তা সম্ভব
প্রতিটি মার্কেটে ও বাজারে রিইউজিবল সামগ্রী জমানতের বিনিময়ে পাওয়া। আর এটা হতে
হবে টাকার মত। যে কোন রিইউজিবল কন্টেইনার ফেরত দিলে ক্রেতা তার সম্পূর্ণ টাকা ফেরত
পাবে। দোকান চালানো, ক্ষতির টাকা
পুষিয়ে নেয়া ও পরিচালনার জন্য সরকারী বেতন ধারী লোক থাকবে। রিইউজিবল পলিথিন ও
প্লাস্টিক ব্যাগ নিয়মিত পরিষ্কার করে তা ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। রিইউজিবল
প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে হবে। এসব ব্যয় পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষার গ্লোবাল ফান্ড ও
কার্বন ফান্ড হতে পাওয়া যেতে পারে। বাজারের সমস্ত দোকানীরা পলিথিন ও কাগজের ব্যাগ
না কিনে সেই টাকাটা রিইউজেবল শপ পরিচালনাকারীদের দিতে পারে। এতে বেশ কিছু লোকের
গ্রিন সেক্টরে চাকুরী বাড়বে। রিইউজিবল কন্টেইনার পরিষ্কার করা ও তা বিতরণ করা এবং
শত শত চেইন শপ চালু করা যেতে পারে। এগুলো স্থাপন করতে প্রাথমিক খরচ বেশী হলেও
একসময় তা পলিথিন ব্যবহার হতেও সাশ্রয়ী হবে। কারণ একটা পাতলা পলিথিন একবার ব্যবহার
করা যাবে। অপর দিকে মোটা টেকসই ও দামী পলিথিনের ব্যাগ ধোয়ে ধোয়ে একাধিকবার ব্যবহার
করা যাবে। তাই বলা যায় পরিবেশ দূষণকারী পাতলা পলিথিনের ব্যাগ ও পাতলা পানির
কন্টেইনারকে আমরা যেন “না”
বলতে পারি। আমাদের প্রক্রিয়াটি হবে আগের দিনের
কাচের কোল্ড ড্রিংকস ফেরত দেয়ার মত। এটা ব্যবসায়ীক ভাবে পুরানো দিনের মত আমরা করতে
যাচ্ছি। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার জন্য এটা ভাল পদক্ষেপ। চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে একটা দই
পাওয়া যায় তার নাম “ঘটি দই”। এই দই
এলুমিনিয়ামের ঘটিতে পাওয়া যায়। আপনি দই কেনার সময় দইয়ের দাম আর এলুমিনিয়ামের ঘটির
জামানত দিয়ে কিনে আনবেন। পরে খালী ঘটি ফেরত দিয়ে আপনি জামানত ফেরত পাবেন। বছরের পর
বছর ধরে তারা “ঘটি দই”
এর ব্যবসা করে যাচ্ছে। একটু পরিবেশের বিষয়টি
চিন্তা করলে বুঝুন যদি তারা প্রতিদিন এক হাজার দই বানালে এক হাজার ওয়ান টাইম
ব্যবহারের মাটির খড়া বানাত বা প্লাস্টিকের তৈরি গোল দইয়ের কন্টেইনার ব্যবহার করত।
তবে ৩০ দিনে ত্রিশ হাজার। এক বছরে তিন লাখ পঁয়ষট্টি হাজার। দশ বছরে পঁয়ত্রিশ লক্ষ
ষাট হাজার প্লাস্টিকের দইয়ের প্যাকেট তারা কম ব্যবহার করল। ঘটি দইয়ের এই ধরনের
ব্যবহার পরিবেশের জন্য কত ব্যাপক ও বিস্তৃত আমরা সহজেই তা বুঝতে পারি। সরকার তাদের
পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রমের জন্য পুরস্কৃত করতে পারে।
রিইউজিবল কন্টেইনার ফেরত
প্রদান যে কোন দোকানে হতে হবে। হাতের কাছে যে কোন দোকান রিইউজিবল কন্টেইনার ফেরত
নিবে ও টাকা ফেরত দিবে। এভাবে করতে পারলে আরও ভাল হবে। কারণ কন্টেইনার ফেরত দেয়ার
জন্য দুরের দোকানে ফেরত আসলে তা ক্রেতাদের আগ্রহে ভাটা পড়বে। কন্টেইনার বদল যে কোন
জায়গায় যে কোন সময় করা যাবে। এতে সবাই ওয়ান টাইম ব্যাগের ব্যবহার কমাবে ও পরিবেশ
সচেতন হবে। সামনের দিন গুলোতে আমরা পরিবেশ রক্ষায় আরও সচেতন হব এটা আমরা সকলে আশা
করতে পারি। নবাগত বংশধরদের জন্য পৃথিবী আরও সুন্দর হবে এটাই হবে আমাদের পরম চাওয়া।
No comments:
Post a Comment